অহল্যা

ঋষি গৌতমের পত্নী

অহল্যা (সংস্কৃত: अहल्या) হলেন এক হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র। তিনি ঋষি গৌতমের পত্নী। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত কাহিনিসূত্রে জানা যায়, দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর সতীত্ব হরণ করেন, ব্যভিচারের অপরাধে ঋষি গৌতম তাঁকে অভিশাপ দেন এবং বিষ্ণুর অবতার রাম এসে তাঁকে শাপমুক্ত করেন।

অহল্যা
A painting of a young fair woman clad in a white sari with a red border stands, leaning on a tree, as she moves her left hand through her long black hair and holds a flower basket in her outstretched right hand.
অহল্যা, রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত (১৮৪৮–১৯০৬)
দেবনাগরীअहल्या
সংস্কৃত লিপ্যন্তরAhalyā
অন্তর্ভুক্তিঋষি, পঞ্চকন্যা
আবাসঋষি গৌতমের আশ্রম
ব্যক্তিগত তথ্য
সঙ্গীগৌতম
সন্তানশতানন্দ

ব্রহ্মা এক পরমাসুন্দরী নারী সৃষ্টির মানসে অহল্যাকে সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর স্বামী ঋষি গৌতম বয়সে তাঁর থেকে অনেক বড়ো ছিলেন। প্রাচীনতম পূর্ণাঙ্গ উপাখ্যানগুলিতে বলা হয়েছে, অহল্যা ছদ্মবেশী ইন্দ্রকে চিনতে পারলেও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেননি। কিন্তু পরবর্তীকালের গ্রন্থগুলির মতে, অহল্যা নির্দোষ ছিলেন। তিনি ইন্দ্রের শঠতার শিকার হয়েছিলেন অথবা ধর্ষিতা হয়েছিলেন। সকল উপাখ্যানেই দেখা যায়, ঋষি গৌতম অহল্যা ও ইন্দ্র উভয়কেই অভিশাপ দিয়েছিলেন। অভিশাপটি ঠিক কী ছিল, তা নিয়ে অবশ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সকল গ্রন্থেই কথিত হয়েছে যে, রাম অহল্যার ত্রাতা ও মুক্তিদাতা রূপে উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রাচীনতর গ্রন্থগুলিতে আছে, প্রায়শ্চিত্তের জন্য অহল্যা কঠোর তপস্যা করেছিলেন এবং রামকে আতিথ্য দান করে পাপমুক্ত হন। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রচলিত হওয়া জনপ্রিয় পুনর্কথনগুলিতে দেখা যায়, ঋষির অভিশাপে অহল্যা পাথর হয়ে যান এবং রামের পাদস্পর্শে পুনরায় মানবী রূপ ফিরে পান।

শাস্ত্রগ্রন্থগুলিতে অহল্যার যে জীবনকথা পাওয়া যায়, তার সব ক’টিরই কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হল ইন্দ্র কর্তৃক অহল্যাকে প্রলুব্ধকরণ এবং তার প্রতিফল।[] ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলিতেই (খ্রিস্টপূর্ব নবম থেকে ষষ্ঠ শতাব্দী) প্রথম ইন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের আভাস দেওয়া হলেও হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণেই (খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম-চতুর্থ শতাব্দী) প্রথম স্পষ্টভাবে ও সবিস্তারে তাঁর পরকীয়া সম্পর্কের উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণে রামের মাহাত্ম্য কীর্তিত হয়েছে। তাই মধ্যযুগীয় কথকেরা রাম কর্তৃক অহল্যা-উদ্ধারণকে ঈশ্বরের কৃপার নিদর্শন হিসেবে সেই কাহিনির উপরেই অধিক গুরুত্ব আরোপ করতেন। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বহুবার পুনর্কথিত হওয়ার পাশাপাশি আধুনিক যুগের কবিতা, ছোটোগল্প এমনকি নৃত্য ও নাট্যসাহিত্যেও এই কাহিনি বারবার উপস্থাপিত হয়েছে। প্রাচীন উপাখ্যানগুলিতে রামের মাহাত্ম্য কীর্তিত হলেও আধুনিক গল্পগুলি অহল্যার উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করে তাঁরই দৃষ্টিকোণ থেকে রচিত হয়েছে। কোনও কোনও উপাখ্যানে অবশ্য তাঁর সন্তানসন্ততির কথাও আছে।

হিন্দুরা প্রথানুসারে অহল্যাকে পঞ্চকন্যার (পাঁচ আদর্শ সতী) প্রথমা মনে করেন। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পঞ্চকন্যার নাম আবৃত্তি করলে পাপস্খালন ঘটে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে নিঃশঙ্ক চিত্তে অভিশাপ গ্রহণের জন্য তাঁকে পতিব্রতা ও নারীত্বের আদর্শ হিসেবে প্রশস্তি করা হয়; আবার অন্য ক্ষেত্রে ব্যভিচারের অপরাধে তাঁর নিন্দাও করা হয়ে থাকে।

নাম-ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

"অহল্যা" নামটিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে: "অ" ও "হল্যা"। "অ" একটি নঞর্থক উপসর্গ এবং সংস্কৃত অভিধানগুলিতে "হল্যা" শব্দটির সংজ্ঞায় এটিকে লাঙল (হল), হলকর্ষণ অথবা অঙ্গবৈকল্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। রামায়ণ গ্রন্থের উত্তরকাণ্ডে ব্রহ্মা সংস্কৃত "অহল্যা" নামটির সংজ্ঞায় বলেছেন "যিনি অসৌন্দর্যের অখ্যাতি হতে মুক্ত" অথবা "যিনি নিখুঁত সুন্দরী"। এই প্রসঙ্গে ইন্দ্রকে তিনি বলেছেন কীভাবে তিনি সকল সৃষ্টির বিশেষ সৌন্দর্য আহরণ করে তা অহল্যার শরীরের মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন।[] কয়েকটি সংস্কৃত অভিধান যেহেতু অহল্যা শব্দটির অনুবাদে "অকর্ষিত" কথাটি ব্যবহার করেছে, সেই হেতু কোনও কোনও আধুনিক লেখক এটিকে যৌনসংগমের ইঙ্গিত বলে মনে করেন। তাঁদের মতে, নামটি কোনও কুমারী অথবা মাতৃচরিত্রের দ্যোতক। এই অর্থটি তাঁর চরিত্রের সঙ্গে খাপ খায়। কারণ, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অহল্যাকে ইন্দ্রের নাগালের বাইরে বলেই গণ্য করা হয়ে থাকে।[][][] যদিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আক্ষরিক "অকর্ষিত" অর্থটির প্রতিই গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন যে, অহল্যা হলেন পাথুরে অনুর্বর জমির প্রতীক, যা রাম কর্তৃক কর্ষণযোগ্য হয়েছিল।[] দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভারতী ঝাবেরি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে অহল্যাকে অকর্ষিত জমি হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন। তাঁর ব্যাখ্যার ভিত্তি ছিল গুজরাতে প্রচলিত আদিবাসী ভিল রামায়ণ, যা প্রকৃতপক্ষে তারিখবিহীন ও মৌখিকভাবে প্রচলিত কাহিনি।[]

পৌরাণিক উপাখ্যান

সম্পাদনা

রামায়ণ

সম্পাদনা

উত্তর কাণ্ড

সম্পাদনা

রামায়ণে আছে, প্রজা সৃষ্টির পর সেই প্রজাদের বিশিষ্ট প্রত্যঙ্গ নিয়ে ব্রহ্মা এক কন্যা সৃষ্টি করেন। অদ্বিতীয়া সুন্দরী ও সত্যপরায়ণা বলে ব্রহ্মা তার নাম রাখেন অহল্যা।[] ব্রহ্মা তাকে গৌতম ঋষির নিকট ‘ন্যাসভূতা’ অর্থাৎ গচ্ছিত রেখেছিলেন। ইন্দ্র অহল্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহের মানস করেন। কিন্তু বহু বছর বাদে গৌতম অহল্যাকে ব্রহ্মার নিকট ফিরিয়ে দিলে, ব্রহ্মা সন্তুষ্ট হয়ে অহল্যার সহিত গৌতমের বিবাহ দেন। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে ইন্দ্র অহল্যাকে ছলনা করে ধর্ষণ করেছিলেন।[] এই কারণে, গৌতম ইন্দ্রকে অভিশাপ দেন যে যুদ্ধে তাকে দুইবার অসুরদের হাতে নির্যাতিত হতে হবে , একবার এক অসুর কন্যার যোনিদ্বারে বন্দী হতে হবে (পুতুলের মত ছোট আকারের হয়ে) এবং এবং জগতে দেবরাজের স্থানও স্থাবর হবে না। পুনশ্চ, তাকে অণ্ডকোষহীন হয়ে থাকতে হবে।

[১০] গৌতম অহল্যাকেও শাপ দেন, “মমাশ্রমা সমীপতঃ বিনিধ্বংস”; এবং অহল্যা অপেক্ষাও অধিক সুন্দরী পৃথিবীতে তার রূপের গৌরব খর্ব করতে জন্মগ্রহণ করবেন। অহল্যা স্বামীকে বোঝান যে তিনি নির্দোষ, ইন্দ্র গৌতমের রূপ ধারণ করে তাকে ধর্ষণ করেছেন।[১১] গৌতম তখন শান্ত হন। তিনি অহল্যাকে বলেন, রামের দর্শনে তিনি পবিত্র হবেন । গৌতম এরপর নিজের আশ্রমে ফিরে যান ও অহল্যা তপস্যা করতে থাকেন।

আদি কাণ্ড

সম্পাদনা
 
অহল্যার শাপমুক্তি

রামায়ণের আদিকাণ্ডে অবশ্য এই উপাখ্যানটি সামান্য অন্যভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই উপাখ্যানে বলা হয়েছে, মিথিলার নিকটস্থ এক উপবনে নিজের আশ্রমে গৌতম অহল্যাকে নিয়ে বাস করতেন। একদিন মুনির অনুপস্থিতির সুযোগে, তার বেশ ধরে এসে ইন্দ্র অহল্যার নিকট সঙ্গম প্রার্থনা করেন। পূজারত অহল্যা তাকে প্রতীক্ষা করতে বললেও, তার শাপের ভয়ে মিলনে রাজি হন। অহল্যার সাথে যৌন মিলন করার পর ইন্দ্র পালাতে যান। পালাতে গিয়ে ইন্দ্র ধরা পড়ে যান। গৌতম স্নান করে তখন সমিধকুশ নিয়ে ফিরছিলেন। ইন্দ্রকে তিনি অভিশাপ দেন যে তাকে বৃষণ অর্থাৎ অণ্ডকোষহীন হতে হবে।[১২] অহল্যাকে তিনি শাপ দেন যে তাকে বহু সহস্র বছর “বায়ুভক্ষা, নিরাহারা, ভস্মশায়িনী, তপ্যন্তী, প্রস্তরবৎ ও অদৃশ্যা” হয়ে থাকতে হবে।[১৩] রাম তাকে আতিথ্য দিলে তিনি পবিত্র হবে ও কামরহিত হয়ে স্বামীর সঙ্গে পুনরায় মিলিত হবেন। এরপর গৌতম হিমবৎ পর্বতের শিখরে তপস্যায় নিমগ্ন হন। মিথিলার পথে এই উপাখ্যান শুনতে শুনতে রাম ও লক্ষ্মণ মুনির আশ্রমে এসে উপস্থিত হন। অহল্যার শাপমুক্তি ঘটে। তিনি ভস্মশয্যা থেকে উঠে এসে অতিথি সৎকার করে। রাম ও লক্ষ্মণও তার পদধূলি নেন। দেবতারা আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি ঘটান ও অহল্যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। গৌতম ঋষি ফিরে আসেন এবং রামচন্দ্রকে পূজা করে স্ত্রীকে নিয়ে তপস্যা করতে চলে যান।

অন্যান্য গ্রন্থ

সম্পাদনা

কথাসরিৎসাগর-এ আছে ইন্দ্র ধরা পড়েননি। তিনি ‘মার্জার’-এর রূপ ধারণ করে পালান। গৌতম স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘মার্জার’ চলে গেছে। কথাটি দ্ব্যর্থক। এক অর্থে ‘মৎ-জার’ অর্থাৎ আমার নিষিদ্ধ প্রেমিক, অন্য অর্থে বিড়াল।

অন্য একটি মতে, ইন্দ্র পুতুলের মতো ছোট আকারের হয়ে অহল্যার সঙ্গে গোপনে দেখা করেছিলেন এবং অহল্যা তাকে নিজের গয়নার মধ্যে লুকিয়ে রাখেন।

গৌতমের অভিশাপে অহল্যা পাথর হয়ে যান। রামচন্দ্রের পাদস্পর্শে তার মুক্তি ঘটে। এক মতে, গৌতমের শাপে ইন্দ্রে সারা দেহ যোনি চিহ্নে ভরে যায়। পরে ইন্দ্রের কাতর প্রার্থনায়, সমস্ত যোনি-চিহ্ন গুলি চোখে (লোচন) রূপান্তরিত করে দেন। ইন্দ্র সহস্র-লোচন হয়ে বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেলেন। একটি মতে, অহল্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে ইন্দ্র মোরগের বেশে মধ্যরাতে আশ্রমে উপস্থিত হন ও ডেকে ওঠেন। ভোর হয়েছে মনে করে ঋষি স্নানে চলে যান। ইন্দ্র গৌতমের ছদ্মবেশে ফিরে এসে অহল্যাকে সম্ভোগ করেন। আবার অন্য একটি মতে জানা যায়, শাপমোচনের পর গৌতম পুত্র শতানন্দকে নিয়ে আশ্রমে ফিরে এসেছিলেন এবং একসঙ্গে বসবাসও শুরু করেন। পদ্মপুরাণেও রামের পাদস্পর্শে অহল্যার মুক্তির কথা আছে।

বালী ও সুগ্রীবের উপাখ্যান

সম্পাদনা

গরুড়ের দাদা অরুণের দুই পুত্র অহল্যার কাছে পালিত হতে থাকে। গৌতম এঁদের সহ্য করতে না পেরে শাপ দিয়ে বানরে পরিণত করেন। এরপর ইন্দ্র এঁদের সন্ধানে এলে অহল্যা তাকে গৌতমের শাপের কথা জানান। দেবরাজ ছেলে দুটিকে খুঁজে আনেন। বড়টির লেজ বড় বলে নাম হয় বালী ও ছোটোটির গ্রীবা সুন্দর বলে নাম হয় সুগ্রীব।

অপ্সরা অহল্যা

সম্পাদনা

রাজা ইন্দ্রদ্যম্নের স্ত্রীর নাম ছিল অহল্যা। তিনি ছিলেন অপ্সরা। অহল্যার উপাখ্যান শুনে অপ্সরা অহল্যা ইন্দ্র নামে এক অসুরের প্রতি আকৃষ্ট হলে রাজা তাকে বিতাড়িত করেন।

মীমাংসা দার্শনিক কুমারিলভট্টের মতে, অহল্যার উপাখ্যান একটি রূপক। ইন্দ্র সূর্য ও অহল্যা রাত্রি বা অন্ধকারের প্রতীক। অহল্যার ধর্ষণ অন্ধকার জয়ের প্রতীক। অন্য মতে, অহল্যা উষার প্রতীক। দিনে ইন্দ্ররূপী সূর্যের উদয় হলে অহল্যারূপী ঊষা অসূর্যম্পশ্যা হয়। আবার একটি মতে, অহল্যা অনুর্বর জমির প্রতীক।

সন্তান

সম্পাদনা

রামায়ণে অহল্যার পুত্র শতানন্দের (সতানন্দ) উল্লেখ রয়েছে, যিনি মিথিলার রাজা জনকের পারিবারিক পুরোহিত এবং ধর্মগুরু ছিলেন। এই সংস্করণে, শতানন্দ বিশ্বামিত্রকে তার "বিখ্যাত" মায়ের মঙ্গল সম্পর্কে উদ্বিগ্নভাবে জিজ্ঞাসা করেন।[১৪][১৫] বিপরীতে, মহাভারতে দুটি পুত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে: শারদ্বান,যিনি হাতে তীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং চিরাকারি, যার কর্মকাণ্ডের জন্য বিস্তৃত চিন্তাভাবনা বিলম্বের দিকে নিয়ে যায়। এগুলি ছাড়াও একটি নামহীন কন্যারও বর্ণনায় ইঙ্গিত করা হয়েছে। বামন পুরাণে তিন কন্যার উল্লেখ আছে: জয়া, জয়ন্তী এবং অপরাজী।[১৪]

অন্য একটি আখ্যান আছে যা সাধারণত ভারতীয় লোককাহিনীতে বলা হয় যে অরুণা, সূর্য দেবতা সূর্যের সারথি একবার অরুণি নামে একজন মহিলা হয়েছিলেন এবং স্বর্গীয় নিম্ফদের একটি সমাবেশে প্রবেশ করেছিলেন যেখানে ইন্দ্র ছাড়া আর কোনও পুরুষের অনুমতি ছিল না। ইন্দ্র আরুণীর প্রেমে পড়েন এবং বালী নামে এক পুত্রের জন্ম দেন। পরের দিন, সূর্যের অনুরোধে অরুণা আবার নারী রূপ ধারণ করেন এবং সূর্য একটি পুত্র সুগ্রীবের জন্ম দেন। দুটি শিশুই অহল্যাকে লালন-পালনের জন্য দেওয়া হয়েছিল কিন্তু গৌতম তাদের অভিশাপ দিয়েছিলেন যার ফলে তারা বানরে পরিণত হয়েছিল, কারণ তিনি তাদের পছন্দ করেননি।[১৬][১৭][১৮] রামায়ণের থাই সংস্করণে, রামাকিনে বালি এবং সুগ্রীবকে ইন্দ্র এবং সূর্যের সাথে তার সম্পর্ক থেকে অহল্যার সন্তান হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও অহল্যা প্রাথমিকভাবে তাদের গৌতমের পুত্র হিসাবে ত্যাগ করে, গৌতম – দ্বারা তার কন্যা – অঞ্জনি – তার বাবার কাছে তার মায়ের গোপন কথা প্রকাশ করে। সে ফলস্বরূপ ভাইদের তাড়িয়ে দেয় এবং তাদের বানর হওয়ার অভিশাপ দেয়। রাগান্বিত হয়ে অহল্যা অঞ্জনীকে অভিশাপ দেয় যেন একটি বানরও জন্ম দেয়। অঞ্জনী বানর-দেবতা এবং রামের বন্ধু হনুমানকে ধারণ করে।[১৯][২০] মালয় রূপান্তর হিকায়াত সেরি রামা এবং পাঞ্জাবি ও গুজরাটি লোককাহিনীতেও অনুরূপ গল্প পাওয়া যায়। যাইহোক, এই সংস্করণগুলিতে অঞ্জনীকে গৌতম দ্বারা অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ইন্দ্র এবং অহল্যাকে গোপনীয়তা গোপনে সাহায্য করার জন্য।[২১]

কিছু তামিল জাতি তাদের পূর্বপুরুষ অহল্যা এবং ইন্দ্রের সম্পর্ক খুঁজে পায়; অহল্যার সন্তানদের নামে জাতগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। গৌতম তিনটি ছেলেকে খুঁজে পান এবং তাদের আচরণ অনুসারে তাদের নাম রাখেন: আগমুদয়ার ("সাহসী" থেকে উদ্ভূত), যিনি গৌতমের মুখোমুখি হন, মারাভার ("গাছ" থেকে উদ্ভূত), যিনি একটি গাছে ওঠেন এবং কাল্লার ("চোর" বা "পাথর থেকে উদ্ভূত) "), যে বড় পাথরের আড়ালে চোরের মত লুকিয়ে থাকে। একটি চতুর্থ সন্তান, ভেল্লালা, কিছু সংস্করণে যোগ করা হয়েছে। অন্য একটি বিকল্পে, অহল্যা দ্বারা ইন্দ্রকে দেওয়া তপস্যা এবং উপাসনা দ্বারা যোগাযোগ প্রতিস্থাপিত হয়, যিনি তাকে পুরস্কার হিসাবে সন্তানদের উপহার দেন।[২২]

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. Söhnen-Thieme 1996, পৃ. 40–1।
  2. Gita Press 1998, পৃ. 681–2 (Verses 7.30.22–23)।
  3. Bhattacharya March–April 2004, পৃ. 4–7।
  4. Doniger 1999, পৃ. 89, 129।
  5. Feller 2004, পৃ. 146।
  6. Datta 2001, পৃ. 56।
  7. Jhaveri 2001, পৃ. 149–52।
  8. রামায়ণ, ৭।৩০ “যস্মাৎ ন বিদ্যতে হল্যং”
  9. রামায়ণ, ৭।৩০
  10. রামায়ণ, ৭।৩০ “যে ইন্দ্র সে ন ভবিষ্যতি”
  11. রামায়ণ, ৭।৩০ “ত্বদ্-রূপেণ দিবৌসকা ধর্ষিতা”
  12. রামায়ণ, ১।৪৮।২৭ “বিফলত্বং ভবিষ্যসি”
  13. রামায়ণ, ১।৪৮।৩০
  14. Mani 1975, পৃ. 285।
  15. Goldman 1990, পৃ. 220–221।
  16. Mani 1975, পৃ. 17।
  17. Pattanaik 2001, পৃ. 49।
  18. Freeman 2001, পৃ. 201–204।
  19. Pattanaik 2001, পৃ. 50।
  20. Pattanaik 2000, পৃ. 109।
  21. Bulcke 2010, পৃ. 129–131।
  22. Headley 2011, পৃ. 104–105।

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা