গাবুন ভাইপার

সরীসৃপ (সাপ)
(Gaboon adder থেকে পুনর্নির্দেশিত)

গাবুন ভাইপার (বৈজ্ঞানিক নাম: Bitis gabonica) বা গাবুন অ্যাডার ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির বিষধর সাপ। এদেরকে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকার অতিবৃষ্টি অরণ্যসাভানা অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।[২] এই সাপটি শুধুমাত্র বিটিস[৩] বর্গের দীর্ঘতম সদস্যই নয়, এরা বিশ্বের সবচেয়ে ভারী ভাইপারিডি[৪] প্রজাতির সাপ। এদের বিষদন্ত ২ ইঞ্চি (৫ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায় এবং এরা বিষধর সর্পপ্রজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে বিষ উৎপাদন করতে পারে।[৪] এদের কোনো উপপ্রজাতি শনাক্ত করা যায়নি।[৫]

গাবুন ভাইপার
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস সম্পাদনা করুন
জগৎ/রাজ্য: অ্যানিম্যালিয়া (Animalia)
পর্ব: কর্ডাটা (Chordata)
শ্রেণি: রেপটিলিয়া (Reptilia)
বর্গ: স্কোয়ামাটা (Squamata)
উপবর্গ: সারপেন্টস (Serpentes)
পরিবার: ভাইপারিডি (Viperidae)
গণ: Bitis
(আন্দ্রে মারি কনস্ট্যান্ট ডুমেরিল, গ্যাব্রিয়েল বিব্রন এবং অগাস্ট ডুমেরিল, ১৮৫৪)
প্রজাতি: B. gabonica
দ্বিপদী নাম
Bitis gabonica
(আন্দ্রে মারি কনস্ট্যান্ট ডুমেরিল, গ্যাব্রিয়েল বিব্রন এবং অগাস্ট ডুমেরিল, ১৮৫৪)
বিচরণক্ষেত্র
প্রতিশব্দ[২]
  • ইচিডনা গ্যাবোনিকা আন্দ্রে মারি কনস্ট্যান্ট ডুমেরিল, গ্যাব্রিয়েল বিব্রন এবং অগাস্ট ডুমেরিল, ১৮৫৪
  • বিটিস গ্যাবোনিকা বুলেঞ্জার, ১৮৯৬
  • কোবরা গ্যাবোনিকা মার্টিনস, ১৯৩৭
  • বিটিস গ্যাবোনিকা গ্যাবোনিকা
    — মার্টিনস, ১৯৫১
  • বি[টিস]. জাভোনিকা সুজুকি ও ইওয়াঙ্গা, ১৯৭০
  • বিটিস গ্যাবোনিকা — গোলায় এট আল, ১৯৯৩

নামকরণ ও শ্রেণীবিন্যাস

সম্পাদনা

১৮৫৪ সালে সর্বপ্রথম গাবুন ভাইপারকে এচিডনা গ্যাবোনিকা হিসাবে বর্ণনা করা হয়।

এই সাপের সাধারণ নামগুলো হলো গাবুন ভাইপার, বাটারফ্লাই অ্যাডার, ফরেস্ট পাফ অ্যাডার, হুইস্পার,[৪] সোয়াম্পজ্যাক,[৪] গাবুন অ্যাডার[৩] এবং গাবন ভাইপার।[৬]

গাবুন নামটি আসলে পর্তুগীজদের দেওয়া। গাবন (গ্যাবাও) শব্দটি গ্যাবনে যে নদী মোহনায় লিব্রভিল শহরটি গড়ে উঠেছে সেই নদী মোহনাকে নির্দেশ করে। এই জায়গাটি সমুদ্রের একটি শাখার উভয় তীরস্থ সরু একফালি ভূখণ্ড। ১৯০৯ সালে ফরাসি কঙ্গোর উত্তরাংশ এবং নিরক্ষরেখার দক্ষিণাংশে যে জায়গাটি আটলান্টিক মহাসাগর এবং ১২°পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত ছিল সেই অঞ্চলটিকে গাবুন বলা হতো।[৭]

১৯৯৯ সালে লেঙ্ক এবং অন্যান্যরা গাবুন ভাইপারের দুটি চিহ্নিত উপপ্রজাতির মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য আবিষ্কার করেন। তাদের গবেষণা অনুসারে, এই দুই উপপ্রজাতির মধ্যে পার্থক্য এদের সাথে নাসিকোর্নিস ভাইপারের পার্থক্যের সমতুল্য। এর ফলে তারা পশ্চিমভাগে প্রাপ্ত উপপ্রজাতিটিকে একটি পৃথক প্রজাতি হিসাবে গন্য করেন।[৮] উপপ্রজাতি দুটির বিবরণ নিম্নরূপ:

উপপ্রজাতি[৫] শ্রেণীবিন্যাসকারী[৫] সাধারণ নাম[৪] ভৌগোলিক বিস্তৃতি[৩]
গাবুন ভাইপার (ডুমেরিল, বিব্রনঅগাস্ট ডুমেরিল, ১৮৫৪) পূর্ব আফ্রিকান গাবুন ভাইপার মধ্য, পূর্বদক্ষিণ আফ্রিকা
রিনোচেরোস ভাইপার (শ্লেগেল, ১৮৫৫) পশ্চিম আফ্রিকান গাবুন ভাইপার পশ্চিম আফ্রিকা

বর্ণনা

সম্পাদনা

পূর্ণবয়স্ক গাবুন ভাইপারদের শরীর এবং লেজ মিলিয়ে গড় দৈর্ঘ্য ১২৫-১৫৫ সেন্টিমিটার (৪-৫ ফুট) হয়। সিয়েরা লিওনে পাওয়া সর্ববৃহৎ নমুনাটির দৈর্ঘ্য ছিল ২০৫ সেন্টিমিটার (৮১ইঞ্চি)। শরীরের দৈর্ঘ্যের সাপেক্ষে দাঁতের দৈর্ঘ্য দেখে এদের লিঙ্গ নির্ধারন করা যায়; পুরুষদের ক্ষেত্রে আনুমানিক ১২% এবং স্ত্রীদের ক্ষেত্রে আনুমানিক ৬%। পূর্ণবয়স্ক সাপগুলো বিশেষ করে স্ত্রী সাপেরা খুব ভারী ও সুঠাম গঠনের হয়। একটি গাবুন ভাইপারের উপর সমীক্ষা চালিয়ে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো পাওয়া যায়: [৪]

সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য ১৭৪ সেন্টিমিটার (৬৯ ইঞ্চি)
মাথার প্রস্থ ১২ সেন্টিমিটার (৪.৭ ইঞ্চি)
দেহের পরিধি ৩৭ সেন্টিমিটার (১৪.৬৫ ইঞ্চি)
ওজন (খালি পেটে) ৮.৫ কিলোগ্রাম (১৯ পাউন্ড)


 
গাবুন ভাইপারের সম্পূর্ণ কঙ্কাল।
 
গাবুন ভাইপারের নাসিকা ছিদ্রের মাঝে একজোড়া ছোট শিংয়ের মতো উঁচু অংশ থাকে এবং চোখের নিচে দুটি ডোরা বা দাগ দেখা যায়।

২০০৪ সালে স্পাউলস ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের গাবুন ভাইপার সম্পর্কে দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, এদের গড় দৈর্ঘ্য ৮০-১৩০ সেন্টিমিটার (৩২-৫১.৫ ইঞ্চি) এবং সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৭৫ সেন্টিমিটার (৬৯.৩ ইঞ্চি)। সমীক্ষায় তারা আরও জানান যে, এই প্রজাতির সাপগুলো দৈর্ঘ্যে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তারা ১.৮ মিটার (৬ ফুট) অথবা এমনকি ২ মিটারের বেশি (৬.৫ ফুট) দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট গাবুন ভাইপারের কিছু নমুনার কথা বলেন, তবে এই তথ্যের সমর্থনে কোনো যুক্তিপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ না পাওয়া যাওয়ার কথাও স্বীকার করেন।[৯] ১৯৭৩ সালে এই প্রজাতির একটি সাপ ধরা হয় যার সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছিল ১.৮ মিটার (৫.৯ ফুট) এবং খালি পেটে ওজন ছিল ১১.৩ কিলোগ্রাম (২৫ পাউন্ড)।[১০] অতিবৃহৎ নমুনাগুলোর সম্ভাব্য ওজন ২০ কিলোগ্রাম (৪৪ পাউন্ড) পর্যন্ত হতে পারে। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে ভারী বিষধর সাপ[১১] এবং শঙ্খচূড়ইস্টার্ন ডায়মন্ডব্যাক র‍্যাটল সাপের মতো বিশ্বের অন্যতম ভারী সাপ।[১০]

গাবুন ভাইপারের মাথা ত্রিভুজাকৃতির এবং ঘাড় ভীষণ সরু হয়। এদের ঘাড় প্রস্থে প্রায় মাথার এক-তৃতীয়াংশ।[৪] নাসিকা ছিদ্রের মাঝে একজোড়া ছোট শিংয়ের মতো উঁচু অংশ দেখা যায়। এই শিং জোড়া গাবুন ভাইপারের ক্ষেত্রে ছোট আকৃতির এবং রিনোচেরোস ভাইপারের ক্ষেত্রে বড় আকৃতির হয়।[৯] এদের চোখগুলো আকারে বড় হয় এবং এরা চোখ ঘোরাতে পারে।[৪] এদের চোখগুলো দেখলে মনে হয় বাইরের দিকে ঠেলে বের হয়ে আসছে।[৯]

আঁশের বিন্যাস

সম্পাদনা

গাবুন ভাইপারের চোখের চারপাশে ১৫-২১টি চোখের আঁশ[৪] এবং মাথার উপরে আড়াআড়িভাবে ১২-১৬টি আন্তঃবিন্যাসীয় আঁশ থাকে। চার-পাঁচটি আঁশের সারি এদের নিচের চোখ ও উপরের চোখের অঞ্চলকে পৃথক করে রাখে। এদের উপরের ওষ্ঠীয় আঁশের সংখ্যা ১৩ থেকে ১৮টি এবং নিচের ওষ্ঠীয় আঁশের সংখ্যা ১৬-২২টি।[৪] এদের বিষদন্ত ৫৫ মিলিমিটার (২.২ ইঞ্চি)[৩] পর্যন্ত হয় এবং যেকোনো বিষধর সাপের মধ্যে সর্ববৃহৎ বিষদন্ত এই প্রজাতির মধ্যেই দেখা যায়।[৪]

দেহের মধ্যভাগের পৃষ্ঠদেশে ২৮-৪৬টি আঁশের সারি রয়েছে। দেহের দুই পাশের সারিগুলো ছাড়া সব আঁশের সারিগুলো জাহাজ বা নৌকার তলদেশের ন্যায় আকৃতিবিশিষ্ট। এদের পার্শ্বীয় আঁশগুলো খানিকটা তীর্যক। উদরদেশের আঁশের সংখ্যা ১২৪ থেকে ১৪০টি। পুরুষদের ক্ষেত্রে উদরদেশীয় আঁশ ১৩২টির বেশি এবং স্ত্রী সাপদের ক্ষেত্রে ১৩২টির কম আঁশ দেখা যায়। এদের পুচ্ছ-পাখনার আঁশের সংখ্যা ১৭-৩৩ জোড়া, যা পুরুষদের ক্ষেত্রে ২৫ জোড়ার কম হয় না আবার স্ত্রীদের ক্ষেত্রে ২৩ জোড়ার বেশি হয় না। পায়ুপথের উপরে এদের আঁশ মাত্র একটি হয়।[৪]

বর্ণবিন্যাস

সম্পাদনা

গাবুন ভাইপারের বর্ণবিন্যাস বিবর্ন অথবা ঈষৎ হলদে চতুর্ভূজের ন্যায় ছোপ দ্বারা গঠিত। চতুর্ভূজ আকৃতির ছোপ বা দাগগুলো পিঠের মধ্যস্থল থেকে নিচের দিকে নেমে যায়। দাগগুলোর ফাঁকে ফাঁকে কালচে ও হলুদ প্রান্তযুক্ত বালিঘড়ির মতো ছোপ দেখা যায়। দেহের দুই পার্শ্বদেশে হলুদাভ-বাদামী অথবা বাদামী বর্ণের রম্বস আকৃতির দাগ রয়েছে। এদের মধ্যভাগে সারিবদ্ধভাবে হালকা উল্লম্ব দাগ রয়েছে। এদের উদরদেশের বর্ণ ফ্যাকাশে-হলুদ এবং কালো অথবা বাদামী ছিট ছিট দাগ অবিন্যস্তভাবে ছড়িয়ে থাকে। মাথা সাদা অথবা ঈষৎ হলদেটে বর্ণের এবং মাথার মধ্যভাগ বরাবর একটি সূক্ষ্ম কালো রেখা দেখা যায়। মাথার পশ্চাৎভাগের দুই পাশে কালো ছোপ এবং প্রত্যেক চোখের নিচে এবং পিছনে কালচে-নীল অথবা কালো ত্রিভুজাকৃতির দাগ দেখা যায়।[৯] এদের চোখের মণি ক্রীম, হলদে-সাদা, কমলা[৯] অথবা রূপালী রঙের হয়।[১২]

বিচরণ ও বাসস্থান

সম্পাদনা
 
মানচিত্রে চিহ্নিত করা কালো অঞ্চলটি গাবুন ভাইপারের ভৌগোলিক সীমা।[৩]

গাবুন ভাইপার প্রজাতির সাপগুলোকে গিনি, ঘানা, টোগো, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, বিষুবীয় গিনি, গ্যাবন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, উত্তর অ্যাঙ্গোলা, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, কেনিয়া, পূর্ব তানজানিয়া, জাম্বিয়া, মালাউই, পূর্ব জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব কাওয়াজুলু-নাতাল প্রদেশে দেখা যায়। ২০০৩ সালে ম্যালোসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা গাবুন ভাইপারের প্রাপ্তিস্থল হিসাবে সিয়েরা লিওন এবং পশ্চিম আফ্রিকার[৪] লাইবেরিয়াকেও নথিভুক্ত করেন। এই প্রজাতির সাপের আদর্শ বাসভূমি আফ্রিকার গ্যাবন[২]

গাবুন ভাইপারকে সাধারণত অতিবৃষ্টি অরণ্য এবং পার্শ্ববর্তী নিম্নাঞ্চলে বেশি দেখা যায়।[১২] তবে মাঝে মাঝে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়ও এদের দেখা যায়।[৪] ২০০৪ সালে স্পাউলস ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেন যে, সর্বাধিক ২১০০ মিটার উচ্চতা[৯] পর্যন্ত এই প্রজাতির সাপের দেখা পাওয়া যায়। ১৯৭৫ সালের ব্রডলি এবং ককের মতানুসারে, এদের কাছাকাছি প্রজাতি পাফ্ অ্যাডারের বাসভূমির অনুরূপ পরিবেশে এদের দেখা পাওয়া যায়। পাফ্ অ্যাডার প্রজাতির সাপদের বেশিরভাগ সময় অধিকতর খোলামেলা পরিবেশে দেখা যায়।[১৩]

তানজানিয়ায় এই প্রজাতির সাপদের দেখা পাওয়া যায় ঘন ঝোপঝাড়ে, কাজু বাদাম চাষের বাগানে এবং ঝোপঝাড়যুক্ত কৃষিজমিতে। উগান্ডায় গাবুন ভাইপারের দেখা মেলে জঙ্গলে, জঙ্গলের পার্শ্ববর্তী তৃণভূমিতে, পতিত অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার করা জঙ্গলে, পশ্চিম আফ্রিকার কোকো চাষের জমিতে এবং পূর্ব আফ্রিকার কফি চাষের বাগানে। জাম্বিয়ার চিরহরিৎ বৃক্ষের জঙ্গলেও এদের দেখা যায়। জিম্বাবুয়ের পূর্বভাগে শুধুমাত্র উচ্চ বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের জঙ্গলের খাড়া উতরাই অথবা ঢালে এদের দেখা পাওয়া যায়। সাধারণত জলাভূমি এবং স্থির ও চলমান জলে এদের বেশি দেখা যায়। জঙ্গলের আশেপাশের কৃষিজমিতে এবং রাতের বেলায় জঙ্গলের অথবা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রাস্তায় এদের প্রায়শই দেখা যায়।[৪]

গাবুন ভাইপার মূলত নিশাচর। এরা খুব ধীরগতিসম্পন্ন, কম নড়াচড়াযুক্ত শান্তস্বভাবের সাপ হিসাবে সুপরিচিত। এরা সাধারণত লুকিয়ে থেকে শিকার ধরে এবং উপযুক্ত শিকার এসে হাজির হওয়ার অপেক্ষায় দীর্ঘসময় ধরে নিথর নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকে। পক্ষান্তরে, এই প্রজাতির সাপ সক্রিয়ভাবে দ্রুত শিকার ধরে এবং প্রধানত রাতের প্রথম ৬ ঘণ্টার মধ্যে এদের শিকারপর্ব সম্পন্ন হয়। ঘানার কুমাসিতে জঙ্গল থেকে মোটামুটি ৫০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত ফাঁকা অঞ্চলের আস্তাবলে এরা নিয়মিত শিকার করে বলে জানা যায়। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, জঙ্গলের পার্শ্ববর্তী তৃণভূমিতে এরা নিয়মিত ইঁদুর শিকার করে। গাবুন ভাইপার সাধারণত খুবই সহিষ্ণু ও শান্ত প্রকৃতির সাপ। এমনকি যখন এদের নাড়াচাড়া করা হয় তখন কদাচিৎ কামড় দিতে অথবা হিস শব্দ করতে দেখা যায়। গাবুন ভাইপারের এই সহিষ্ণু স্বভাব অধিকাংশ ভাইপারের মধ্যে দেখা যায় না। যাইহোক, এই প্রজাতির কোনো কোনো বদমেজাজী সাপের ক্ষেত্রে কামড় দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।[৯]

 
এটি একটি পশ্চিম আফ্রিকান গাবুন ভাইপার। এদের ত্বকের বর্ন এদেরকে ছদ্মবেশ নিতে সাহায্য করে।

গাবুন ভাইপারের গমন প্রধানত সরলরৈখিক প্রকৃতির। এরা উদরদেশীয় আঁশগুলোর সাহায্যে আলস্যপরায়ন মন্থরগতিতে চলাচল করে। তবে সচকিত হলে এদের চলনপ্রণালীর পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে এরা অল্পদূরত্ব পর্যন্ত দুইপাশে দেহ মুচড়ে চলতে পারে।[৪] ১৯৩৩ সালে রেমন্ড ডিটমার্স বর্ণনা করেন যে, গাবুন ভাইপার আঁকাবাকাভাবে চলনেও সক্ষম। [১৪]

ভয় দেখানো হলে অথবা ভয় পেলে এরা সতর্কবাণী হিসাবে সশব্দে হিসহিস আওয়াজ করে। নির্দিষ্ট একটি স্থায়ীছন্দে এরা হিসহিস আওয়াজ করে চলে এবং প্রতিবার শ্বাসবায়ু নির্গত হওয়ার পর একপাশ থেকে অন্যপাশে মৃদুভাবে মাথা নাড়ায়।[৪][৯][১৪] এরা ছোবলপ্রবণ নয় এবং প্রবলভাবে উত্যক্ত করা না হলে এরা ছোবল দিতে অনীহা প্রকাশ করে।[৪] তবে এরা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দ্রুতবেগে ছোবল দেওয়া বা আঘাত হানা সাপদের মধ্যে অন্যতম। সেই কারণে এদের নিয়ে নাড়াচাড়া করার সময় সচেতন এবং সাবধান থাকা প্রয়োজন।

গাবুন ভাইপারের এই স্বাভাবিক অনাগ্রাসী বা অনাক্রমনাত্মক স্বভাবের অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। ১৯৬১ সালে সুয়েনি লিখেন, "এরা এতই শান্ত প্রকৃতির যে এদের যেকোনো নির্বিষ সাপের মতো নিশ্চিন্ত মনে যেরকম খুশি নাড়াচাড়া করা যায়", যদিও এটি সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়ে থাকে। ১৯৬৩ সালে লেন আয়োনাইডস ব্যাখ্যা করেন যে, গাবুন ভাইপারকে ধরার সময় তিনি সর্বপ্রথম গাবুন ভাইপারটিকে মাথার উপরের দিক দিয়ে টং বা ক্যাঁচারের সাহায্যে আলতো করে স্পর্শ করে তার প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন, যদি বদমেজাজ অথবা রাগের কোনো বহিঃপ্রকাশ না দেখা যায়, তবে উনি টং বা ক্যাঁচার সরিয়ে রেখে এক হাত দিয়ে সাপটির ঘাড় শক্ত করে মুঠোর মধ্যে নেবেন এবং অন্য হাত দিয়ে শরীরের অন্য অংশ ধরে রাখবেন এবং এইভাবে সাপটিকে সাপ রাখার বাক্সের ভিতর ভরবেন। তিনি জানান যে, এইভাবে ধরলে সাপটি সংগ্রাম করার ন্যুনতম সুযোগটুকুও পাবে না।[৪]

১৯৭৫ সালে প্যারি এই সর্পপ্রজাতির অন্যান্য সাপদের অপেক্ষা অধিকতর বিস্তৃত সীমানা অবধি চোখ ঘোরাতে পারার ব্যাপারটি বর্ণনা করেন। এরা যদি মাথাকে উপর থেকে নিচ অবধি ঘোরায় তাহলে আনুভূমিক অবস্থানে এরা ৪৫° অবধি চোখ ঘোরাতে পারে। যদি মাথা ৩৬০° অবধি ঘোরাতে সক্ষম হয়, তবে ঘূর্ণনের দিক অনুসারে একটি চোখ উপরের দিকে এবং একটি চোখ নিচের দিকে হেলে যায়। দুটি চোখই তাদের মধ্যবর্তী অক্ষের উপর একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে যুক্ত থাকায় এরা একইসাথে এক চোখ দিয়ে সামনে এবং অপর চোখ দিয়ে পিছনে দেখতে পারে। স্বাভাবিকভাবে চোখ দুটি ঝাঁকুনি সহকারে দ্রুত সামনে পিছনে করতে পারে। ঘুমানোর সময় এদের চোখ স্থির থাকে, চোখের কোনো রকম নড়াচড়া লক্ষ্য করা যায় না এবং চোখের তারাগুলো ভীষনভাবে সঙ্কুচিত হয়ে থাকে, আবার জেগে ওঠার সাথে সাথেই চোখের নড়াচড়া শুরু হয়ে যায়।[৪]

গাবুন ভাইপারের বিশাল এবং ভারী দেহের কারণে পূর্ণবয়স্করা অনায়াসেই প্রাপ্তবয়স্ক খরগোস অথবা এই জাতীয় গোটা শিকারকেই খেয়ে ফেলে। শিকার হাজির হলে এরা অতি ক্ষিপ্রতার সাথে যেকোনো কৌনিক অবস্থান থেকেই ছোবল দেয়। শিকারকে আঘাত হানার পর এরা এদের বিশাল মাপের বিষদন্ত দিয়ে কামড়ে শিকারকে ঝুলিয়ে রাখে। শিকারকে ঘুরে বেড়াতে দেয় না অথবা শিকারের মৃত্যুর জন্য এরা অপেক্ষা করে থাকে না। গাবুন ভাইপারের এই আচরণ অন্যান্য ভাইপার প্রজাতির সাপদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই প্রজাতির সাপেরা নানাবিধ প্রকারের পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন ঘুঘু, কলাম্বিডি, বিভিন্ন প্রকার তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী, ছোট-বড় ইঁদুর, খরগোস ইত্যাদি খায়। এদের শিকার তালিকায় অস্বাভাবিক কিছু সঙ্গযোজনের নথিপ্রমাণও রয়েছে যেমন- বৃক্ষবাসী বানর, গাম্বীয় থলিযুক্ত ইঁদুর, আফ্রিকান কুঁচলেজবিশিষ্ট সজারু এবং এমনকি ছোট রাজকীয় হরিণ পর্যন্ত।[৪][১৫]

প্রজনন

সম্পাদনা

চূড়ান্ত যৌনকর্ম চলাকালীন পুরুষ গাবুন ভাইপার একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একটি পুরুষ সাপ অপর একটি পুরুষ সাপের পিঠে তার চিবুক ঘষার সময় এই সংঘর্ষ শুরু হয়। দ্বিতীয় পুরুষটি তখন তার মাথা যথাসম্ভব উঁচুতে তুলে ধরে এবং তারপর প্রথম সাপটিও নিজের মাথা উঁচু করতে থাকে। দুজনেই এরকম করার ফলে তাদের জলা অথবা ঘাড় পরস্পরের সাথে জড়িয়ে যায়। দুজনের মাথা যখন একই উচ্চতায় পৌঁছায়, তখন তারা একে অপরের দিকে ঘোরে এবং একে অন্যকে ঠেলতে থাকে। এই সময় তারা ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন করায় তাদের দেহও পরস্পরের সাথে জড়িয়ে যায়। সংঘর্ষ চলাকালীন এরা পারিপার্শ্বিক সব বিষয়ে বিস্মৃত হয়ে যায় এবং এমনকি কোনোখান থেকে নিচে পড়ে গেলে অথবা পানিতে পড়ে গেলেও লড়াই চালিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা এতই বৃদ্ধি পায় যে তারা পরস্পরকে শক্তভাবে পেঁচিয়ে এবং চাপ দিয়ে ধরে, যার ফলে অত্যধিক চাপে তাদের আঁশগুলো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এমতাবস্থায় এদের একে অপরকে মুখ বন্ধ করে ছোবল মারতে দেখা যায়। অনেকসময় প্রতিদ্বন্দ্বীরা লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দুজনের সম্মতিতে লড়াই বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিশেষে, একটি সাপ ২০-৩০ সেন্টিমিটার উপরে মাথা তুলে অন্যটির মাথা মাটিতে ঠেসে ধরলে বিবাদের নিষ্পত্তি এবং লড়াইয়ের সমাপ্তি হয়। বন্দী অবস্থায় এই জাতীয় লড়াই সপ্তাহে চার থেকে পাঁচবার পর্যন্ত ঘটতে পারে যতক্ষন না পর্যন্ত মিলনের ইচ্ছাপ্রকাশ এবং যৌনসঙ্গমের সময়কাল শেষ হয়।[৪]

এদের গর্ভধারণকাল প্রায় ৭ মাস ধরে চলে, যা থেকে বোঝা যায় যে প্রজননচক্র চলে প্রায় দুই থেকে তিন বছর। এমনকি এই প্রজননকাল ৫ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়া সম্ভব। সাধারণত এরা গ্রীষ্মকালের শেষভাগে বাচ্চার জন্ম দেয়। গাবুন ভাইপার ৮ থেকে ৪৩টি প্রাণবন্ত বাচ্চার জন্ম দেয়, অপরদিকে রিনোচেরোস ভাইপার ৬০টি পর্যন্ত বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। যাইহোক, নবজাত সর্পশিশুর সংখ্যা কদাচিৎ ২৪ অতিক্রম করে।[৪] নবজাতকগুলো ২৫-৩২ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এবং ২৫ থেকে ৪৫ গ্রাম ওজনসম্পন্ন হয়।[৩]

 
একটি গাবুন ভাইপার তার বিষদাঁত দেখাচ্ছে।

গাবুন ভাইপার প্রজাতির সাপের কামড়ানোর ঘটনা খুবই কদাচিৎ ঘটে, কারণ এরা অতিমাত্রায় সহনশীল এবং এদের মধ্যে আক্রমণের প্রবণতা ভীষন কম। এদের কামড়ানোর ঘটনা কদাচিৎ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এদের সর্বাধিক উপস্থিতি অতিবৃষ্টি অরণ্য এবং এর লাগোয়া অঞ্চলে সীমাবদ্ধ।[৩] এদের আলস্যধর্মী স্বভাব এবং নড়াচড়ায় অনাগ্রহ এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট। এমনকি এদের দিকে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এদের চারিত্রিক স্বভাবের খুব একটা পরিবর্তন ঘটে না। সেকারণেই অধিকাংশ কামড়ের ঘটনা ঘটে দূর্ঘটনাবশত এদের গায়ে পা দিয়েই। যদিও অনেকক্ষেত্রে এমন দূর্ঘটনাজনিত পরিস্থিতির পরও এরা কামড়ানোর ইচ্ছাকে দমন রাখে।[১৬] যাইহোক এদের কামড়ের ঘটনা ঘটলে তা মারাত্মক ধরনের হয় এবং জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এমনকি মাঝারি মাপের কোনো গাবুন ভাইপারের মাঝারি মানের কামড়ও প্রকৃতপক্ষে মারাত্মক হয়ে ওঠে।[৩] এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব বিষ প্রতিষেধক প্রয়োগ করা উচিত যাতে আক্রান্ত অঙ্গটিকে রক্ষার পাশাপাশি প্রাণরক্ষা করাও সম্ভবপর হয়।[১৩]

গাবুন ভাইপারের সাইটোটক্সিক বিষ ইঁদুরের উপর প্রয়োগের পরীক্ষায় দেখা যায় যে, এই বিষ গঠনগত উপাদানের ভিত্তিতে খুব একটা বিষাক্ত বলে গন্য হয় না। ইঁদুরের উপর প্রয়োগে প্রাপ্তব্য এলডি৫০ ০.৮ থেকে ৫.০মিগ্রা/কেজি ইন্ট্রাভেনাস, ২.০মিগ্রা/কেজি ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল এবং ৫.০ থেকে ৬.০মিগ্রা/কেজি সাবকিউটেনিয়াস।[১৭] তবে এদের বিষথলি দুটি বিশালাকার হয় এবং কামড় প্রতি নির্গত বিষের পরিমাণ যেকোনো বিষধর সাপের তুলনায় বেশি। সর্বাধিক পরিমাণে বিষ ঢালার একটি আংশিক কারণ হলো পাফ্ অ্যাডার এবং অন্যান্য আফ্রিকান ভাইপারের মতো গাবুন ভাইপার কামড় দেবার পরপরই ছেড়ে দেয় না। এরা কামড় দিয়ে কিছুক্ষন ধরে রাখে যার ফলে সর্বাধিক মাত্রায় বিষ ঢালতে পারে। কামড় প্রতি নির্গত বিষের পরিমাণ সাপের দেহের ওজনের সমানুপাতিক।[৪] ১৯৭৩ সালে ব্রাউন বিষ উৎপাদন সীমার একটি পরিমাপ দেন, যা ২০০ থেকে ১০০০ মিগ্রা (শুকনো বিষের ক্ষেত্রে)[১৭]; এছাড়া ১২৫ থেকে ১৫৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নমুনার উৎপাদিত বিষের সীমা ২০০ থেকে ৬০০ মিগ্রা এর নথিভুক্ত প্রমাণ রয়েছে।[৪] ১৯৯৫ সালে স্পাউলস এবং ব্র্যাঞ্চের বর্ণনা অনুযায়ী, এরা কামড়প্রতি ৫ থেকে ৭ মিলিলিটার (৪৫০-৬০০মিগ্রা) পর্যন্ত বিষ নির্গত করতে পারে।[৩]

১৯৮৪ সালের মার্শ এবং হোয়েলারের গবেষণা অনুসারে সর্বাধিক ৯.৭ মিলিলিটার অবধি সিক্ত বিষ নির্গত হওয়া সম্ভব যা ২৪০০ মিগ্রা শুষ্ক বিষের সমতুল্য এবং সমক্রিয়। তারা ১৩৩ থেকে ১৩৬ সেন্টিমিটার দীর্ঘ, ২৩ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ১.৩-৩.৪ কিলোগ্রাম ওজনবিশিষ্ট কয়েকটি নমুনাকে চেতনানাশক প্রয়োগ করে নমুনাগুলোর হাঁ করা চোয়ালে কৌনিকভাবে কুমিরের হুক লাগান এবং ১.৩ থেকে ৭.৬ মিলিলিটার (গড়ে ৪.৪ মিলিলিটার) বিষ সংগ্রহ করেন। ৫ সেকেন্ড অন্তর দু-তিনবার তড়িৎ বিস্ফোরণ বিষথলিগুলো খালি করে সমস্ত বিষ নির্গত করার জন্য যথেষ্ট। এইভাবে সমীক্ষায় ব্যবহৃত নমুনাগুলো থেকে ১২ মাস ধরে ৭ থেকে ১১ বার বিষ নিষ্কাশন করা হয়। বিষ আহরণকালে নমুনা গাবুন ভাইপারগুলো সুস্থ দেহেই ছিল এবং তাদের বিষের কার্যকারিতা একইরকম ছিল।[৪]

১৯৭১ সালে হোয়েলার বানরের উপর গাবুন ভাইপারের বিষের প্রতিক্রিয়ার সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে হিসাব করে দেখেন যে, মানুষের মৃত্যুর জন্য ১৪ মিলিগ্রাম বিষই যথেষ্ট, যা ০.০৬ মিলিলিটার বিষের সমতুল্য এবং একবার বিষ নিষ্কাশন করে যতটুকু বিষ পাওয়া যায় তার ১/৫০ থেকে ১/১০০০ ভাগ। ১৯৮৪ সালে মার্শ এবং হোয়েলার আরও লিখেন, ৩৫ মিগ্রা বিষ (গড় উৎপাদিত বিষের ১/৩০ ভাগ) একটি ৭০ কিলোগ্রাম (১৫০ পাউন্ড)[৪] ওজনের মানুষকে মারার জন্য যথেষ্ট। ১৯৯২ সালে ব্রাঞ্চ বলেন, মানুষের ক্ষেত্রে ৯০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম বিষ মারাত্মক এবং মরণ ক্ষমতাসম্পন্ন। তবে এই জাতীয় সর্পাঘাত খুব কমই ঘটে।

গাবুন ভাইপারের কামড়ে দংশনস্থল দ্রুত ফুলে ওঠা বা শোথ হওয়া, তীব্র ব্যথা, দংশনস্থলের আশেপাশে ফোস্কা পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে অসংলগ্ন নড়াচড়া, শুষ্কতা, প্রস্রাবমলত্যাগের বেগ বৃদ্ধি পাওয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও জিহ্বা ও চোখের পাতা ফুলে ওঠা, খিঁচুনি, অচৈতন্যতা,[৪] জ্বালাভাব, চরম মাত্রায় কোষের পচন ঘটা, নিম্ন রক্তচাপ, হৃদযন্ত্র বিকল এবং শ্বাসকষ্টও[৯] দেখা যায়। অনেকক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না এবং তাই অভ্যন্তরীণ রক্তপাত চলতে থাকে, যার ফলে মূত্রের সাথে রক্তপাত এবং রক্তবমন দেখা যায়।[৩][৯] স্থানীয় কোষগুলোর ক্ষতিসাধন এমন মাত্রায় হয় যে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়, এমনকি অঙ্গ ব্যবচ্ছেদও করতে হতে পারে।[৩] আক্রান্ত ব্যক্তির সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগে এবং এই সময়ে মারাত্মক সংক্রমণ দেখা যায়।[৯]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. লুইসেলি, এল.; বেরাডুসি, জে.; হওয়েল, কে.; মসুয়া, সি.এ.; এনগালাসন, ডাব্লিউ.; সিরিও, এল.; কুসাম্বা, সি.; গনু, এন.এল.; লিব্রেটন, এম.; জেসি-ব্লোউ, এ.-জি.; চিপক্স, জে.-পি. (২০২১)। "বিটিস গ্যাবোনিকা"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা (ইংরেজি ভাষায়)। আইইউসিএন২০২১: e.T13300893A13300904। ডিওআই:10.2305/IUCN.UK.2021-3.RLTS.T13300893A13300904.en । সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  2. ম্যাকডায়ারমিড, ক্যাম্পবেল, টুরে টি, ১৯৯৯। বিশ্বের সরীসৃপের প্রজাতি: শ্রেণীবিন্যাস ও ভৌগলিক সূত্রে, খন্ড ১। হারপেটোলজিস্ট লিগ। ৫১১ পিপি. আইএসবিএন ১-৮৯৩৭৭৭-০০-৬ (ধারাবাহিক)। আইএসবিএন ১-৮৯৩৭৭৭-০১-৪ (খন্ড)।
  3. স্পাউলস এস, ব্র্যাঞ্চ বি, ১৯৯৫। আফ্রিকার সবচেয়ে বিষধর সাপ। রাল্ফ কার্টিস বুকস। দুবাই: অরিয়েন্টাল প্রেস। ১৯২ পিপি. আইএসবিএন ০-৮৮৩৫৯-০২৯-৮
  4. ম্যালো ডি, লুইজ ডি, নিলসন জি, ২০০৩। জাত ভাইপার: পুরনো বিশ্ব ভাইপারের প্রাকৃতিক ইতিহাস ও বিষবিদ্যা। মালাবর, ফ্লোরিডা: ক্রিগার প্রকাশনা কোম্পানি। ৩৫৯ পিপি. আইএসবিএন ০-৮৯৪৬৪-৮৭৭-২
  5. "Bitis gabonica"ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্সোনোমিক ইনফরমেশন সিস্টেম 
  6. গোচ এ. এফ., ১৯৮৬। সরীসৃপ ও এদের লাতিন নামের বিশ্লেষণ। পুল, যুক্তরাজ্য: ব্ল্যান্ডফোর্ড প্রেস। ১৭৬ পিপি. আইএসবিএন ০-৭১৩৭-১৭০৪-১
  7. নিউ অ্যাডভেন্ট ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়ায় ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে গাবুন ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে ৮ জুলাই ২০০৭ তারিখে সংগ্রহ করা।
  8. বিষধর সাপের পদ্ধতিগত সতর্কতা - ১৯৯৯ প্রকাশনা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ তারিখে বেঙ্গরের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ ওল্ফগ্যাং উইস্টারের হোমপেজ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ তারিখে
  9. স্পাউলস এস, হওয়েল কে, ড্রুজ আর, অ্যাশ জে. ২০০৪। পূর্ব আফ্রিকার সরীসৃপের বিষয়ে একটি ক্ষেত্র নির্দেশিকা। লন্ডন: এ অ্যান্ড সি ব্ল্যাক প্রকাশনী লিমিটেড। ৫৪৩ পিপি. আইএসবিএন ০-৭১৩৬-৬৮১৭-২.
  10. উড, জেরাল্ড (১৯৮৩)। গিনেস বুক অব অ্যানিমাল ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিটস আইএসবিএন 978-0-85112-235-9 
  11. "Gaboon Viper" [গাবুন ভাইপার]। ফ্রেশ্নো চ্যাফি চিড়িয়াখানা (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৩ 
  12. মার্টিনস জেএম. ১৯৮৭ রঙিন বিশ্বের জীবন্ত সাপ। নিউইয়র্ক: স্টার্লিং প্রকাশনী। ৪৮০ পিপি. আইএসবিএন ০-৮০৬৯-৬৪৬০-X.
  13. ব্রডলি ডিজি, কক ইভি (১৯৭৫)। রোডেশিয়ার সরীসৃপ। লংম্যান আফ্রিকা, সেলিশব্যুরি। ওসিএলসি ২৪৯৩১৮২৭৭
  14. ডিটমার্স আরএল। ১৯৩৩। বিশ্বের সরীসৃপ। সংশোধিত সংস্করণ। নিউইয়র্ক: দ্য ম্যাকমিলান কোম্পানি ৩২৯ পিপি. + ৮৯ প্লেটস
  15. হাওয়ার্ড, জ্যাকলিন। "Bitis gabonica (Gaboon Adder)" [গাবুন ভাইপার (গাবুন অ্যাডার)]। অ্যানিমেল ডাইভার্সিটি ওয়েব (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৩ 
  16. মরিস জে. ২০০৪। দক্ষিণ আফ্রিকার সরীসৃপদের বিষয়ে একটি সম্পূর্ণ নির্দেশিকা। ক্যাপে টাউন: স্ট্রুক। ২১৪ পিপি. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৬৮৭২-৯৩২-৬.
  17. ব্রাউন জেএইচ. ১৯৭৩। বিষধর সাপের বিষের বিষবিদ্যা ও ফার্মাকোলজি। স্প্রিংফিল্ড, ইলিনয়: চার্লস সি. থমাস। ১৮৪ পিপি. এলসিসিসিএন ৭৩-২২৯। আইএসবিএন ০-৩৯৮-০২৮০৮-৭.

আরও পড়ুন

সম্পাদনা
  • বোলেঙ্গার, ১৮৯৬। ব্রিটিশ জাদুঘরের সরীসৃপের তালিকা (প্রাকৃতিক ইতিহাস)। খন্ড ৩, ভাইপারিডিসহ। লন্ডন: ব্রিটিশ জাদুঘরের ট্রাস্টি (প্রাকৃতিক ইতিহাস)। (টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস প্রিন্টার।) ১৪ + ৭২৭ পিপি. + প্লেটস ১.- ২৫. (গাবুন ভাইপার, পিপি. ৪৯৯–৫০০)
  • বোলার জে. কে. ১৯৭৫। উত্তর আমেরিকার সংরক্ষিত সরীসৃপ ও উভচরদের দীর্ঘায়ু, ১ নভেম্বর ১৯৭৫ হিসাবে। এথেন্স, ওহিও: উভচর ও সরীসৃপ বিষয়ক অধ্যয়ন সমিতি। হারপেটোলজিক্যাল সার্কুলার (৬): ১-৩২।
  • ব্র্যাঞ্চ, ২০০৪, দক্ষিণ আফ্রিকার সরীসৃপ ও উভচরজাতীয় প্রাণীদের মাঠ পর্যায়ের নির্দেশিকা। তৃতীয় সংশোধিত সংস্করণ, দ্বিতীয় ছাপ। সানিবেল দ্বীপ, ফ্লোরিডা: রালফ কার্টিসের বই। ৩৯৯ পিপি। আইএসবিএন ০-৮৮৩৫৯-০৪২-৫। (গাবুন ভাইপার, পি. ১১৫ + প্লেট ৩, ১২।)
  • ডুমেরিল এ-এম-সি, বিব্রন জি, ডুমেরিল এ, ১৮৫৪। সাধারণ হারপেটোলজি বা সরীসৃপের সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ইতিহাস। খন্ড ৭। — দ্বিতীয় অংশ। বিষধর সাপের ইতিহাস বোঝা। প্যারিস: রোরেট। ১২ + পিপি. ৭৮১–১৫৩৬। (ইচনিডা গাবুনিকা, পিপি. ১৪২৮–১৪৩০।)
  • ফরবেস সিডি, টার্পি এজিজি, ফার্গুসন জেসি, ম্যাকনিকল জিপি, ডগলাস এএস. ১৯৬৯। রক্ত জমাটবাঁধা, প্লেটলেট এবং ফাইব্রিনোলাইটিক এনজাইম ব্যবস্থায় গাবুন ভাইপারের (বিটিস গ্যাবোনিকা) বিষের প্রভাব। ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি সংবাদপত্র। ২২: ৩১২–৩১৬।
  • লেন, এম. ১৯৬৩. আয়োনাইডের সাথে জীবন। লন্ডন: হামিশ-হ্যামিল্টন. ১৫৭ পিপি.
  • লেঙ্ক পি, হারম্যান এইচ-ডব্লিউ, জোগার ইউ, উইঙ্ক এম। ১৯৯৯। আণবিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বিটিস (রেপটিলিয়া: ভাইপারিডি) এর ফাইলোজেনি ও শ্রেণীবিন্যাসের উপবিভাগ। কাউপিয়া, প্রাকৃতিক ইতিহাসে ডার্মস্ট্যাডের অবদান (৮): ৩১–৩৮‌।
  • মার্শ এনই, হোয়েলার বিসি, ১৯৮৪। গাবুন ভাইপার (বিটিস গাবুনিকা) এর জীবতত্ত্ব, বিষ, উপাদান এবং বিষবিদ্যা টক্সিকন ২২ (৫): ৬৬৯–৬৯৪।
  • মরিস পিএ, ১৯৪৮। সরীসৃপ সম্পর্কিত বই: কীভাবে তাদের চিনবেন এবং বুঝবেন। মানবীকরণ বিজ্ঞান ধারাবাহিকের একটি খন্ড, জ্যাক ক্যাটেল দ্বারা সম্পাদিত। নিউইয়র্ক: রোনাল্ড প্রেস। ৮ + ১৮৫ পিপি. (গাবুন ভাইপার, বিটিস গ্যাবোনিকা, পিপি. ১৫৮–১৫৯, ১৮২।)
  • সুয়েনি আরসিএইচ, ১৯৬১। ন্যাসাল্যান্ডের সরীসৃপ। জোম্বা, ন্যাসাল্যান্ড: ন্যাসাল্যান্ড সোসাইটি ও ন্যাসাল্যান্ড সরকার। ৭৪ পিপি.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা