কাজু বাদাম
কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্বাদু একটি বাদাম। কাজু গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale; প্রতিশব্দ Anacardium curatellifolium A.St.-Hil.) সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ। এটি একটি অর্থকরি ফসল। এ গাছের বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। বেলে দো আশঁ মাটি অথবা পাহাড়ের ঢালে ভাল জন্মে।
Cashew | |
---|---|
Cashews ready for harvest in Kollam, India | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | সপুষ্পক উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | Eudicots |
শ্রেণীবিহীন: | Rosids |
বর্গ: | Sapindales |
পরিবার: | Anacardiaceae |
গণ: | Anacardium |
প্রজাতি: | A. occidentale |
দ্বিপদী নাম | |
Anacardium occidentale L. |
উৎপত্তিস্থল
সম্পাদনাকাজুবাদামের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিল সহ মধ্য আমেরিকা এবং উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর পূর্ব ব্রাজিল।[১][২][৩] বর্তমানে প্রধানত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া,মাদাগাস্কার প্রভৃতি দেশে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিডনি আকৃতির বীজ কাজু বাদাম গন্ধ ও স্বাদে মিষ্টি-জাতীয়।[৪][৫] ওজন হ্রাস, রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর হৃদপিণ্ড গঠন, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধ, ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় এটি এক দারুণ পুষ্টিকর খাবার।
বাংলাদেশে কাজু গাছ
সম্পাদনাখাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টার খেজুরবাগান, সেনানিবাস, হর্টিকালচার সেন্টার নারানখাইয়া, পানখাইয়া পাড়া, কমলছড়ি ও জামতলী এলাকায় কাজুবাদামের গাছ চোখে পড়ে। এ ছাড়া, রামগড় উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারেও রয়েছে কাজুবাদামের বাগান। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি আকারে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে কাজুবাদাম চাষের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে খাগড়াছড়ির কৃষিপণ্যের মধ্যে কাজুবাদামও একটি বিশেষ স্থান করে নিতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
খাবার পদ্ধতি
সম্পাদনাকাজুবাদাম সাধারণত ভেজে খাওয়া হয়। পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত কাজুবাদামকে দা দিয়ে কেটে খুঁচিয়ে শাঁস বের করা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে বীজের আবরণ তুলে ফেলা হয়। লবণ-জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ভাজা হয়। এতে লবণাক্ত স্বাদের কাজুবাদাম পাওয়া যায়। আর মিষ্টি স্বাদের কাজুবাদামের জন্য বাদাম ভাজার পর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর জন্যও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়।
পুষ্টিগুণ
সম্পাদনাবিবিধ পুষ্টিপদার্থ যেমন তামা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, ফসফরাস, আয়রন, সেলেনিয়াম, থায়ামিন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিপদার্থ ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬ ইত্যাদিতে ঠাসা কাজু বাদাম। এটি একটি ফাইবার জাতীয় খাবার যা কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে। ১ আউন্স বা প্রায় ২৮.৩ গ্রাম কাজু বাদাম থেকে মোটামুটিভাবে ১৫৭ গ্রাম ক্যালরি, ৫.১৭ গ্রাম প্রোটিন, ১২.৪৩ গ্রাম ফ্যাট, ৮.৫৬ গ্রাম শর্করা, ০.৯ গ্রাম ফাইবার, ১.৬৮ গ্রাম চিনি পাওয়া যায়।[৬][৭]
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান | |
---|---|
শক্তি | ৫৫৩ kcal (২,৩১০ কিজু) |
৩০.১৯ g | |
শ্বেতসার | ২৩.৪৯ g |
চিনি | ৫.৯১ g ০.০০ g |
খাদ্য আঁশ | ৩.৩ g |
৪৩.৮৫ g | |
সুসিক্ত স্নেহ পদার্থ | ৭.৭৮৩ g |
এককঅসুসিক্ত | ২৩.৭৯৭ g |
বহুঅসুসিক্ত | ৭.৮৪৫ g |
১৮.২২ g | |
ভিটামিন | পরিমাণ দৈপ%† |
ভিটামিন এ | ০ IU |
থায়ামিন (বি১) | ৩৭% ০.৪২৩ মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন (বি২) | ৫% ০.০৫৮ মিগ্রা |
নায়াসিন (বি৩) | ৭% ১.০৬২ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ১৭% ০.৮৬ মিগ্রা |
ভিটামিন বি৬ | ৩২% ০.৪১৭ মিগ্রা |
ফোলেট (বি৯) | ৬% ২৫ μg |
ভিটামিন বি১২ | ০% ০ μg |
ভিটামিন সি | ১% ০.৫ মিগ্রা |
ভিটামিন ডি | ০% ০ μg |
ভিটামিন ই | ৬% ০.৯০ মিগ্রা |
ভিটামিন কে | ৩২% ৩৪.১ μg |
খনিজ | পরিমাণ দৈপ%† |
ক্যালসিয়াম | ৪% ৩৭ মিগ্রা |
কপার | ১১০% ২.২ মিগ্রা |
লৌহ | ৫১% ৬.৬৮ মিগ্রা |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮২% ২৯২ মিগ্রা |
ম্যাঙ্গানিজ | ৭৯% ১.৬৬ মিগ্রা |
ফসফরাস | ৮৫% ৫৯৩ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ১৪% ৬৬০ মিগ্রা |
সেলেনিয়াম | ২৮% ১৯.৯ μg |
সোডিয়াম | ১% ১২ মিগ্রা |
জিংক | ৬১% ৫.৭৮ মিগ্রা |
অন্যান্য উপাদান | পরিমাণ |
পানি | ৫.২০ g |
| |
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল |
আকার
সম্পাদনাপূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা অর্ধডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতো। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাজুবাদামের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।[৮]
চাষ পদ্ধতি
সম্পাদনারোপন
সম্পাদনাবীজ এবং কলম উভয় পদ্ধতিতেই কাজু বাদামের বংশ বিস্তার করা যায়। কলমের মধ্যে গুটি কলম, জোড় কলম, চোখ কলম ইত্যাদি প্রধান। কাজু বাদাম গাছ ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বীজ থেকে পলি ব্যাগে চারা তৈরি করে কিংবা কলম প্রস্তুত করে জমিতে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের আগে ৭-৮ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে ১ ঘনমিটার আয়তনের গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তে সবুজ সার এবং পরিমাণমত ইউরিয়া ও টিএসপি সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ১৫ দিন পর চারা লাগাতে হবে। চারা গজালে একটি সতেজ চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হয়। বীজের পরিবর্তে চারা তৈরি করে নিয়েও রোপণ করা যায়। হেক্টর প্রতি প্রয়োজনীয় চারার সংখ্যা ২৪৫-৩৩৫ টি।
সার
সম্পাদনাকাজু বাদাম গাছে খুব একটা সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ভাল ফলনের জন্য প্রতি ফলন্ত গাছে গোবর-৪০কেজি, ইউরিয়া-১কেজি, টি.এস.পি.-১কেজি এবং এম.পি.সার ১কেজি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পাতা শোষক পোকা ও পাতা কাটা পোকা প্রভৃতি কাজু বাদামের ক্ষতি সাধন করে। তাই পরিমিত পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করে কীটপতঙ্গ দমন করা যায়।
পরিচর্যা
সম্পাদনাআগাছা পরিষ্কার করা, মরা অপ্রয়োজনীয় ডাল ছাটাই করা এবং সাথী ফসল চাষ করা প্রয়োজন।
ফলন
সম্পাদনাচারা রোপণের পর গাছের বয়স তিন বছর হলে প্রথম ফুল এবং ফল আসে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন (বৈশাখ-আষাঢ় মাস ) মাস কাজু বাদাম সংগ্রহকাল। গাছ থেকে সুস্থ ফল সংগ্রহ করে খোষ ছাড়িয়ে বাদাম সংগ্রহ করে তারপর ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে ভেজে প্যাকেট-জাত করা হয়। সাধারণত একটি গাছ থেকে ৫০-৬০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। ১ কেজি ফল প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে গড়ে ২৫০ গ্রাম কাজু বাদাম পাওয়া যায়। জাতভেদে ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে।[৯]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
কাজুবাদাম গাছের কান্ডের একটি ছবি, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাংলদেশ। ২০১৬।
-
কাঁচা কাজু ফল
-
Cashew sprouts are eaten raw or cooked
-
Cashew fruit seller in India
-
Distilling cashew apple liquor (muchekele) in Mozambique
-
Shriveled, fermented cashew apples ready for distillation, Mozambique
-
Anacardium occidentale, from Koehler's Medicinal-Plants (1887)
-
Mameluca woman under a fruiting cashew tree (1641–1644) by Albert Eckhout. National Museum of Denmark
-
View of a Cashew tree stem in Lawachara National Park, Bangladesh. Photo of 2016.
-
Cashew nuts for sale in West Bengal, India.
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Morton, Julia F (1987). Cashew apple, Anacardium occidentale L. Fruits of warm climates, Julia F. Morton. Center for New Crops and Plant Products, Department of Horticulture and Landscape Architecture, Purdue University, W. Lafayette, IN. pp. 239–240. ISBN 978-0-9610184-1-2. Archived from the original on 2007-03-15. Retrieved 2007-03-18.
- ↑ "Cashew"। Department of Horticulture, Cornell University। ২০ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৯।
- ↑ James A Duke (১৯৮৩)। "Anacardium occidentale L."। Handbook of Energy Crops. (unpublished); In: NewCROP, New Crop Resource Online Program, Center for New Crops and Plant Products, Purdue University। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ "কাজু বাদাম"।
- ↑ "কাজু বাদামের পুষ্টি"।
- ↑ "কাজু বাদামের স্বাস্থ্য পুষ্টি"।
- ↑ "কাজু বাদামের পুষ্টি উপাদানসমূহ"।
- ↑ পাহাড়ে কাজুবাদাম ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ জুন ২০১৭ তারিখে, নীরব চৌধুরী, খাগড়াছড়ি, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৬-০৫-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ কাজু বাদামের চারা রোপণে করণীয় ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে, মো. আলী আশরাফ খান, দৈনিক আমার দেশ। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ৩০-০৫-২০১১ খ্রিস্টাব্দ।