বুচ হোয়াইট
ডেভিড উইলিয়াম বুচ হোয়াইট (ইংরেজি: Butch White; জন্ম: ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ - মৃত্যু: ১ আগস্ট, ২০০৮) ওয়ারউইকশায়ারের সাটন কোল্ডফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬১ থেকে ১৯৬২ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।[১]
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ডেভিড উইলিয়াম হোয়াইট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | সাটন কোল্ডফিল্ড, ওয়ারউইকশায়ার, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য | ১৪ ডিসেম্বর ১৯৩৫|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১ আগস্ট ২০০৮ পালবোরা, পশ্চিম সাসেক্স, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য | (বয়স ৭২)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | বামহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বোলার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৪০৬) | ২১ অক্টোবর ১৯৬১ বনাম পাকিস্তান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ বনাম পাকিস্তান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৪ জানুয়ারি ২০২০ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্ল্যামারগন ও হ্যাম্পশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে বামহাতে কার্যকরী ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন বুচ হোয়াইট।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
সম্পাদনাওয়ারউইকশায়ারের সাটন কোল্ডফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বুচ হোয়াইট যুবাবস্থায় বার্মিংহাম লীগে অ্যাস্টন ইউনিটি ও ওয়ারউইকশায়ার দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে খেলেছিলেন। জাতীয় সেবার অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীতে চালক প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এ সময়েই হ্যাম্পশায়ারের সদস্যরূপে খেলেন। ১৯৫৭ সালে হ্যাম্পশায়ারের সদস্যরূপে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।
১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বুচ হোয়াইটের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত হ্যাম্পশায়ার এবং ১৯৭২ সালে গ্ল্যামারগনের পক্ষে চূড়ান্ত মৌসুম খেলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময় প্রায় ১৬ বছর হ্যাম্পশায়ার দলের পক্ষে পাড় করে দেন।
১৯৫৮ সালে কাউন্টি স্টাফ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৯ সালে ভিক ক্যানিংয়ের অবসর গ্রহণের পর হ্যাম্পশায়ারের বোলিং উদ্বোধনের সুযোগ আসে তার। নতুন বল হাতে নিয়ে ডেরেক শ্যাকলটনের সাথে সুন্দর জুটি গড়েন। তবে, এক বছরের মধ্যেই শ্যাকলটনের দেহাবসান ঘটে। এরপর থেকে পরবর্তী এক দশক ১৯৭১ সালে আঘাতের কারণে অংশগ্রহণ বাদে বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব কাঁধে নেন।
পেস বোলার হিসেবে বুচ হোয়াইট ১৫ মৌসুম হ্যাম্পশায়ারের পক্ষে খেলে ১০৯৭টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভ করেছেন। তন্মধ্যে, ১৯৬১ সালে কলিন ইঙ্গলবি-ম্যাকেঞ্জি’র অধিনায়কত্বে প্রথমবারের মতো হ্যাম্পশায়ার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। এ পর্যায়ে হোয়াইট ও শ্যাকলটন প্রত্যেকেই শতাধিক উইকেট লাভ করেছিলেন। চার মৌসুমে শতাধিক উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ১৯৬৫ সালে মিডলসবোরায় জিওফ বয়কট, ব্রায়ান ক্লোজ, রে ইলিংওয়ার্থ, ফ্রেড ট্রুম্যানের ন্যায় তারকাসমৃদ্ধ ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ৬/১০ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। ফলশ্রুতিতে ইয়র্কশায়ার দল তাদের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ২৩ রান সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়।
১৯৬০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অফ স্পিনার ড্যান পিয়াচডের বলে এক ওভারে ২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। একটি বলে রান না পেলেও পরবর্তীতে চারটি ছক্কা ও তারপর একটি চারের মার মারেন। ১৯৬৬ সালে পোর্টস মাউথে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৯/৪৪ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। চার মৌসুমে শতাধিক উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯৭২ সালে গ্ল্যামারগনের পক্ষে এক মৌসুম খেলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সম্পাদনাসমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেছিলেন বুচ হোয়াইট। ২১ অক্টোবর, ১৯৬১ তারিখে লাহোরে স্বাগতিক পাকিস্তান দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২ তারিখে করাচীতে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
১৯৬১-৬২ মৌসুমে টেড ডেক্সটারের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান ও ভারত সফরে ঐ দুই টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। তার বোলিং ভঙ্গীমার কারণে টেস্ট অভিষেকে পর্ব ক্ষাণিকটা বিলম্বিত হয়। এ সময়েই জিওফ গ্রিফিনের বোলিং ভঙ্গীমা নিয়ে বিতর্কিত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। নিজের স্বর্ণালী সময়ে দলে অন্তর্ভূক্তির প্রশ্নে ব্রায়ান স্ট্যাদাম ও ফ্রেড ট্রুম্যানের সাথে তাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয় এবং দলের বাইরে রাখা হয়।
অক্টোবর, ১৯৬১ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে বোলিং উদ্বোধন করতে নেমেছিলেন তিনি। ১৬ বলের ব্যবধানে পাকিস্তানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হানিফ মোহাম্মদ ও ইমতিয়াজ আহমেদকে বিদেয় করেন। ইনিংসে তার বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ৩/৬৫।[২] অভিষেক ঘটা খেলায় তার দল পাঁচ উইকেটে জয়লাভ করেছিল।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২ সালে করাচীতে এ সফরের চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। প্রথম বলেই ইমতিয়াজ আহমেদকে বোল্ড করেন। কিন্তু, পরবর্তীতে মাংসেপশীতে টান পড়ায় মাত্র ১৬ বল করার পরপরই খেলা চালিয়ে যেতে অসমর্থ হন।[৩] এ সফরে উপর্যুপরি আঘাতের কবলে পড়লেও বোলিং গড়ে সফরকারী দলের মধ্যে শীর্ষস্থানে ছিলেন। ১৯.৮৪ গড়ে ৩২ উইকেট পান।
খেলার ধরন
সম্পাদনাপেশীবহুল ও চওড়া কাঁধের অধিকারী বুচ হোয়াইট দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। বেশ দম নিয়ে ২৫ গজ দৌড়ে উইকেট অভিমুখে ছুটতেন। তার পেসে ব্যাটসম্যানেরা বিচলিতবোধ করতেন ও বল ইনসুইঙ্গারের মাধ্যমে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ফেলতেন। ১৯৬০ সালে দুইবার পল গিবের বিপক্ষে ঢিলাকৃতিতে বোলিং করায় নো-বলের কবলে পড়েন ও পরবর্তীতে তার ভুল চোখে ধরা পড়ে। তবে, দলীয় সঙ্গী রয় মার্শালের অভিমত, হোয়াইটের বোলিং ভঙ্গীমায় এ ধরনের বল নিক্ষেপের ঘটনা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার।
প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের এক সময়ে বুচ হোয়াইটকে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে গণনা করা হতো। হ্যাম্পশায়ারের অনেক সমর্থকই তখন ইংল্যান্ডের দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে তাকে গণ্য করতেন। ব্যাটিংয়ে তিনি মোটেই সুবিধের ছিলেন না। এবড়োখেবড়ো ব্যাটিং করতেন তিনি।
অবসর
সম্পাদনা১৯৬৯ সালে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলার জন্যে মনোনীত হন। £৪,৫৪৭ পাউন্ড-স্টার্লিং লাভ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে ক্রমাগত আঘাতে খেলায় অংশগ্রহণের বাঁধার প্রাচীর গড়ে তুলে। ফলে, দল থেকে বাদ পড়েন। ১৯৭২ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে গ্ল্যামারগনের প্রতিনিধিত্ব করেন। একটি কাউন্টি খেলায় অংশ নিলেও কয়েকটি সীমিত ওভারের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর সাসেক্সে বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানে হোরশ্যামের ক্রাইস্টস হাসপাতালে কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও, হ্যাম্পশায়ার লীগে নিউ মিল্টন দলের পক্ষে খেলেছিলেন তিনি। নরফোক ডাচেস একাদশের সদস্যরূপে আরুনডেন ক্যাসলে নিয়মিতভাবে অংশ নিতেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি গল্ফেও দক্ষ ছিলেন তিনি। ম্যানিংস হিথ জিসিতে মার্শাল হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তবে, পালবোরায় পশ্চিম সাসেক্স গল্ফ ক্লাবের সদস্য হন। সেখানে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন ও ক্লাবের সকল ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন তিনি। দুইবার পাণিগ্রহণ করেছিলেন। তার একটি সন্তান রয়েছে। পশ্চিম সাসেক্সের পালবোরায় গল্ফ কোর্স পরিচালনাকালে হৃদযন্ত্র ক্রীয়ায় আক্রান্ত হন। ১ আগস্ট, ২০০৮ তারিখে ৭২ বছর বয়সে পশ্চিম সাসেক্সের পালবোরা এলাকায় বুচ হোয়াইটের দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Ex-Hampshire paceman White dies, BBC News, 2 August 2008
- ↑ Cricinfo.com
- ↑ Cricinfo.com
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে বুচ হোয়াইট (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে বুচ হোয়াইট (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Obituary, The Daily Telegraph, 5 August 2008
- Obituary, The Times, 7 August 2008
- Obituary ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে, The Independent, 14 August 2008
- Obituary, The Guardian, 19 August 2008