আরিফ আলভী

আরিফ-উর-রেহমান আলভী ( উর্দু: عارف الرحمان علوی‎‎ ; জন্ম ২৯ আগস্ট ১৯৪৯) একজন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ যিনি পাকিস্তানের ১৩ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৯ ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে ৯ মার্চ ২০২৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

আরিফ আলভী
দাপ্তরিক প্রতিকৃতি, ২০১৮
পাকিস্তানের ১৩শ রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ – ৯ মার্চ ২০২৪
প্রধানমন্ত্রী	ইমরান খান শাহবাজ শরীফ
পূর্বসূরী	মামনুন হুসাইন
উত্তরসূরী	আসিফ আলি জারদারি
পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সদস্য
কাজের মেয়াদ ১৩ আগস্ট ২০১৮ – ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
পূর্বসূরী	নিজে
উত্তরসূরী	আফতাব সিদ্দিকী
সংসদীয় এলাকা	দক্ষিণ করাচী-২
কাজের মেয়াদ ১ জুন ২০১৩ – ৩১ মে ২০১৮
পূর্বসূরী	খোশবখত সুজাত
উত্তরসূরী	নিজ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম	(1949-08-29) ২৯ আগস্ট ১৯৪৯ করাচী, সিন্ধু, পাকিস্তান
জাতীয়তা	পাকিস্তানি
রাজনৈতিক দল	পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ
দাম্পত্য সঙ্গী	সামিনা আলভী
সন্তান	৪
বাসস্থান	আইওয়ান-ই-সদর, ইসলামাবাদ, পাকিস্তান
প্রাক্তন শিক্ষার্থী	করাচি গ্রামার স্কুল (বহিষ্কৃত) ডি'মন্টমোরেন্সী ডেন্টিস্ট্রি কলেজ মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়

তিনি জুন ২০১৩ থেকে মে ২০১৮ এবং পুনরায় আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, আলভি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরে ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮-তে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ।

তার নাতি-নাতনি হলেন হরিম আলভী, মরিয়ম আলভী, খুবাইব আলভী, খাদিজাহ আলভী, নাইমা আলভী, মুনিব আলভী, আহমদ আলভী, আরিবা আলভী, আয়ান আলভী

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

তিনি ১৯৪৯ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানের করাচিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

তাঁর পিতা, হাবিব-উর-রেহমান এলাহী আলভী ছিলেন ভারতে একজন দাঁতের চিকিৎসক যিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে করাচিতে চলে এসেছিলেন, এবং সদর শহরে একটি ডেন্টাল ক্লিনিক চালু করেছিলেন। তার বাবা জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের সাথে রাজনৈতিকভাবে যুক্ত হন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের ওয়েবসাইট অনুসারে, আলভির বাবা ছিলেন জওহরলাল নেহেরুর ডেন্টিস্ট।

করাচি গ্রামার স্কুল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরে, তিনি করাচিতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন, এবং সালে দন্তচিকিত্সার জন্য লাহোরে চলে যান। তিনি ডি'মন্টমোরেন্সী কলেজ অফ ডেন্টিস্ট্রি থেকে ডেন্টাল সার্জারি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে প্রোস্টোডোনটিক্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে প্রশান্ত মহাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে অর্থোডোনটিক্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। পাকিস্তানে ফিরে আসার পর তিনি ডেন্টিস্ট্রি এবং আলভি ডেন্টাল হাসপাতাল স্থাপন শুরু করেন।

আলভির বিয়ে হয়েছে সামিনা আলভির সাথে। এই দম্পতির চার বিবাহিত সন্তান রয়েছে।

পেশাগত জীবন

১৯৮১ সালে, তিনি প্রথম পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ডেন্টাল কনফারেন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি তৃতীয় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ডেন্টাল কনফারেন্সের চেয়ারম্যান হন। তিনি পঞ্চম পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ডেন্টাল সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক হন। ১৯৯৭ সালে, আলভি আমেরিকান বোর্ড অফ অর্থোডাটিক্সের একজন কূটনীতিক হয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করেন এবং এর সভাপতি হিসাবে যোগ দেন। তিনি ২৮ তম এশিয়া প্যাসিফিক ডেন্টাল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তিনি কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস পাকিস্তানের অর্থোডন্টিক্স অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০০৬ সালে, তিনি এশিয়া প্যাসিফিক ডেন্টাল ফেডারেশনের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের বছর তিনি এফডিআই ওয়ার্ল্ড ডেন্টাল ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক পেশা

আলভি পোলিং এজেন্ট হিসাবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন এবং একটি ধর্মীয় দলে যোগ দিয়েছিলেন।

ডি'মন্টমোরেন্সী কলেজ অফ ডেন্টিস্টে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নগুলির সক্রিয় সদস্য হন। তিনি জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান (জেআই) এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী জমিয়তে তালাবের সাথে রাজনৈতিকভাবে যুক্ত হন এবং ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন। তাঁর প্রথম দিনগুলিতে, তিনি আইয়ুব খান সরকারের সমালোচক ছিলেন এবং ১৯ ৯৭ সালে দ্য মল, লাহোরে একটি প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার সময় দু'বার গুলিবিদ্ধ হন; একটি গুলি এখনও তার শরীরে রইল।

জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ঘোষণার পরে তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

১৯৭৯ সালে করাচির একটি নির্বাচনী এলাকা থেকে জেআইয়ের প্রার্থী হিসাবে তিনি সিন্ধু প্রাদেশিক পরিষদে একটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন তবে তিনি ব্যর্থ হন। ১৯৮৮ সালে তিনি জেআই ত্যাগ করেন এবং রাজনীতি ছেড়ে যান। আলভির মতে, তিনি দলটি ত্যাগ করেছেন কারণ রাজনীতিতে তাদের সরু মনোনিবেশের ফলে তিনি মোহিত হয়েছিলেন এবং "সর্বদা অনুভব করেছিলেন যে পাকিস্তানের সমস্যার আসল সমাধান হল সৎ নেতৃত্ব"।

ইমরান খানের অনুপ্রেরণা পেয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফে যোগ দিয়েছিলেন এবং তিনি দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি পিটিআইয়ের দলীয় গঠনতন্ত্র তৈরিতে অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৯৭ সালে পিটিআইয়ের সিন্ধ অধ্যায়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তিনি এক বছর পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।

আলভী ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পিএস -৯৯ (করাচি দক্ষিণ-ভি) থেকে পিটিআইয়ের প্রার্থী হয়ে সিন্ধুর প্রাদেশিক পরিষদের আসনে প্রার্থী হন, তবে তিনি ব্যর্থ হন। তিনি ২,২০০ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে এসেছিলেন এবং আসনটি সালেম জিয়ার কাছে হেরেছিলেন ।

২০০১ সালে তিনি পিটিআইয়ের সহ-সভাপতি হন।

২০০২ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পিএস -৯০ (করাচি -২) আসনের পিটিআইয়ের প্রার্থী হিসাবে তিনি সিন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন, তবে তিনি ব্যর্থ হন। তিনি ১,২৬৬ ভোট পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে এসে মুত্তাহিদা মজলিস-আমাল (এমএমএ) প্রার্থী উমর সাদিকের কাছে আসনটি হেরেছিলেন।

২০০৬ সালে, তিনি পিটিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল হয়েছিলেন, তিনি ২০১৩ অবধি এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৩ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে তিনি নির্বাচনী অঞ্চল এনএ-250 (করাচি-দ্বাদশ) থেকে পিটিআইয়ের প্রার্থী হিসাবে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন । তিনি ৭৭,৬৫৯ ভোট পেয়ে খুশখাত সুজাতকে পরাজিত করেছিলেন । তার সফল নির্বাচনের পরে, তিনি ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে সিন্ধু থেকে জাতীয় পরিষদের একটি আসনে জয়ী একমাত্র পিটিআই সদস্য হয়েছিলেন।

২০১৬ সালে তাকে পিটিআই সিন্ধু অধ্যায়ের সভাপতি করা হয়েছিল।

২০১৮ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে তিনি নির্বাচনী এলাকা এনএ -৪77 (করাচি দক্ষিণ -২) থেকে পিটিআইয়ের প্রার্থী হিসাবে জাতীয় পরিষদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন । তিনি ৯১,০২০ ভোট পেয়েছেন এবং তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের প্রার্থী সৈয়দ জামান আলী জাফারিকে পরাজিত করেছিলেন।

১৮ আগস্ট ২০১৮ এ, পিটিআই তাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেছিল। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ এ, তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পাকিস্তানের ১৩শ রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন । তিনি ৩৫২ টি নির্বাচনী ভোট পেয়ে ফজল-উর-রেহমান এবং আয়েতাজ আহসানকে যথাক্রমে ১৮৪ এবং ১২৪ ভোট পেয়ে পরাজিত করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পরে, আলভি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং সরকার জোটকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি পাকিস্তানের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি যার পরিবার ভারত বিভাগের পরে ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে এসেছিল। 5 সেপ্টেম্বর ২০১৮ এ, তিনি তার জাতীয় সংসদ আসনটি ত্যাগ করেন। ৯ সেপ্টেম্বর, তিনি মামনুন হুসেনের স্থলাভিষিক্ত হন এবং পাকিস্তানের ১৩ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। ১ সেপ্টেম্বর, তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার ক্ষমতায় প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিষদে ভাষণ দিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ

২০১৮ সালে, তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কম্পিউটিংয়ের জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইনিশিয়েটিভ (পিআইএআইসি) শুরু করেছিলেন ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন এবং ক্লাউড নেটিভ কম্পিউটিং এবং ইন্টারনেট অফ থিংস-এ শিক্ষা, গবেষণা ও ব্যবসায়ের সুযোগগুলি উন্নয়নে সহায়তার জন্য বেসরকারী অর্থায়নে অলাভজনক শিক্ষামূলক উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (৪ আইআইআর) এর দ্বারপ্রান্তে রয়েছে যা শিল্পকর্মের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দেবে।

অলাভজনক এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারত্বের সহায়তায় এই উদ্যোগটি পরিচালিত হচ্ছে। এই তিন অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে প্যানাক্লাউড ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ আগস্ট ২০২০ তারিখে, যার সিইও জিয়া উল্লাহ খান উদ্যোগের প্রধান অপারেটিং অফিসার, পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সায়লানি ওয়েলফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্টের মতো অলাভজনক।

এক বছরের মধ্যে ১০০,০০০ শিক্ষার্থী ভর্তির প্রাথমিক লক্ষ্য রয়েছে এই প্রোগ্রামটির।

অনুষ্ঠানটি করাচী শহরে চালু করা হয়েছে যেখানে দেওয়া হচ্ছে চারটি শাখায় প্রায় ১২,০০০ শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছেন এবং এটি ইসলামাবাদ এবং ফয়সালবাদে দেওয়ার জন্য নিবন্ধকরণ চলছে। অদূর ভবিষ্যতে এই প্রোগ্রামটি লাহোর, পেশোয়ার এবং কোয়েটায় প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তিতে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি

পিআইএআইসির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের বেশিরভাগ শহরে মানসম্মত এবং সাশ্রয়ী মূল্যের উচ্চ প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের জন্য মহিলাদের একটি জলবাহী সরবরাহ করা। এর ফলে পিআইএআইসি- র একটি নারীর ক্ষমতায়ন বিভাগ " প্রযুক্তিতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি " তৈরি হয়েছে । বিভাগ নেতৃত্বে হিরা খান, যিনি হয় সিওও এর প্যানক্ল্লাউড (প্রা। ), লিমিটেড এবং একটি সুপরিচিত আইটি প্রশিক্ষক এবং সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । তিনি পাকিস্তানের নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিশেষত তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।