সিন্ধু প্রদেশ (১৯৩৬–৫৫)

ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রদেশ
(সিন্ধু প্রদেশ (১৯৩৬-৫৫) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

সিন্ধু প্রদেশ হচ্ছে ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ব্রিটিশ ভারতের এবং ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী পাকিস্তানের একটি প্রাক্তন প্রদেশব্রিটিশ শাসনামলে বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত প্রাক্তন খাইরপুর নামক দেশীয় রাজ্য ব্যতীত বর্তমান সিন্ধু প্রদেশের সমগ্র অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এর রাজধানী ছিল করাচি। তবে পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রদেশটির রাজধানী শহর করাচিকে সিন্ধু প্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে সদ্য-স্বাধীন দেশের রাজধানীতে পরিণত করা হয়।

সিন্ধু প্রদেশ
ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশ (১৯৩৬–৪৭)
পাকিস্তান অধিরাজ্য/পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রদেশ (১৯৪৭–৫৫)
১৯৩৬–১৯৫৫
সিন্ধুর পতাকা

লাল রঙে প্রদর্শিত ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী সিন্ধু প্রদেশ
রাজধানীকরাচি (1936-1947)
হায়দারাবাদ, সিন্ধু (1947-1955)
আয়তন 
• 
১,২৩,০৮০ বর্গকিলোমিটার (৪৭,৫২০ বর্গমাইল)
ইতিহাস 
• সিন্ধু বিভাগের পুনঃনামকরণ
১ এপ্রিল ১৯৩৬
১৪ আগস্ট ১৯৪৭
• বিলুপ্ত
১৪ অক্টোবর ১৯৫৫
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
বোম্বে প্রেসিডেন্সি
পশ্চিম পাকিস্তান
বর্তমানে যার অংশসিন্ধু প্রদেশের

অবস্থান সম্পাদনা

এই প্রদেশটির পশ্চিমে ছিল করাচি (১৯৪৮ সালের পর থেকে সিন্ধু থেকে বিচ্ছিন্ন ফেডারেল রাজধানী অঞ্চলের অভ্যন্তরে) এবং লাস বেলা এবং কালাত রাজ্য। উত্তরে ছিল বেলুচিস্তান এবং পশ্চিম পাঞ্জাব প্রদেশ। এই প্রদেশটির উত্তর-পূর্বে ছিল বাহওয়ালপুর রাজ্য। এছাড়াও প্রদেশটি খাইরপুর রাজ্যকে তিনদিক থেকে বেষ্টন করে রেখেছিল। এর পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছিল ভারতের রাজস্থান এবং গুজরাত রাজ্য। অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল আরব সাগর। সিন্ধুর পুরো উপকূলরেখাতেই সিন্ধু নদের ব-দ্বীপ সহ অন্যান্য ব-দ্বীপ বর্তমান সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচি শহরের সাথে সিন্ধুর সীমানা অবধি রয়েছে।

ইতিহাস সম্পাদনা

খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ অব্দের প্রথম দিকে মহেঞ্জোদারোতে সিন্ধু সভ্যতার মাধ্যমে সিন্ধু অঞ্চলে সর্বপ্রথম মানববসতি স্থাপিত হয়েছিল। ম্যাসেডোনীয় সাম্রাজ্যের বিস্তারের পর এটি সিন্ধুর ইতিহাসে গ্রিক প্রভাব ফেলে। ফলে সিন্ধুর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির সাথে এর বাণিজ্য বিকশিত হয়। রাই রাজবংশ থেকে শুরু করে আরঘুন রাজবংশের সমাপ্তি ঘটার মধ্যবর্তী সময়ে সিন্ধুতে বেশ কয়েকটি সুন্নি মুসলিম ও রাজপুত রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে মহামতি আকবরের শাসনামলে মুঘলরা সিন্ধু জয় করে। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘলদের কাছ থেকে অঞ্চলটি দখল করে। ১৮৩৩ সালে সিন্ধু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বোম্বে প্রেসিডেন্সির অংশ হয়। কয়েক বছর পর এটি সিন্ধু প্রদেশে পরিণত হয়।

১৯৪৭–১৯৫৫ সম্পাদনা

সিন্ধুর প্রাদেশিক পরিষদ পাকিস্তানে যোগদানের পক্ষে সম্মত হওয়ায় ১৯৪৭ সালে সিন্ধু নবগঠিত পাকিস্তান অধিরাজ্যের (বর্তমান পাকিস্তান) অংশ হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর ঘোষিত এক ইউনিট ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৯৫৫ সালে এই প্রদেশটি বর্তমান পাকিস্তানের পুরো অংশ নিয়ে নবগঠিত পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশে একীভূত হয়।

জনউপাত্ত সম্পাদনা

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় সিন্ধু বহু শতাব্দী ধরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। তবে পুরো প্রদেশ জুড়েই হিন্দুরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু ছিল। ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং ভারত থেকে ২০ লক্ষ মুসলিম শরণার্থীর প্রভাবে বহু হিন্দু ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

ভারত থেকে সিন্ধুতে আসা মুসলিম শরণার্থীদের বেশিরভাগই উর্দু ভাষী ছিল। তাই সিন্ধুর সরকারী ভাষা সিন্ধি হলেও সিন্ধুর বড় শহরগুলির অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্টানে উর্দু শিক্ষাদান শুরু হয়।

সরকার সম্পাদনা

 
স্বাধীনতা-উত্তর প্রদেশটির মানচিত্র

১৯৩৬ সালে সিন্ধুকে একটি প্রদেশে পরিণত করা হলে সিন্ধুর গভর্নর এবং প্রধানমন্ত্রীর (পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী) দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়ে। পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশে সিন্ধু বিলীন হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৯৫৫ অবধি এই ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল।

কার্যকাল সিন্ধুর গভর্নর[১]
১ এপ্রিল ১৯৩৬ সিন্ধু প্রদেশ প্রতিষ্ঠিত
১ এপ্রিল ১৯৩৬ – ১ আগস্ট ১৯৩৮ স্যার ল্যান্সেলট গ্রাহাম (১ম মেয়াদ)
১ আগস্ট ১৯৩৮ – ১ ডিসেম্বর ১৯৩৮ জোসেফ গ্যারেট (ভারপ্রাপ্ত)
১ ডিসেম্বর ১৯৩৮ – ১ এপ্রিল ১৯৪১ স্যার ল্যান্সেলট গ্রাহাম (২য় মেয়াদ)
১ এপ্রিল ১৯৪১ – ১৫ জানুয়ারি ১৯৪৬ স্যার হিউ ডউ
১৫ জানুয়ারি ১৯৪৬ – ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ স্যার রবার্ট ফ্রান্সিস মুডি
১৪ আগস্ট ১৯৪৭ পাকিস্তানের স্বাধীনতা
১৪ আগস্ট ১৯৪৭ – ৪ অক্টোবর ১৯৪৮ স্যার গোলাম হোসেন হিদায়াতুল্লাহ
৪ অক্টোবর ১৯৪৮ – ১৯ নভেম্বর ১৯৫২ শেখ দ্বীন মুহাম্মদ
১৯ নভেম্বর ১৯৫২ – ১ মে ১৯৫৩ মিয়া আমিনউদ্দিন
১ মে ১৯৫৩ – ১২ আগস্ট ১৯৫৩ জর্জ ব্যাক্সান্ডাল কনস্টান্টটাইন
১২ আগস্ট ১৯৫৩ – ২৩ জুন ১৯৫৪ হাবিব ইব্রাহিম রহমতুল্লাহ
২৩ জুন ১৯৫৪ – ১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ ইফতিখার হোসেন খান
১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ সিন্ধু প্রদেশে বিলুপ্ত
প্রধানমন্ত্রী (দেশভাগের পূর্বে) মেয়াদ শুরু সমাপ্তি রাজনৈতিক দল / টীকা
গোলাম হোসেন হিদায়াতুল্লাহ (১ম মেয়াদ) ২৮ এপ্রিল ১৯৩৭ ২৩ মার্চ ১৯৩৮ মুসলিম পিপলস পার্টি
আল্লাহ বক্স সুম্রো (১ম মেয়াদ) ২৩ মার্চ ১৯৩৮ ১৮ এপ্রিল ১৯৪০ ইত্তেহাদ পার্টি
মীর বন্দে আলী খান তালপুর ১৮ এপ্রিল ১৯৪০ ৭ মার্চ ১৯৪১ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ
আল্লাহ বক্স সুম্রো (২য় মেয়াদ) ৭ মার্চ ১৯৪১ ১৪ অক্টোবর ১৯৪২ ইত্তেহাদ পার্টি
গোলাম হোসেন হিদায়াতুল্লাহ (২য় মেয়াদ) ১৪ অক্টোবর ১৯৪২ ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ মুসলিম পিপলস পার্টি
কার্যকাল সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী [১] রাজনৈতিক দল
১৪ আগস্ট ১৯৪৭ – ২৮ এপ্রিল ১৯৪৮ মোহাম্মদ আইয়ুব খুড়ো (১ম মেয়াদ) মুসলিম লীগ (পাকিস্তান)
৩ মে ১৯৪৮ – ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ পীর ইলাহি বখশ মুসলিম লীগ (পাকিস্তান)
৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ – ৭ মে ১৯৫০ ইউসুফ হারুন নির্দলীয়
৮ মে ১৯৫০ – ২৪ মার্চ ১৯৫১ কাজী ফজলুল্লাহ উবাইদুল্লাহ নির্দলীয়
২৫ মার্চ ১৯৫১ – ২৯ ডিসেম্বর ১৯৫১ মোহাম্মদ আইয়ুব খুড়ো (২য় মেয়াদ) মুসলিম লীগ (পাকিস্তান)
২৯ ডিসেম্বর ১৯৫১ – ২২ মে ১৯৫৩ গভর্নরের শাসন
২২ মে ১৯৫৩ – ৮ নভেম্বর ১৯৫৪ পিরজাদা আবদুস সাত্তার মুসলিম লীগ (পাকিস্তান)
৯ নভেম্বর ১৯৫৪ – ১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ মোহাম্মদ আইয়ুব খুড়ো (৩য় মেয়াদ) মুসলিম লীগ (পাকিস্তান)
১৪ অক্টোবর ১৯৫৫ সিন্ধু প্রদেশ বিলুপ্ত

নির্বাচন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Ben Cahoon, WorldStatesmen.org। "Pakistan Provinces"। ২০০৭-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৩ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

টেমপ্লেট:সিন্ধুর ইতিহাস