নিখিল ভারত মুসলিম লীগ

১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক দল

নিখিল ভারত মুসলিম লীগ (উর্দু: : مسلم لیگ‎‎), ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক দল যা ব্রিটিশ ভারত এবং ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান তৈরির পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।[] ভারত এবং পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর লীগ সংখ্যালঘু বা ছোট দল হিসেবে ভারতে বিশেষ করে কেরালায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়, এবং বিভিন্ন সময় অন্যান্য দলের সাথে ঐক্যজোটে সরকার গঠন করে। পাকিস্তানে লীগ দেশের প্রথম সরকার গঠন করে, কিন্তু ১৯৫০ সালে সামরিক শাসনের কারণে দলটিতে ভাঙন দেখা দেয়। মুসলিম লীগের কিছু অংশ ১৯৪৭ থেকে পাকিস্তানের বেশির ভাগ জনগণ শাসিত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালে দলটি পুনরায় জীবিত হয় এবং ১৯৭৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে ১৪টি আসনে জয় লাভ করে। তখন থেকেই দলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে পরিণত হয়।

মুসলিম লীগ
সভাপতিআগা খান ৩
প্রিজাইডিং নেতৃ(বৃন্দ)মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ
লিয়াকত আলী খান
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
খাজা নাজিমুদ্দিন
প্রতিষ্ঠাতাসৈয়দ আহমদ খান
প্রতিষ্ঠা৩০ ডিসেম্বর ১৯০৬ (1906-12-30)
ভাঙ্গন১৪ আগস্ট ১৯৪৭ (1947-08-14)
পরবর্তীপাকিস্তান মুসলিম লীগ
ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লিগ
সদর দপ্তরলক্ষ্ণৌ
সংবাদপত্রডন
ছাত্র শাখাআলিগড় আন্দোলন
ভাবাদর্শমুসলিম জাতীয়তাবাদ
রক্ষণশীলতা
দ্বিজাতি তত্ত্ব
ভারতের মুসলমানদের জন্য অসামরিক অধিকার
ধর্মইসলাম
আন্তর্জাতিক অধিভুক্তিসর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগ (লন্ডন অধ্যায়)
আনুষ্ঠানিক রঙসবুজ
 
সংসদীয় আসন
৩০ / ১০২

১৯৪৫ সালের সাধারণ নির্বাচন
নির্বাচনী প্রতীক
অর্ধচন্দ্র এবং তারা

ভারতবর্ষে মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণে এই দলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই দলের বিশিষ্ট নেতাদের মধ্যে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলি খান, খাজা নাজিমুদ্দিন, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুক হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৮৭৭ সালে আমীর আলীর উদ্যোগে ‘সেন্ট্রাল মোহামেডান এ্যাসোসিয়েশন’ গঠনের সাথে স্যার সৈয়দ আহমদ দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি মুসলমানদেরকে রাজনীতি থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস আত্মপ্রকাশ করার পর হিন্দি এবং উর্দুর বিরোধ সৃষ্টি হলে মুসলমানদের স্বার্থের ব্যাপারে সৈয়দ আহমদ সচেতন হয়ে উঠেন এবং ১৮৮৯ সালে রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডিফেন্স এ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করেন (১৮৮৯)। ১৮৯৩ সালে উত্তর ভারতে মোহমেডান ‘এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অরগানাইজেশন অব আপার ইনডিয়া’ গঠিত হয়। ১৯০৩ সালে সাহরানপুরে মুসলিম রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঞ্জাবে ‘মুসলিম লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। এদিকে বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র ভারত জুড়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিবাদ এবং মুসলিম বিদ্বেষের ঝড় বয়ে যাওয়ায় স্যার সলিমুল্লাহকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তোলে। তিনি সর্বভারতীয় পর্যায়ে মুসলিম ঐক্যের কথা ভাবতে শুরু করেন।

১৯০৬ সালের নভেম্বরে সলিমুল্লাহ সমগ্র ভারতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের নিকট পত্রালাপে নিজের অভিপ্রায় তুলে ধরলেন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘের প্রস্তাব রাখলেন। ১৯০৬ সালের ২৮-৩০শে ডিসেম্বর সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলন আহুত হল। ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সমগ্র ভারতের প্রায় ৮ হাজার প্রতিনিধি যোগ দিলেন। নবাব সলিমুল্লাহ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফেডারেন্সী’ অর্থাৎ সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘ গঠনের প্রস্তাব দেন; হাকিম আজমল খান, জাফর আলী এবং আরো কিছু প্রতিনিধি প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেন। কিছু প্রতিনিধির আপত্তির প্রেক্ষিতে কনফেডারেন্সী শব্দটি পরিত্যাগ করে লীগ শব্দটিকে গ্রহণ করা হয়। অবশেষে সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ঢাকায় এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে বঙ্গভঙ্গ সমর্থন এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের নিন্দা করা হয়। এ সংগঠনের ব্যাপারে শুরু থেকেই হিন্দু জনগোষ্ঠী বিরূপ অবস্থান নেয়। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত দি বেঙ্গলীপত্রিকা নবগঠিত মুসলিম লীগকে সলিমুল্লাহ লীগ হিসেবে অভিহিত করে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Jalal, Ayesha (1994) The Sole Spokesman: Jinnah, the Muslim League and the Demand for Pakistan. Cambridge University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২১-৪৫৮৫০-৪

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা