ফজলুর রহমান

পাকিস্তানী রাজনীতিবিদ

ফজলুর রহমান (উর্দু: فضل الرحمٰن‎‎) একজন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ যিনি জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের বর্তমান সভাপতি। ১৯৮৮ সাল থেকে বর্তমান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য। সাবেক মন্ত্রী ও ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন।[২]

মাওলানা মুফতী
ফজলুর রহমান
সভাপতি মুত্তাহিদা মজলিস-এ-আমল
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
২০ মার্চ ২০১৮
আমির জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম (এফ)
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১৯৮৮
বিরোধীদলীয় নেতা
কাজের মেয়াদ
২৫ মেয়ে ২০০৪ – ১৫ নভেম্বর ২০০৭
রাষ্ট্রপতিপারভেজ মুশাররফ
প্রধানমন্ত্রীশওকত আজিজ
পূর্বসূরীবেনজীর ভুট্টো
উত্তরসূরীচৌধুরী পারভেজ এলাহী
সদস্য পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ
কাজের মেয়াদ
১ জুন ২০১৩ – ৩১ মেয়ে ২০১৮
কাজের মেয়াদ
১৮ নভেম্বর ২০০২ – ১৮ নভেম্বর ২০০৭
সংসদীয় এলাকানির্বাচনী এলাকা এনএ -২৪ (ডেরা ইসমাইল খান)
কাজের মেয়াদ
১৭ মার্চ ২০০২ – ৩১ মেয়ে ২০১৩
সংসদীয় এলাকানির্বাচনী এলাকা এনএ -২৬
কাজের মেয়াদ
১৬ অক্টোবর ১৯৯৩ – ৫ নভেম্বর ১৯৯৬
কাজের মেয়াদ
২ ডিসেম্বর ১৯৮৮ – ৬ আগস্ট ১৯৯০
সংসদীয় এলাকাডেরা ইসমাইল খান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1953-06-19) ১৯ জুন ১৯৫৩ (বয়স ৭০)
ডেরা ইসমাইল খান জেলা, পাকিস্তান
জাতীয়তাপাকিস্তানি
রাজনৈতিক দলজমিয়ত উলামায়ে ইসলাম (এফ)
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
মুত্তাহিদা মজলিস-এ-আমল (২০০২–২০০৮)
সন্তানআসাদ মাহমুদ (ছেলে)[১]
পিতামুফতি মাহমুদ
আত্মীয়স্বজনমাওলানা লুৎফুর রহমান (ভাই)
আতাউর রহমান (ভাই)

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মাওলানা মুফতী ফজলুর রহমান ২১শে জুন ১৯৫৩ সালে ঈদুল আজহার দিন শুক্রবার ডেরা ইসমাঈল খান জেলার আব্দুল খয়েল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৩][৪][৪] তার পিতা মুফতি মাহমুদ ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে একজন সদস্য এবং জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ইসলামিক পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি এবং তার পরিবার দেওবন্দী আন্দোলনের অংশ।[৫][৬][৭][৮][৩]

শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

মুফতী ফজলুর রহমান মুলতানে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাস করেন ১৯৭৩ সালে। এরপর দারুল উলুম হক্কানিয়া আকুড়াখট মাদরাসা থেকে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ইসলামিয়তে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কায়রোতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[৯]

রাজনৈতিক ও কর্মজীবন সম্পাদনা

মাওলানা মুফতী ফজলুর রহমান পিতার হাত ধরেই রাজনীতিতে আগমন করেন। ৯ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে করাচির খালিকে দুনিয়া হলে প্রথম রাজনৈতিক বক্তব্যে তৎকালিন সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউল হকের রাষ্ট্রপ্রধান পদকে চ্যালেঞ্জ করেন। ১৯৮১ সালে তিনি যখন জেনারেল জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ফলে কারাবন্দি হন এবং ঐ বছরই জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব নির্বাচিত হন।[১০][১১]

জামিয়াত ওলামায়ে ইসলাম ইসলাম ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফজলের নেতৃত্বাধীন মূল দল জামিয়াত ওলামায়ে ইসলামের সাথে দুটি দলে বিভক্ত হয়।[১০][১১][১২]

১৯৮৮ সালের পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য হিসাবে প্রথমবারের মতো ডিআইখান আসন থেকে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[১০][১১]

১৯৯০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের আসনে ডিআইখান আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তবে নির্বাচনে জয়লাভ করেননি।[১১]

১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদ সদস্য হিসাবে দ্বিতীয়বারের মতো ডিআইখান আসন থেকে ইসলামিক জামহুরী মাহজ টিকিটে পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১১] বেনজীর ভুট্টো দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে মাওলানা ফজলুর রহমান জাতীয় সংসদের পররাস্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।[১০][১১] ১৯৯৬ সালে যখন বেনজীর ক্ষমতাচ্যুত হন, তখন নওয়াজ শরীফের তদন্ত ব্যুরো সর্বশক্তি নিয়োগ করেও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপন করতে পারেনি।

১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে চতুর্থবারের মতো পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তবে নির্বাচনে জয়লাভ করেননি।[১১]

২৮ মার্চ ১৯৯৫ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি আব্দুলাহ দরখাস্তির মৃত্যুর পর মাওলানা ফজলুর রহমান সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে পাকিস্তানের সবকয়টি ইসলামি দলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মুত্তাহিদা মজলিসে আমল (এমএমএ) নামে জোট গঠন করে পরবর্তী নির্বাচনে ৭২টি আসন লাভ করেন। তিনি দুটি আসনে জিতেছিলেন, এনএ -৪৪ এবং এনএ -২৫ পরে শূন্য ছিল।[১১] নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদের সম্ভাব্য প্রার্থী হয়েছিলেন তবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।[১০][১১]

তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[১৩] বিবিসি এক রির্পোটে তার সম্পর্কে পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেছে, ফজলুর রহমান একসঙ্গে পাঁচটি কাজ সমাধা করতে পারদর্শী। তাকে ২০০৫ সালের এশিয়ান সার্ভে রিপোর্টে এশিয়ার ৫ম ও বিশ্বের ১৯তম ধীমান রাজনীতিবিদ হিসেবে নির্ধারণ করেছে।[১৪] তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে এখন পর্যন্ত দশবার কারাবরণ করেন।

ফজলুর রহমান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের আসন দৌড়ে ২০০৮ পাকিস্তানি সাধারণ নির্বাচনের দুই আসন থেকে মুত্তাহিদা মজলিস-ই-অমল টিকিটে ষষ্ঠ বার এনএ ২৪ আসনে এবং এনএ ২৬ আসন থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।[১৫] ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের কাশ্মীর কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।[১৬] ২০০৮ সালের মধ্যে তিনি নিজেকে তালিবান থেকে দূরে সরিয়ে নিজেকে মধ্যপন্থী বলে অভিহিত করেছিলেন।[১১]

২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ তাকে কাশ্মীর সম্পর্কিত জাতীয় পরিষদের বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য একটি ফেডারেল মন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন।[১৭] আগস্ট ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসি তাকে আবার একই মর্যাদা দিয়েছিলেন।[১৭] ৩১ মে ২০১৮ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরেও তার ফেডারেল মন্ত্রীর পদটি বজায় ছিল।[১৮]

২৭ আগস্ট ২০১৮ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল তাকে ২০১৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করে।[১৯] ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে তিনি ১৮৪ ভোট পেয়েছিলেন।[২০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Hussain, Javed (৭ আগস্ট ২০১৮)। "MMA announces name of Fazl's son as nominee for NA deputy speaker post"DAWN.COM। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৮ 
  2. "কে এই মাওলানা ফজলুর রহমান?"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৬ 
  3. Ehtasham Khan (১৮ জুলাই ২০০৩)। "Why did the Pak Maulana visit Deoband?"। Rediff। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৯ 
  4. "If elections are held on time…"www.thenews.com.pk (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  5. Guidère, Mathieu (২০১২)। Historical Dictionary of Islamic Fundamentalism (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 365। আইএসবিএন 9780810879652। ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  6. "Detail Information"। ২৩ মার্চ ২০১১। ২৩ মার্চ ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৭ 
  7. "Maulana Fazlur Rehman"DAWN.COM। ৫ এপ্রিল ২০১৩। ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  8. "Profile: Maulana Fazlur Rahman"BBC। ৬ নভেম্বর ২০০২। ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  9. "(in urdu)فضل الرحمٰن"। ১৯ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. "Profile: Maulana Fazlur Rahman"BBC। ৬ নভেম্বর ২০০২। ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  11. "Maulana Fazlur Rehman"DAWN.COM। ৫ এপ্রিল ২০১৩। ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  12. "PARTY PROFILES: The party's on -DAWN – Herald Election 2008;"। Dawn। ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮। ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ 
  13. Trivedi, Dinesh (৩ জুন ২০০৭)। "India, Pak MPs clash over draft declaration on Kashmir"Outlook India। ৭ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১২ 
  14. "ইমরান খানকে উৎখাতের ডাক দেয়া কে এই মাওলানা ফজলুর রহমান?"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৬ 
  15. "32 titanic clashes on the cards"DAWN.COM। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ 
  16. "Fazl elected chairman of NA's Kashmir committee"DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮। ৩১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৭ 
  17. Reporter, The Newspaper's Staff (২৭ আগস্ট ২০১৭)। "Status of federal minister conferred on Fazl"DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৭ 
  18. "Notification" (পিডিএফ)। Cabinet division। ১ জুন ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৮ 
  19. "Opposition, sans PPP nominate Fazl as presidential candidate"The News (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৮ 
  20. Chaudhry, Fahad (সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮)। "PTI's Arif Alvi officially declared winner of 13th presidential election"Dawn 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

পূর্বসূরী
বেনজীর ভুট্টো
বিরোধীদলীয় নেতা
২০০৪–২০০৭
উত্তরসূরী
চৌধুরী পারভেজ এলাহী