একটি ব্লকচেইন [] তথা ব্লক-এর শিকল হলো যা ক্রমাগত বর্ধমান রেকর্ড তালিকা যা ক্রিপ্টোগ্রাফির দ্বারা সংযুক্ত এবং নিরাপদ।প্রতিটি ব্লকের প্রকৃতি এরূপ যে তা পূর্বের ব্লকের একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাস নিয়ে গঠিত এবং একটি কার্যকাল ও কার্যপ্রকৃতির সমন্বিত তথ্য []

ব্লকচেইনের গঠনের ক্ষেত্রে মূল লিকল বা চেইন (কালো) প্রাথমিক ব্লক (সবুজ) থেকে অন্তিম ব্লক পর্যন্ত ব্লকের বৃহত্তম অনুক্রম নিয়ে গঠিত ও একক শ্রেণীর ব্লক (গোলাপী) মূল চেইনের বাইরে অবস্থান করে
বিটকয়েন নেটওয়ার্ক তথ্য

গঠনগতভাবে ইহা কার্যকাল ও কার্যপ্রকৃতির তথ্য সমন্বিত তথ্যভান্ডার এবং তথ্য পরিবর্তনরোধী কৌশল।এটা হলো একটি উন্মুক্ত বিভাজিত তথ্যভান্ডার যা যাচাইযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত কাজের রেকর্ড করতে পারে []। একটি বিভাজিত তথ্যভান্ডার হিসেবে ব্যবহারকল্পে,একটি ব্লকচেইন প্রকৃতিগতভাবে পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক সংগঠনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করা হয় যা একটি প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয় নতুন ব্লক যাচাইকরনের জন্য।

একবার রেকর্ড হওয়ার পর একটি ব্লকের তথ্য সবগুলো উপ-অনুক্রমিক ব্লকের পরিবর্তন ব্যতীত পরিবর্তন করা যায় এবং এ ধরনের পরিবর্তনের চেষ্টায় নেটওয়ার্কে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়।
ব্লকচেইন নকশা দ্বারা নিরাপদ যা এমন একটি কম্পিউটার প্রক্রিয়ার সাথে তুলনীয় যা উচ্চ বাইজেনটাইন ফল্ট টোলারেন্স যুক্ত।ফলে ব্লকচেইন কেন্দ্রীকতাবিহীন ঐক্য সৃষ্টি করে।এটা ব্লকচেইনকে আপেক্ষিকভাবে ঘটানা,চিকিৎসা সংক্রান্ত রেকর্ড এবং অন্যান্য রেকর্ড ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজের উপযোগী করে তোলে।এসব কাজের মধ্যে রয়েছে পরিচয় ব্যবস্থাপনা,কার্যসম্পাদনা প্রক্রিয়াকরণ,ঐতিহাসিক স্থান নথিকরণ,খাদ্য নিরাপত্তা এবং নির্বাচন।

২০০৮ সালে ব্লকচেইনের উদ্ভাবক সাতশি নাকামতো কেবল ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন-এর সাধারণ লেনদেনের তথ্যভান্ডার নিরপত্তারয় ব্যবহার করার জন্য এটি উদ্ভাবন করেন। [] বিটকয়েনের জন্য ব্লকচেইন আবিষ্কার এটিকে প্রথম ডিজিটাল মুদ্রায় পরিণত করে যা দ্বৈত খরচ সমস্যার সমাধান করে কোনো প্রকার বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্রীয় সার্ভার-এর সাহায্য ছাড়াই। বিটকয়েনের নকশা অন্যান্য প্রয়োগিক কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি অনুপ্রাণিত করেছে।[][]

ব্লকচেইন প্রযুক্তি একাধিক ক্ষেত্রে একত্রিত করা যেতে পারে। ব্লকচেইনের প্রাথমিক ব্যবহার হল বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য বিতরণ করা খাতা হিসাবে।

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
বিটকয়েন লেনদেন(জানুয়ারী,২০০৯-সেপ্টেম্বর,২০১৭)


প্রথম ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে নিরাপদ ব্লকের শিকলের দ্বারা সম্পাদিত লেনদেন বর্ণনা করেন স্টাউট হেবার এবং ডব্লিও. স্কট স্টোরন্নিটা ১৯৯১ সালে।১৯৯২ সালে বেয়ার,হেবার এবং স্টোরন্নিটা পদ্ধতিগতভাবে মার্কেল শাখাকে নকশায় পরিণত করে যা এর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে একাধিক নথি একটি ব্লকে স্থান দিতে সমর্থ হয়।২০০২ সালে ড্যানিয়েল শাসা ও ডেভিট মাজিরিস একটি নেটওয়ার্ক ফাইল ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন যা কেন্দ্রীয়কতাবিহীন নিরাপত্তা দেয়।

লেখকরা অন্য লেখকদের বিশ্বাস করলেও নেটওয়ার্ককে করে না।তারা ফাইল লেনদেনের জন্য অদ্বিতীয় স্বাক্ষর ব্যবহার করে।এই স্বাক্ষর চেইন ফাইল ব্যবস্থার মূল অংশ ধরে ফেলে(যা হলো মূলত মার্কেল শাখা)।এই প্রক্রিয়ায় একটি প্রধান শিকল চিহ্নিত করা যেতে পারে যেখানে সকল অন্তর্ভুক্ত সেবাগ্রাহক লিখতে পারে এবং যে ব্যবহারকারী একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক ধাঁধাঁ সমাধান করতে পারে সে ব্লক দেখতে পারে।২০০৫ সালে নিক জ্যাবো কেন্দ্রিকতাবিহীন শিরনামের জন্য একটি ব্লকচেইন অনুরূপ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন যা কেন্দ্রিকতাবিহীন।তাছাড়া,তিনি তার লেনদেন ব্যবস্থা যা বিটগোল্ড নামে খ্যাত তার জন্যও তৈরি করেন এবং এ ব্যবস্থায় শিকলে আবদ্ধ কার্যপ্রকৃতি ও কার্যকাল ব্যবহৃত হয়।যাহোক,জ্যাবোর দ্বৈত খরচ নিরপেক্ষ নিরাপদ ব্যবস্থা সাইবিল আক্রমণ থেকে নিরাপদ ছিল না[]। ২০০৮ সালে প্রথম ব্লকচেইন প্রসঙ্গায়িত হয় একজন ব্যক্তি বা একদল ব্যক্তি দ্বারা যিনি অথবা যারা সাতশি নাকামতো হিসেবে পরিচিত।ঐ একই বছর নাকামতো দ্বারা এটি বিটকয়েন-এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কার্যকর হয় যেখানে এটি সাধারণ তথ্যভান্ডার হিসেবে নেটওয়ার্কের সব লেনদেনের সেবা প্রদান করে[]। তাই ব্লকচেইন ও বিটকয়েন ব্যবহার প্রথম ডিজিটাল অর্থ সৃষ্টি করে যা দ্বৈত খরচ সমস্যা মোকাবিলা করে কোনো বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া এবং অনুরূপ অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি সৃষ্টির জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে ভূমিকা রাখে[][]। ২০১৪ সালের আগস্টে বিটকয়েন ব্লকচেইন পরিধি ২০ জিবি(গিগাবাইট) হয়ে যায় নেটওয়ার্কের সব লেনদেন ধারণ করে।২০১৫ এর জানুয়ারীতে এই পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩০ জিবি হয়ে যায়।আবার,২০১৫ জানুয়ারী থেকে ১৭'র জানুয়ারী পর্যন্ত বিটকয়েনের ব্লকচেইন ৫০ থেকে ১০০ জিবি হয়ে যায়।যদিও সাতশি নাকামতোর মূল নথিতে ব্লক ও চেইন পৃথক শব্দ,ঘটনাক্রমে ২০১৬ এর মধ্যে এটি ব্লকচেইন নামক একক শব্দ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়।
ব্লকচেইন ২.০ একটি নতুন ব্যবস্থা নির্দেশ করে বিভাজিত ব্লকচেইন ডাটাবেস-এর।এটি প্রথম শুরু হয় ২০১৪ তে[]অর্থনীতিবিদগণ ব্যখ্যা করেন যে এই দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং উপযোগী ব্লকচেইন এমন প্রোগ্রামিং ভাষা নিয়ে আসছে যা ব্যবহারকারীদের আরো জটিল ও কার্যকর চুক্তি তৈরি করতে সুযোগ দিবে যেন আহ্বান বা অনুরোধ করলেই তাদের অর্থপ্রাপ্তি ঘটে অথবা সনদ স্থানান্তর ঘটে যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে মালিকদের মধ্যে অর্থবণ্টন হয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ সীমায় পৌঁছলে[]। ব্লকচেইন ২.০ এর প্রযুক্তিগুলো সাধারণ লেনদেনের তুলনায় বেশিকিছু করে এবং মূল্য বা ডিজিটাল অর্থের লেনদেন কোনো প্রকার শক্তিশালী মধ্যবর্তী মাধ্যম ব্যতীত হয় যার জন্য তথ্য ও অর্থপ্রদানের প্রয়োজন পড়ে না।এর বহি:ভূত ব্যক্তিবর্গের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবেশের জন্য মধ্যবর্তী শক্তিশালী মাধ্যম প্রয়োজন হয় যার ওপর অংশগ্রহণকারীর নিরাপত্তাসহ নিজের রক্ষিত তথ্য দেখা থেকে মেধা সম্পদ এর নিরাপত্তা পর্যন্ত বহু বিষয় নির্ভর করে।দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্লকচেইন প্রযুক্তি একক ব্যক্তির আধুনিক অদ্বিতীয় পরিচয় ও তথ্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়টি বাস্তবায়িত করে এবং একটি নিরাপদ পথের সৃষ্টি করে যেন অর্থনৈতিক বণ্টনের আপেক্ষিক পরিবর্তন করে সামাজিক অসমতার সমস্যা দূরীভূত হয়।ব্লকচেইন ২.০-এর কাজ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি চেইনবহির্ভূত ওরাকল দরকার হয় যা বহিভূত লেনদেন বাস্তবায়ন করে যেন সময় ও বাজারের অবস্থা অনুযায়ী অর্থের সাথে ব্লকচেইনের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সির সংমিশ্রণ ঘটানো যায়।
২০১৬ সালে রাশিয়ান ফেডারেশনের (এনএসডি) কেন্দ্রীয় সুরক্ষা ভান্ডার একটি পথপ্রদর্শক পরিকল্পনা ঘোষণা দেয় যা (এনএক্সটি) ব্লকচেইন ২.০ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে যা ব্লকচেইন ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় ভোট ব্যবস্থা নিরীক্ষণ করবে। আইবিএম সিঙ্গাপুরে একটি ব্লকচেইন সম্পৃক্ত গবেষণাকেন্দ্র খোলে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। অ্যাসেন্সার অনুযায়ী,আবিষ্কারের তথ্য প্রসারণ তত্ত্বের মাধ্যমে পরামর্শ করা হয়েছে যে,২০১৬ সালের অর্থসংক্রান্ত সেবামূলত প্রতিষ্ঠানে বিটকয়েনের লেনদেন ১৩.৫ শতাংশ যা পূর্ববর্তী বিভিন্ন ধরনের মুদ্রার লেনদেনের প্রাধমিক পর্যায়ে চলে গেছে[]।২০১৬ সালে কারখানা ও বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো একত্রিত হয় বৈশ্বিক ব্লকচেইন ফোরাম গঠনের উদ্দেশ্যে যার সূচনা করে চেম্বার অব ডিজিটাল কমার্স

ব্লকচেইন কত প্রকার

সম্পাদনা

ব্লকচেইন মূলত চার প্রকার। ব্লকচেইন এর প্রকারভেদগুলো হলো:

  1. পাবলিক ব্লকচেইন
  2. প্রাইভেট ব্লকচেইন
  3. হাইব্রিড ব্লকচেইন
  4. কনশর্টিয়াম ব্লকচেইন

একটি ব্লকচেইন হলো কেন্দ্রিকতাবিহীন,বিভাজিত ও সাধারণ ডিজিটাল তথ্যভান্ডার যা অনেক কম্পিউটারের লেনদেন রেকর্ড করতে ব্যবহৃত হয় যেন রেকর্ড পরিবর্তন কোনোভাবেই ব্লকের পরিবর্তন এবং ফলস্বরূপ নেটওয়ার্কের বিশৃঙ্খলা ঘটানো ছাড়া সম্ভব না হয়।এটা ব্যবহারকারীদের লেনদেন ও তার সময়কালের তথ্য,সত্যতা যাচাই ও নিরীক্ষার সুযোগ দেয় অনেক সস্তায় []
একটি ব্লকচেইন ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বশাসিতভাবে একটি পেয়ার-টু-পেয়ার নেটওয়ার্ক এবং বিভাজিত কার্যকাল নির্ধারক ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. https://mobile.nytimes.com/2016/05/22/business/dealbook/crypto-ether-bitcoin-currency.html
  2. https://www.investopedia.com/terms/b/blockchain.asp
  3. https://hbr.org/2017/01/the-truth-about-blockchain
  4. https://www.economist.com/news/briefing/21677228-technology-behind-bitcoin-lets-people-who-do-not-know-or-trust-each-other-build-dependable
  5. https://eprint.iacr.org/2015/464.pdf
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১২ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  8. https://papers.ssrn.com/sol3/papers.cfm?abstract_id=2874598