হিমু অধিকারী
কর্নেল হেমচন্দ্র (হিমু) রামচন্দ্র অধিকারী (৩১ জুলাই, ১৯১৯ - মৃত্যু: ২৫ অক্টোবর, ২০০৩) মহারাষ্ট্রের পুনে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর ঘরোয়া ক্রিকেটে পশ্চিম অঞ্চল,[১] বরোদরা,[২] গুজরাত, হিন্দু ও সার্ভিসেস দলের পক্ষে খেলেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে লেগ স্পিন বোলিংয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি। তিন দশকেরও অধিক সময়কাল খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন হিমু অধিকারী।
; জন্ম:ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | হেমচন্দ্র রামচন্দ্র অধিকারী | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | পুনে, বোম্বে প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত | ৩১ জুলাই ১৯১৯|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৫ অক্টোবর ২০০৩ মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স ৮৪)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি লেগ স্পিন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক | ২৮ নভেম্বর ১৯৪৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৪ অক্টোবর ২০১৭ |
খেলার ধরন
সম্পাদনাপ্রতিভাবান ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে সবিশেষ পরিচিত ছিলেন হিমু অধিকারী। এছাড়াও মাঝে-মধ্যে দলের প্রয়োজনে লেগ স্পিন বোলিং করতেন তিনি। স্পিন বোলিং চমৎকারভাবে মোকাবেলা করতেন ও ফাস্ট বোলিংয়ের বিপরীতে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পূর্বে ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমের ঘরোয়া আসরে তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। স্থানীয় পর্যায়ে তিনি দ্রুত নিজেকে তুলে ধরেন। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত হবার প্রেক্ষিতে তার খেলোয়াড়ী জীবনে বিঘ্নের সৃষ্টি হয়।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
সম্পাদনা১৯৪০-৪১ মৌসুমে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য রূপে রঙ্গ সোহনি, চন্দ্র শরৎ ও সাধু সিন্ধেকে সাথে নিয়ে দলকে রোহিতন বারিয়া ট্রফি জয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন।[৩]
১৯৪৫-৪৬ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফিতে বরোদরার অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দ্বাদশ আসরটিতে তার দল হোলকারের কাছে চূড়ান্ত খেলায় পরাভূত হয়। ৫৫৫ রান সংগ্রহ করে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন হিমু অধিকারী।[৪] ১৯৫১-৫২ মৌসুমেও প্রতিযোগিতায় ৫৫৪ রান তুলে শীর্ষ রান সংগ্রাহক হন। সার্ভিসেস দলের সদস্য হিসেবে এ রান সংগ্রহ করলেও তার দল চূড়ান্ত খেলায় অবতীর্ণ হতে পারেনি।[৫]
টেস্ট ক্রিকেট
সম্পাদনাসমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২১ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে তার। ভারতের প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া সফরে দ্রুত তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলেন ও দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মর্যাদা লাভে সক্ষমতা দেখান। অধিকারী ভারতের পক্ষে বেশকিছু চমৎকার মুহুর্ত তুলে ধরেছেন।
২৮ নভেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে ২৮ বছর বয়সে অস্ট্রেলীয় বিল জনস্টন, ভারতীয় গগুমাল কিষেনচাঁদ, খান্দু রংনকোর ও জেনি ইরানির সাথে অধিকারীরও একযোগে টেস্ট অভিষেক ঘটে। তবে, ঐ টেস্টটি সুখকর হয়নি তার। আর্নি তোশ্যাকের বোলিং (৫/২ ও ৬/২৯) তোপে পড়ে ভারত ইনিংস ও ২২৬ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাভূত হয়।
সিরিজের চূড়ান্ত ও পঞ্চম টেস্টে ফলো-অনের কবলে পড়ে ৬৭ রানে গুটিয়ে যায় ভারত দল। অত্যন্ত চমৎকারভাবে সিড বার্নসকে রান আউট করেন তিনি। বিনু মানকড়ের সাথে ১২৪ রানের মূল্যবান জুটি গড়ে দলে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। ২০২ বল মোকাবেলায় একমাত্র বাউন্ডারি মেরে ৩৮ রানে আউট হন। মেলবোর্নের ঐ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৭ রান তুলেন তিনি। ঐ খেলায়ও ভবিষ্যতের অপরাজেয় দলের কাছে ইনিংস ও ১৭৭ রানে হেরে বসে।
১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠে অনুষ্ঠিত সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজস্ব সর্বোচ্চ অপরাজিত ১১৪* রানের একমাত্র সেঞ্চুরি করেন। তবে, ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। একই দলের বিপক্ষে দিল্লিতেই নিজস্ব সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৩/৬৮ গড়েন।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের ক্রিকেটের উদ্বোধনী টেস্টে খেলার সুযোগ পান। ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে গুলাম আহমেদকে সাথে নিয়ে শেষ উইকেট জুটিতে ১০৯ রান তুলে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন যা অদ্যাবধি টিকে রয়েছে।[৬] তন্মধ্যে, গুলাম আহমেদ করেছিলেন ৫০ রান।
অধিনায়কত্ব লাভ
সম্পাদনাচল্লিশতম জন্মদিনের কাছাকাছি সময়ে ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ভারত দলকে এক টেস্টে নেতৃত্ব দেন।[৭] ব্যাটহাতে ৬৩ ও ৪০ রান তুলেন এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট লাভ করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪১.৭৪ গড়ে রান তুলেন। এরপর তিনি খেলা থেকে বিদায় নেন।
কোচিং
সম্পাদনাখেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর কোচিংয়ের দিকে ধাবিত হন তিনি। ভারত দলকে পরিচালনায় অগ্রসর হন। ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ভারতের টেস্ট সিরিজ জয়ে দলকে পরিচালনা করেন। তার হাত ধরেই সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব ও রবি শাস্ত্রীর ন্যায় অসাধারণ খেলোয়াড়দের উত্থান ঘটে। সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ততার কারণেই তাকে কোচ হিসেবে সফলতা এনে দেয়। জাতীয় দলের সাবেক স্পিনার বাপু নাদকার্নির মতে, হিমু অধিকারী শৃঙ্খলতার সাথে জড়িত ব্যক্তি। সামরিক ব্যক্তি হিসেবে অন্যের মতামতের ধার ধারতেন না।
দেহাবসান
সম্পাদনা৮৪ বছর বয়সে অক্টোবর, ২০০৩ সালে তার দেহাবসান ঘটে। ভারতীয় ক্রিকেট লেখক সুরেশ মেনন তার স্মৃতিচারণে বলেন, জীবিত অবস্থায় শ্রী অধিকারী সফলতা পাননি। তবে, ১৯৭১ সালের সিরিজ জয়ের মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেটের স্বাবলম্বীতা আনয়ণে তার ভূমিকার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "West Zone players"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Baroda players"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Bombay University v Benares Hindu University 1940/41"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "Ranji Trophy, 1945/46 / Records / Most runs"। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৪। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- ↑ "Ranji Trophy, 1951/52 / Records / Most runs"। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৪। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- ↑ India v Pakistan, Delhi 1952-53
- ↑ "India – Tests"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১০।
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে হিমু অধিকারী (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে হিমু অধিকারী (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- HowSTAT! statistical profile of Hemu Adhikari
- Cricinfo summary of tributes to Hemu Adhikari after his 2003 death
- Article on Adhikari ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৫ তারিখে
পূর্বসূরী বিনু মানকড় |
ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯৫৮-৫৯ (১ টেস্ট) |
উত্তরসূরী দত্ত গায়কওয়াড় |