হয়গ্রীব মাধব মন্দির

ভারতের একটি হিন্দু মন্দির

হয়গ্রীব মাধব মন্দির (ইংরেজি: Hayagriva Madhava Temple) অসমের কামরূপ জেলার হাজোতে অবস্থিত এক দেবালয়। হাজোর মণিপর্বত নামের একটি টিলার উপর এই দেবালয় অবস্থিত। বিষ্ণুর এক অবতার "হয়গ্রীব"কে (ঘোড়ার মাথাসহ বিষ্ণু) এখানে পূজা-অর্চনা করা হয়। সংস্কৃত ভাষায় 'হয়' মানে 'ঘোড়া' এবং 'গ্রীবা'র অর্থ 'গলা'। সেহেতু এই মন্দিরটিকে 'হয়গ্রীব মন্দির' বলে ডাকা হয়।[১] বৌদ্ধধর্মীদের কাছেও এটি এক পবিত্র স্থান। তারা বিশ্বাস করেন যে, গৌতম বুদ্ধ শরীর ত্যাগ করে এই স্থানে 'মোক্ষ' বা 'নির্বাণ' লাভ করেছিলেন।[২]

হয়গ্রীব মাধব মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাকামরূপ
অবস্থান
অবস্থানহাজো
দেশভারত
স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীওর্বঋষি
পুনর্নির্মাণ: রঘূদেব

কিংবদন্তি সম্পাদনা

প্রবাদ অনুসারে 'মধু' এবং 'কৈটভ' নামের দুটি অসুর বেদের সৃষ্টির সময়ে ব্রহ্মার থেকে সেগুলি চুরি করে নেয়। ব্রহ্মা বিষ্ণুকে যোগনিদ্রা থেকে জাগিয়ে বেদ উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন। তখন বিষ্ণু 'হয়গ্রীবে'র রূপ ধারণ করে রসাতলে যান এবং বেদসমূহ উদ্ধার করে এনে ব্রহ্মাকে দেন। এর পরে বিষ্ণু উত্তর-পূর্বে এসে হয়গ্রীব রূপে শুয়ে পড়েন। মধু এবং কৈটভ ঘুরে এসে বিষ্ণুকে যুদ্ধ করতে বলে। সেই যুদ্ধে বিষ্ণু অসুর দুজনকে পরাস্ত করে প্রাণনাশ করেন।[২]

কালিকা পুরাণ মতে, এই তীর্থস্থানের প্রতিষ্ঠাতা ঔর্বঋষি। ভগবান বিষ্ণু ঔর্বঋষির তপস্যা ভঙ্গকারী জ্বরাসুর, হয়াসুর ইত্যাদি পাঁচজন অসুরকে বধ করে হয়গ্রীব মাধব নামের এই পর্বতে অবস্থান করে আছেন।[৩]

ইতিহাস সম্পাদনা

হয়গ্রীব মাধব এক প্রাচীন মন্দির যদিও বর্তমানের ঘরটি পরবর্তী সময়ের। কালাপাহাড় প্রাচীন মন্দিরটি ভেঙে যাবার পরে কোচ রাজা রঘুদেব ১৫৪৩ খ্রীষ্টাব্দে মন্দিরটির পুনর্নির্মাণ করেন।[৩][৪] কিছুসংখ্যক ইতিহাসবিদের মতে, পাল রাজবংশের রাজা ষষ্ঠ শতকে এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।[৫]

পূর্ণানন্দ বরগোহাঁইর সময়ে কলিয়াভোমোরা বরফুকনের প্রথম পত্নী শয়নী মন্দিরটিতে ভূমির ভাগাভাগির জন্য একটি পাইকের পরিবার দান করেছিলেন।[৬] মন্দিরের ভিতর কোচ রাজা রঘুদেব এবং আহোম রাজা প্রমত্ত সিংহ এবং কমলেশ্বর সিংহের শিলালিপি আছে।

গঠন সম্পাদনা

 
মন্দিরের দেয়ালে খোদিত ভাস্কর্য

হয়গ্রীব মাধব মন্দিরটি পাথর দিয়ে নির্মিত। মন্দিরটির গায়ে হাতীর প্রতিমূর্তি অঙ্কিত আছে। এইসমূহ অসমীয়া স্থাপত্যের নিদর্শন বলে মনে করা হয়।[৫] গোটা মন্দিরের গঠনটি ইটের স্তম্ভের উপর আছে যেগুলি মূল মন্দিরের সঙ্গে পরে যোগ করা বলে অনুমান করা হয়।[২]

মন্দিরটি তিনটি ভাগে বিভক্ত- গর্ভগৃহ (নিচের ভাগ), মধ্যভাগ এবং শিখর (ওপরের ভাগ)। মন্দিরের বাটসোরাটি গ্রেনাইট পাথরে নির্মিত। গর্ভগৃহে লুকানো দীর্ঘ কক্ষটি ইট দিয়ে তৈরি এবং ৪০ ফুট×২০ ফুট আকারের। ১৪ বর্গফুট আবরা গর্ভগৃহ অংশটি ইটে নির্মিত। শিখর অংশটি পিরামিড আকৃতির। সন্মুখের কক্ষটি পাথরে নির্মিত। কক্ষের দুদিক পদ্ম আকৃতিতে কয়েকটি পাথরের দুটি দেয়াল আছে।[১]

মন্দিরের বাইরের দিকে বিষ্ণুর দশটা অবতার বর্ণনা করা ভাস্কর্য আছে যার ভিতর বুদ্ধ নবম।[৫] অন্য ভাস্কর্যসমূহ শনাক্ত করা যায় না যদিও বেশিরভাগই পুরুষাকৃতির এবং হাতে ত্রিশূল নিয়ে থাকা।[১] মূল মন্দিরটির কাছে আহোম রাজা প্রমত্ত সিংহ‍ নির্মাণ করা একটি ছোট মন্দির আছে। এখানে প্রতিবছর দোলোৎসব ধুমধামে পালন করা হয়। মাধব মন্দিরের কাছে 'মাধব পুখুরী' নামের একটি বড়ো পুকুর আছে।

উপাসনা সম্পাদনা

মন্দিরটির উপাসনাস্থলে থাকা প্রতিমূর্তিসমূহ হল হয়গ্রীব বা বুঢ়া মাধব, তার বামদিকে আছে দ্বিতীয় মাধব বা বিষ্ণু, এবং বৈষ্ণব সংস্কৃতির প্রতীক গরুড়। আন প্রতিমূর্তিসমূহ হল চলন্ত মাধব, গোবিন্দ মাধব এবং বাসুদেবের। বিষ্ণুর প্রতিমূর্তিটির উড়িষ্যার পুরীর জগন্নাথের মূর্তির সঙ্গে মিল আছে।[৪] অন্যদিকে বৌদ্ধ লামাগণ হয়গ্রীব মাধবের মূর্তিটি মহামুনি অর্থাৎ গৌতম বুদ্ধের বলে পূজা করে।[৩]

হয়গ্রীব মাধব মন্দিরে দোলোৎসব, বিহু এবং জন্মাষ্টমী নির্দিষ্ট সময়ে পালন করা হয়।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Nidhi (মে ৪, ২০১১)। "Hayagriva Madhava Temple, Hajo"। Assamspider.com। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৭, ২০১৩ 
  2. "Hayagriva Madhava Temple"। Bharatonline.com। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৭, ২০১৩ 
  3. সম্পাদক- ড: মহেশ্বর নেওগ (২০০৪)। পবিত্র অসম। গুয়াহাটি: অসম সাহিত্য সভা। পৃষ্ঠা ২৩৩–২৩৪। 
  4. "Hayagriva-Madhava Mandir of Hazo"। Vedanti.com। ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৭, ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "Hayagriva Madhava Temple"। Assamonline.in। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৭, ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "Hajo, Assam"। Indianetzone.com। ফেব্রুয়ারি ২, ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৭, ২০১৩ 
  7. "Hayagriva Madhava Temple , Hajo"। Roam space travel। ২১ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৭, ২০১৩