সাইন
গণিতে সাইন বলতে কোনও কোণের একটি ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষক বা ফাংশনকে বোঝায়। একটি সুক্ষ্মকোণের (সমকোণ বা ৯০ ডিগ্রী অপেক্ষা ছোট কোণের) সাইন ফাংশন একটি সমকোণী ত্রিভুজের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হয়। নির্ধারিত সুক্ষ্মকোণের জন্য কোণটির বিপরীতে অবস্থিত বাহুর দৈর্ঘ্য এবং সমকোণী ত্রিভুজটির দীর্ঘতম বাহু বা অতিভুজের দৈর্ঘ্যের মধ্যকার অনুপাতই হচ্ছে ঐ কোণটির সাইন ফাংশনের মান।
আরও সাধারণভাবে, কোনও ঐকিক বৃত্তে অবস্থিত একটি রেখাংশের দৈর্ঘ্যের বাস্তব সংখ্যাতে প্রকাশিত মান দিয়ে সাইন বা অন্য যেকোনও ত্রিকোণমিতিক অপেক্ষকের সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব। আরও আধুনিক সংজ্ঞাসমূহে সাইনকে একটি অসীম ধারা হিসেবে বা কিছু সমাকলনীয় সমীকরণের সমাধান হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে সাইনের ধনাত্মক বা ঋণাত্মক মান সম্ভব, এমনকি জটিল সংখ্যা দিয়েও সাইনের মান প্রকাশ করা সম্ভব।
সাইন ফাংশনটি সাধারণত পর্যায়বৃত্ত ঘটনা যেমন শব্দতরঙ্গ, আলোকতরঙ্গ, পর্যায়বৃত্ত দোলকের অবস্থান ও বেগ, সৌরালোকের তীব্রতা এবং দিনের দৈর্ঘ্য, সারা বছরব্যাপী গড় তাপমাত্রার ওঠা-নামা, ইত্যাদির গাণিতিক আদল বা মডেল তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।
“সাইন” শব্দের ব্যুৎপত্তিসম্পাদনা
"সাইন" একটি ইংরেজি শব্দ। ইংরেজি “সাইন” যে ত্রিকোণমিতিক ধারণাটিকে নির্দেশ করে, সেই ধারণাটির আদি উৎপত্তি ঘটে প্রাচীন ভারতবর্ষে। প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট এর নাম দিয়েছিলেন “জ্যা-অর্ধ”। আর্যভট্ট প্রায়শই এটিকে সংক্ষেপে “জ্যা” বা “জিওয়া” নামে লিখতেন। যখন আরবেরা হিন্দু গণিতশাস্ত্রের গ্রন্থগুলি আরবিতে অনুবাদ করছিল, তখন এই সংস্কৃত “জ্যা” পরিভাষাটি আরবিতে “জিবা” নামক একটি অর্থহীন শব্দ দিয়ে অনুবাদ করা হয়। কিন্তু আরবিতে স্বরবর্ণ লেখার নিয়ম না থাকাই পরবর্তী আরব লেখকেরা এটিকে ভুলে “জিব” বা “জাইব” নামে লেখা শুরু করেন, যার অর্থ “স্তন” বা “বক্ষ”। এর বহু পরে ১২শ শতকে স্পেনের রাজা ৬ষ্ঠ আলফোনসোর আমলে তোলেদো শহরের মহাবিশপের তত্ত্বাবধানে আরবিতে লেখা গাণিতিক গ্রন্থগুলি লাতিনে অনুবাদের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে, ১১৪৫ সালে চেস্টারের রবার্ট নামক একজন ইংরেজ অনুবাদক আরবি গণিতবিদ আল খোয়ারিজমির আল জবর আল মুকাবিলা নামক গণিত গ্রন্থটি অনুবাদ করতে গিয়ে “জিব” শব্দটির দেখা পান। তিনি শব্দটির সংস্কৃত ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তিনিও আরব লেখকদের মত শব্দটিকে আরবি “বক্ষ” বা “স্তন” হিসেবে গণ্য করেন এবং এর লাতিন অনুবাদ করেন “সিনুস” (লাতিন শব্দ যার অর্থ "বক্ষ" বা "স্তন")। সেখান থেকেই পরবর্তীতে ইংরেজি “সাইন” শব্দটি এসেছে।[১]
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ Victor J. Katz (2008), A History of Mathematics, Boston: Addison-Wesley, 3rd. ed., p. 253, sidebar 8.1. "Archived copy" (পিডিএফ)। ২০১৫-০৪-১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-০৯।