ত্রিকোণমিতি
ত্রিকোণমিতি গণিতের একটি শাখা, যাতে ত্রিভুজের কোণ, বাহু ও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়। ত্রিকোণমিতি শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Trigonometry। এই শব্দটি আবার গ্রিক শব্দ trigōnon "ত্রিভুজ" এবং metron "পরিমাপ" থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
বিশেষ করে ত্রিভুজের তিনটি কোণের অপেক্ষকগুলো নানা পরিমাপের কাজে লাগানো যায়। ত্রিভুজের একটি কোণের ছয়টি অপেক্ষক বা ফাংশন থাকে যথা সাইন (sine), কোসাইন(cosine), ট্যানজেন্ট(tangent), কোট্যান্জেন্ট(cotangent), সেক্যান্ট(secant) এবং কোসেক্যান্ট(cosecant)। এগুলো ব্যবহার করে অজানা কোণ ও দূরত্ব পরিমাপ করা হয়।
ত্রিকোণমিতির অপেক্ষকগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মানের পাল্লার প্রতিরূপ দেয়া যায় বা বারবার পুনরাবৃত্ত হয়। এগুলো পুনরাবৃত্ত প্রতিভাসের প্রতিরূপে, যেমন সরল দোলকের গতি অথবা পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের বিশ্লেষণে উদ্ভূত হয়। ত্রিকোণমিতির ব্যবহার করে দৈর্ঘ্যের এক বিশাল জালি পাওয়া যায় যা সাধারণ পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে মাপা যায় না।
ইতিহাসসম্পাদনা
ত্রিকোণমিতির জন্ম প্রাচীন মিশরে হলেও এর আদি উদ্ভাবক একজন গ্রিক জ্যোতির্বিদ যার নাম হিপারকাস। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে গ্রিক হিপারকাস গ্রহ-নক্ষত্র ও তাদের মধ্যবর্তী বেগ এবং দুরত্ব নির্ণয় ও বিচার করতে গিয়ে এই বিদ্যার চর্চা শুরু করেন। তিনি কাজ করতেন আলেকজান্দ্রিয়ার একটি জাদুঘরে। তবে আমরা বর্তমান যুগে ‘থেটা’, ‘সাইন’, ‘কস’, ‘কোসাইন’, ‘কোসেক’ ইত্যাদি দিয়ে যে ত্রিকোণমিতি করে থাকি তার উদ্ভাবক মুসলিম গণিতবিদেরা। নবম খ্রিষ্টাব্দে আবু আবদুল্লাহ আল-বাতানি, হাবাস আল-হাসিব ও আবুল ওয়াফা আল-বুজানি নামের তিন গণিতবিদের যৌথ উদ্যোগের ফসল আধুনিক ত্রিকোণমিতি। তবে তারা গ্রিক জ্যোতির্বিদ হিপারকাসের মূল ধারণার ওপর ভিত্তি করেই এ বিষয়টিকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলেছিলেন।
ত্রিকোণমিতিক অনুপাতসম্পাদনা
যদি ত্রিভুজের একটি কোণ সমকোণ হয় এবং অপর কোণের মান জানা থাকে তবে তৃতীয় কোণের পরিমাপ নির্ণয় করা যায়। এবার আমরা জানি ত্রিভুজের তিন কোনের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রি। কাজেই সমকোণ বাদে বাকি কোণদ্বয়ের সমষ্টি ৯০ ডিগ্রি। তিনটি কোণের পরিমাপ জানা থাকলে ত্রিভুজের বাহুত্রয়ের পরিমাপের নির্ণয় করা যায়। আর যে কোনো এক বাহুর দৈর্ঘ্য জানা থাকলে বাকি বাহুর দৈর্ঘ্যও জানা যায়। এই অনুপাতগুলো জানা যায় কোন θ এর ত্রিকোণোমিতীয় অপেক্ষক বা ফাংশন থেকে।
- সাইন: এটি ত্রিভুজের লম্ব ও অতিভুজের অনুপাত প্রকাশ করে
- কোসাইন: এটি ত্রিভুজের ভূমি ও অতিভুজের অনুপাত প্রকাশ করে
- ট্যানজেন্ট: এটি ত্রিভুজের লম্ব ও ভূমির অনুপাত প্রকাশ করে
এই ফাংশনগুলোর গুণোত্তর বিপরীত ফাংশনগুলোকে যথাক্রমে কোসেকেন্ট (cosec বা csc), সেকেন্ট (sec) এবং কোট্যানজেন্ট (cot) বলা হয়।
একক বৃত্ত ও সাধারণ ত্রিকোণমিতিক মানসমূহসম্পাদনা
ফাংশন | 0 | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সাইন | 0 | 1 | 0 | ||||||
কোসাইন | 1 | 0 | -1 | ||||||
ট্যানজেন্ট | 0 | অসংজ্ঞায়িত | 0 | ||||||
সেকেন্ট | 1 | অসংজ্ঞায়িত | -1 | ||||||
কোসেকেন্ট | অসংজ্ঞায়িত | 1 | অসংজ্ঞায়িত | ||||||
কোট্যানজেন্ট | অসংজ্ঞায়িত | 0 | অসংজ্ঞায়িত |
বাস্তব ও জটিল চলকের ত্রিকোণমিতিক ফাংশনসম্পাদনা
ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের লেখচিত্রসম্পাদনা
নিচের ছকে ৬টি প্রধান ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের রেখচিত্রের বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো:[১][২]
ফাংশন | পর্যায় | ডোমেন | রেঞ্জ | লেখচিত্র |
---|---|---|---|---|
সাইন | ||||
কোসাইন | ||||
ট্যানজেন্ট | ||||
সেকেন্ট | ||||
কোসেকেন্ট | ||||
কোট্যানজেন্ট |
বিপরীত ত্রিকোণমিতিক ফাংশনসম্পাদনা
নাম | রাশি | সংজ্ঞা | বাস্তব মানের জন্য x-এর ডোমেন | রেঞ্জ (রেডিয়ান) |
রেঞ্জ (ডিগ্রি) |
---|---|---|---|---|---|
arcsine | y = arcsin(x) বা y = sin−1(x) |
x = sin(y) | −১ ≤ x ≤ ১ | −π২ ≤ y ≤ π২ | −৯০° ≤ y ≤ ৯০° |
arccosine | y = arccos(x) বা y = cos−1(x) |
x = cos(y) | −১ ≤ x ≤ ১ | ০ ≤ y ≤ π | ০° ≤ y ≤ ১৮০° |
arctangent | y = arctan(x) বা y = tan−1(x) |
x = tan(y) | সকল বাস্তব সংখ্যা | −π২ < y < π২ | −৯০° < y < ৯০° |
arccotangent | y = arccot(x) বা y = cot−1(x) |
x = cot(y) | সকল বাস্তব সংখ্যা | ০ < y < π | ০° < y < ১৮০° |
arcsecant | y = arcsec(x) বা y = sec−1(x) |
x = sec(y) | x ≤ −১ বা ১ ≤ x | ০ ≤ y < π২ বা π২ < y ≤ π | ০° ≤ y < ৯০° বা ৯০° < y ≤ ১৮০° |
arccosecant | y = arccsc(x) বা y = cosec−1(x) |
x = csc(y) | x ≤ −১ বা ১ ≤ x | −π২ ≤ y < ০ বা ০ < y ≤ π২ | −৯০° ≤ y < ০° বা ০° < y ≤ ৯০° |
অভেদসমূহসম্পাদনা
ত্রিভুজ সম্পর্কিত অভেদসম্পাদনা
সাইন সূত্রসম্পাদনা
সাইন সূত্র অনুসারে যে কোনো ত্রিভুজে:
যেখানে হচ্ছে ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল এবং R হল ত্রিভুজটির পরিবৃত্তের ব্যাসার্ধ।
কোসাইন সূত্রসম্পাদনা
কোসাইন সূত্র (বা কস সূত্র) আসলে পিথাগোরাসের সূত্রের সম্প্রসারিত রূপ। এ সূত্র অনুসারে:
বা,
ট্যানজেন্ট সূত্রসম্পাদনা
ক্ষেত্রফলসম্পাদনা
দুটি বাহু a ও b এবং এদের মধ্যবর্তী কোণ C হলে ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল কোণের সাইন এবং বাহুদ্বয়ের গুণফলের অর্ধেক।[৩]
হিরনের সূত্রের সাহায্যেও ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়। ত্রিভুজের তিন বাহুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে a, b ও c হলে এটির অর্ধ-পরিসীমা,
সেক্ষেত্রে ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল:[৪]
যেখানে R হল ত্রিভুজটির পরিবৃত্তের ব্যাসার্ধ।
ত্রিকোণমিতিক অভেদসম্পাদনা
পিথাগোরাসীয় অভেদসম্পাদনা
নিচের ত্রিকোণমিতিক অভেদগুলো পিথাগোরাসের সূত্রের সাথে সম্পর্কিত এবং যে কোনো মান গ্রহণ করতে পারে।[৫]
অয়লারের সূত্রসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ Mary P Attenborough (৩০ জুন ২০০৩)। Mathematics for Electrical Engineering and Computing (ইংরেজি ভাষায়)। Elsevier। পৃষ্ঠা ৪১৮। আইএসবিএন 978-0-08-047340-6।
- ↑ রন লার্সন; ব্রুস এইচ. এডওয়ার্ডস (১০ নভেম্বর ২০০৮)। Calculus of a Single Variable (ইংরেজি ভাষায়)। সেনগেজ লার্নিং। পৃষ্ঠা ২১। আইএসবিএন 978-0-547-20998-2।
- ↑ সিনথিয়া ওয়াই. ইয়ং (১৯ জানুয়ারি ২০১০)। Precalculus (ইংরেজি ভাষায়)। জন উইলি অ্যান্ড সন্স। পৃষ্ঠা ৪৩৫। আইএসবিএন 978-0-471-75684-2।
- ↑ রিচার্ড এন. অফম্যান; ভার্নন সি. বার্কার; রিচার্ড ডি. নেশন (৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। College Trigonometry (ইংরেজি ভাষায়)। সেনগেজ লার্নিং। পৃষ্ঠা ৩০৬। আইএসবিএন 978-0-618-82507-3।
- ↑ পিটারসন, জন সি. (২০০৪)। Technical Mathematics with Calculus (সচিত্র সংস্করণ)। সেনগেজ লার্নিং। পৃষ্ঠা ৮৫৬। আইএসবিএন 978-0-7668-6189-3।
গ্রন্থপঞ্জিসম্পাদনা
- বয়ার, কার্ল বি. (১৯৯১)। A History of Mathematics (ইংরেজি ভাষায়) (দ্বিতীয় সংস্করণ)। জন উইলি অ্যান্ড সন্স। আইএসবিএন 978-0-471-54397-8।
- নিয়েলসেন, ক্যাজ এল. (১৯৬৬)। Logarithmic and Trigonometric Tables to Five Places (ইংরেজি ভাষায়) (২য় সংস্করণ)। নিউইয়র্ক: বার্নস অ্যান্ড নোবেল। এলসিসিএন 61-9103।
- থার্সটন, হিউ (১৯৯৬)। Early Astronomy (ইংরেজি ভাষায়)। স্প্রিঙ্গার সায়েন্স এন্ড বিজনেস মিডিয়া। আইএসবিএন 978-0-387-94822-5।
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- "ত্রিকোণমিতি"। খান একাডেমি (ইংরেজি ভাষায়)।
- ডেভিড জয়স। "Dave's Short Course in Trigonometry"। ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয় (ইংরেজি ভাষায়)।
- মাইকেল কোরাল। "ত্রিকোণমিতি" (পিডিএফ)। mecmath.net (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০২১।