শৈলপুত্রী

পার্বতীর একটি রূপ

শৈলপুত্রী পর্বতরাজ হিমাবতের কন্যা এবং মহাদেবীর একটি রূপ। তিনি দেবী পার্বতীর বিশুদ্ধ রূপ হিসেবে পরিচিত।[১] তিনি নবরাত্রি উৎসবে পূজিত নবদুর্গার প্রথম রূপ এবং উৎসবের প্রথম দিনে তার পূজা করা হয়। তিনি দেবী সতীর পুনর্জন্ম।[২][৩]

শৈলপুত্রী
গিরিরাজ হিমালয় বা হিমবত -এর কন্যা
অন্তর্ভুক্তিদেবী দুর্গা বা দেবী পার্বতীর অবতার
আবাসকৈলাস
মন্ত্রॐ देवी शैलपुत्र्यै नमः॥[১]वंदे वाद्द्रिछतलाभाय चंद्रार्धकृतशेखराम |

वृषारूढां शूलधरां शैलपुत्री यशस्विनीम्‌ ||

या देवी सर्वभू‍तेषु माँ शैलपुत्री रूपेण संस्थिता। नमस्तस्यै नमस्तस्यै नमस्तस्यै नमो नमः||
অস্ত্রত্রিশূল ও গবাদী পশুর লাঠি
বাহনবৃষ
ব্যক্তিগত তথ্য
মাতাপিতা
সঙ্গীশিব

বর্ননা সম্পাদনা

দেবী শৈলপুত্রীর (পার্বতী) দুই হস্ত এবং তার কপালে অর্ধচন্দ্র বিরাজমান। তিনি ডান হস্তে ত্রিশূল এবং বাম হস্তে পদ্মফুল ধারণ করেন। তিনি নন্দীর পৃষ্ঠে বিরাজ করেন।[১]

ইতিহাস সম্পাদনা

শৈলপুত্রী হলেন দেবী আদি পরাশক্তি, যিনি পর্বত রাজ হিমালয়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈলপুত্রী কথার আক্ষরিক অর্থ হল পর্বতের কন্যা (শৈল)। এছাড়াও তিনি সতী, ভবানী, পার্বতী ইত্যাদি নামে পরিচিত। পর্বতরাজ হিমবত -এর পুত্রী হিসাবে তাকে হেমাবতী নামেও সম্বোধিত করা হয়।

শৈলপুত্রী ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের শক্তির প্রতীক। তিনি তার বাহন ষাঁড়ের উপর বিরাজমান থাকেন এবং তার দুই হস্তে একটি ত্রিশূল এবং একটি পদ্ম থাকে। শিব পুরাণ এবং দেবীভাগবত পুরাণ -এর মতো কিছু ধর্মগ্রন্থে দেবী মাতার কাহিনীর বর্ননা আছে। পূর্বজন্মে তিনি ছিলেন দক্ষরাজের কন্যা সতী[৪] পিতার অমতে তিনি শিবকে বিবাহ করেছিলেন। একবার দক্ষ এক বড় যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে তিনি শিবকে আমন্ত্রণ জানাননি। কিন্তু সতী বিনা আমন্ত্রনে সেখানে পৌঁছে যান। তার সম্মুখে দক্ষ শিবকে অপমান করেন এবং সতী স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে যজ্ঞের আগুনে নিজেকে ভস্মীভুত করে প্রাণত্যাগ করেন। পরজন্মে, তিনি পার্বতী নামে হিমালয়ের কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন এবং শিবকে পুনরায় বিবাহ করেন।[৫] উপনিষদ অনুসারে তিনি ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতাদের অহংকার খন্ডন করেছিলেন এবং লজ্জিত দেবতারা দেবীর কাছে মাথা নত করে প্রার্থনা করেন এবং স্বীকার করেন, "আসলে তুমিই শক্তি, আমরা সবাই - ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিব তোমার শক্তিতেই শক্তিমান।"

গুরূত্ব সম্পাদনা

তিনি মূলচক্র বা মুলধার চক্রের দেবী হিসাবে পরিচিত। নবরাত্রি পূজায় প্রথম দিন যাতে যোগীরা তাদের মনকে মুলধারায় নিবদ্ধ রাখতে পারেন, তাই সেদিন দেবী শৈলপুত্রীর উপাসনা করা হয়। এটি তাদের আধ্যাত্মিক অনুশাসনের সূচনা বিন্দু। এখান থেকেই তাদের যোগসাধনা শুরু হয়। শৈলপুত্রী হল মূলাধার শক্তি যা নিজের মধ্যে উপলব্ধি করা যায় এবং এর মাধ্যমে যোগ ও ধ্যানে উচ্চতর গভীরতা লাভের জন্য আত্মানুসন্ধান শুরু হয়। এটি আধ্যাত্মিক অবস্থানের প্রতীক। সমগ্র বিশ্ব ও পূর্ণ প্রকৃতি দেবী দুর্গার শৈলপুত্রী রূপ থেকেই শক্তি পায়।

যোগিক দৃষ্টিকোণ থেকে নবরাত্রি প্রথম দিবস অত্যন্ত শুভ দিন বলে বিবেচনা করা হয়। এই দিন থেকে মা দুর্গার সাধনায় রত যোগীদের সাধনপথে ব্রতী হওয়ার সূচনা হয়। যারা শক্তি মন্ত্রে যে কোন প্রকার দীক্ষা নিতে চান তারা সাধারনত শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ তিথিতে দীক্ষা নেন।

শৈলপুত্রী পার্থিব অস্তিত্বের সারাংশ। তার আবাস মুলধারা চক্রে। এই শক্তির তত্ত্ব (উপাদান) হল পৃথিবী, যার নিজস্ব গুণ, ঘ্রান (গন্ধ) ও ভেদা (স্বতন্ত্র) ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

পূজাবিধি সম্পাদনা

ঘট স্থাপনের মাধ্যমে পূজা শুরু হয়। এটি একটি আচার যা নারী শক্তির প্রতীক।[৬] ঘট স্থাপন পূজায় যেসকল পূজা সামগ্রী ব্যবহার করা হয় তা পবিত্র এবং প্রতীকী বলে বিবেচিত হয়। মাটির তৈরি একটি পাত্র ভিত্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সেই পাত্রের উপর তিন স্তরে কাদামাটি এবং সপ্ত ধান্য/নবধান্য বীজ রাখা হয়। এরপর অল্প অল্প জল ছিটিয়ে দিতে হয় যাতে বীজ পর্যাপ্ত আর্দ্রতা পায়। তারপর একটি কলশ গঙ্গা জলে পূর্ণ করা হয়। সুপারি, কয়েকটি ধাতব মুদ্রা, হলুদ গুঁড়ো মেশানো কাঁচা চাল এবং দূর্বা ঘাস জলে রাখা হয়। এরপর আম গাছের পাঁচটি পাতা (পঞ্চপল্লব) কলশের মুখে রেখে তার উপর ডাব স্থাপন করা হয়।

মন্দির সম্পাদনা

  • শৈলপুত্রী মন্দির, মারহিয়া ঘাট, বারাণসী, উত্তর প্রদেশ, ভারত।[৭]
  • হেদাভদে মহালক্ষ্মী ভারতের মহারাষ্ট্রের ভাসাই ভিরার অঞ্চলের মুম্বাই আহমেদাবাদ হাইওয়েতে হেদাভদে গ্রামে অবস্থিত।[৮]
  • শৈলপুত্রী মন্দির, বারামুল্লা, জম্মু ও কাশ্মীর, ভারত
  • শৈলপুত্রী জেওয়ান, শ্রীনগর, ভারত। এটি একটি শিলা আকারে বিদ্যমান যার শিলার মাঝখানে একটি প্রাচীন বড় গাছ রয়েছে। এর পূর্ব দিকে একটি গুহা রয়েছে। ভক্তরা প্রার্থনা করার জন্য গুহায় প্রবেশ করে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Shailputri on drikpanchang"। drikpanchang। ৯ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টে ২০১৭ 
  2. "Shailaputri on Zee News"। Zee News। ২৭ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টে ২০১৭ 
  3. "Article on Hindu Deities & Mantra -Shailaputri"। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ 
  4. "Shailaputri on Astropeak"। astrospeak। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টে ২০১৭ 
  5. "Shailaputri on Dainik Bhaskar"। Dainik Bhaskar। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টে ২০১৭ 
  6. "Shailaputri on Financial Express"। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টে ২০১৭ 
  7. "Shailaputri on Dainik Bhaskar"। Dainik Bhaskar। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টে ২০১৭ 
  8. "Navadurga Temples"। ৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টে ২০১৭