নন্দী

শিবের অনুচর, বাহন তথা অবতার

নন্দী(সংস্কৃত: नन्दि) হিন্দু দেবতা শিবের বাহন। তার চার হাত।

কর্ণাটকের চামুণ্ডী পাহাড়ে নন্দি
তামিলনাড়ুর ইসা যোগ কেন্দ্রে নন্দি

আবাস: কৈলাস। অস্ত্র: কুঠার, হরিণ ও দন্ড। উপস্থিতি: শিব মহাপুরাণ। সঙ্গী: মরুৎ কন্যা সূয়শা। পিতা: শিলাদ।

অনেক শিবমন্দিরের সামনে নন্দীর মূর্তি থাকে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে। তবে সে মূর্তি সচরাচর বৃষ বা ষাঁড়ের। যদিও পুরাণে নন্দীর এই রূপটি বিরল। কূর্মপুরাণে বলা হয়েছে, মহাদেবের এই প্রধান অনুচরটি করালদর্শন, বামন, বিকটাকার, মুণ্ডিতমস্তক, ক্ষুদ্রবাহু ও মহাবল।

শিব মহাপুরাণ মতে, তিনি শিলাদ মুনির পুত্র। শিলাদ ছিলেন ভগবান শিবের পরম ভক্ত। তিনি ছিলেন ব্রহ্মচারী। পুত্রহীন বলে তাঁর পিতৃপুরুষগণ মুক্তি পাননি। তাই তারা মুনিকে পুত্রোৎপাদনের পরামর্শ দেন। শিলাদ তখন শিবের তপস‍্যা করতে থাকেন। ভগবান শিব তখন তাঁকে পুত্ররূপে জন্মানোর বরদান করেন। তিনি শিলাদকে যজ্ঞ করতে বলেন। শিলাদ যজ্ঞ করার জন‍্য ক্ষেতে হলকর্ষণ করতে থাকেন। ক্ষেত থেকে তখন এক শিশুর আবির্ভাব হয়। শিশুটি অকস্মাৎ চতুর্ভুজ মহারুদ্রের রূপ ধারণ করেন ও মুনিকে পিতা বলে সম্বোধন করেন। তখন শিলাদ তাঁকে তার আশ্রমে নিয়ে যান। আশ্রমে প্রবেশ করতেই তিনি এক বালকে পরিণত হয়। মহর্ষি বালকটির নাম দেন নন্দী। একবার মহাদেব মিত্র ও বরুণ নামে দুই দেবতাকে পাঠান নন্দীর পরীক্ষা নিতে। তাঁরা ঋষির রূপ নিয়ে শিলাদ ও নন্দীর আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। ঋষিদ্বয় নন্দীকে দেখে বলেন তাঁর আয়ু আর বেশি দিন নেই। তখন নন্দী শিবের ঘোর তপস‍্যা করে। মহাদেবের বরে তিনি শিবের প্রিয় অনুচর ও বাহন হন এবং তাকে চিরঞ্জিবী করে দেন। মহাদেব নিজে মরুৎ কন্যা সূয়শার সাথে নন্দীর বিবাহ সম্পাদন করেন।

তবে প্রায় সব কাহিনিতেই তিনি শিবের সহচর ও মিত্র। গণরা থাকে কৈলাসে, তবে মাঝে মাঝেই তারা শ্মশানে ঘোরে। সাধারণত তারা কারও ক্ষতি করে না, তবে কুপিত হলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, যেমন দক্ষযজ্ঞের সময়। এমন প্রলয় মুহূর্তে নন্দীও ক্ষেপে উঠে সব লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারেন।[]

শিবের পূজার সময় এর পূজাও করতে হয়। বর্তমানে অধিকাংশ শিবমন্দিরেই শিবমূর্তির ডান পাশে শিবের দিকে তাকিয়ে থাকা একটি ষাঁড়ের মূর্তিতে নন্দীকে স্থাপন করা হয়।

রামায়ণেও নন্দীর উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণ মতে, কৈলাসে শিবের সাথে রাবণ দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে রাবণের সাথে নন্দীর দেখা হয়। নন্দীকে বানর বলে রাবণ ব্যাঙ্গ করাতে নন্দী রাবণকে বানর কর্তৃক ধ্বংস হবার অভিশাপ দেয়। পরবর্তীতে নন্দীর অভিশাপে বানরকুল ও হনুমানের হাতে রাবণের লঙ্কা আক্রান্ত ও ধ্বংস হয়।

নন্দীর আলাদাভাবে কোন পূজা প্রচলিত না থাকলেও শিবরাত্রির দিন এরও বিশেষপূজা হয়ে থাকে। শিবপূজা শেষে নন্দীর কানে কানে প্রার্থনা জানিয়ে দেওয়ার এক বিশেষ রীতি রয়েছে।

ধারণা করা হয়, নন্দীর কানে বলে দেওয়া প্রার্থনা সরাসরি মহাদেবের হৃদয়ে পৌঁছে যায়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "আনন্দবাজার পত্রিকা - উৎসব"archives.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৫