লুইস ট্যানক্রেড

দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার

লুইস যোসেফ ট্যানক্রেড (ইংরেজি: Louis Tancred; জন্ম: ৭ অক্টোবর, ১৮৭৬ - মৃত্যু: ২৮ জুলাই, ১৯৩৪) পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক ছিলেন।[][][] দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯০২ থেকে ১৯১৩ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

লুইস ট্যানক্রেড
আনুমানিক ১৯২৩ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে লুইস ট্যানক্রেড
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৮৭৬-১০-০৭)৭ অক্টোবর ১৮৭৬
পোর্ট এলিজাবেথ, দক্ষিণ আফ্রিকা
মৃত্যু২৮ জুলাই ১৯৩৪(1934-07-28) (বয়স ৫৭)
পার্কটাউন, জোহেন্সবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাব্যাটসম্যান, অধিনায়ক
সম্পর্কভাই: বার্নার্ড ট্যানক্রেডভিনসেন্ট ট্যানক্রেড
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৩)
১১ অক্টোবর ১৯০২ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট২৬ ডিসেম্বর ১৯১৩ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৪ ১৩০
রানের সংখ্যা ৫৩০ ৫৬৯৫
ব্যাটিং গড় ২১.১৯ ২৭.৫১
১০০/৫০ ০/২ ১১/২৭
সর্বোচ্চ রান ৯৭ ১৬০
বল করেছে ৩০০
উইকেট
বোলিং গড় ২৩.৭৫
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৪/৪৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩/- ৭৩/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২২ নভেম্বর ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গটেং দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন লুইস ট্যানক্রেড

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

পোর্ট এলিজাবেথের এক ক্রিকেট পরিবারে লুইস ট্যানক্রেডের জন্ম। গ্রাহামসটাউনের সেন্ট এইডান্স কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। ঐ কলেজেই তার ভাই বার্নার্ড ট্যানক্রেডভিনসেন্ট ট্যানক্রেড পড়াশোনা করেছেন। সেখানেই ক্রিকেটে স্বীয় প্রতিভা প্রদর্শন করেছেন তিনি।

২৪ মার্চ, ১৮৯৭ তারিখে ট্রান্সভালের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ৪০ ও ১৫ রান তুলেছেন তিনি। পরের মৌসুমে কারি কাপে অংশ নেন। নাটালের বিপক্ষে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে ১২০ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি। মৌসুম শেষে ৩৬.২০ গড়ে রান তুলে ব্যাটিং গড়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিলেন।

যুদ্ধে অংশগ্রহণ

সম্পাদনা

তবে দ্যুতিময় ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবন অ্যাংলো-বোর যুদ্ধের কারণে বাঁধাগ্রস্ত হয়। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স মাউন্টেড রাইফেলসে অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন লুইস ট্যানক্রেড। যুদ্ধে অসম সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ কুইন্স মেডেল লাভ করেন তিনি।

যুদ্ধচলাকালীন সময়েই ১৯০১ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্যে তাকে দলের অন্যতম সদস্যরূপে মনোনীত করা হয়। ফলশ্রুতিতে চাকরি জীবন ত্যাগ করেন তিনি। এরপর জাহাজযোগে দলীয় সঙ্গীদের সাথে ইংল্যান্ডের পথে রওয়ানা দেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে পা ফেলে ১৬টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে লুইস ট্যানক্রেডের। তবে কোন টেস্টেই খেলার জন্যে তাকে দলে রাখা হয়নি।

টেস্ট ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১৪ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন লুইস ট্যানক্রেড। তন্মধ্যে, তিন টেস্টে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।[] ১৯০২ সালে অস্ট্রেলিয়া দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসে। ১১ অক্টোবর, ১৯০২ তারিখে জোহেন্সবার্গে সফরকারী দলের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার। ঐ টেস্টে তিনি ৯৭ ও ২৪ রান তুলেছিলেন। এটিই টেস্টে তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে অ্যান্ড্রু হাডসন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ডটি নিজের করে নেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ খেলার পর ১৯০৪ সালে ইংল্যান্ড গমনের জন্য মনোনীত হন। সেখানে অবস্থানকালে জানতে পারেন যে, তার ভাই ভিনসেন্ট দলে অন্তর্ভূক্তি না হবার ফলে মনোবেদনায় আত্মহননের পথ বেঁছে নিয়েছেন। সফরের শেষদিকে কিছু বড় ধরনের রান সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫০ রানের ইনিংস খেলেন। দেশে ফিরে কিছুদিন নির্জনতার মধ্যে দিন অতিবাহিত করেন। এরপর দলে ফিরে আসেন।

১৯০৪-০৫ মৌসুমে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে কারি কাপে ১০০০ রান তুলেন ও দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরের মৌসুমে জোহেন্সবার্গের ওল্ড ওয়ান্ডারার্সে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা দল প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে টেস্টে পরাভূত করেছিল। ১৯০৭ সালে তিনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। কারি কাপে অংশ নিতে পারেননি ও ঐ বছরে ইংল্যান্ড সফর থেকে দূরে থাকার ঘোষণা দেন। তবে, শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে যে-কোনভাবে তাকে দলে নেয়া হয়। ঐ সফরে একটিমাত্র টেস্টে অংশ নিয়ে জোড়া শূন্য রান করেন লুইস ট্যানক্রেড।

অধিনায়কত্ব লাভ

সম্পাদনা

১৯১২ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় টেস্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন লুইস ট্যানক্রেড। ঐ প্রতিযোগিতায় স্বাগতিক ইংল্যান্ডসহ অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার অংশগ্রহণ ছিল। নিয়মিত অধিনায়ক ফ্রাঙ্ক মিচেল আঘাতের কারণে মাঠের বাইরে থাকলে তিন টেস্টে দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সবগুলো টেস্টেই পরাজিত হয় তার দল। এ সফরে ২০.২৯ গড়ে রান করতে পেরেছিলেন তিনি।

পরের মৌসুমে সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ করেন তিনি। জোহেন্সবার্গে সফররত ইংরেজ দলের বিপক্ষে ঐ টেস্টে ১৩ ও ২০ রান তুলেন। সামগ্রিকভাবে ২১.২০ গড়ে ৫৩০ রান করেছেন লুইস ট্যানক্রেড।

মূল্যায়ন

সম্পাদনা

একগুঁয়ে প্রকৃতির উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবন পার করে দেন। এ প্রসঙ্গে উইজডেন মন্তব্য করে যে, নিচু হয়ে অদ্ভুতভাবে ব্যাটিংয়ে অগ্রসর হতেন তিনি। তেমন কিছু করতে না পারলেও দৃষ্টিনন্দন ছিল। ভালোমানের বোলার না হলেও গড়পড়তা ফিল্ডিং করতেন। ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণকালীন লুইস ট্যানক্রেড বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ও সামাজিক ক্লাবের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে নাটাল লাইট হর্সে তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু ১৯১৫ সালে শারীরিক অক্ষমতার কারণে দায়িত্ব পালন করা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়কালে কয়েকটি খেলায় অংশ নেন তিনি। এরপর ১৯২০ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন লুইস ট্যানক্রেড। ১৯১৫ সালের শেষদিকে মেরি চউইক নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন তিনি। এ দম্পতির সংসারে দুই সন্তান ছিল। ক্রিকেট খেলাকে ঘিরে জীবনযাপন করে জনপ্রিয় খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও তাকে বেশ হিমশিম খেতে হয়। ফলে স্বীয় সন্তান লুইস জুনিয়রকে খেলাধূলায় জীবন ধারণের বিষয়ে শক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ও সে যেন রয়্যাল এয়ারফোর্সে যোগদান করে। ফ্লাইট ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ৩৪ বছর বয়সে লিঙ্কনশায়ারের এক্সহোম আইলে নিহত হয় তার সন্তান।

২৮ জুলাই, ১৯৩৪ তারিখে ৫৭ বছর বয়সে ট্রান্সভালের পার্কটাউনে লুইস ট্যানক্রেডের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "South Africa – Players by Test cap"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৬ 
  2. "South Africa – Test Batting Averages"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৬ 
  3. "South Africa – Test Bowling Averages"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৬ 
  4. "List of captains: South Africa – Tests"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা
  • Hall, B. & Schulze, H. (2000) "The Cricketing Brothers Tancred, Part 2", The Cricket Statistician, No. 112. Association of Cricket Statisticians and Historians, Cardiff.