মযহারুল ইসলাম

লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ

প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলাম (১ জুলাই ১৯২৯ - ১৪ নভেম্বর ২০০৩) ছিলেন বাংলাদেশের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লোকাচারবেত্তা, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, লোকতাত্ত্বিক, লোকবিজ্ঞানী, কবি-কথাশিল্পী-সংগঠক ও শিল্পপতি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য[১] এবং বাংলা একাডেমির প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন।[২] শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২৩ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করে। [৩]

মযহারুল ইসলাম
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক
কাজের মেয়াদ
২ জুন ১৯৭২ – ১২ আগস্ট ১৯৭৪
পূর্বসূরীপদ স্থাপন
উত্তরসূরীনীলিমা ইব্রাহিম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
কাজের মেয়াদ
৪ আগস্ট ১৯৭৪ – ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫
পূর্বসূরীখান সারওয়ার মুরশিদ
উত্তরসূরীসৈয়দ আলী আহসান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯২৯-০৭-০১)১ জুলাই ১৯২৯
মৃত্যু১৪ নভেম্বর ২০০৩(2003-11-14) (বয়স ৭৪)
ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাপিএইচডি
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

মযহারুল ইসলাম তালগাছী আবু ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৫ সালে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে সিরাজগঞ্জ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর রাজশাহী সরকারি কলেজে বাংলা বিষয়ে অনার্স নিয়ে বিএ ক্লাশে ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে অনার্স পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলা এম.এ প্রিভিয়াস পরীক্ষায় এবং ১৯৫১ সালে অনুষ্ঠিত এম এ ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একই সঙ্গে তিনি স্বর্ণ পদক এবং কালীনারায়ণ বৃত্তি লাভ করেন।

তিনি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র তত্ত্বাবধানে ১৯৫৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে হেয়াত মামুদ" বিষয়ে পিএইচ.ডি সম্পন্ন করেন। পরে ১৯৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকাচারবিদ্যায় দ্বিতীয় পিএইচ.ডি সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

মযহারুল ইসলাম ১৯৫২ সালে প্রভাষক হিসেবে ঢাকা কলেজে যোগদান করেন, ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ইচ্ছা অনুসারে ঢাবির বাংলা বিভাগ ছেড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে যোগদানকরেন। ১৯৬৩ সালে তিনি আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি রাবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি কলা অনুষদের ডীন নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। হার্ভার্ডের মেয়াদ শেষ হবার পর তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি এ্যাট বার্কলীতে কিছুদিন অতিথি অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মযহারুল ইসলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রতিদিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাহসী ও বলিষ্ঠ বক্তব্য উপস্থাপন করতেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর মযহারুল ইসলাম ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ১৯ আগস্ট তারিখে মযহারুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগদান করেন। ১৯৭৯-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয়, তামিলনাড়র– আল্লামনাই বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লীর নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি স্প্যারো এ্যাপারেলস্ লিমিটেড নামে পোশাক শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করেন ও আজীবন এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।

সাহিত্যসৃষ্টি সম্পাদনা

কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা

  • মাটীর ফসল : নওরোজ কিতাবিস্তান, ঢাকা, ১৯৫৫।
  • বিচ্ছিন্ন প্রতিলিপি : ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ১৯৭০।
  • আর্তনাদে বিবর্ণ : এপ্রিল : ১৯৭০।
  • যেখানে বাঘের থাবা : সমকাল প্রাইভেট লিমিটেড, ঢাকা, জুন ১৯৭৯।
  • অপরাহ্ণে বিবস্ত্র প্রাতরাশ : সমকাল প্রাইভেট লিমিটেড, ঢাকা, আগস্ট ১৯৭৯।
  • দুঃসময়ের ছড়া : ১ম সংস্করণ, ঢাকা, ১৯৮৬।
  • সাম্প্রতিক ছড়া : ঢাকা, ডিসেম্বর ১৯৯৭।
  • উজানে ফেরার প্রতিধ্বনি : আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮।
  • কাব্য বিচিত্রা : আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, এপ্রিল ১৯৯৮।
  • রাজবারান্দায় তুমি : ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮।
  • সন্তরণে নিরন্তর : ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০০।

গবেষণা ও সৃজনশীল প্রবন্ধ গ্রন্থ সম্পাদনা

  • কবি পাগলা কানাই : বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৯।
  • সাহিত্য পথে : গ্রেট বেঙ্গল লাইব্রেরি, ঢাকা, ১৯৬০।
  • কবি হেয়াত মামুদ : আগামী প্রকাশনী, দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০০০।
  • ফোকলোর পরিচিতি ও লোকসাহিত্যের পঠন-পাঠন : বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৭।
  • লোককাহিনী সংগ্রহের ইতিহাস : স্টুডেন্ট ওয়েজ, বাংলা বাজার, ঢাকা, ১৯৬৯।
  • ফোকলোর পরিচিতি ও পঠন-পাঠন : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৯৩।
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, মার্চ ১৯৭৪।
  • সতী ময়না ও লোর-চন্দ্রানী (সম্পাদিত) : প্রথম সংস্করণ, নওরোজ কিতাবিস্তান, ঢাকা, ১৯৬৯; দ্বিতীয় সংস্করণ, কলকাতা, ১৯৮০।
  • ফোকলোর চর্চায় রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি : লোকলৌকিক প্রকাশনী, কলকাতা, ১৯৮২।
  • কিশোর-নবীনদের বঙ্গবন্ধু : সংবর্ত প্রকাশন, ঢাকা, ১৯৯২।
  • ভাষা-আন্দোলন ও শেখ মুজিব : আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৪।
  • বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য : আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৫।
  • কালস্রোতে বর্তমান বাংলাদেশ : আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৫।
  • রবীন্দ্রনাথ : কবি, সাহিত্যশিল্পী ও কর্মযোগী : আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৬।
  • বিচিত্র দৃষ্টিতে ফোকলোর : বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটি, ঢাকা, ১৯৯৭।
  • আঙ্গিকতার আলোকে ফোকলোর : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৯৯।
  • বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি : আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০০।
  • বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা : বিজয় প্রকাশ, ঢাকা, ২০০৬।
  • অসীম রোদন দুলিছে যেন : ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০৬।
  • রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও বাঙালি সংস্কৃতি : বিজয় প্রকাশ, ঢাকা, ২০০৬।
  • বাঙালি জীবনে ত্রয়ী ও অন্যান্য চিন্তা : বিজয় প্রকাশ, ঢাকা, ২০০৬।
  • পক্ষীকুল সংবাদ ও সাহিত্য-সংস্কৃতি ভাবনা : বিজয় প্রকাশ, ঢাকা, ২০০৭।
  • জীবন স্বপ্ন ও বাস্তবতার টানাপড়েন : বিজয় প্রকাশ, ঢাকা, ২০০৭।
  • সমকালীন রাজনীতি : বিজয় প্রকাশ, ঢাকা, ২০০৭।

ইংরেজি ভাষায় রচিত গবেষণামূলক গ্রন্থাবলি সম্পাদনা

  • A History of Folktale collections in India and Pakistan (ভারত ও পাকিস্তানে লোককথা সংগ্রহের ইতিহাস), বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৭০
  • The theoretical study of folklore (লোকাচারবিদ্যার তাত্ত্বিক অধ্যয়ন), বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৯৮
  • The Socio-cultural study of folklore (লোকাচারবিদ্যার সামাজিক-সাংস্কৃতিক গবেষণা), বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০১
  • Social change and folklore (সামাজিক পরিবর্তন এবং লোকাচারবিদ্যা), রবীন্দ্র ভারতী সমাজ, ১৯৮৫
  • Folklore: The pulse of the people (লোকাচারবিদ্যা: জনগণের স্পন্দ), নতুন দিল্লি, ১৯৮৫

অনুবাদ-গ্রন্থ সম্পাদনা

ছোটগল্প সম্পাদনা

  • তালতমাল : ইস্টবেঙ্গল পাবলিশার্স, ঢাকা, ১৯৫৯

উপন্যাস সম্পাদনা

  • এতটুকু ছোঁয়া লাগে : আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০২

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৬৮ সালে মযহারুল ইসলামকে কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৭০ সালে তাকে তৎকালীন পাকিস্তানের উচ্চতম সাহিত্য পুরস্কার “দাউদ পুরস্কার” প্রদান করা হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "University of Rajshahi"। ২০১৯-০৯-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৯ 
  2. "প্রাক্তন স্পেশাল অফিসার, পরিচালক ও মহাপরিচালকবৃন্দ"। বাংলা একাডেমি। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৯ 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনসহ ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে একুশে পদক"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৩