বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির সর্বোচ্চ নির্বাহী পদ এবং তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি একই সঙ্গে “বাংলা একাডেমি কার্যনির্বাহী পরিষদ”-এর প্রধান। তিনি যুগপৎ একাডেমির সাধারণ পরিষদ ও বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিকট দায়বদ্ধ। পদাধিকার বলে তিনি একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত সকল পত্র-পত্রিকার সম্পাদক।
ধরন | স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান |
---|---|
উদ্দেশ্য | বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা |
সদরদপ্তর | বর্ধমান হাউজ |
অবস্থান | |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা |
বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা | ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ |
সভাপতি | আবুল কাসেম ফজলুল হক[১] |
মহাপরিচালক | মোহাম্মদ আজম |
ওয়েবসাইট | banglaacademy |
১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৮ জন ব্যক্তি এই পদে নিযুক্তি লাভ করেছেন। মযহারুল ইসলাম প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন।[২] নীলিমা ইব্রাহিম একমাত্র নারী মহাপরিচালক ছিলেন। শামসুজ্জামান খান ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘতম সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক হলেন ড. মোহাম্মদ আজম।
ইতিহাস
সম্পাদনাবাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের লক্ষ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশে) এই একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন-পরবর্তী কালের প্রেক্ষাপটে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমি'র প্রধান হিসেবে 'মহাপরিচালক' পদটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সৃষ্টি করা হয়। স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ পদের ব্যক্তিদের 'স্পেশাল অফিসার' ও পরবর্তীতে 'পরিচালক' পদ দেয়া হতো।[৩]
বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১৭ই মে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ‘দি বাংলা একাডেমি অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করেন। এই আদেশ দ্বারা কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ড বাংলা একাডেমির সাথে যুক্ত করা হয়, কাউন্সিলের নাম পরিবর্তন করে ‘কার্যনির্বাহী পরিষদ’ করা হয় এবং বাংলা একাডেমির প্রধান নির্বাহী হিসেবে মহাপরিচালকের পদ সৃষ্টি করা হয়।[২]
নিয়োগবিধি
সম্পাদনা১৯৭৮ সালের বাংলা একাডেমি অরডিন্যান্স এবং পরবর্তীতে সংশোধিত ও পুনঃপ্রণীত বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩-এর ধারা ২৬ অনুযায়ী এই পদটি প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাবিদ বা গবেষকদের মধ্য হতে এই পদে একজন বাংলাদেশী নাগরিককে নিয়োগ করে থাকে। আইন অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি তিন বছর মেয়াদের জন্য এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।[৪] একজন মহাপরিচালক সরকারের যুগ্ম সচিব বা কখনো অতিরিক্ত সচিবের পদমর্যাদা ও সুযোগসুবিধাদি ভোগ করে থাকেন। তিনি সরকারের একজন “বিভাগীয় প্রধান”-এর প্রশাসনিক ও আর্থিক এখতিয়ারের প্রাধিকারী।
মহাপরিচালকের পদ শূন্য হলে, বা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে মহাপরিচালক তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, নবনিযুক্ত মহাপরিচালক কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা মহাপরিচালক পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না-হওয়া পর্যন্ত, একাডেমির সচিব অস্থায়ীভাবে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে, ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কার্যাবলী
সম্পাদনামহাপরিচালক একাডেমির সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাহী। তিনি একাডেমির কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য দায়ী থাকবেন। তিনি একাডেমির উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়াদি ও প্রশাসনিক কার্যাবলির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করবেন। মহাপরিচালক নির্বাহী পরিষদের সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দায়ী। তিনি একাডেমির কার্যাবলি এবং নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্তসমূহ একাডেমির সভাপতিকে নিয়মিত অবহিত করবেন। প্রতি অর্থ-বৎসরে একাডেমির কার্যক্রমের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্ত্তত করতঃ উহা নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা তার দায়িত্বেব। মহাপরিচালক একাডেমির সার্বিক কার্যক্রমের বার্ষিক প্রতিবেদন নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনক্রমে সাধারণ পরিষদের সভায় উপস্থাপন করবেন। তিনি সাধারণ পরিষদ বা নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ বা দায়িত্ব পালন করিবেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩ এবং তদধীন প্রণীত বিধি ও প্রবিধানের বিধান প্রতিপালন নিশ্চিত করবেন।[৫]
মহাপরিচালকবৃন্দের তালিকা
সম্পাদনাবাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালনকারীদের তালিকা নিম্নরূপ:[৩]
ক্রম | নাম | প্রতিকৃতি | দায়িত্ব গ্রহণ | দায়িত্ব হস্তান্তর |
---|---|---|---|---|
১ | মযহারুল ইসলাম | ২ জুন ১৯৭২ | ১২ আগস্ট ১৯৭৪ | |
২ | নীলিমা ইব্রাহিম | ১২ আগস্ট ১৯৭৪ | ৬ জুন ১৯৭৫ | |
৩ | মুস্তাফা নূরউল ইসলাম | ৬ জুন ১৯৭৫ | ৫ মে ১৯৭৬ | |
৪ | আশরাফ সিদ্দিকী | ৪ জুন ১৯৭৬ | ৩০ জুন ১৯৮২ | |
৫ | কাজী মুহম্মদ মনজুরে মওলা | ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮২ | ১১ মার্চ ১৯৮৬ | |
৬ | আবু হেনা মোস্তফা কামাল | ১১ মার্চ ১৯৮৬ | ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ | |
৭ | মাহমুদ শাহ কোরেশী | ১ জানুয়ারি ১৯৯০ | ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ | |
৮ | মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ | ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ | ১৯ মার্চ ১৯৯৫ | |
৯ | আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসা | ১৯ মার্চ ১৯৯৫ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ | |
১০ | সৈয়দ আনোয়ার হোসেন | ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০১ | |
১১ | রফিকুল ইসলাম | ৩০ এপ্রিল ২০০১ | ৩১ ডিসেম্বর ২০০১ | |
১২ | আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসা | ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০২ | ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ | |
১৩ | আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ | ১৬ নভেম্বর ২০০৬ | |
১৪ | সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ | ১৩ মে ২০০৭ | ১২ মে ২০০৯ | |
১৫ | শামসুজ্জামান খান | ২৪ মে ২০০৯ থেকে | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | |
১৬ | হাবীবুল্লাহ সিরাজী | ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ | ২৫ মে ২০২১ | |
১৭ | মুহম্মদ নূরুল হুদা | ১৩ জুলাই ২০২১[৬] | ১৩ জুলাই ২০২৪ | |
১৮ | রাশিদ আসকারী | ২৪ জুলাই ২০২৪[৭] | ১০ আগস্ট ২০২৪ | |
১৯ | মোহাম্মদ আজম | ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | অদ্যাবধি |
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বাংলা একাডেমির সভাপতি হলেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, সমকাল, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
- ↑ ক খ "ইতিহাস ও কার্যাবলি"। বাংলা একাডেমি। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "প্রাক্তন স্পেশাল অফিসার, পরিচালক ও মহাপরিচালকবৃন্দ"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন।
- ↑ "বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩ | ২৬। মহাপরিচালক নিয়োগ, মেয়াদ, ইত্যাদি"। bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৫।
- ↑ বাংলা একাডেমি আইন,২০১৩
- ↑ "কে হচ্ছেন বাংলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক"। নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২৪ জুলাই ২০২৪)। "বাংলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক হারুন-উর-রশীদ আসকারী"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২৪।