মমতাজউদদীন আহমদ

বাংলাদেশী নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক
(মমতাজউদ্দীন আহমেদ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মমতাজউদদীন আহমদ (১৮ জানুয়ারি ১৯৩৫ – ২ জুন ২০১৯) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক।[] তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।[]

মমতাজউদদীন আহমদ
মমতাজউদ্দীন আহমদ
মমতাজউদ্দীন আহমদ, ২০০৬ সালের ২১ অক্টোবর আর্বানার ঠাকুর ফেস্টিভালে তোলা ছবি।
জন্ম(১৯৩৫-০১-১৮)১৮ জানুয়ারি ১৯৩৫
মৃত্যু২ জুন ২০১৯(2019-06-02) (বয়স ৮৪)
অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশানাট্যকারঅভিনেতা
দাম্পত্য সঙ্গীকামরুন্নেসা বেগম কুমু
পিতা-মাতা
কলিমুদ্দিন আহমদ (পিতা)

সখিনা বেগম (মাতা)

পুরস্কারবাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬)
একুশে পদক (১৯৯৭)

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

মমতাজউদদীন ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] দেশ বিভাগের পর তার পরিবার তদানিন্তন পূর্ববঙ্গে চলে আসে। তার পিতার নাম কলিমুদ্দিন আহমদ ও মাতার নাম সখিনা বেগম।

মমতাজউদদীন মালদহ আইহো জুনিয়র স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে ১৯৫১ সালে ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী কালে রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি.এ (অনার্স) ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

মমতাজউদদীন আহমদ ৩২ বছরের বেশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ইউরোপীয় নাট্যকলায় শিক্ষাদান করেছেন। ১৯৬৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন।[] তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৯৭৬-৭৮ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৭৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে ঢাকা কলেজে প্রথম মুসলিম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

তিনি ভারতের দিল্লী, জয়পুর এবং কলকাতায় নাট্যদলের নেতা হিসাবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তার লেখা নাটক কি চাহ শঙ্খ চিল এবং রাজা অনুস্বরের পালা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে নিয়মিত কলামও লিখতেন। এছাড়াও তার বেশ কিছু নাটক, বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

মমতাজউদদীন শিক্ষক ও লেখক হিসেবে পরিচিতি পেলেও থিয়েটারের মাধ্যমে তার কর্মজীবনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন কর্মী হিসেবে সক্রিয়ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এছাড়াও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। মমতাজউদদীন ১৯৭৭-৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন।[] ২০১১ সাল থেকে তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজনৈতিক জীবন

সম্পাদনা

মমতাজউদদীন আহমদ অবিভক্ত বাংলার মালদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় তার শৈশব অতিবাহিত করেন। ছাত্রাবস্থায়ও তিনি তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে অংশ নেন। রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন কর্মী গোলাম আরিফ টিপুর সাথে তিনি রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেও ভূমিকা পালন করেন।[] ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে তিনি রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেন।

উল্লেখযোগ্য অবদান

সম্পাদনা

গবেষণা ও প্রবন্ধ

সম্পাদনা
  • বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত
  • বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত
  • প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
  • প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু
  • নাট্যত্রয়ী
  • হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার
  • স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা (১৯৭১)
  • কি চাহ শঙ্খ চিল (১৯৮৫)
  • প্রেম বিবাহ সুটকেশ
  • জমিদার দর্পণ
  • রাজা অনুস্বরের পালা
  • ক্ষত বিক্ষত
  • রঙ্গপঞ্চাদশ
  • বকুল পুরের স্বাধীনতা
  • বর্ণচোর
  • সাত ঘাটের কানাকড়ি
  • রাক্ষসী[]

গদ্য রচনাসমগ্র

সম্পাদনা
  • চার্লি চ্যাপেলিন-ভাঁড় নয় ভব ঘুরে নয়
  • আমার ভিতরে আমি
  • জগতের যত মহাকাব্য
  • হৃদয় ছু আছে
  • লাল সালু ও সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ
  • মহানামা কাব্যের গদ্যরূপ
  • সাহসী অথচ সাহস্য
  • নেকাবী এবং অন্যগণ
  • জন্তুর ভিতর মানুষ
  • ভালবাসিলেই
  • সজল তোমার ঠিকানা (উপন্যাস)
  • এক যে জোড়া, এক যে মধুমতি (উপন্যাস)
  • অন্ধকার নয় আলোর দিকে

সম্মাননা ও পুরস্কার

সম্পাদনা

শিল্প ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "মমতাজউদ্‌দীন আহমদের চলে যাওয়ার দিন আজ"prothomalo.com। ২ জুন ২০২০। সংগ্রহের তারিখ জুন ২, ২০২০ 
  2. মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য, নবম-দশম শ্রেণি, পৃষ্ঠা ১২০, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ
  3. "নাট্যকার মমতাজউদদীন আহমদ গুরুতর অসুস্থ"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৯ 
  4. "নাট্যাচার্য মমতাজউদদীন আহমদ"দৈনিক আজাদী। ১৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৯ 
  5. "জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মমতাজউদদীন আহমদ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৯ 
  6. বরেন্দ্র অঞ্চলেরর ইতিহাস: বরেন্দ্র অঞ্চলের ভাষা আন্দোলন, এ্যাডভোকেট সৈয়দ আমির হোসেন-এর স্মৃতি চারণ-পৃষ্ঠা-৬০০
  7. ভোলাহটের ইতিহাস ও ঐতিহ্য,মোহাম্মদ সালাউদ্দিন,পৃষ্ঠা -২৩২