বিশ্ব হিন্দু পরিষদ

ভারতের একটি হিন্দুত্ববাদী সামাজিক সংগঠন

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ভারতের একটি হিন্দুত্ববাদী সামাজিক সংগঠন। এটি এর ইংরেজি নামের আদ্যাক্ষর VHP দিয়েই বেশি পরিচিত। এটি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১২৫টিরও বেশি দেশে এই সংঘঠনের কার্যক্রম চলমান।[]

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ
VHP- এর লোগো, একটি বটগাছ চিত্রিত করা হয়েছে এবং স্লোগান ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ
সংক্ষেপেভিএইচপি/VHP
নীতিবাক্যধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ
গঠিত২৯ আগস্ট ১৯৬৪ (৬০ বছর আগে) (1964-08-29)
প্রতিষ্ঠাতাএস.এস. আপ্তে
এম এস গোলওয়ালকর
স্বামী চিন্ময়ানন্দ
ধরনডানপন্থী
উদ্দেশ্যহিন্দু জাতীয়তাবাদহিন্দুত্ব
সদরদপ্তরনতুন দিল্লী, ভারত
স্থানাঙ্ক২৮°২০′ উত্তর ৭৭°০৬′ পূর্ব / ২৮.৩৩° উত্তর ৭৭.১০° পূর্ব / 28.33; 77.10
যে অঞ্চলে কাজ করে
বিশ্বব্যাপী
দাপ্তরিক ভাষা
হিন্দি
আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রপতি
রবীন্দ্র নারায়ণ সিং[]
সহায়করাবজরং দল (যুব দল)
দুর্গা বাহিনী (নারী দল)
অনুমোদনসঙ্ঘ পরিবার
ওয়েবসাইটvhp.org

দলটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দলের শাখা হিসাবে যাত্রা শুরু করে। এটি হিন্দুত্ববাদী দলসমূহের মাতৃসংগঠন সংঘ পরিবার এর অন্তর্গত। দলটির স্লোগান হলো "ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ" (धर्मो रक्षति रक्षितः), তথা ধর্মকে সুরক্ষা করলে ধর্ম বাঁচায়। এই দলের প্রতীক হলো বট গাছ।

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৯৬৪ সালের ২৯শে আগস্ট, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পুণ্যতিথিতে তৎকালীন সরসঙ্ঘচালক পরম পূজনীয় শ্রী মাধব সদাশিব রাও গোলওয়ালকরের নেতৃত্বে স্বামী চিন্ময়ানন্দ, শ্রী শিবরাম শঙ্কর আপ্তে প্রমুখের সহায়তায় "হিন্দু সমাজকে সংগঠিত ও সঙ্ঘবদ্ধ করতে এবং হিন্দু ধর্মের সেবা ও রক্ষা" করার ব্রত নিয়ে পথ চলা শুরু এই সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনটির। সন্দীপনী আশ্রম ও চিন্ময় মিশনের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী চিন্ময়ানন্দ ছিলেন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও শ্রী শিবরাম শঙ্কর আপ্তেজী ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।

প্রয়াগ ধর্ম সম্মেলন

সম্পাদনা

১৯৬৬ সালে প্রয়াগ মহাকুম্ভের সময় পথ চলা শুরু পরিষদের, প্রয়াগে আয়োজিত হয় প্রথম বিশ্ব ধর্মসম্মেলন। পরিষদের মূলমন্ত্র : ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ (অর্থাৎ যে ধর্মরক্ষা করে, ধর্ম তাকে রক্ষা করে)। পরিষদের চিহ্ন : বটবৃক্ষ। পরিষদ বিশ্বাস করে বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মাবলম্বীগণ বৃহত্তর হিন্দু সমাজের অঙ্গীভূত এবং এইসকল মতাদর্শ "ভারতীয় সন্ত সমাজ" কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও প্রসারিত।

উদুপী সন্ত সম্মেলন

সম্পাদনা

১৯৬৯ সালে দাক্ষিণাত্যে কর্ণাটকের উদুপীতে এক সুবিশাল সন্ত সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ - যার মুখ্য পৃষ্ঠপোষক ছিলেন উদুপীর সুমহান পেজাবর মঠের প্রধান শ্রী বিশ্বেষতীর্থ স্বামীজী মহারাজ। হিন্দু সমাজে চলে আসা কুপ্রথা : জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে সারা ভারতবর্ষ আগত থেকে সকল সন্ত সমাজ উদুপী ধর্ম সম্মেলন থেকে একত্রে উদ্ঘোষ করেন জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে : বলেন সকল হিন্দু সহোদর - কোনো হিন্দু পতিত নয়, হিন্দু রক্ষা আমার দীক্ষা, আমার মন্ত্র সমানতা। " হিন্দবঃ সোদরাঃ সর্বে ন হিন্দুঃ পতিতো ভবেৎ। মম দীক্ষা হিন্দুরক্ষা মম মন্ত্র সমানতা।।" গত ছাপ্পান্ন বছর ধরে হিন্দু সমাজের জন্য কাজ করে চলেছে পরিষদ - জাতিভেদ প্রথা নিরসনে, গোহত্যা বিরোধী আন্দোলনে, ধর্মান্তরকরণের বিরুদ্ধে : সাফল্য এসেছে, সমালোচনাও হয়েছে - কিন্তু, নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে "চরৈবেতি" মন্ত্রকে সম্বল করে এগিয়ে যাচ্ছে পরিষদ। অযোধ্যায় রাম মন্দির আন্দোলনের মুখ্য সূত্রধর হলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ - ১৯৮৪ সালে উদুপীতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধর্ম সংসদে যে দেশব্যাপী জন আন্দোলনের সূচনা - তা সাফল্যমণ্ডিত পরিণতি লাভ করে বিগত ৫ই আগস্ট, ২০২০।

মতাদর্শ

সম্পাদনা

১৯৬৪ সালে ২৯ আগস্টে বোম্বাইয়ের সান্দিপানি সাধনালয়, পাওয়াইতে একটি সম্মেলনে ভিএইচপি প্রথম উত্থাপিত হয়েছিল । সম্মেলনের আয়োজক ছিলেন আরএসএস প্রধান এমএস গোলওয়ালকারজন্মাষ্টমীর উৎসবের সঙ্গে মিল রেখে তারিখটি বেছে নেওয়া হয়েছিল । দালাই লামার পাশাপাশি হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধজৈন ধর্মের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ।[]  গোলওয়ালকর ব্যাখ্যা করেছেন যে " ভারতীয় বংশোদ্ভূত সকল ধর্মকে একত্রিত করতে হবে", এখানে "হিন্দু" ("হিন্দুস্তানের মানুষ") শব্দটি সমস্ত ধর্মের অনুসারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।[]  এবং আরো বলেন:

বিশ্বকে খ্রিস্টান , ইসলামকমিউনিস্টে ভাগ করা হয়েছে । তারা সকলেই হিন্দু সমাজকে খুব সূক্ষ্ম সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে দেখেন যা খেয়ে নিজেকে ভোজ এবং মোটাতাজা করা যায়। এই দ্বন্দ্বের যুগে হিন্দু বিশ্বকে তিনটির অনিষ্ট থেকে বাঁচানোর জন্য চিন্তা করা এবং সংগঠিত করা প্রয়োজন।[]

মূল মতাদর্শ

সম্পাদনা

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মূল মতাদর্শ হলো -

  1. হিন্দু সমাজে একতা আনা ও সমাজকে শক্তিশালী করে তোলা ।
  2. জীবন, নীতি, এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ে হিন্দু মূল্যবোধগুলোকে সুরক্ষা করা এবং সর্বত্র এই মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়া।
  3. বিদেশে বসবাসরত সব হিন্দুদের সাথে যোগাযোগ রাখা, এবং তাদের হিন্দু পরিচয়, মূল্যবোধ ও হিন্দুত্বের ধারণাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করা।

যুব সংস্থাসমূহ

সম্পাদনা

বজরং দল ও দুর্গাবাহিনী

সম্পাদনা
 
হরিদ্বারে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্থানীয় অফিস

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুব বাহিনীর নাম বজরং দল । যাতে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার যুবক ধর্ম ও সমাজ রক্ষার কাজে নিঃস্বার্থভাবে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন।১৯৯১ সালে সাধ্বী ঋতম্ভরাজীর নেতৃত্বে ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সহযোগিতায় পথ চলা শুরু পরিষদের মাতৃকাশক্তি: দুর্গাবাহিনীর - যারা "লাভ জিহাদ" বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সক্রিয় অংশীদার। গত ছাপ্পান্ন বছরে পরিষদ ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

সহিংসতা

সম্পাদনা

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ১৯৮৪ সালের মার্চ মাস থেকে রামের জন্মভূমি বা বাবরি মসজিদ নিয়ে অযোধ্যা বিতর্কে আগ্রাসীভাবে জড়িত ছিল। ১৯৮৪ সালের মার্চ মাস থেকে, একাত্তমাতা যাত্রা কর্মসূচি থেকে তারা যে শক্তিশালী সাড়া পেয়েছিল তাতে উৎসাহিত হওয়ার পরে, ১৯৮৩ সালে সংগঠিত হয়েছিল, যা হিন্দু ঐক্য এবং ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার লক্ষ্যে ছিল। অযোধ্যা ইস্যুতে এই কার্যক্রমে বিক্ষোভ, পিটিশন এবং মামলা-মোকদ্দমার পাশাপাশি জঙ্গি মিছিল, জোরপূর্বক ধর্মান্তরণ অনুষ্ঠান এবং সহিংসতা ও ভাংচুরের ঘটনা, বিশেষ করে মুসলমানদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।[] ভিএইচপি বাবরি মসজিদ ধ্বংস করারও চেষ্টা করেছিল বলে জানা যায়। ভিএইচপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলির মতে, ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট বাবরের দ্বারা রামের জন্মস্থানে মন্দিরটি ভেঙে বাবরি মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। এলাহাবাদ আদালতের ডকুমেন্টেশনে আরও বলেছে যে ভবনটি তখন জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। এটি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ছিল এবং উপাসনা বা কোনও ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহার করা যেতো না।[][][][]

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ভিএইচপি এবং বজরং দল বিজেপির মদদে ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গায় জড়িত ছিল।[১০] যদিও ভিএইচপি এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছ। ভিএইচপি-র মুখপাত্র কৌশিকবাহি মেহতা বলেন, "ভিএইচপি-তে আমাদের এই সহিংসতার সঙ্গে বিধবা ও গোধরা ধ্বংসের শিকারদের দেখাশোনা করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।[১১]

২০১৫ সালে, ভিএইচপি হরিয়ানার একটি গির্জা ধ্বংসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো। ভিএইচপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্র জৈন অভিযোগ করেছেন যে "গির্জাটি আগ্রাসী রূপান্তরের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল" এবং এর ধ্বংসকে তিনি ১৮৫৭ সালের যুদ্ধের সহিংসতার সাথে তুলনা করেছিলেন।

২০১৮ সালের ৪ ঠা জুন, সিআইএ ভিএইচপিকে একটি জঙ্গি ধর্মীয় সংগঠন হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করলেও ২০১৮ সালে ২৫শে জুন আবার তা বাদ দেয়।[১২]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Rabindra Narain Singh elected as VHP president"। ১৩ ডিসেম্বর ২০২১। 
  2. Kurien, Prema (২০০১)। "Religion, ethnicity and politics: Hindu and Muslim Indian immigrants in the United States"। Ethnic and Racial Studies24 (2): 268। 
  3. Long, Jeffery D. (২০১১)। Historical dictionary of Hinduism (New সংস্করণ)। Lanham, Md.: Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 319আইএসবিএন 978-0-8108-6764-2 
  4. Smith 2003, পৃ. 189।
  5. Katju, Manjari (২০০৩)। Vishva Hindu Parishad and Indian Politics (ইংরেজি ভাষায়)। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 8, 113। আইএসবিএন 9788125024767 
  6. Katju, Manjari (২০০৩)। Vishva Hindu Parishad and Indian Politics (ইংরেজি ভাষায়)। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 45, 67। আইএসবিএন 9788125024767 
  7. Russell, Malcolm (২০১২-০৮-০১)। Middle East and South Asia 2012 (ইংরেজি ভাষায়)। Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা 231। আইএসবিএন 9781610488891 
  8. "Ayodhya files, Vol. 7" (পিডিএফ)। Allahabad High Court। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-২৪ 
  9. Vinod Mishra (ডিসে ১৯৯২)। "On Communalism"। Marxists.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-২৪ 
  10. "We Have No Orders to Save You: State Participation and Complicity in Communal Violence in Gujarat"www.hrw.org। Human Rights Watch। ২০০২-০৪-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-২৪ 
  11. "Eves as Ram bhakts, the Gujarat model"Times of India। ২০০২-০৪-১১। 
  12. Reddy, Akhil (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "Older version of CIA's World Factbook listed Bajrang Dal and VHP as 'militant religious organisation'"Factly। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০২১ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা