বট
বট তথা বট গাছ (ইংরেজি: Indian banyan), (বৈজ্ঞানিক নাম : Ficus benghalensis) ফাইকাস বা (ডুমুর জাতীয়) গোত্রের ইউরোস্টিগ্মা উপগোত্রের সদস্য। এর আদি নিবাস হল বঙ্গভূমি (বাংলাভাষী অঞ্চল)। এটি একটি বৃহদাকার বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। বট গাছ খুব বড় জায়গা জুড়ে জমির সমান্তরাল শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে যারা স্তম্ভমূলের উপর ভর দিয়ে থাকে। স্তম্ভমূল প্রথমে সরু সরু ঝুরি হিসবে বাতাসে ঝোলে। পরে মাটিতে প্রেথিত হলে স্তম্ভমূলের মাটির উপরের অংশ বিটপে পরিবর্তিত হয়।
বট Ficus benghalensis | |
---|---|
![]() | |
বটবৃক্ষের স্তম্ভমূল, ফ্লোরিডা | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Plantae |
শ্রেণীবিহীন: | Angiosperms |
শ্রেণীবিহীন: | Eudicots |
শ্রেণীবিহীন: | Rosids |
বর্গ: | Rosales |
পরিবার: | Moraceae |
গণ: | Ficus |
প্রজাতি: | F. benghalensis |
দ্বিপদী নাম | |
Ficus benghalensis L. | |
প্রতিশব্দ | |
|
বর্ণনাসম্পাদনা
বটের পাতা একান্তর, ডিম্বাকৃতি, মসৃণ ও উজ্জ্বল সবুজ[২]। কচি পাতা তামাটে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে পাতার আয়তনের বিভিন্নতা একাধারে বটের বৈশিষ্ট্য তথা প্রজাতি শনাক্তকরণের পক্ষে জটিলতার কারণও। পরিণত গাছের পাতা আকারে কিছুটা ছোট হয়ে আসে। বটের কুঁড়ি পাংশুটে হলুদ এবং এর দুটি স্বল্পায়ু উপপত্র পাতা গজানোর পরই ঝরে পড়ে। খুব অল্প বয়স থেকেই বট গাছের ঝুরি নামতে শুরু করে। মাটির সমান্তরালে বাড়তে থাকা ডালপালার ঝুরিগুলো একসময় মাটিতে গেঁথে গিয়ে নিজেরাই একেকটা কান্ডে পরিণত হয়। এভাবেই বট গাছ ধীরে ধীরে চারপাশে বাড়তে থকে এবং একসময় মহীরুহে পরিণত হয়। বসন্ত ও শরৎ বট গাছে নতুন পাতা গজানোর দিন। এসময় কচি পাতার রং উজ্জ্বল সবুজ থাকে। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত হলো ফল পাকার সময়।[৩] এটি চিরহরিৎ সাইকাস বহুবর্ষজীবি গাছ।
বংশ বিস্তারসম্পাদনা
বট ও বট জাতীয় গাছের বংশ বৃদ্ধির পদ্ধতি ও কৌশল প্রধানত অভিন্ন। মঞ্জরির গর্ভে ফুলগুলো লুকানো থাকে। ফুলগুলো খুবই ছোট এবং ফলের মতোই গোল। একলৈঙ্গিক এই ফুলগুলো পরাগায়নের জন্য বিশেষ জাতের পতঙ্গের উপর নির্ভরশীল। পাখিরা ফল খেয়ে বীজ ছড়িয়ে দেয়। পাখিবাহিত এই বীজ দালানের কার্নিশ, পুরানো দালানের ফাটল ও অন্য কোন গাছের কোটরে সহজেই অঙ্কুরিত হয় এবং আশ্রয়কে গ্রাস করে। এ কারণে উপগাছা হিসেবেও বটের বেশ খ্যাতি আছে। উপযুক্ত পরিবেশে একটি বট গাছ ৫ থেকে ৬ শত বছর বেঁচে থাকতে পারে।[৩]
সাংস্কৃতিক তাৎপর্যসম্পাদনা
বট বাংলা অঞ্চলের আদিমতম বৃক্ষ। বট গাছকে ঘিরে বাংলা অঞ্চলের রয়েছে শত-সহস্র বছরের ঐতিহ্য। উষ্ণ আবহাওয়ায় বিশাল আয়তনের এই ছায়াবৃক্ষটি অনেক উপকারে আসে। প্রাচীনকাল থেকেই বটবৃক্ষের ছায়ায় হাট-বাজার বসে, মেলা হয়, লোকগানের আসর বসে, জনসভা হয়। কারণ হিসেবে বলা যায়, বাংলার গ্রামাঞ্চলে বড় বড় সুশীতল হলরুম নেই। আর তাই বড় বড় অনুষ্ঠান ও জনসভাগুলো ছায়াসুনিবিড় বটতলায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[৩] এই গাছকে ভারতে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়,[৪] এবং প্রায়ই এই গাছের নিচে মন্দির বানানো হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ধর্মীয় কারণে বট গাছ কাটা নিষিদ্ধ। এ গাছের উপকারিতা ও ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে বট গাছ ভারতের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।[৫]
গুনাগুণসম্পাদনা
- বটের আঠা পা ফাটা সারায়।
- বটের ছাল দেহের মেদ কমায়।
- হাড় মচকে গেলে এর ছাল বেটে গরম করে মালিস করলে আরাম পাওয়া যায়।[৬]
অন্যান্য তথ্যসম্পাদনা
বট গাছের ফল কাক, শালিক ও বাদুড়ের প্রিয় খাদ্য এবং শকুন ও এ জাতীয় পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বটের নানা রকম উপকারিতা রয়েছে। এর কষ থেকে নিম্নমানের রাবার তৈরি হয় এবং বাকলের আঁশ দড়ি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য। এর পাতা কুষ্ঠরোগে উপকারি।
ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুরের বট গাছ হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বট গাছ এবং পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয়ভাবে শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের বটগাছটি সবচেয়ে বড়।[৩]
চিত্রশালাসম্পাদনা
বটের পাকা ফল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ The Plant List, Ficus benghalensis Linnaeus.
- ↑ দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে, ১৯৮৮; পৃষ্ঠা-৩১, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭
- ↑ ক খ গ ঘ প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত প্রকৃতি বিষয়ক ম্যাগাজিন: প্রকৃতিবার্তা, প্রথম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা, জুলাই ২০১৪
- ↑ Simoons, F.J. (১৯৯৮)। Plants of Life, Plants of Death। University of Wisconsin Press। আইএসবিএন 9780299159047।
- ↑ "National Tree"। Govt. of India Official website।
- ↑ আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত;লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; আক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা- ২৩৩-৩৪
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- Bar or Bargad Ficus benghalensis L., hort.purdue.edu