বাসুদেব দাসশর্মা

রসায়ণবিদ

বাসুদেব দাসশর্মা (১৯২৩–২০০৭) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একজন রসায়নবিদ ও অনুষদ সদস্য ছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন গ্রহণকারী একদল ভারতীয় পণ্ডিত ও পেশাদারদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।[১] তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইনে জন সি. বেইলার জুনিয়রের সাথে একটি যুগান্তকারী গবেষণা করেন। তিনি ধাতব জটিল যৌগের সমন্বয় ও ঘন-রসায়ন বোঝার জন্য তার অবদানস্বরূপ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি পুরস্কার জয় করেছিলেন।[২] তিনি ১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে রসায়নের অধ্যাপক, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া একাডেমি অব সায়েন্সের (১৯৮১-৮২) সভাপতি এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার চার্লসটনের পার্শ্ববর্তী কানাওহা উপত্যকায় পরিবেশগত সমস্যার উপর সম্প্রদায়ের একজন নেতা ও মুখপাত্র ছিলেন।[৩] তিনি ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।[৪]

বাসুদেব দাসশর্মা
জন্ম(১৯২৩-০১-০১)১ জানুয়ারি ১৯২৩
মৃত্যু১৬ নভেম্বর ২০০৭(2007-11-16) (বয়স ৮৪)
দাম্পত্য সঙ্গীসেবা সেন
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্র
ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন থেকে ১৯৫৩ সালের অক্টোবর মাসে বাসুদেবের প্রস্থানকালে তাঁর সাথে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পিবি সরকার ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

বাসুদেব দাসশর্মা ১৯২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।[৫] তার বাবা আশুতোষ দাসশর্মা ছিলেন একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক (কবিরাজ) ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং মা সুরবালা দাসশর্মা।[৫] তিনি ৪ বছর বয়সে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন।[৫] তার প্রথম পাঠ ছিল বাংলা লিপি, যা তার বাবা তাকে শেখানো শুরু করেন। পরে তার বোন তার প্রশিক্ষক হন।[৫] বাসুদেব ১১ বছর বয়সে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪র্থ গ্রেডে প্রথম সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন।[৫] মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল করার পর, বাসুদেব সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিএসসি সম্পন্ন করেন (১৯৪০-১৯৪৪)।[৫] বাসুদেব কলেজ জীবনে আর্থিক অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ায় বাসা ভাড়ার অর্থ যোগাতে গৃহশিক্ষকের কাজ করেছেন।[৫] স্নাতক শেষ হওয়ার পর বাসুদেব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড এগ্রিকালচার থেকে এমএসসিপিএইচডি সম্পন্ন করেন।[৫][৬]

কর্মজীবন সম্পাদনা

পিএইচডি শেষ করার পর, বাসুদেব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন (১৯৫০–১৯৫৩)।[৫][৬] তিনি ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইনে অজৈব রসায়নের অধ্যাপক জন সি. বেইলার জুনিয়রের গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।[৭] এরপর তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আরও ২ বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[৭] কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সময় তিনি ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক জরিপে প্রধান রসায়নবিদ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরি ছেড়ে দেন।[৭] বাসুদেব ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পরিবারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।[৫][৭] তিনি ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[৭] বাসুদেব ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইউনিয়ন কার্বাইডের গবেষণা রসায়নবিদ হিসেবেও কাজ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বাসুদেব ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরীতে প্রত্যয়িত গবেষণা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল স্টাডিজে প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পুরস্কার সম্পাদনা

  • তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ধাতব জটিল যৌগের সমন্বয় এবং ঘন-রসায়ন বিষয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি পুরস্কার লাভ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
  • তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির "বছরের সেরা অনুষদ সদস্য" পুরস্কার লাভ করেন।[৬][৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Indians Abroad, India Abroad (পৃষ্ঠা ৬), ১৪ মে ১৯৮২
  2. American Chemical Society Award, Chemical and Engineering News (পৃষ্ঠা ৫০), ৪ অক্টোবর ১৯৭২
  3. Chemist Gets Silver Pen Award, Charleston Daily Mail (page 4A), 9 May 1985
  4. Ainsworth, Susan J.। "Obituaries"Chemical & Engineering News। ২০১৮-১০-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-১৫ 
  5. DasSarma, Basudeb; PhD, Basudeb DasSarma (২০১০-১১-০৯)। Journey of a Lifetime: Memoir of an Indian-American Chemist (ইংরেজি ভাষায়)। Xlibris Corporation। আইএসবিএন 978-1-4653-3424-4। ২০২৪-০১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০১ 
  6. "DasSarma, Basudeb | University of Illinois Archives"University of Illinois Archives Holdings Database (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৪-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৪ 
  7. "ACS C&E News Obituary"cen.acs.org। ২০২১-০৪-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৪