চার্লসটন, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া

চার্লসটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ও জনসংখ্যায় বৃহত্তম শহর। শহরটি এল্ক ও কানাওয়া নদীর মোহনায় অবস্থিত। ২০১০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী শহরটির জনসংখ্যা ৫১,৪০০।[] ২০১৯-এ শহরটির প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ৪৬,৫৩৬।[] চার্লসটন কানাওয়া কাউন্টির কাউন্টি আসন ও এর সকল কার্যক্রমের কেন্দ্র।

চার্লসটনে লবণ উৎপাদিত হত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাসকূপ এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[] পরবর্তীতে কয়লাশিল্প এখানে বিপুল উন্নতি লাভ করে। বর্তমানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত চার্লসটনের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।

১৭৮৮ সালে এর প্রথম স্থায়ী বসতি "ফোর্ট লি" নির্মিত হয়।

পশ্চিম ভার্জিনিয়ার জুনিয়র বাস্কেটবল দলের কার্যক্রম চার্লসটন শহরে পরিচালিত হয়। শহরে ইয়েগার বিমানবন্দর ও চার্লসটন বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। পশ্চিম ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়মার্শাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখাও চার্লসটন শহরে অবস্থিত।

ইতিহাস

সম্পাদনা

আমেরিকান স্বাধীনতাযুদ্ধের পরে ভার্জিনিয়ার বাসিন্দারা পশ্চিমে বসতি স্থাপন করতে শুরু করেন।

১৭৭৩ সালে থমাস বুলিটকে এল্ক নদীর উৎসমুখে ১,২৫০ একর জমি মঞ্জুর করা হয়। ১৭৭৮ সালে তার মৃত্যুর পর ভাই কাথবার্ট বুলিট জমির উত্তরাধিকারী হন। ১৭৮৬ সালে তিনি কর্নেল জর্জ ক্লেন্ডেনিন-কে এই জমি বিক্রি করে দেন।[] ১৭৮৭ সালে কর্নেল স্যাভানা ক্লেনেডিনের নেতৃত্বে ভার্জিনিয়া রেঞ্জার্সের একদল সদস্য প্রথম স্থায়ী বসতি ফোর্ট লি স্থাপন করেন। ধারণা করা হয়, কর্নেল ক্লেন্ডেনিনের বাবা চার্লসের নামানুসারে শহরটির নাম দেওয়া হয় "চার্লস টাউন।" জর্জ ওয়াশিংটনের ভাই চার্লসের নামানুসারে আরেকটি শহরকে "চার্লস টাউন" নাম দেওয়া হয়। তাই বিভ্রান্তি এড়াতে শহরটির নাম দেওয়া হয় "চার্লসটন।"

ছয় বছর পরে ভার্জিনিয়া বিধানসভা আনুষ্ঠানিকভাবে "চার্লসটাউন" শহরকে স্বীকৃতি দেয়। শহরটি কানাওয়া কাউন্টির অংশ। একটি দ্বিতল কারাগার কাউন্টি সরকার নির্মিত প্রথম প্রশাসনিক ভবন।

১৮০৬ সালে কানাওহা নদীর তীরে প্রথম লবণকূপ খনন করা হয়। ১৮০৮ সালের দিকে দৈনিক ১,২৫০ পাউন্ড লবণ উত্তোলন করা হত। চার্লসটনের সংলগ্ন এলাকা ম্যালডেন ছিল বিশ্বের শীর্ষ লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল । ১৮১৮ সালে কানাওয়া লবণ কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ক্যাপ্টেন জেমস উইলসন ১৮১৫ সালে প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাসকূপ আবিষ্কার করেন। ১৮১৭ সালে এখানে প্রথম কয়লা আবিষ্কৃত হয়। গৃহযুদ্ধের সময় এখানকার লবণশিল্পের বিপর্যয় ঘটে; প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রাইনের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে চার্লসটনে লবণশিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটে।

১৮৬২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কনফেডারেট ও ইউনিয়ন বাহিনীর মধ্যে চার্লসটনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কনফেডারেট সৈন্যরা যুদ্ধে জিতলেও ছয় সপ্তাহের মধ্যে ইউনিয়ন বাহিনী চার্লসটন পুনর্দখল করে নেয়।

আব্রাহাম লিংকন পশ্চিম ভার্জিনিয়াকে রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করলে ১৮৬৩ সালের ২০ জুন কংগ্রেস চার্লসটন শহরকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

ফেডারেল বাহিনী ওহাইও থেকে পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় আগমন করে এবং এর কয়লাখনির দখল নেয়। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার রাজধানী নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টি হলে ১৮৭৭ সালে গণভোট আয়োজিত হয়। গণভোটে চার্লসটন ৪১,২৪৩, ক্লার্কসবুর্গ ২৯,৪৪২ ও মার্টিনসবুর্গ ৮,০৪৬ ভোট লাভ করে। এর ফলে চার্লসটন পশ্চিম ভার্জিনিয়ার রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

আট বছর পরে ক্যাপিটল ভবন প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯২১ সালে এটি পুড়ে যায়। ১৯২১ সালে একটি অস্থায়ী ভবন প্রতিষ্ঠিত হলে সেটিও ১৯২৭ সালে পুড়ে যায়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্যাপিটল নির্মাণ কমিশনের পরিকল্পনা মোতাবেক কাস গিলবার্ট ইতালীয় রেনেসাঁ শৈলীতে বর্তমান ক্যাপিটল ভবন নির্মিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানে স্টাইরিন-বুটেডিন নির্মাণের কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়, যেটি রাবারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। []

১৯৪৭ সালে এখানে কানাওয়া বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। জেনারেল চাক ইয়েগারের নামানুসারে পরবর্তীতে বিমানবন্দরটির নাম দেওয়া হয় "ইয়েগার বিমানবন্দর।" এর আয়তন ছিল ৩৬০ একর। ১৯৫৯ সালে এখানে "চার্লসটন নাগরিক কেন্দ্র" প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮৩ সালে "চার্লসটন নগর কেন্দ্র" নির্মিত হয়। ১৯৯০ এর দশকে চার্লসটনে রবার্ট সি বার্ড ফেডারেল ভবন, হাদ্দাদ পার্ক ও ক্যাপিটল মার্কেট গড়ে ওঠে।

২০০৩ সালে চার্লসটনে "ক্লে সেন্টার ফর দি আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস" প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে- মেয়ার ফাউন্ডেশন কলাভবন, ওয়াকার রঙ্গমঞ্চ, অ্যাভাম্পটো আবিষ্কার জাদুঘর ও ইলেকট্রোস্কাই রঙ্গমঞ্চ।

"চার্লসটন এরিয়া অ্যালায়েন্স" বা "চার্লসটন আঞ্চলিক জোট" নামক একটি সংস্থা শহরের উন্নয়নের জন্য কাজ করে।

চার্লসটন শহরের আয়তন ৩২.৬৬ বর্গমাইল। এর ৩১.৫২ বর্গমাইল স্থল ও ১.১৪ বর্গমাইল জল।

চার্লসটন ওহাইও অঙ্গরাজ্যের চিলিকোতে শহরের ১১৭ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে, রিচমন্ডের ৩১৫ মাইল পশ্চিমে, পিটসবুর্গের ২২৮ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে, লুইসভিল, কেন্টাকির ২৪৭ মাইল পূর্বে ও শার্লটের ২৬৪ মাইল উত্তরে অবস্থিত।

চার্লসটনের জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয় ধরনের। এতে চারটি ঋতু আছে। চার্লসটন শহরটি পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এর আবহাওয়া অধিক উষ্ণ প্রকৃতির হয়। প্রতি মাসে গড়ে ৩.৫ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়।

জনমিতি

সম্পাদনা

২০১০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী চার্লসটনের জনসংখ্যা ৫১,৪০০। শহরে ১২,৫৮৭টি পরিবার বসবাস করছিল। এর জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৬২৯.৬ জন। শহরের বাসিন্দাদের ৭৮.৪% শ্বেতাঙ্গ,১৫.৫% আফ্রিকান আমেরিকান, ০.২% আদিবাসী আমেরিকান ও ২.৩% এশীয়। বাসিন্দাদের ১.৪% হিস্পানিক অথবা লাতিনো।

শহরের পরিবারগুলোর গড় আয় ৪৭,৯৭৫ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৩৮,২৫৭ ও নারীদের গড় আয় ২৬,৬৭১ ডলার। ১২.৭% পরিবার ও ১৬.৭% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের মধ্যে ২৪.৫% এর বয়স ১৮ এর নিচে ও ১১.৩% এর বয়স ৬৫ এর উপরে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "American FactFinder - Results"archive.vn। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  2. Bureau, US Census। "Population and Housing Unit Estimates Tables"The United States Census Bureau। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  3. "First Natural Gas Well - West Virginia (WV) Cyclopedia"web.archive.org। ১৫ মার্চ ২০১৩। Archived from the original on ১৫ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  4. "Charleston: History - Fort Leads to Founding of City"web.archive.org। ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮। Archived from the original on ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  5. "Institute and WWII: ; Creation of Synthetic Rubber Plant Was Exciting - Science News - redOrbit"web.archive.org। ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৯। Archived from the original on ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা