বালিয়া মসজিদ /ছোট বালিয়া জামে মসজিদ /জ্বীনের মসজিদ নামে এই ঐতিহ্যবাহি মসজিদটি পরিচিত।[১][২] এটি ঠাকুরগাঁও জেলার ভুল্লী থানা হতে ৩.৭ কি.মি. পূর্বে ছোট বালিয়া গ্রামে অবস্থিত।

বালিয়া মসজিদ
জ্বীনের মসজিদ
বালিয়া মসজিদ
বালিয়া মসজিদ এর সম্মুখ প্রান্ত
ধর্ম
জেলাঠাকুরগাঁও জেলা
অবস্থান
অবস্থানবালিয়া, ভূল্লী থানাবাংলাদেশঠাকুরগাঁও জেলা, বাংলাদেশ
দেশবাংলাদেশ
স্থাপত্য
ধরনমসজিদ
স্থাপত্য শৈলীমোঘল ইসলামিক স্থাপত্য
প্রতিষ্ঠাতামেহের বকস চৌধুরী
বিনির্দেশ
গম্বুজসমূহ
মিনার
উপাদানসমূহচুন-সুরকির মর্টার, হাতে পোড়ানো ইট ও টাইল

অবস্থান সম্পাদনা

ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে পঞ্চগড় এর বোদা উপজেলা যাওয়ার পথে ভূল্লী হাট নামক জায়গা থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ভূল্লী-পাঁচপীর হাট সড়কের পাশে ছোট বালিয়া জামে মসজিদ অবস্থিত ।

প্রচলিত রূপকথা সম্পাদনা

কোন এক অমাবস্যার রাতে জ্বীন-পরীরা এই এলাকা উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এলাকাটি পছন্দ করে । তারপর তারা মাটিতে নেমে এসে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করে, কিন্তু গম্বুজ তৈরির আগেই ভোর হয়ে যাওয়াতে কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। ফলে গম্বুজ ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকে অসাধারণ কারুকার্যময় মসজিদটি । জ্বীন-পরীরা এটি তৈরি করেছে, এইজন্য স্থানীয়দের কাছে এটি জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত ।[২][৩]

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদনা

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মেহের বকস সরকার এর আদি নিবাস ভারত-এর বিহার রাজ্যে । পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা এর পরাজয়ের পর মেহের বকসের দাদা সপরিবারে বিহার থেকে জলপাইগুড়ি চলে আসেন । পরবর্তীতে মেহের বকসের বাবা রাজ-এ-মোহাম্মদ ঠাকুরগাঁও মহকুমার বালিয়ায় এসে ব্যবসা বাণিজ্য করে সমৃদ্ধি অর্জন করেন ।

স্থানীয় জমিদারের সাথে সুসম্পর্কের প্রেক্ষিতে রাজ-এ-মোহাম্মদ তার ছেলে মেহের বকস এর সাথে তৎকালীন জমিদার কন্যার বিবি গুলমতি নেছার বিয়ে হয় । পরবর্তীতে গুলমতি নেছা বাবার জমিদারীর উত্তরাধিকারী মনোনীত হন । গুলমতি নেছা ব্রিটিশদের কাছে সঠিক সময়ে নিজের জমিদারী কর পৌছানোর জন্য চৌধুরানী উপাধী লাভ করেন। মেহের বকস সরকারও সে সূত্রে চৌধুরী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। যদিও জমিদারী গুলমতি চৌধুরানীর নামেই ছিল, কিন্তু কার্যত শাসন করতেন মেহের বকস

নির্মাণের সময় সম্পাদনা

মসজিদ নির্মাণের সন নিয়ে মতবিরোধ আছে । মসজিদের গায়ে খোদাই করা সন অনুসারে মসজিদটি নির্মিত হয় ১৩১৭ বঙ্গাব্দে মানে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ । আবার মসজিদের নির্মাতা মেহের বকস চৌধুরীর কবরেও তার মৃত্যুর সন খোদাই করা আছে ১৩১৭ বঙ্গাব্দ। তবে স্থানীয় মানুষ ও মেহের বকস এর আত্মীয়-স্বজনদের মতে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বালিয়া মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং মেহের বকসের মৃত্যুর সময়েই মসজিদটির বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়ে।

নির্মাণের ইতিহাস সম্পাদনা

জমিদার মেহের বকস চৌধুরী উনবিংশ শতাব্দী শেষ ভাগে বালিয়াতে এক মসজিদ তৈরীর পরিকল্পনা করেন । এই জন্য দিল্লির আগ্রা মতান্তরে মুর্শিদাবাদ থেকে স্থপতি আনা হয় । মুঘল স্থাপত্যের রীতি অনুযায়ী ডিজাইনকৃত এই মসজিদ তৈরির করাটা ছিল অনেক জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । হঠাৎ প্রধান স্থপতির মৃত্যুর ফলে মসজিদ নির্মাণের কাজ থেমে যায় । মেহের বকস স্থানীয় কারিগরের সহায়তায় পুনরায় মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় কারিগরগণ মসজিদের গম্বুজ নির্মাণে ব্যর্থ হন । ১৯১০ সালে মেহের বকস চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।

মেহের বকসের ছোট ভাই কয়েক বছর পর মসজিদটি নির্মাণের জন্য আবারও উদ্যোগ নেন। কিন্তু, নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না করে তিনিও মৃত্যু বরণ করেন। ফলে মসজিদটি ১০০ বছর গম্বুজ ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকে।

অবশেষে মেহের বকস চৌধুরীর প্রোপৌত্রি তসরিফা খাতুনের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের কারিগরী সহায়তায় ২০১০ সালে বালিয়া মসজিদটির সংস্কার কাজ শুরু হয় । এই মসজিদ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংস্কার কাজের তত্ত্বাবধায়ন করেন শিল্পী কামরুজ্জামান স্বাধীন এবং জাকিরুল হক চৌধুরী। একই সাথে আর্কিটেক্ট সৈয়দ আবু সুফিয়ান কুশল এর নকশায় নতুন ভাবে গম্বুজ নির্মাণ করা হয় ।

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

সমতল ভূমি হতে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উঁচু প্লাটফর্মের ওপর পূর্ব-পশ্চিমে ৬২ ফুট ৬ ইঞ্চি ও উত্তর-দক্ষিণে ৬৯ ফুট ২ ইঞ্চি আয়তাকার কমপ্লেক্সে মসজিদটি অবস্থিত । আয়তাকার কমপ্লেক্সটি সিঁড়িসহ প্রবেশপথ, খোলা চত্বরমূলভবন বা নামাজঘর এই তিন অংশে বিভক্ত । এর মধ্যে মূল ভবনটি পূর্ব-পশ্চিমে ২৫ ফুট ১১ ইঞ্চি প্রশস্ত । প্লাটফর্ম হতে মসজিদটির ছাদ ১৭ ফুট উঁচু ।

মসজিদের ছাদে একই সাইজের তিনটি গম্বুজআটটি মিনার আছে । যার মধ্যে চার কোণের চারটি মিনার বড় এবং বাকী চারটি ছোট । ভিত্তিসহ পুরো মসজিদটিই চুন-সুরকির মর্টার এবং হাতে পোড়ানো ইট দিয়ে নির্মিত। ইটে কোনো অলঙ্করণ না থাকলেও মসজিদের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ইট কেটে কলস, ঘণ্টা, ডিশ,বাটি, আমলকি,পদ্ম ইত্যাদি নকশা তৈরি করা হয়েছে ।

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরো পড়ুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. খান, মজিবর রহমান (২০২৩-০৩-১০)। "ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী বালিয়া মসজিদ"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০৪ 
  2. "ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী বালিয়া মসজিদ"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০৪ 
  3. "জিন মসজিদের কথা"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০৪