ফ্রাঙ্ক টাইসন

ইংরেজ ক্রিকেটার

ফ্রাঙ্ক হোমস টাইসন (ইংরেজি: Frank Tyson; জন্ম: ৬ জুন, ১৯৩০ - মৃত্যু: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫) ল্যাঙ্কাশায়ারের বোল্টনের কাছাকাছি আর্নওয়ার্থ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, সাংবাদিক ও ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য তিনি। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর সাংবাদিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এরপর ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসিত হন ফ্রাঙ্ক টাইসন

ফ্রাঙ্ক টাইসন
১৯৫৪ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে ফ্রাঙ্ক টাইসন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ফ্রাঙ্ক হোমস টাইসন
জন্ম(১৯৩০-০৬-০৬)৬ জুন ১৯৩০
ফার্নওয়ার্থ, ল্যাঙ্কাশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫(2015-09-27) (বয়স ৮৫)
গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনামটাইফুন টাইসন
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩৭৭)
১২ আগস্ট ১৯৫৪ বনাম পাকিস্তান
শেষ টেস্ট১৮ মার্চ ১৯৫৯ বনাম নিউজিল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৫২–১৯৬০নর্দাম্পটনশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৭ ২৪৪
রানের সংখ্যা ২৩০ ৪১০৩
ব্যাটিং গড় ১০.৯৫ ১৭.০৯
১০০/৫০ ০/০ ০/১৩
সর্বোচ্চ রান ৩৭* ৮২
বল করেছে ৩৪৫২ ৩৮১৭৩
উইকেট ৭৬ ৭৬৭
বোলিং গড় ১৮.৫৬ ২০.৮৯
ইনিংসে ৫ উইকেট ৩৪
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/২৭ ৮/৬০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪/– ৮৫/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সংবাদপত্রের জগতে তিনি ‘টাইফুন টাইসন’ নামে পরিচিত ছিলেন ও অনেক ধারাভাষ্যকারই তাকে ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলাররূপে চিত্রিত করেছেন।[][][][]

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

টাইসনের মা মিসেস ভায়োলেট টাইসন ও বাবা ইয়র্কশায়ারের ডায়িং কোম্পানিতে কাজ করতেন। কিন্তু ইংল্যান্ড দলে খেলার জন্য মনোনীত হবার পূর্বেই তিনি মারা যান।[] শৈশবে বড় ভাই ডেভিড টাইসনের সাথে ক্রিকেট খেলতেন। মিডলটনের কুইন এলিজাবেথ গ্রামার স্কুলে অধ্যয়নকালীন বারান্দায় রান-আপ অনুশীলন করতেন। ১৯৫০-এর দশকে পেশাদারী ক্রিকেটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন ও ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন হ্যাটফিল্ড কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করেন। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোনীত হয়েছিলেন। সফরে থাকাকালীন জিওফ্রে চসার, জর্জ বার্নার্ড শ'ভার্জিনিয়া উল্ফের সাহিত্যকর্ম অধ্যয়ন করতেন।[]

পেশাদারী ক্রিকেটে প্রবেশের পূর্বে সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে মিডলটন, নর্থ স্টাফোর্ডশায়ার লীগে নাইপারসলে, ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সেনাবাহিনীর পক্ষে খেলেন। ১৯৫২ সালে বসবাসের কারণে নর্দাম্পটনশায়ারের পক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন। ১৯৫২ সালে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। প্রথম বলেই স্লিপে দাঁড়ানো ফিল্ডারকে অতিরিক্ত আরও পাঁচ গজ দূরে অবস্থান করান ও শূন্য রানে পঙ্কজ রায়কে আউট করেন।[]

খেলোয়াড়ী জীবন

সম্পাদনা

১৯৫৪ সালে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে ওভাল টেস্টে অভিষেক ঘটে তার। খেলায় তিনি ৪/৩৫ ও ১/২২ লাভ করেন। ৮নং অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নেমে উভয় ইনিংসেই তিন রান সংগ্রহ করেন। ফজল মাহমুদের দূর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তান দল ২৪ রানের ব্যবধানে জয় পায়। এরপর তিনি ব্যাটিংয়ের দিকে মনোযোগী হন ও ১৯৫৪ সালে অল-রাউন্ডারের মর্যাদা পান। তখন তার ব্যাটে ধারাবাহিকভাবে রান আসতে থাকে। এরফলে ইংল্যান্ডের পক্ষে সাত নম্বরে ব্যাট করতেন। কিন্তু তেমন আশাপ্রদ না হওয়ায় তাকে আবারো নিচের সারিতে ব্যাটিং করতে হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়া সফরে লেন হাটন টসে জয়ী হয়ে স্বাগতিক দলকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। কিন্তু ১৪ ক্যাচ নিতে না পারায় অস্ট্রেলিয়া ৬০১/৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। আট বলের ২৯ ওভারে টাইসন ১/১৬০ পেয়েছিলেন। ঐ টেস্টে ইংল্যান্ড দল ইনিংস ও ১৫৪ রানে পরাজিত হয়। আর্থার মরিসনীল হার্ভে তার বলে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এছাড়াও, অল-রাউন্ডার রে লিন্ডওয়ালকে বেশ কয়েকটি বাউন্সার দিলে তিনি তা মোকাবেলা করে অপরাজিত ৬৪* করেন। গ্রেইম হোলকে রান আউট করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৩৭* রান সংগ্রহ করেন যা তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল।

মূল্যায়ন

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি ১৭ টেস্টে অংশ নিয়ে ১৮.৫৬ গড়ে ৭৬ উইকেট দখল করেছিলেন। কমপক্ষে শত টেস্ট উইকেটের সেরা বোলিং গড়ে টাইসনকেও মাঝে-মধ্যে উপস্থাপন করা হয়।[] তবে, ৭৫ ঊর্ধ্ব উইকেট লাভকারীদের বোলিং গড়ে তার অবস্থান ৭ম।

২০০৭ সালে একদল বিচারক ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে অ্যাশেজ পূণরুদ্ধারে তার অসামান্য ভূমিকার জন্য ১৯৫৫ সালে উইজডেনের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররূপে ঘোষণা করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

১৯৫৪-৫৫ মৌসুমের সফরে এম্পায়ার নিউজ ও ম্যানচেস্টার ইভনিং নিউজ কলাম লিখেন। অবসর নেয়ার পর লন্ডন অবজারভার, ডেইলি টেলিগ্রাফ, মেলবোর্ন এজে লিখেন ও দ্য ক্রিকেটার ইন্টারন্যাশনালে অংশগ্রহণ করেন।[] এবিসি রেডিওতে ৩৬ বছর ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারের কাজ করেন। এছাড়াও, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ সময় পর্যন্ত চ্যানেল নাইনে টনি গ্রেগের সাথে ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে মেলবোর্নে আরসুলা মিলসের সাথে পরিচিত হন ও ২২ নভেম্বর, ১৯৫৭ তারিখে মেলবোর্নের চার্চে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন যা ব্যাপক প্রচারণা পায়। তাদের সংসারে ফিলিপ, সারা ও আন্না নামীয় তিন সন্তান ছিল।[১০] এছাড়াও আট নাতি রয়েছে তার।

১৯৬০ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন। কুইন্সল্যান্ডের গোল্ড কোস্টে অবস্থানকালীন সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই ঘুম থেকে জেগে উঠতেন তিনি। সপ্তাহে তিন দিন জিমে যেতেন, সাঁতার কাটতেন ও ক্রিকেটার এবং মাঠের তৈলচিত্র অঙ্কন করে সময় কাটাতেন টাইসন।[১১]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Kilburn, p. 242.
  2. http://www3.sympatico.ca/qhokim/players/tyson.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ জুন ২০১১ তারিখে.
  3. p65-66, Clive Batty, The Ashes Miscellany, Vision Sports Publishing, 2006.
  4. Tom Graveney with Norman Giller, The Ten Greatest Test Teams, Sidgwick & Jackson, 1988.
  5. p253, Tyson
  6. Williamson, Martin (এপ্রিল ২০০৪)। "Frank Tyson"Players & Officials। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০০৯ 
  7. Willis & Murphy, p. 89.
  8. http://stats.cricinfo.com/ci/engine/stats/index.html?class=1;filter=advanced;orderby=bowling_average;qualmin1=10;qualval1=wickets;template=results;type=bowling
  9. Tyson
  10. http://www.rahulchandawarkar.com/news/sports/sports06float.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ জুলাই ২০১১ তারিখে.
  11. Baum, Greg (২৪ নভেম্বর ২০০৪)। "The 'Typhoon' marks the winds of change"The Age। Melbourne। 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা