পাউলির অপবর্জন নীতি
কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে পাউলির অপবর্জন নীতি থেকে জানা যায় যে অর্ধ-পূর্ণসংখ্যার [১] স্পিন বা ঘূর্ণন সহ দুই বা ততোধিক অভিন্ন কণা [২] অর্থাৎ ফার্মিয়ন [৩] একসাথে একই কোয়ান্টাম তন্ত্রের [৪] একই কোয়ান্টাম স্তরে [৫] অবস্থান করে না। এই তত্ত্বটি ১৯২৫ সালে অস্ট্রীয় পদার্থবিদ ভোল্ফগাং পাউলি ইলেকট্রন-এর জন্য ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ১৯৪০ সালের স্পিন-পরিসংখ্যান তত্ত্বের [৬] মধ্যে সমস্ত ফার্মিয়ন অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
পরমাণু মধ্যবর্তী ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে বলা যায় যে, একটি বহু ইলেকট্রনযুক্ত পরমাণুর যেকোনো দুটি ইলেকট্রনের চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার [৭] মান কখনই একই হয় না। চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যা হল যথাক্রমে – মূখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যা (n), গৌণ কোয়ান্টাম সংখ্যা (l) [৮], চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা (mℓ) এবং ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা (ms)[৯]। উদাহরণস্বরূপ, একই পারমাণবিক কক্ষককে [১০] অবস্থিত দুটি পরমাণুর n, ℓ ও mℓ সমান হলেও ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা ms পৃথক হয় অর্থাৎ সমকক্ষস্থ দুটি ইলেকট্রনের ঘূর্ণন অভিমুখ পরস্পর বিপরীত। একটির মান 1/2 হলে অন্যটির মান −1/2।
বোসন কণা [১১] (পূর্ণ স্পিন বা ঘূর্ণন সম্পন্ন কণা) পাউলির অপবর্জন নীতি মেনে চলে না। যতখুশি বোসন কণা একই কোয়ান্টাম স্তরে অবস্থান করে। যেমন, বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবন লেজার অথবা পরমাণুর সাহায্যে ফোটন উৎপাদিত হয়।
আরও জটিল বিবৃতি হল, দুটি অভিন্ন কণা বিনিময়ের [১২] সময় মোট(অনেক সংখ্যক কণা) তরঙ্গ ফাংশন ফার্মিয়নের জন্য অপ্রতিসম [১৩] এবং বোসনের জন্য প্রতিসম। এর অর্থ এই যে, দুটি অভিন্ন কণার মধ্যে স্থান ও স্পিন স্থানাঙ্কগুলি বিনিময় হয়, তাহলে মোট তরঙ্গ চিত্র ফার্মিয়নের জন্য তার চিহ্ন পরিবর্তন করলেও বোসনের জন্য অপরিবর্তিত থাকে।
যদি দুটি ফার্মিয়ন একই কক্ষে অবস্থান করে, তাহলে তাদের পারস্পরিক অবস্থান বিনিময়ের পরেও তরঙ্গচিত্র অপরিবর্তিত থাকে। সম্মিলিত তরঙ্গচিত্রে উভয়েই ফার্মিয়নগুলির প্রয়োজন অনুসারে চিহ্ন পরিবর্তন করতে পারে এবং অপরিবর্তিত থাকতে পারে তখনই যখন পদার্থের অস্তিত্ব থাকে না। এই যুক্তি বোসন কণার জন্য প্রযোজ্য নয় কারণ বোসনের চিহ্নের পরিবর্তন হয় না।
সারসংক্ষেপ
সম্পাদনাপাউলির অপবর্জন নীতি শুধুমাত্র সমস্ত ফার্মিয়নের আচরণ ব্যাখ্যা করে কিন্তু বোসন কণার জন্য অন্য নীতি প্রযোজ্য। ফার্মিয়নের মধ্যে রয়েছে কোয়ার্ক, ইলেকট্রন ও নিউট্রিনো এর মতো মৌলিক কণা। এছাড়াও, বেরিয়ন যেমন প্রোটন ও নিউট্রন (তিনটি কোয়ার্ক থেকে গঠিত অতিপারমাণবিক কণা) এবং কিছু পরিমাণ (যেমন হিলিয়াম-3) ফার্মিয়ন পাউলির অপবর্জন নীতি দিয়ে বর্ণনা করা হয়। প্রতিটি পরমাণুরই বিভিন্ন সামগ্রিক ঘূর্ণন বা স্পিন থাকতে পারে, যা থেকে জানা যায় সেগুলো ফার্মিয়ন না বোসন। উদাহরণস্বরূপ হিলিয়াম-3 [১৪] এর স্পিন 1/2 তাই এটি ফার্মিয়ন, কিন্তু হিলিয়াম-4 এর ঘূর্ণন 0 তাই এটি বোসন। পাউলির অপবর্জন নীতি দৈনন্দিন জীবনে পদার্থের অনেক বৈশিষ্ট্যকে বর্ণনা করে, পদার্থের স্থায়িত্ব থেকে পরমাণুর রাসায়নিক ধর্ম পর্যন্ত।
"অর্ধ-পূর্ণসংখ্যা স্পিন" এর অর্থ হলো ফার্মিয়নের কৌণিক ভরবেগের মান (প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক) অর্ধ-পূর্ণসংখ্যার গুণ (1/2,3/2,...)। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের তত্ত্বে ফার্মিসন অপ্রতিসম অবস্থায় [১৫] থাকে। বিপরীতভাবে পূর্ণ সংখ্যক স্পিন যুক্ত বোসন কণার তরঙ্গ প্রতিসম প্রকৃতির এবং একটি কোয়ান্টাম শক্তিস্তরেই অবস্থান করতে পারে। বোসনগুলির মধ্যে রয়েছে ফোটন, যুগ্ম কপার যা অতিপরিবাহিতা এবং W ও Z বোসন এর জন্য দায়ী। ফার্মিয়ন নামটি এসেছে ফার্মি-ডিরাক পরিসংখ্যানগত বন্টন [১৬] থেকে, যেটি তারা মেনে চলে। অপরপক্ষে বোসন নাম এসেছে বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান থেকে।
ইতিহাস
সম্পাদনাবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এই ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায় যে জোড় সংখ্যার ইলেকট্রন সহ পরমাণু ও অণুগুলি বিজোড় সংখ্যক ইলেকট্রনের তুলনায় রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল। [১৭] গিলবার্ট নিউটন লুইসের 1916-র প্রবন্ধে "পরমাণু ও অণু" উদাহরণ স্বরূপ,তার রাসায়নিক ধর্মের ছয়টি সূত্রের মধ্যে তৃতীয় সূত্র থেকে জানা যায় যে কোনো শক্তিস্তরে (shell) সমান সংখ্যক ইলেকট্রন ধরে রাখে এবং বিশেষ করে 8টি ইলেকট্রন ধরে রাখে। যা তিনি সাধারণত একটি ঘনকের আটটি কোনে [১৮] প্রতিসমভাবে সাজানো বলে ধরে নিয়েছিলেন। 1919 সালে রসায়নবিদ আর্ভিং ল্যাংমিউয়র পরামর্শ দিয়েছিলেন যে পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলিকে কোনোভাবে সংযুক্ত বা ক্লাস্টার করা হলে পর্যায় সারণী ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ইলেকট্রনের গ্রুপগুলো নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রনের শক্তিস্তরে অবস্থান করে। 1922 সালে, নিলস বোর তার বোর মডেল সংশোধিত করেন এই মনে করে যে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকট্রন (উদাহরণস্বরূপ 2,8 এবং 18) স্থিতিশীল "বন্ধ শেল"-এর সাথে মিলে যায়।
পাউলি এই সংখ্যাগুলির জন্য একটি ব্যাখ্যা খুঁজছিলেন, যা প্রথমে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতামূলক [১৯] ছিল। একই সময়ে তিনি পারমাণবিক বর্ণালীবীক্ষণ ও ফেরোচৌম্বক পদার্থ বা অয়শ্চৌম্বক পদার্থের জেমান ক্রিয়ায় পরীক্ষামূলক ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি 1924 সালে এডমুন্ড সি. স্টোনারের [২০] গবেষণাপত্রে একটি প্রয়োজনীয় সূত্র খুঁজে পান, যা বর্ণনা করে মূখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যা (n) এর একটি প্রদত্ত মানের জন্য একটি বাহ্যিক চৌম্বকক্ষেত্রে ক্ষারীয় ধাতব বর্ণালীতে একটি ইলেকট্রনের শক্তিস্তরের সংখ্যা। যেখানে সমস্ত ক্ষয়প্রাপ্ত শক্তিস্তরগুলি পৃথক করা হয়, n এর একই মানের জন্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস বা নোবেল গ্যাসগুলির বন্ধ শেলের ইলেকট্রন সংখ্যার সমান। এর ফলে পাউলি বুঝতে পেরেছিলেন যে বদ্ধ শেলগুলিতে ইলেকট্রনের জটিল সংখ্যাগুলিকে প্রতিটি স্তরে একটি ইলেকট্রনের সাধারণ নিয়মে হ্রাস করা যেতে পারে, যদি চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যা ব্যবহার করে ইলেকট্রন স্তরকে বর্ণনা করা হয়। এবিষয়ে তিনি একটি নতুন দ্বি-মূল্যবান কোয়ান্টাম সংখ্যা প্রবর্তন করেন, স্যামুয়েল গুডস্মিথ [২১] এবং জর্জ উহলেনব্লেক [২২] ইলেকট্রন স্পিন [২৩] হিসেবে চিহ্নিত করেন।
কোয়ান্টাম স্তরের প্রতিসমতার সঙ্গে সম্পর্ক
সম্পাদনাতার বিখ্যাত বক্তৃতায় পাউলি অপবর্জন নীতির কোয়ান্টাম স্তরে প্রতিসাম্যের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছিলেন:
প্রতিসাম্যের বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (যা দুটি কণার মধ্যে একটি) হল বোসন প্রতিসম শ্রেণী। যেখানে দুই কণার বেগ ও স্পিন স্থানাঙ্কগুলির পুনর্বিন্যাস হলেও মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। অপরদিকে, ফার্মিয়ন অপ্রতিসম শ্রেণীর ক্ষেত্রে পুনর্বিন্যাসের পর তরঙ্গের অভিমুখ তথা মানও পরিবর্তিত হয়। অপ্রতিসম শ্রেণীর ক্ষেত্রে অপবর্জন নীতি সঠিক এবং সাধারণ যান্ত্রিক তরঙ্গ সূত্র।
পাউলির অপবর্জন নীতি অনুসারে একটি একক মানযুক্ত বহু-কণার তরঙ্গের প্রকৃতি হল বিনিময়ের সাপেক্ষে অপ্রতিসম; যদি ও হিলবার্ট জগৎ -এর ভিত্তি ভেক্টরের উপর প্রতিষ্ঠিত পাল্লা একটি একক কণার তন্ত্রকে প্রকাশ করে, তারপর টেনসর গুণফল ভিত্তি ভেক্টর তৈরী করে। হিলবার্ট স্পেসের এই ধরনের দুটি কণা একটি তন্ত্রকে বর্ণনা করে। যেকোনো দুই-কণা অবস্থাকে এই ভিত্তি ভেক্টরগুলির একটি সুপারপজিশন (অর্থাৎ সমষ্টি) হিসেবে প্রকাশ করা যেতে পারে:
যেখানে A(x,y) হল একটি স্কেলার ধ্রুবক। মান বিনিময়ের ফলে A(x,y) = −A(y,x) হলে অপ্রতিসম। x = y হলে A(x,y) = 0 হয়, যা পাউলির অপবর্জন নীতি। এটি যেকোনো ভিত্তির উপরেই সত্য কারণ ভিত্তির স্থানীয় পরিবর্তনগুলি অপ্রতিসম ম্যাট্রিক্সকে অপ্রতিসম রাখে।
বিপরীতভাবে, যদি তীর্যক পরিমাণ A(x,x) এর মান সবক্ষেত্রেই 0 হয়, তাহলে তরঙ্গের ফাংশন হবে:
এটি অবশ্যই অপ্রতিসম। এটি প্রমাণ করতে, ধরা যাক ম্যাট্রিক্স উপাদান:
এটির মান শূন্য, কারণ দুটি কণার উভয়েই সুপারপজিশন অবস্থায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে । কিন্তু এর সমান হল
প্রথম ও অন্তিম পদগুলো তির্যক উপাদান এবং শূন্য, তাছাড়া সমগ্র যোগফল শূন্যের সমান। সুতরাং, তরঙ্গের ফাংশন ম্যাট্রিক্স উপাদানগুলো মেনে চলে:
বা,
দুইয়ের অধিক (n > 2) কণাসহ একটি তন্ত্রে বহু কণাভিত্তিক স্তরগুলোর এক একটি কণার স্তরের n-সংখ্যক টেনশরের গুণফলে পরিণত হয় এবং তরঙ্গক্রিয়ার সহগ কে n একক-কণা স্তর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। অপ্রতিসাম্যের শর্তে বলা হয়েছে যে যখন যেকোনো দুটি স্তর বিনিময়ের সময় তার সহগের চিহ্ন বিপরীত হবে: যখন । হলে, যেকোনো অসম মানের জন্য অর্থাৎ, হয়।
উন্নত কোয়ান্টাম তত্ত্ব
সম্পাদনাস্পিন পরিসংখ্যান তত্ত্ব [২৪] অনুযায়ী পূর্ণ স্পিন সম্পন্ন কণাগুলি প্রতিসম কোয়ান্টাম স্তরে থাকে এবং অর্ধ-পূর্ণ স্পিন সম্পন্ন কণাগুলি অপ্রতিসম অবস্থায় থাকে। অপরপক্ষে, কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে শুধুমাত্র পূর্ণ বা অর্ধ-পূর্ণ স্পিন মানগুলি গৃহীত হয়। আপেক্ষিক কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব অর্ধ-পূর্ণ সংখ্যার স্পিনের ক্ষেত্রে কণাগুলিতে কাল্পনিক সময়ে [২৫] একটি ঘূর্ণন নিয়ন্ত্রক [২৬] প্রয়োগ করলে পাউলির নীতি মেনে চলবে।
একমাত্রায় বোসনসহ ফার্মিয়নও অপবর্জন নীতি মেনে চলে। অসীম শক্তির ডেল্টা ফাংশন বিকর্ষণমূলক মিথস্ক্রিয়া সহ একটি এক মাত্রিক বোস গ্যাস মুক্ত ফার্মিয়ন গ্যাসের সমতুল্য। এর কারণ হিসেবে বলা যায় একক মাত্রায় এমনভাবে কণার বিনিময় হওয়ার দরকার যাতে কণাগুলি একে অপরকে অতিক্রম করতে পারে; কিন্তু অসীম শক্তির বিকর্ষণ বলের জন্য এটি ঘটে না। এই মডেলটি স্রোডিঙ্গার অরেখীয় কোয়ান্টাম সমীকরণ [২৭] দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। ভরবেগ উপস্থিত এমন স্থানে, অপবর্জন নীতিটি ডেল্টা-ফাংশন মিথস্ক্রিয়া সহ একটি বোস গ্যাসের সসীম বিকর্ষণের জন্যও বৈধ। পাশাপাশি স্পিন ও হাবার্ড মডেলকে [২৮] একক মাত্রায় সংস্পর্শে আনার জন্য এবং বেথে অ্যানসাটজ [২৯] দ্বারা সমাধানযোগ্য অন্যান্য মডেলগুলির জন্যও প্রযোজ্য। বেথে অ্যানসাটজ দ্বারা সমাধানযোগ্য মডেলে ভূমি স্তর [৩০] হল একটি ফার্মি শক্তি।
ব্যবহার
সম্পাদনাপরমাণু
সম্পাদনাপাউলির অপবর্জন নীতি বিভিন্ন ধরনের ভৌত ঘটনা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। পাউলির অপবর্জন নীতির একটি অতি প্রয়োজনীয় ফলাফল হল পরমাণুর বিস্তৃত ইলেকট্রন বিন্যাস গঠন এবং পরমাণুগুলি যেভাবে ইলেকট্রন ভাগবন্টন করে, রাসায়নিক উপাদানের বৈচিত্র্য ও রাসায়নিক সমন্বয় ব্যাখ্যা করে। বৈদ্যুতিকভাবে নিস্তড়িৎ বা বৈদ্যুতিক আধানহীন পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের প্রোটনের সমান সংখ্যক ইলেকট্রন আবদ্ধ থাকে। ইলেকট্রন, একটি ফার্মিয়ন হওয়ায় অন্যান্য ইলেকট্রনের মতো একই কোয়ান্টাম স্তর দখল করতে পারে না। তাই ইলেকট্রনগুলিকে একটি পরমাণুর মধ্যে "স্ট্যাক" করতে হয়, যেমন একই কক্ষপথে থাকাকালীন বিভিন্ন স্পিন থাকতে পারে তা নিচে বর্ণিত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি নিস্তড়িৎ হিলিয়াম পরমাণুর দুটি আবদ্ধ ইলেকট্রন রয়েছে, উভয়েই বিপরীত স্পিন অর্জন করে সর্বনিম্ন শক্তিস্তর (1s) দখল করে। যেহেতু স্পিন ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম স্তরের অংশ, তাই দুটি ইলেকট্রন আলাদা কোয়ান্টাম স্তরে থাকে এবং পাউলির অপবর্জন নীতি লঙ্ঘন করে না। যাইহোক, স্পিন শুধুমাত্র দুটি ভিন্ন মানের হয়। একটি লিথিয়াম পরমাণুতে তিনটি ইলেকট্রন থাকে। তৃতীয় ইলেকট্রনটি 1s স্তরের পরিবর্তে 2s স্তরে থাকে। অনুরূপে পর্যায়ক্রমে বৃহত্তর মৌলগুলি পর্যায়ক্রমে উচ্চতর শক্তির শেল থাকে। একটি মৌলের রাসায়নিক ধর্ম মৌলটির পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। বিভিন্ন সংখ্যক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষের ইলেকট্রন সংখ্যা সমান হলে রাসায়নিক ধর্মের সাদৃশ্য দেখা যায়। যা পর্যায় সারণীর ধারণার জন্ম দেয়।
হিলিয়াম পরমাণুর ওপর পাউলির অপবর্জন নীতি পরীক্ষার জন্য গর্ডন ড্রেক অনুমানভিত্তিক অবস্থার জন্য অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট গণনা করেছিলেন। যা এটি লঙ্ঘন করে তাকে প্যারোনিক অবস্থা বলে। পরবর্তীকালে কে. ডেইলামিয়ান এট অল. ড্রেক দ্বারা গণণা করা প্যারোনিক অবস্থা 1s2s 1S0 পরীক্ষা করার জন্য একটি পারমাণবিক বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করেন। এই পরীক্ষাটি সফল হয়নি এবং এই পরীক্ষায় দেখা যায় যে প্যারোনিক অবস্থার পরিসংখ্যানগত ওজনের সর্বোচ্চ সীমা ৫×১০−৬---।(অপবর্জন নীতিটি শূন্যের ওজন বোঝায়)।
কঠিন অবস্থার বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাতড়িৎ পরিবাহী ও অর্ধপরিবাহীগুলিতে প্রচুর পরিমাণে আণবিক কক্ষপথ রয়েছে যা শক্তিস্তরগুলির অবিচ্ছিন্ন পটি বর্ণালী [৩১] গঠন করে। শক্তিশালী পরিবাহীতে (ধাতুতে) ইলেকট্রনগুলি এতটাই অবক্ষয় [৩২] হয় যে তারা একটি ধাতুর তাপ ধারকত্ব ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে পারে না। কঠিন পদার্থের যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক, চৌম্বকীয়, আলোকীয় ও রাসায়নিক ধর্ম পাউলির অপবর্জন নীতি থেকে ব্যাখ্যা করা যায়।
পদার্থের স্থায়িত্ব
সম্পাদনাপরমাণুর কোয়ান্টাম তত্ত্বের দ্বারা একটি পরমাণুর প্রতিটি ইলেকট্রনের অবস্থার বর্ণনা করা হয়। যা হাইসেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির মাধ্যমে দেখায় যে নিউক্লিয়াসের কাছের একটি ইলেকট্রনের কাছে আসা ইলেকট্রনের গতিশক্তি বৃদ্ধি করে। যাইহোক, অনেক ইলেকট্রন এবং অনেক নিউক্লিয়নসহ বৃহৎ তন্ত্রের স্থায়িত্ব একটি আলাদা বিষয় এবং এটি ব্যাখ্যার জন্য পাউলির অপবর্জন নীতি প্রয়োজন।
পাউলির অপবর্জন নীতি থেকে এটা জানা যায় যে, সাধারণ গুঁড়ো বা বাল্ক পদার্থের স্থিতিশীল এবং কিছুটা আয়তন দখল করে। এই নীতিটি সর্বপ্রথম 1931 সালে পাউল এরেনফেস্ট দেখিয়েছিলেন, তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে প্রতিটি পরমাণুর ইলেকট্রন সর্বনিম্ন শক্তিস্তরে থাকে না এবং ক্রমান্বয়ে বড়ো কক্ষপথের দিকে অগ্রসর হয়। সুতরাং পরমাণু একটি আয়তন দখল করে এবং খুব কাছাকাছি চেপে রাখা যায় না।
প্রথম দৃঢ় প্রমাণটি 1967 সালে ফ্রিম্যান ডাইসন এবং অ্যান্ড্রু লেনার্ড পেশ করেছিলেন, যারা আকর্ষণীয় (ইলেকট্রন-পারমাণবিক) এবং বিকর্ষনকারী (ইলেকট্রন-ইলেকট্রন এবং পারমাণবিক-পারমাণবিক) শক্তির ভারসাম্য তুলনা করেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন যে সাধারণ পদার্থটি ভেঙে পড়বে এবং ক্ষুদ্র আয়তন দখল করবে। পরবর্তীকালে 1975 সালে ইলিয়ট এইচ লিব [৩৩] এবং ওয়াল্টার থিরিং [৩৪] সহজভাবে প্রমাণ করেছিলেন। তারা থমাস-ফার্মি মডেলের [৩৫] পরিপ্রেক্ষিতে কোয়ান্টাম শক্তির ওপর নিম্নসীমা আরোপ করেন, যা ঘনত্ব ফাংশনাল তত্ত্ব নামক টেলরের একটি উপপাদ্যের কারনে স্থিতিশীল। এটি প্রমাণের জন্য গতিশক্তির একটি নিম্নসীমা ব্যবহার করেছিলেন যা বর্তমানে লিব-থারিং অসাম্য [৩৬] নামে পরিচিত।
এক্ষেত্রে পাউলি নীতির ফলাফল হল যে একই ঘূর্ণনের ইলেকট্রনগুলি একটি বিকর্ষনধর্মী বিনিময় মিথস্ক্রিয়া দ্বারা পৃথক করা হয়, যা স্বল্প পরিসরে সীমাবদ্ধ এবং দীর্ঘ পরিসরে স্থির তড়িৎ বা কুলম্বের সূত্র ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করে। এই প্রভাবটি ম্যাক্রোস্কোপিক জগতে দৈনন্দিন জীবনে পর্যবেক্ষণের জন্য আংশিক দায়ী যে, দুটি কঠিন বস্তু একই সময়ে একই স্থানে থাকতে পারে না।
জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান
সম্পাদনাডাইসন এবং লেনার্ড কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত বস্তুতে ঘটমান চৌম্বকীয় বা মহাকর্ষীয় শক্তিকে বিবেচনা করেননি। 1995 সালে এলিয়ট লিব এবং সহকর্মীরা প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন যে, পাউলির অপবর্জন নীতি এখনও উচ্চ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে যেমন নিউট্রন তারা-তে স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করে, যদিও সাধারণ পদার্থের চেয়ে বেশি ঘনত্বে ঘটে। সাধারণ আপেক্ষিকতার ফলে তীব্র মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের পদার্থগুলো ভেঙে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টি করে।
জ্যোতির্বিদ্যায় শ্বেত বামন গ্রহ ও নিউট্রন তারায় বৈশিষ্ট্য পাউলির অপবর্জন নীতি থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। উভয়ক্ষেত্রেই পারমাণবিক গঠন উচ্চচাপে ব্যাহত হয়, কিন্তু নক্ষত্রগুলিতে অবক্ষয় চাপের দ্বারা হাইড্রোস্ট্যাটিক ভারসাম্য [৩৭] বজায় রাখা হয়, যা ফার্মি চাপ নামেও পরিচিত। পদার্থের এই বহিরাগত রূপটি অবক্ষয়িত পদার্থ নামেই পরিচিত। একটি নক্ষত্রের প্রচন্ড মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সাধারণত নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রে কেন্দ্রীণ সংযোজন উৎপন্ন তাপ দ্বারা সৃষ্ট তাপ চাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। সাদা বামন গ্রহে, যেগুলিতে কেন্দ্রীণ সংযোজন প্রক্রিয়া হয় না, ইলেকট্রন অবক্ষয় চাপ দ্বারা অভিকর্ষের বিপক্ষে শক্তি সরবরাহ করা হয়। নিউট্রন নক্ষত্রে, এমনকি শক্তিশালী মহাকর্ষীয় শক্তির সাপেক্ষে ইলেকট্রন ও প্রোটন মিশে নিউট্রন তৈরী করে। স্বল্প পরিসরে হলেও নিউট্রনগুলি আরও বেশি অবক্ষয় চাপ, নিউট্রন অবক্ষয় চাপ তৈরি করতে সক্ষম। এটি নিউট্রন নক্ষত্রকে আরও পতন থেকে স্থিতিশীল করতে পারে, তবে সাদা বামন গ্রহের থেকে ছোটো আকারে ও উচ্চ ঘনত্বে। নিউট্রন নক্ষত্র সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বস্তু; তার ইয়ং-এর গুণাঙ্ক হীরক-এর চেয়ে 13 গুন বেশি। যাইহোক, এই উচ্চ দৃঢ়তা একটি নিউট্রন নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র দ্বারা টলম্যান-ওপেনহাইমার-ভকহফ সীমা অতিক্রম করলে কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাবে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Half-integer
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Identical_particles
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Fermion
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Quantum_system
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Quantum_state
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Spin%E2%80%93statistics_theorem
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Quantum_number
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Azimuthal_quantum_number
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Spin_quantum_number
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Atomic_orbital
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Boson
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Exchange_interaction
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Identical_particles#Quantum_mechanical_description_of_identical_particles
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Helium-3
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Identical_particles
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Fermi%E2%80%93Dirac_statistics
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Chemical_stability#Outside_chemistry
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Cubical_atom
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Empirical_relationship
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Edmund_Clifton_Stoner
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Samuel_Goudsmit
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/George_Uhlenbeck
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Electron_spin
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Spin%E2%80%93statistics_theorem
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Imaginary_time
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Rotation_operator_(quantum_mechanics)
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Nonlinear_Schr%C3%B6dinger_equation
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Hubbard_model
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Bethe_ansatz
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Stationary_state
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Electronic_band_structure
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Degenerate_energy_level
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Elliott_H._Lieb
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Walter_Thirring
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Thomas-Fermi_model
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Lieb-Thirring_inequality
- ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Hydrostatic_equilibrium