নিউট্রিনো

অতি সামান্য ভর বিশিষ্ট অতি পারমাণবিক কণা যা শুধুমাত্র দুর্বল নিউক্লিয় বল ও মহাকর্ষ বলের সাথে ম

নিউট্রিনো (ইংরেজি উচ্চারণ: /njuːˈtriːnoʊ/) হচ্ছে বৈদ্যুতিক চার্জবিহীন, দুর্বল সক্রিয় ক্ষুদ্র পারমাণবিক কণা।[২][৩] ধারণা করা হয়, এই ক্ষুদ্র কণা অশূন্য ভরের কণা। পর্দাথের মধ্য দিয়ে এই কণা প্রায় অবিকৃতভাবে চলাচল করতে পারে। নিউট্রিনো অর্থ হচ্ছে 'ক্ষুদ্র নিরপেক্ষ কণা'। গ্রীক বর্ণ নিউ (ν) দিয়ে একে প্রকাশ করা হয়।[৪]

নিউট্রিনো/প্রতিনিউট্রিনো
গঠনমৌলিক কণা
ধরন3 – electron neutrino, muon neutrino and tau neutrino
ভর<0.১২০ eV (<২.১৪ × ১০−৩৭ kg)[১]
ইলেকট্রিক চার্জe
স্পিন1/2
Weak hypercharge−1
BL−1
X−3

নিউট্রিনোর গতি সম্পাদনা

সেপ্টেম্বর ২০১১-তে গবেষকরা ঘোষণা করেন, নিউট্রিনো আলোক কণা থেকে দ্রুত বেগসম্পন্ন। নিউট্রিনো যদিও ভরহীন হয়, তাহলে আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী তার গতি হবে আলোর গতির সমান, আর যদি ভর থাকে, তাহলে গতি হবে আলোর গতির চেয়ে কম। কিন্তু অপেরা পরীক্ষণের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে নিউট্রিনোর গতি হলো আলোর গতির ১.০০০০২৫ গুণ (০.০০২৫ শতাংশ বেশি)। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অবশ্য আরও সূক্ষ্ম পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে যে এটা আসলে ভুল ছিল, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পরীক্ষার ফলাফলেও সামান্য ত্রুটি ছিল। এর ফলে অপেরার প্রধানকে অপসারণও করা হয়।

যে প্রক্রিয়ায় নিউট্রিনো আলোর গতি ছাড়িয়ে যাচ্ছিল! ‘প্রজেক্ট অপেরা’ নামের এক বৈজ্ঞানিক প্রকল্পের অধীনে ইউরোপীয় পারমানবিক গবেষণা কেন্দ্র সাড়া জাগানো নিউট্রিনো আবিস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নিউট্রিনো আবিস্কারের ক্ষেত্রে গৃহীত এক পরীক্ষার প্রথম ধাপে সুইজারল্যান্ডের সিনক্রোটোন নামের একটি ভূগর্ভ যন্ত্রে প্রোটন কণা তৈরী করে তা গ্রাফাইটের ওপর নিক্ষেপ করা হয়। এতে প্রোটন কণাগুলি ভেঙে কিছু জটিল কণা তৈরী হয়, যেগুলি অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষয় হয়ে মিউয়ন এবং মিউ নিউট্রিনো তৈরী করে। এ কণাগুলিকে তখন লোহার ওপর নিক্ষেপ করা হয়। এতে মিউয়ন নিউট্রিনো বাদে অন্য সব কণা প্রতিফলিত বা শোষিত হয়। মিউয়ন নিউট্রিনোগুলি পৃথিবীর মাটি-পাথর ভেদ করে প্রায় ৭৫০কিলোমিটার দূরে ইতালিতে পৌঁছায়। অপেরা পরীক্ষণের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে, এ সময় নিউট্রিনোর গতি ছিল আলোর গতির অন্ততঃ আলোর গতির ১.০০০০২৫ গুণ (০.০০২৫ শতাংশ বেশি) অর্থাৎ ৬০ ন্যানো সেকেন্ড অধিক দ্রুত। উল্লেখ্য, আজ থেকে শতাধকি বছর আগে প্রখ্যাত জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর আবিস্কৃত বিখ্যাত সমীকরণ E= MC2  (Theory of Special Relativity বা ‘বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত¡’) এর আলোকে ঘোষণা করেছিলেন যে, “আলোর চেয়ে দ্রুতগতির আর কিছু নেই”। (তথ্য সূত্রঃ https://www.linkedin.com/post/edit/6639465566786674688/)।

২০১৫ সালের নোবেল পুরস্কার সম্পাদনা

২০১৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার যায় নিউট্রিনো গবেষণার জন‍্য। বিজয়ী বিজ্ঞানীরা হলেন, জাপানের তাকাআকি কাজিতা ও কানাডার আর্থর বি. ম্যাকডোনাল্ড। নিউট্রিনো সম্পর্কে বিদ্যমান রহস্যের সমাধানের জন্য তাদের এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয় বলে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়েছে। কাজিতা ও ম্যাকডোনাল্ডের নোবেল পাওয়ার বিষয়ে রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিউট্রিনোর ভর নির্ণয়ে তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। পদার্থের অধিকতম অন্তর্নিহিত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের ধারণা এ আবিষ্কার পরিবর্তন করে দিয়েছে। এ আবিষ্কারে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস, গঠন ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলেও জুরি বোর্ড আশা প্রকাশ করেছে। [৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mertens, Susanne (২০১৬)। "Direct neutrino mass experiments"। Journal of Physics: Conference Series718 (2): 022013। arXiv:1605.01579 ডিওআই:10.1088/1742-6596/718/2/022013বিবকোড:2016JPhCS.718b2013M 
  2. Close, F. E. (২০১০)। Neutrino। Oxford: Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-957459-9ওসিএলসি 642283143 
  3. Jayawardhana, Ray, (২০১৫)। The neutrino hunters : the chase for the ghost particle and the secrets of the universe। Richmond। আইএসবিএন 978-1-78074-647-0ওসিএলসি 896854895 
  4. "নিউট্রিনো: মহাবিশ্বের ভূত, সিরাজাম মুনির শ্রাবণ, বিজ্ঞান ব্লগ"। ৪ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৫ 
  5. "নিউট্রিনো গবেষণায় পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন দুই বিজ্ঞানী"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৭