নুরুল ইসলাম জিহাদী
নুরুল ইসলাম জিহাদী (১৯৪৮ — ২৯ নভেম্বর ২০২১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, লেখক, শিক্ষাবিদ।[১] তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস ছিলেন। এছাড়াও তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মজলিসে শুরার সদস্য, যুক্তরাজ্যের জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন সহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
নুরুল ইসলাম জিহাদী | |
---|---|
মহাসচিব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ | |
অফিসে ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ – ২৯ নভেম্বর ২০২১ | |
পূর্বসূরী | নূর হুসাইন কাসেমী |
উত্তরসূরী | সাজিদুর রহমান |
মহাপরিচালক, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম | |
অফিসে ১০ জুলাই ১৯৮৪ – ২৯ নভেম্বর ২০২১ | |
উত্তরসূরী | জহুরুল ইসলাম |
মহাসচিব, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুয়ত বাংলাদেশ | |
অফিসে ১৯৯০ – ২৯ নভেম্বর ২০২১ | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৯৪৮ |
মৃত্যু | ২৯ নভেম্বর ২০২১ ল্যাবএইড হাসপাতাল, ধানমন্ডি | (বয়স ৭২–৭৩)
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
পিতামাতা |
|
জাতিসত্তা | বাঙালি |
যুগ | আধুনিক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | হাদিস, ফিকহ, লেখালেখি, তাসাউফ, ইসলামি আন্দোলন, খতমে নবুয়ত |
উল্লেখযোগ্য কাজ |
|
যেখানের শিক্ষার্থী | |
মুসলিম নেতা | |
যার দ্বারা প্রভাবিত |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনানুরুল ইসলাম জিহাদী ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন ধুরুং গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রশীদ।[২]
প্রাথমিক জীবনে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় তিনি কুরআনের হেফজ (মুখস্থ) সম্পন্ন করেন। হেফজ সমাপ্তির পর একই মাদ্রাসায় হেদায়াতুন্নাহু জামাত (মাধ্যমিক) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৭৪ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন।[২]
তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন মুফতি ফয়জুল্লাহ, শাহ আবদুল ওয়াহহাব, আব্দুল আজিজ, আহমাদুল হক, আবুল হাসান, মুহাম্মদ হামেদ, শাহ আহমদ শফী প্রমুখ।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাশিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর পটিয়া থানাধীন কৈয়গ্রাম মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। উক্ত মাদ্রাসায় এক বৎসর শিক্ষকতার পর বাবুনগর মাদ্রাসায় আহুত হলে সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়ােজিত হন। বাবুনগর মাদ্রাসায় কয়েক বৎসর অধ্যাপনার পর ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদ্রাসায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এসময়ে তার পিতার মৃত্যুবরণের পর তিনি নিজ বাড়িতে চলে যান ও পুনরায় বাবুনগর মাদ্রাসায় যােগদান করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ জুলাই তিনি ঢাকা জেলার অন্তর্গত খিলগাঁও-এ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর মজলিসে শুরা এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ও আমেলার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৮ সালে ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তিনি “ইসলামী আন্দোলন পরিষদ” নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় ছিদ্দিক আহমদের সান্নিধ্যে ছিলেন। কাদিয়ানী বিরােধী আন্দোলন ও খতমে নবুয়ত আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত “আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুয়ত বাংলাদেশ”র তিনি মহাসচিব ছিলেন।[২] ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন।[৩]
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য:[২]
- জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন, যুক্তরাজ্য
- আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া নূরুল উলুম কুমি
- তাজবীদুল কুরআন মাদ্রাসা শাহনগর চট্টগ্রাম
- আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম নূরনগর মশিউর নগর
- অষ্টধার কোতােয়ালী মােমেনশাহী
- দারুল উলুম নূরবাগ গােপালপুর টাঙ্গাইল
- নূরুল কুরআন একাডেমী
- রহমতবাগ মাদানিনগর ইত্যাদি
এছাড়াও তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদ্রাসার পৃষ্ঠপােষকতা করেছেন।[২]
প্রকাশনা
সম্পাদনাতার রচিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে রয়েছে :[২]
- আখলাকে রাসূল সাঃ
- উজ্জ্বল নক্ষত্র
- কাদিয়ানী ফিতনা ও মুসলিম মিল্লাতের অবস্থান
- কুরবানীর আহকাম
- গুলশানে নুর
- আসমানে ইলম কি চাঁন্দ দরখসান্দে সিতারে
- তাজকেরায়ে খতীবে আজম
- শেখ সাদীর রহ. এর উপদেশ ভান্ডার
- কাদিয়ানের বহুরূপী ভন্ড নবী
- নুকুশে জিন্দেগী ও পান্দে নামায়ে নছীর
- কওমি মাদ্রাসা, উদ্দেশ্য পদ্ধতি ফলাফল ইত্যাদি
মৃত্যু
সম্পাদনাতিনি ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[৪] মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর ইমামতিতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ময়দানে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার মাকবারায়ে জামিয়ায় শাহ আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরীর পাশে তাকে দাফন করা হয়।[৫]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Hefajat secretary General Nurul Islam Jihadi dies" [হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী মারা গেছেন]। দৈনিক ডেইলি স্টার। ২৯ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ মাখজানুল উলুম স্মারক। ঢাকা, বাংলাদেশ: আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসা। ২০২০। পৃষ্ঠা ১৮৮–১৯০।
- ↑ "হেফাজতে কাসেমীর পদ পেলেন জিহাদী"। সমকাল। ২০২২-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৮।
- ↑ "হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী আর নেই"। বাংলা ট্রিবিউন। ২৯ নভেম্বর ২০২১। ২৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ "চিরনিদ্রায় শায়িত হেফাজতের মহাসচিব"। আরটিভি অনলাইন। ৩০ নভেম্বর ২০২১।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- হাসনাবাদী, মুহাম্মদ জাকারিয়া (২০২৩)। মাশায়েখে বাবুনগর। বাংলাদেশ: ইত্তিহাদ পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ১৪৪–১৪৬।
- আবদুল্লাহ নুর, মুফতি (১ ডিসেম্বর ২০২১)। "মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) : একজন কর্মবীর আলেমের বিদায়"। দৈনিক কালের কণ্ঠ।