মুফতি ফয়জুল্লাহ
মুফতি ফয়জুল্লাহ (১৮৯০–১৯৭৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, মুফতি, কবি, শিক্ষাবিদ ও সংস্কারক। ফতোয়া প্রদানে দক্ষতার কারণে তাকে মুফতি আজম বা বড় মুফতি বলা হয়। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরুর দিকের ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে দারুল উলুম দেওবন্দে লেখাপড়া সমাপ্ত করে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান মুফতি ছিলেন। ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনি আসহাবে সুফফার আদলে মেখল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।[১] তিনি আরবি, ফার্সি ও উর্দুতে প্রায় ১০০টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
মুফতি আজম মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ | |
---|---|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৮৯০ মেখল, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম |
মৃত্যু | ১৯৭৬ | (বয়স ৮৫–৮৬)
জাতীয়তা |
|
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
পিতামাতা |
|
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | |
উল্লেখযোগ্য কাজ | জামিয়া ইসলামিয়া হামিউস-সুন্নাহ |
শিক্ষক | |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
শিক্ষার্থী | |
সাহিত্যকর্ম | মুফতি ফয়জুল্লাহর গ্রন্থপঞ্জি |
জীবনী
সম্পাদনাতিনি ১৮৯০ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানাধীন মেখল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুন্সি হেদায়েত আলী ও মাতা রহীমুন্নেসা। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রথম দিকের ছাত্র। হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষা সমাপ্ত করার পর তিনি উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯১২ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ গমন করেন। তিনি সেখানে আড়াই বছর অধ্যয়ন করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন: আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি ও আজিজুর রহমান উসমানি। ১৯১৫ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান মুফতি পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৩৪ সালে আসহাবে সুফ্ফার আদলে তিনি মেখল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আমৃত্যু এই মাদ্রাসা পরিচালনার সাথে জড়িত ছিলেন।[২] ফতোয়া দানে অভিজ্ঞতার কারণে তিনি "মুফতিয়ে আযম" উপাধিতে ভূষিত হন।[৩] তিনি ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[২]
প্রকাশনা
সম্পাদনাতিনি আরবি, ফার্সি ও উর্দুতে প্রায় ১০০টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। ছাত্রজীবনে তার কিছু রচনা হারিয়ে গেছে। ইসলামি শরিয়তের প্রতিটি বিষয়ে তার রচনা থাকলেও তিনি আকিদা ও ফিকহের উপর বেশি আলোচনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:[২]
- ফয়জুল কালাম
- হিদায়াতুল ইবাদ
- রাফেউল ইশকালাত
- তালীমুল মুবতাদী
- ইযহারুল মুনকারাত
- তাওযীহুল বয়ান
- ইজালাতুল খুবত
- তারগীবুল উম্মাহ ইলা তাহসীনিন নিয়্যাহ
- ইযহারুল ইখতিলাল ফী মাসআলাতিল হিলাল
- আল কাওলুস সাদীদ ফী হুকমিল আহওয়াল ওয়াল মাওয়ায়িয
- আল ফালাহ ফী মা ইয়াতায়াল্লাকু বিন্নিকাহ
- শরহে বোস্তাঁ
- শরহে গুলেস্তাঁ
- হাশিয়ায়ে আত্তার
- শরহে কারীমা
- পান্দেনামায়ে খাকি
- মনযুমাতে খাকি
- মাসনাবিয়ে খাকী
- ইরশাদুল উম্মত
- মনযুমাতে মুখতাছারাহ
- কন্দে খাকী
- মসনবীয়ে দিল পযীর
- মসনবিয়ে দিলাবীয়
- আল ফায়সালাতুল জরিয়া ফী ছিমা ওয়া আওকাফিল মাদারিছ
- হিফযুল ঈমান
- মুনকারাতুল কুবূর
- দফউল ওয়াসায়ী ফী আওকাফিল মাদারিস
- আল হক্কুস সারীহ ফিল মাসলাকিস সহীহ
- দফউল ইতিসাফ ফী আহ্কামিল ই'তিকাফ
- ইযহারে খেয়াল
- শুমিয়ে মায়াসী
- আর রিসাতুল মানযুমা আলা ফিরকাতিন নাইচারিয়া ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ আবু মূসা মোঃ আরিফ বিল্লাহ (২০১২)। "ফয়জুল্লাহ, মুফতী"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ ক খ গ নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। (মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব রহ.) । দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৮৫–৯০। আইএসবিএন 112009250-7।
- ↑ উদ্দিন, মুহাম্মদ জসিম (২০১৬)। "মুফতি ফয়জুল্লাহ'র উল্লেখযোগ্য ছাত্রগণ"। ফিক্হশাস্ত্রে মুফতী মুহাম্মদ ফয়যুল্লাহ-এর অবদান :একটি পর্যালোচনা (পিএইচডি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ২০৮–২১২ – ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ-এর মাধ্যমে।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- আজমী, নূর মুহাম্মদ (২০০৮)। হাদিসের তত্ত্ব ও ইতিহাস। বাংলাবাজার, ঢাকা: এমদাদিয়া পুস্তকালয়। পৃষ্ঠা ২৬৯।