নাজমুল হুদা
নাজমুল হুদা (৬ জানুয়ারি ১৯৪৩ - ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ব্যারিস্টার, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ও তথ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১২ সালে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
নাজমুল হুদা | |
---|---|
![]() ২০১৭ সালে | |
তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ মার্চ ১৯৯১ – জানুয়ারি ১৯৯৬ | |
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১০ অক্টবর ২০০১ – ২৮ অক্টবর ২০০৬ | |
পূর্বসূরী | আনোয়ার হোসেন মঞ্জু |
উত্তরসূরী | সৈয়দ আবুল হোসেন |
ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ২০ মার্চ ১৯৯১ – ২৯ অক্টবর ২০০৬ | |
পূর্বসূরী | শহীদ খন্দকার |
উত্তরসূরী | আব্দুল মান্নান খান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ৬ জানুয়ারি ১৯৪৩ |
মৃত্যু | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা | (বয়স ৮০)
রাজনৈতিক দল |
|
দাম্পত্য সঙ্গী | সিগমা হুদা |
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনা১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান জাগো দল গঠন করলে নাজমুল হুদা জাগো দলে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হলে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং তিনি ছিলেন দলের সর্বকনিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সদস্য। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন।[১] ১/১১ পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। ২০১০ সালে ২১ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন তখন তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বহিষ্কৃত হলেও তিনি বিএনপির দলীয় কাজ করতে থাকেন এবং ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে ২০১২ সালে ৬ জুন নাজমুল হুদা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন।[২]
১০ই আগস্ট ২০১২ সালে নাজমুল হুদা ও আবুল কালাম মিলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কিন্তু কয়েক মাস পরের আবুল কালাম কর্তৃক বিএনএফ থেকে বহিষ্কার হন। ২০১৪ সালের ৭ মে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জোট নামে একটি জোট গঠন করেন[৩] এবং ২১ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি নামে দল গঠন করেন। ২০ নভেম্বর ২০১৫ সালে হুদা তৃণমূল বিএনপি নামে আরও একটি নতুন দল গঠন করেন।[৩]
অভিযোগ ও দোষী সাব্যস্ত
সম্পাদনা২০০৭ সালের ২১ মার্চ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হুদাকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে ২০০১-২০০৬ সময়ে যোগাযোগ মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ৩০ কোটি টাকার সরকারি কাজ পাইয়ে দিতে মীর জহির হোসেন নামক একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২.৪০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন।
২৭ আগস্ট তাকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আপিলের ভিত্তিতে, হাইকোর্ট ২০ মার্চ ২০১১ তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়, কিন্তু ১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের খালাস বাতিল করে দেয়। ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর, হাইকোর্ট কারাদণ্ডের মেয়াদ ৪ বছরে কমিয়ে দেয়।[৪] সুপ্রিম কোর্ট জানুয়ারি ২০১৮ সালে এই মামলার হুদাকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন।[৫] আত্মসমর্পণের পর, হুদাকে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে কারাগারে পাঠানো হয়।[৬] ২১ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় তাকে জামিন দেয়।[৭]
২৭ জুলাই ২০০৭ তারিখে, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, একজন বিএনপির রাজনীতিবিদ এবং ক্যাব এক্সপ্রেস লিমিটেডের মালিক হুদা এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে দুটি মারুতি গাড়ির জন্য চাঁদাবাজি করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। ঢাকার একটি আদালত, ১২ জুন ২০০৮ এই মামলায় হুদাকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেয়।[৮]
৩ এপ্রিল ২০০৮-এ, সম্পদের তথ্য গোপন করা এবং অবৈধভাবে সম্পদ আহরণের অভিযোগে হুদাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।[৯] একটি আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে, হাইকোর্ট, ২০১০ সালের আগস্টে, এই মামলা থেকে তাকে খালাস দেয়।[১০] কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে বেকসুর খালাসের রায় বাতিল করেন।[১১]
১৮ জুন ২০০৮-এ দুদক হুদা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা করে। ২০১৬ সালে হাইকোর্ট মামলাটি বাতিল করলেও ২০১৭ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন।[১২] একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, ৮ জুলাই ২০১৯, হাইকোর্ট দুদককে ৪ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলে।[১৩]
৯ জানুয়ারি ২০২০, দুদক হুদা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬.৭৩ কোটি টাকা পাচারের জন্য দুটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করে।[১৪] এসব অভিযোগে ১০ মার্চ তাদের জামিন দেওয়া হয়।[১৫]
২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, দুদক হুদার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনার জন্য একটি মামলা দায়ের করে।[১৬] বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হুদা মিথ্যাভাবে দাবি করেছেন যে সিনহা তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলা খারিজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুষ চেয়েছিলেন। [১৭]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনানাজমুল হুদা আইনজীবী ব্যারিস্টার সিগমা হুদাকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি মেয়ে (অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা ও শ্রাবন্তী আমিনা) হয়।
মৃত্যু
সম্পাদনানাজমুল হুদা ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[১৮]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা মারা গেছেন"। প্রথম আলো।
- ↑ "বিএনপি থেকে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার পদত্যাগ"। দৈনিক সংগ্রাম। ৭ জুন ২০১২। ১৯ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-১৯।
- ↑ ক খ "নাজমুল হুদার আরেকটি দল গঠন, নাম তৃণমূল বিএনপি"। এনটিভি। ২০ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Huda's jail term commuted"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "SC asks Nazmul Huda to surrender in bribery case"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "Huda starts serving time"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "Nazmul Huda gets bail in bribe case"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "Nazmul Huda acquitted of extortion case"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৯-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "Huda handed 12yrs for ill-gotten wealth"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-০৪-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১১।
- ↑ "Huda's jail sentence scrapped"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-০৮-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "Huda's acquittal scrapped, Khoka's graft trial to continue"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৯-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "SC stays case against Nazmul Huda, wife"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০২-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "HC asks ACC to end inquiry into graft case against Nazmul Huda"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৭-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "Ex-minister's wife, daughters sued for 'money laundering'"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০১-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "Nazmul Huda's wife, daughters get bail in corruption cases"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৩-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "SK Sinha sued"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১০-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "Nazmul Huda sued by ACC over false allegation against SK Sinha"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০২-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ। "ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা আর নেই"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৯।