আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (জন্ম ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪) একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক, যিনি পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী। এর পূর্বে তিনি আরও দুবার দুটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (যোগাযোগ মন্ত্রী ও বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মন্ত্রী) ছিলেন। তিনি পিরোজপুর জেলার কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও জিয়ানগর উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর ২ আসন থেকে ৬ বারের (১৯৮৬,১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪) নির্বাচিত সংসদ সদস্য।[১]
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু | |
---|---|
![]() ২০১৬-এ দিল্লিতে মঞ্জু | |
জাতীয় সংসদের সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ – ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ | |
পূর্বসূরী | শাহ আলম |
উত্তরসূরী | মহিউদ্দীন মহারাজ |
কাজের মেয়াদ ২৮ অক্টোবর ২০০১ – ২৭ অক্টোবর ২০০৬ | |
পূর্বসূরী | তাসমিমা হোসেন |
উত্তরসূরী | শাহ আলম |
কাজের মেয়াদ ১৫ এপ্রিল ১৯৮৮ – ২৪ নভেম্বর ১৯৯৫ | |
পূর্বসূরী | মনিরুল ইসলাম মনির |
উত্তরসূরী | নূরুল ইসলাম মঞ্জুর |
নির্বাচনী এলাকা | পিরোজপুর-২ |
কাজের মেয়াদ ১৪ জুলাই ১৯৯৬ – ১৩ জুলাই ২০০১ | |
পূর্বসূরী | শাহজাহান ওমর |
উত্তরসূরী | শাহজাহান ওমর |
নির্বাচনী এলাকা | ঝালকাঠি-১ |
বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৩ জানুয়ারি ২০১৮ – ২০১৯ | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
পূর্বসূরী | আনিসুল ইসলাম মাহমুদ |
বাংলাদেশের পরিবেশ ও বন মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১২ জানুয়ারি ২০১৪ – ৩ জানুয়ারি ২০১৮ | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
উত্তরসূরী | আনিসুল ইসলাম মাহমুদ |
বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১ | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
পূর্বসূরী | আবদুল মতিন চৌধুরী |
উত্তরসূরী | নাজমুল হুদা |
কাজের মেয়াদ ২৭ মার্চ ১৯৮৮ – ৬ অক্টোবর ১৯৯০ | |
রাষ্ট্রপতি | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ |
পূর্বসূরী | এম মতিউর রহমান |
উত্তরসূরী | অলি আহমেদ |
বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৯৮৫ – ১৯৮৮ | |
রাষ্ট্রপতি | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | পিরোজপুর জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) | ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল | জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) জাতীয় পার্টি (এরশাদ)(১৯৯৬ সালের সালের পূর্বে) |
দাম্পত্য সঙ্গী | তাসমিমা হোসেন |
সম্পর্ক | মইনুল হোসেন (ভাই) মজিবুর রহমান চৌধুরী (জামাতা) |
পিতা | তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ ছাড়া ও ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু করে ১৭ বছর ধরে মন্ত্রী এবং একবার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১/১১-এর সময় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি।
তিনি জাতীয় পার্টির একটি অংশের নেতা। যা বাংলাদেশে জেপি নামে পরিচিত। তার পিতা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া একজন নামকরা রাজনীতিবিদ এবং দৈনিক ইত্তেফাক এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাক এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর এ গঠিত ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট বি এন পি এর আহবায়ক কমিটির সদস্যদের একজন ছিলেন।[২] তিনি ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে আওয়ামী লীগ এর নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন প্রদান করেন এবং সেসময় বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন।
সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ৩ জানুয়ারী ২০১৯ তারিখে একাদশ সংসদের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি শপথবাক্য পাঠ করেন।[৩]
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাআনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জন্ম বাংলাদেশের বর্তমান পিরোজপুর জেলাতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে পদার্থবিদ্যা ও গণিত সহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে অবস্থিত জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়-এ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে আরও পড়াশোনা করেন।[৪]
কর্মজীবন
সম্পাদনাআনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ-এর সরকারে বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জ্বালানি মন্ত্রী হিসেবে তাঁর উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৭০০ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২,৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা এবং যমুনা সেতু-এর মতো বৃহৎ প্রকল্প চালু করা। পরবর্তীতে তিনি এরশাদ সরকারে যোগাযোগ মন্ত্রী (১৯৮৮–১৯৯০) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বাংলাদেশের সংবিধান-এ ধর্মীয় বিধান যোগ করার এরশাদের সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করেন। তিনি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণার বিরুদ্ধে আপত্তি জানান এবং সতর্ক করেন যে ধর্মনিরপেক্ষতাকে এভাবে ক্ষুণ্ণ করলে বাংলাদেশের প্রগতিশীল সমাজের অর্জন ধ্বংস হবে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি শেখ হাসিনা-এর সরকারে যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। এরশাদের জাতীয় পার্টি-কে আওয়ামী লীগ-এর সাথে জোট সরকার গঠনে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন। তিনি জাতীয় পার্টি (জেপি)-এর চেয়ারম্যান। ১৯৯৪ সালে এরশাদ খালেদা জিয়ার বিএনপি-এর সাথে জোট বাঁধার সিদ্ধান্তের বিরোধী জাতীয় পার্টির এই অংশের নেতৃত্ব দেন তিনি। তিনি ১৯৮৬–১৯৯৪ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।[৫][৬]
মঞ্জু সরকারের আইন বিভাগ-এও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি টানা পাঁচ মেয়াদে (১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী) আসন থেকে তিনি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০৬ সালে সংসদের মেয়াদ শেষ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।
তিনি ১৯৭২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। এই সংবাদপত্রটি মওলানা ভাসানী ও ইয়ার মোহাম্মদ খান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন। ২০১০ সালের জুলাইয়ে শেয়ারহোল্ডারদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে মানজু পুনরায় সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব নেন।[৭]
ব্যবসায়ী হিসেবেও তার সাফল্য রয়েছে। তিনি এজিস হোল্ডিংস গ্রুপ-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যাস্ট প্যাকেজিং লি. ও জেনিথ প্যাকেজিং লি.-এর চেয়ারম্যান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি-সহ আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করে।
জানুয়ারি ২০১৮-এ মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাসে তাকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়-এ স্থানান্তর করা হয়।[৮]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাআনোয়ার মঞ্জু তাসমিয়া হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এবং তাদের চারজন কন্যা রয়েছে – সীমা হোসেন, তারিন হোসেন, অনুশা হোসেন ও মনিজা হোসেন।[৯]
২০২০ সালে তার জীবনকাহিনী নিয়ে আয়রন ম্যান শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়।[১০]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "EC BD" (পিডিএফ)। ১৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ আহমদ, মহিউদ্দিন (২০১৬)। বিএনপি সময়-অসময়। প্রথমা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১২৩। আইএসবিএন 9789849176251।
- ↑ "শপথ নিলেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা"। www.prothomalo.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ মাননীয় মন্ত্রী। Ministry of Environment, Forest and Climate Change। ২০১৬-০৬-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০২৫।
- ↑ "Rift in JP widens"। The Daily Star। ১৯ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ Chowdhury, Kamran Reza (৩ জুন ২০১৩)। "Chumki paid huge price in politics"। Dhaka Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Yet another may withdraw candidature"। The Daily Star। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Manju goes to water, Anis to forest"। Daily Sun। ৪ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;nbr
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "প্রামাণ্যচিত্রে রাজনীতিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২০২০-১১-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৪-১৮।