দ্বিতীয় ইবরাহিম খান

ইবরাহিম খান (সময়কাল: ১৬৮৯–১৬৯৭; মৃত্যু–১৭০১) হলেন আওরঙ্গজেব এর রাজত্বে বাংলার শেষ সুবেদার। তার একমাত্র পুত্রের নাম ওয়াজির ইব্রাহিম খান (১৬৫৪ – ১৭১৩)জাহানদার শাহ এর সম্রাজ্যে দিওয়ান ছিলেন। ফর‌রুখসিয়ার এর আদেশে তাকে হত্যা করা হয়। তিনি ছিলেন সম্রাট শাহজাহান এর দরবারের পারস্য দেশিয় বিখ্যাত আমীর আলী মর্দান খান জিগের জ্যেষ্ঠ পুত্র। পিতার মৃত্যুর ইবরাহিম খানকে চার হাজারি মনসেব প্রধান করা হয়।

ইবরাহিম খান
আজিম-উস-শান
রাজত্ব১৬৮৯ - ১৬৯৭
পূর্বসূরিখান জাহান বাহাদুর
উত্তরসূরিআজিম-উস-শান
মৃত্যু১৭০১
পিতাআমীর আলি মর্দান খান জিগ
ধর্মইসলাম

প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা

তিনি আলি মার্দান খান এর বড় ছেলে। আলি মর্দান খান অভিজাত পার্সিয়ান বংশের সন্তান ছিলেন।[] পূর্বে তিনি বাংলার গভর্নর এর আদেশে কাশ্মীর, লাহোর এবং বিহারে সুবেদার এর দায়িত্ব পালন করেছেন।[] যবরদস্ত খান নামে তার একটি পুত্র ছিলো।[]

সময়কাল

সম্পাদনা

তার সময়ে বেশকিছু ইংরেজ এবং ফ্রান্স ব্যবসায়ীদের বাংলায় ব্যবসায়ীক লেনদেন করার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৬৯৫-১৬৯৬ সালের দিকে তিনি চন্দ্রকোনা জমিদারের বিদ্রোহ ঠেকাতে ব্যর্থ হন। এরপর ১৬৯৭ সালে আওরঙ্গজেবের নিজের নাতি আজিম-উস-শানকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন।

ঐতিহাসিক সাক্ষী

সম্পাদনা

সম্রাট শাহজাহানের শেষ বয়সে, যখন তার উত্তরাধিকার নিয়ে পুত্রদের মধ্যে বিদ্রোহ বেধে যায় তখন তিনি যুদ্ধের সময় দারার পক্ষ নিয়েছিলেন। দারার পতন ঘটলে তিনি মুরাদের অধীনে চাকরি নেন এবং এরপর তিনি আওরঙ্গজেবের সভায় চাকরিতে যোগ দেন। তিনি এরপর গভর্নরের আদেশে কাশ্মীর, লাহোর ও বিহারের সুবাহদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর পদমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ হাজারি মনসবে উন্নীত হয়। ১৬৭৬ সালে তিনি তার পদ পাঁচ হাজারি মনসব থেকে পদত্যাগ করেন এবং তা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৬৭৯ সালে তিনি পুনরায় কাশ্মীরের সুবাহদার হিসেবে যোগ দেন। ১৬৮৩ সালে তার পুত্র ফিদাই খানের সাহায্যে তিনি তিব্বত যুদ্ধে জয়লাভ করেন। সম্রাট তার এই কাজে খুশি হয়ে তার জন্য প্রশংসাসংবলিত চিঠি পাঠান এবং তার সাথে উপহারস্বরুপ বিশেষ পদমর্যাদাসূচক এক প্রস্থ পোশাক, সাত হাজার টাকা মূল্যের ইলাকা মুক্তাসহ রত্নখচিত একটি ফুলকাটারা তরবারি, দুই শত মোহর মূল্যের একটি স্বর্ণসজ্জিত আরবীয় ঘোড়া এবং সম্রাটের নিজের হাতিশালা থেকে পনেরো হাজার টাকা মূল্যের একটি হাতি উপহার দেন।[]

বাংলার সুবাহদার হিসেবে

সম্পাদনা

শেষ বয়সে তাকে বাংলার সুবাহদার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তখন তার শখ ছিলো বিভিন্ন ফার্সি বই পড়া। কিন্তু তিনি এর পাশাপাশি কৃষি ও বাণিজ্যে উন্নতি করেছিলো, এর পাশাপাশি তিনি সবসময় ন্যায়বিচার করতো যার কারণে ইংরেজ বণিকরা তাকে খুব পছন্দ করতো।

বাংলার সুবাহদার হিসেবে তার প্রথম কাজ ছিলো সম্রাটের আদেশে ঢাকায় আটককৃত ইংরেজ বণিকদের মুক্ত করা। এ সম্পর্কে ইতিহাসবিদ চার্লস স্টুয়ার্ট মনে করেন যে "সম্রাট নিশ্চই ইংরেজ বাণিজ্য থেকে আসা রাজস্ব আয় হারাতে চাননি, তাদের এ করের বার্ষিক পরিমাণ ছিলো ৮৭ হাজার পাউন্ড। তাছাড়া সমুদ্রপথে ইংরেজরা অনেক শক্তিশালী ছিলো, তারা ইচ্ছে করলে মক্কায় হজ যাত্রায় বাধা দিতে পারতো।"[]

২ জুলাই ১৬৮৯ সালে ইংরেজদের বাংলায় পুনরায় ব্যবসা শুরু করার জন্য ইব্রাহিম খান কুঠির কর্মকর্তাদের একটি পত্র পাঠান। যার ফলে ১৬৯০ ইংরেজ এবং মুঘলদের মধ্যে একটি ব্যবসায়িক শান্তি চুক্তি হয়। এর ফলস্বরুপ সম্রাট সম্রাজ্যের ক্ষতিপূরণবাবদ একটি নতুন আইন জারি করেন। আইন জারি করার পর ব্যবসায়ী জব চার্নক তার কর্মকর্তাদের নিয়ে ব্যবসা করার জন্য ফিরে আসেন।

১৬৯৫ থেকে ১৬৯৬ সালে মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণার জমিদার শোভা সিংহ বিদ্রোহ করে বসে, কিন্তু ইব্রাহিম খান বিদ্রোহ ঠেকাতে ব্যর্থ হলে সম্রাট আওরঙ্গজেব তার নাতি আজিম-উস-শানকে বাংলা, উড়িষ্যা এবং বিহারের সুবাহদার হিসেবে নিয়োগ দেন।[]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. অঞ্জলি চট্টোপাধ্যায় (২০১২)। "ইবরাহিম খান"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
পূর্বসূরী
খান জাহান বাহাদুর
বাংলার সুবেদার
১৬৮৯-১৬৯৭
উত্তরসূরী
আজিম-উস-শান