আজিম-উস-শান

মুঘল যুবরাজ

যুবরাজ আজিম-উস-শান (১৫ ডিসেম্বর ১৬৬৪ - ১৮ মার্চ ১৭১২) ছিলেন মুঘল সম্রাট প্রথম বাহাদুর শাহ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মহারাজকুমারী অমৃতা বাঈ সাহেবার দ্বিতীয় পুত্র। তিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের নাতি। তার শাসনামলে ১৬৯৭ সালে তিনি সুবাহ বাংলা, বিহারউড়িষ্যার সুবাহদার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৭১২ সালে মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। সম্রাট শাহ জাহান ছিলেন তার প্রপিতামহ।

আজিম-উস-শান
আজিম-উস-শান বাহাদুর
জন্মমুহাম্মদ আজিমুদ্দীন
(১৬৬৪-১২-১৫)১৫ ডিসেম্বর ১৬৬৪
আগ্রা দুর্গ
মৃত্যু১৮ মার্চ ১৭১২(1712-03-18) (বয়স ৪৭)
আগ্রার কাছে
সমাধি
দাম্পত্য সঙ্গীবাই জস কৌর
আয়শা বেগম
গিতি আরা বেগম
সাহিবা নিসওয়ান
বংশধরমুহাম্মদ করিম মির্জা
হুমায়ুন বখত মির্জা
রুহ-উল-দৌলা মির্জা
আহসানউল্লাহ মির্জা
ফর‌রুখসিয়ার
পূর্ণ নাম
সুলতান আজহার উদ-দীন মুহাম্মদ আজিম মির্জা, আজিম উস-শান বাহাদুর
রাজবংশতৈমুরী
পিতাপ্রথম বাহাদুর শাহ
মাতাঅমৃতা বাঈ
ধর্মইসলাম
 
রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত আজিম-উস-শান খিজিরের বিভূষণ গ্রহণ করছেন

১৬৯৭ সালে তিনি সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক সুবাহ বাংলা, বিহার এবং ওড়িশার সুবাহদার নিযুক্ত হন।[] এর অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি রহিম খানের বিরুদ্ধে সফল সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। ১৬৯৬ সালে আজিম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সালে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল। মুঘলদের অনুমতি নিয়ে ওলন্দাজরা চুঁচুড়ায় ফোর্ট গুস্তাভাস এবং ফরাসীরা চন্দ্রনগরে (বর্তমান চন্দননগর) ফোর্ট অরলিন্স নির্মাণ করেছিল।[]

পরবর্তীতে আজিম সাম্রাজ্যের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাংলার নবনিযুক্ত দেওয়ান মুর্শিদকুলি খানের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। মুর্শিদকুলি খানের অভিযোগ বিবেচনা করে সম্রাট আওরঙ্গজেব আজিমকে বিহারে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।[] ১৭০৩ সালে তিনি রাজধানী স্থানান্তর করে রাজমহলে নিয়ে যান এবং তারপরে আবার তা পাটালিপুত্রে (বর্তমান পাটনা) স্থানান্তর করেন। তিনি পাটলিপুত্রের নাম পরিবর্তন করে নিজের নামানুসারে আজিমাবাদ নামকরণ করেন।[]

১৭১২ সালে তার পিতা মৃত্যুবরণ করলে তিনি তৎক্ষণাত নিজেকে সম্রাট হিসাবে ঘোষণা করেন। কিন্তু, সিংহাসনের লড়াইয়ে কিছু দিনের মধ্যেই তাকে রবি নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়।[]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

আজিম-উস-শানের প্রথম স্ত্রী ছিলেন কিরাত সিংয়ের কন্যা এবং আম্বরের কাচওয়াহার শাসক রাজা প্রথম জয় সিংহের নাতনি বাই জস কৌর। ১৬৭৮ সালে তিনি আজিম-উদ-দীনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনিই ছিলেন ১৬৭৯ সালের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণকারী যুবরাজ মুহাম্মদ করিম মির্জার মা।[] বাই জস কৌর ১৭২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে মৃত্যু বরণ করেন এবং তাকে কুতুবে সমাধিস্থ করা হয়।[]

তার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম সাহিবা নিসওয়ান । তিনি ছিলেন একজন কাশ্মীরী মহিলা এবং খাজা এনায়েতুল্লাহর (যিনি শায়েস্তা খান নামে পরিচিত) বোন। নবম মুঘল সম্রাট ফর‌রুখসিয়ার তার গর্ভেই জন্ম গ্রহণ করেন। ১৭১৩ সালের ১১ জানুয়ারি ফররুখশিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করায় তিনি রাজকীয় হারেমের এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছিলেন।[] ফররুখশিয়ারের মৃত্যুর প্রায় দশ বছর পর ১৭২৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দিল্লীতে পরলোক গমন করেন।[]

আয়েশা বেগম ছিলন আজিমের তৃতীয় স্ত্রী। তিনি ছিলেন রুহুল্লাহ খান ইয়াজদীর (যিনি মীর বখশী নামে পরিচিত) মেয়ে এবং খলিলুল্লাহ খানের নাতনী। ১৬৯২ সালের ২৬ জুন যুবরাজের সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়।[] তিনি ছিলেন যুবরাজ হুমায়ুন বখত মির্জা এবং যুবরাজ রুহ-উদ-দৌলা মির্জার মা। বলা হয়ে থাকে, আজিম-উশ-শান আয়েশাকে খুবই পছন্দ করতেন। ১৭০৯ সালের ২৪ মে তে তিনি যমজ সন্তানের জন্ম দেন; যার মধ্যে একজন ছেলে এবং অপরজন মেয়ে। ১৭০৯ সালের ১৫ জুলাই তিনি দৌলতাবাদে মারা যান এবং সেখানে তাকে বুরহান উদ্দিনের সমাধির নিকটে সমাহিত করা হয়।[]

তার চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন যুবরাজ মুহাম্মদ আজম শাহের মেয়ে গিতি আরা বেগম । ১৭০৯ সালের ১ নভেম্বর সুবাহদারের সাথে তার বিয়ে হয়।[] তিনি বয়সে ১৭২৪ সালের ১২ জুন দিল্লিতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল চল্লিশ বছরের বেশি।[]

পূর্বপুরুষ

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জলি (২০১২)। "আজিম-উস-শান"ইসলাম, সিরাজুল; জামাল, আহমেদ এ.। বাংলাপিডিয়া (২য় সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh 
  2. Irvine, পৃ. 175।
  3. Irvine, পৃ. 145।
  4. Irvine, পৃ. 144।
  5. Cheema, G. S (২০০২)। The Forgotten Mughals: A History of the Later Emperors of the House of Babar, 1707-1857। Manohar Publishers and Distributors। পৃষ্ঠা 179আইএসবিএন 9788173046018 
  6. Sarkar, Jadunath (১৯৪৭)। Maasir-i-Alamgiri: A History of Emperor Aurangzib-Alamgir (reign 1658-1707 AD) of Saqi Mustad Khan। Royal Asiatic Society of Bengal, Calcutta। পৃষ্ঠা 209। 
  7. Irvine, পৃ. 35।
  8. Irvine, পৃ. 128।
  9. Charles Francis Massy, Chiefs and Families of Note in the Delhi, Jalandhar, Peshawar and Derajat Divisions of the Panjab (1890), p. 396
  10. Vijay Kumar Mathur, Marvels of Kishangarh paintings: from the collection of the National Museum, New Delhi (2000), p. 8

গ্রন্থপঞ্জী

সম্পাদনা