রাজৌরি

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের একটি শহর

রাজৌরি অথবা রাজওরি (/rəˈɔːri/) জম্মু ও কাশ্মীর, ভারতের রাজৌরি জেলার একটি শহর। রাজৌরি শ্রীনগর হতে প্রায় ১৫৫ কিমি[রূপান্তর: অজানা একক] এবং জম্মু শহর হতে প্রায় ১৫০ কিমি দূরে অবস্থিত। বাবা গোলাম শাহ বাদশাহ বিশ্ববিদ্যালয় এই শহরে অবস্থিত। বিখ্যাত শিখ সেনাপতি বানজদা শিং বাহাদুর রাজৌরির অধিবাসী ছিলেন।

রাজৌরি
শহর
,রাজৌরি’র মেদিনা কলোনিতে পুরোনো ঝুলা সেতু।
,রাজৌরি’র মেদিনা কলোনিতে পুরোনো ঝুলা সেতু।
রাজৌরি জম্মু ও কাশ্মীর-এ অবস্থিত
রাজৌরি
রাজৌরি
রাজৌরি ভারত-এ অবস্থিত
রাজৌরি
রাজৌরি
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে রাজৌরি’র অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ৩৩°২৩′ উত্তর ৭৪°১৮′ পূর্ব / ৩৩.৩৮° উত্তর ৭৪.৩° পূর্ব / 33.38; 74.3
দেশ ভারত
রাজ্যজম্মু ও কাশ্মীর
জেলারাজৌরি
প্রতিষ্ঠিত৬২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
সরকার
 • ধরনপৌরসভা
 • শাসকরাজৌরি পৌরসভা
উচ্চতা৯১৫ মিটার (৩,০০২ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৪১,৫৫২ (খেওরা এবং জাওয়াহার নগরসহ) ৬,৪২,৪১৫ (রাজৌরি জেলায়)[১]
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০)
ওয়েবসাইটhttp://rajouri.nic.in/
নতুন রাজৌরি সেতু

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রাচীন ইতিহাস সম্পাদনা

রাজৌরির এলাকার মধ্যে প্রধানত রাজৌরি, থানা মান্ডি, বাগলা আজিম গড়, বেহরোট, চিমগাস, দারহাল, নাগরোতা এবং ফালিয়ানা, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয় চলচ্চিত্র কুইন এ রাজৌরি জেলার নাম উল্লেখ করা হয়, যেখানে রাণী তার বন্ধুদের বলেন তিনি রাজৌরি থেকে এসেছিলেন।

আধুনিক ইতিহাস সম্পাদনা

১৮১৩ সালে মহারাজা রণ্জিত সিংয়ের পক্ষে শিখ সম্রাজ্য গড়ে তোলার জন্য গুলাব সিং রাজা আগর উল্লাহ খানকে পরাজিত করে রাজৌরি দখল করে।[২] এরপরে রাজৌরি শিখ সম্রাজ্যের অংশ হয়। কিন্তু এর কিছু অংশ আগর উল্লাহ খান এর সৎভ্রাতা রহিম উল্লাহ খান এবং বাকি অংশ গুলাব সিংকে দেওয়া হয়।[৩]

প্রথম অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধ এবং ১৮৪৬ সালের অমৃতসার চুক্তি অনুযায়ী, রাভী নদী এবং ইন্দু নদী এর মধ্যবর্তী রাজ্যগুলো গুলাব সিংয়ের কাছে স্থানান্তর করা হয়, এবং জম্মু ও কাশ্মীরের স্বাধীন মহারাজা হিসেবে পরিচিত হয়। ফলে, রাজৌরি জম্মু ও কাশ্মীর এর একটি অংশ হয়।[৪] গুলাব সিং রাজৌরির নাম পাল্টে রামপুর রাখেন এবং মিয়ান হাতুকে রাজৌরির গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন, যিনি রাজৌরিতে ১৮৫৬ পর্যন্ত ছিলেন।[৫] মিয়ান হাতু থানা নালাহ এর মধ্যবর্তী স্থানে রাজৌরির কাছে অত্যাশ্চর্য মন্দির তৈরি করেন। তিনি ধান্নিধার গ্রামে রাজৌরি দুর্গ তেরি করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মিয়ান হাতুর পরে, ‌ রাজৌরি তহশিলে পরিণত হয় এবং ভিম্বার জেলার সাথে যুক্ত হয়। ১৯০৪ সালে তহশিলটি ভিম্বার থেকে আলাদা হয় এবং রেসি জেলার সাথে যুক্ত হয়।[৪]

বিভাজন সম্পাদনা

১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে ভারত ভাগের পরে এবং ভারতের সাথে জম্মু ও কাশ্মীরের সংযোজনের পর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি হানাদাররা এবং পশ্চিমাঞ্চল হতে আগত বিদ্রোহী ও পলাতকরা ৭ নভেম্বর, ১৯৪৭ সালে রাজৌরি দখল করে। রাজৌরিতে বসবাসরত প্রায় ৩০,০০০ হিন্দু ও শিখ গুম খুনের শিকার হয়।[৬][৭][৮] ১২ এপ্রিল, ১৯৪৮ তারিখে ১৯তম ভারতীয় পদাতিক বাহিনী দ্বারা রাজৌরি পুনরায় ভারতের দখলে আসে।

ভারতের অভ্যন্তর সম্পাদনা

রাজৌরি দখলের যুদ্ধের পর রাজৌরি এবং রেসি তহশিল বিভক্ত হয়। রাজৌরি তহশিল ভারত শাসিত পুন্চ জেলার সাথে একীভূত হয় এবং পুন্চ-রাজৌরি জেলা গঠন করে।[৪] রেসি তহশিল উভামপুর জেলার সাথে একীভূত হয়।

১ জানুয়ারি ১৯৬৮ তারিখে দুইটি তহশিল পুনরায় একীভূত হয় এবং রাজৌরি জেলা গঠন করে।[৪]

১৯৬৫ সালের দ্বিতীয় কাশ্মির যুদ্ধের সময় রাজৌরি কঠিনতর যুদ্ধের সাক্ষী হয়। অপারেশন জিব্রাল্টার চলাকালে স্থানীয় মুজাহিদীনদের সাহায্যে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতীয় সেনাদের থেকে রাজৌরি দখল করে নেয়। কিন্তু ব্যাপকতর অভিযান ব্যর্থ হয় এবং পাকিস্তান তাদের সৈন্যবাহিনী সরিয়ে নেয়। ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ তারিখের রাতে রাজৌরি দখলের উদ্দেশ্যে পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্বদানকারী পাকিস্তানি কমান্ডো মালিক মুনাওয়ার খান আওয়ানকে পরে পাকিস্তানি সরকার "রাজৌরির রাজা" উপাধি দান করে।[৯]

ভূগোল সম্পাদনা

রাজৌরির অবস্থান ৩৩°২৩′ উত্তর ৭৪°১৮′ পূর্ব / ৩৩.৩৮° উত্তর ৭৪.৩° পূর্ব / 33.38; 74.3[১০] এখানকার গড় উচ্চতা ৯১৫ মিটার (৩০০১ ফুট)।

প্রকৃতি সম্পাদনা

রাজৌরির আবহাওয়া অন্যান্য সমতল অঞ্চলের চেয়ে শীতল। গ্রীষ্মকাল কম সময়ব্যপী বিদ্যমান এবং আরামদায়ক। গ্রীষ্মকালে তাপএাত্রা কখনো ৪১ ডিগ্রী অতিক্রম করেনা। শীতকাল শীতল এবং এই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। মাঝেমধ্যে তিষারপাত হয় এবং ফলে আবহাওয়া শীতল হয়। বর্ষাকালে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭৬৯ মিলিমিটার (২৬.৩ ইঞ্চি)। গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সে. এবং শীতকালে তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সে.।[১১]

জনপরিসংখ্যান সম্পাদনা

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী[১২] রাজৌরির জনসংখ্যা ৩৭,৫৫২। মোট জনসংখ্যার ৫৭% পুরুষ এবং ৪৩% নারী। রাজৌরির শিক্ষার হার ৭৭%। পুরুষদের মধ্যে শিক্ষার হার ৮৩% এবং নারীদের মধ্যে শিক্ষার হার ৬৮%। মোট জনসংখ্যার ১২% ছয় বছরের নিচে। এখানকার জনগণ সাধারণত গুজরাটি, পাহাড়ি

মোট জনসংখ্যার ৫৫% মুসলিম, ৪২% হিন্দু এবং ২.৪% শিখ[১৩]

জনসংখ্যা সম্পাদনা

প্রতীক পুরুষ নারী মোট
গ্রাম ৩,১০,৭৪৮ ২,৭৯,৩৫৩ ৫,৯০,১০১
শহর ৩৪,৬০৩ ১৭,৭১১ ৫২৩১৪
মোট ৩,৪৫,৩৫১ ২,৯৭,০৬৪ ৬,৪২,৪১৫

পরিবার সম্পাদনা

গ্রাম শহর মোট
১২২,৬৪৫ ৭,৭৫৬ ১৩০,৪০১

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. http://www.census2011.co.in/census/district/624-rajouri.html
  2. Panikkar, Gulab Singh 1930, পৃ. 31।
  3. Panikkar, Gulab Singh 1930, পৃ. 40।
  4. Sudhir S. Bloeria, Militancy in Rajouri and Poonch, South Asia Terrorism Portal, 2001.
  5. Bloeria, Sudhir S. (২০০০), Pakistan's Insurgency Vs India's Security: Tackling Militancy in Kashmir, Manas Publications, পৃষ্ঠা 37, আইএসবিএন 978-81-7049-116-3 
  6. Prasad, Sri Nandan; Pal, Dharm (১৯৮৭-০১-০১)। Operations in Jammu & Kashmir, 1947-48 (ইংরেজি ভাষায়)। History Division, Ministry of Defence, Government of India। পৃষ্ঠা 49–50। 
  7. V. K. Singh, Leadership in the Indian Army 2005, পৃ. 160।
  8. Ramachandran, Empire's First Soldiers 2008, পৃ. 171।
  9. Niaz, Anjum (২১ এপ্রিল ২০১৩)। "The 20-watt fountain of energy"Dawn 
  10. Falling Rain Genomics, Inc - Rajouri[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. =IMD ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ মার্চ ২০১২ তারিখে
  12. "Census of India 2001: Data from the 2001 Census, including cities, villages and towns (Provisional)"। Census Commission of India। ২০০৪-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০১ 
  13. "Census of India — Administrative divisions"। Censusindia.gov.in। ২০১৩-১১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-১৯ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা