ফ্লাডলাইট ক্রিকেট বা দিন/রাত ক্রিকেট বা দিবা-রাত্রির ক্রিকেট শব্দগুচ্ছটি ক্রিকেট খেলায় ব্যবহৃত পরিভাষাবিশেষ। সাধারণতঃ দর্শকদের মনোরঞ্জনের লক্ষ্যে সন্ধ্যার পর সম্পূর্ণ খেলা কিংবা খেলার অংশবিশেষ ফ্লাডলাইটের প্রচুর নিক্ষিপ্ত কৃত্রিম আলোর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো নিয়মিত ধাঁচের ক্রিকেট খেলা ফ্লাডলাইটের আলোর সাহায্যে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে ব্যাপকসংখ্যক দর্শক প্রথমবারের মতো খেলোয়াড়দেরকে রঙ্গীন পোশাক ও সাদা বল দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু এ প্রতিযোগিতাটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি'র অনুমোদন ছিল না।

টেন্ট ব্রিজে দিবা-রাত্রির ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ২০০৯।

পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে আইসিসি এবং বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ সমঝোতায় পৌঁছে। এরই প্রেক্ষাপটে পুনরায় অস্ট্রেলিয়ায় দিন/রাতের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র ক্রিকেট খেলায় সম্পৃক্ত দেশসমূহে কৃত্রিম আলোর সাহায্যে খেলা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ডে আবহাওয়াজনিত কারণে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্বিত করে।

টুয়েন্টি২০ ক্রিকেট খেলায় এ পরিভাষাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১২ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতার ২৭টি খেলাই দিন-রাতের খেলা। ২০১০ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় প্রথমবারের মতো ফ্লাডলাইটের প্রয়োগ ঘটে। নভেম্বর, ২০১৫ সালে টেস্ট ক্রিকেট খেলায়ও ফ্লাডলাইটের আলোয় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইতিহাস সম্পাদনা

ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, ফ্লাডলাইটের সাহায্যে ১১ আগস্ট, ১৯৫২ তারিখে প্রথম খেলাটি সম্পন্ন হয়েছিল। মিডলসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবআর্সেনাল ফুটবল ক্লাবের মধ্যকার এ খেলাটি বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটার জ্যাক ইয়ংয়ের আর্থিক সুবিধা গ্রহণের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে দু’দলের মধ্যে এটিই প্রথম তহবিল বৃদ্ধির খেলা ছিল না। ১৯৫১ সালের গ্রীষ্মে আর্সেনালের হাইবারি মাঠে ফ্লাডলাইট প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। অক্টোবর, ১৯৫১ সালে ফুটবলের জন্য প্রথম ব্যবহার করা হয়। ক্রিকেট খেলাটি ১৯:৩০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ইনিংস শেষে আলো জ্বালানো হয়, তখন আর্সেনাল ব্যাটিংয়ে নামে।

১৯৭৭ সালে ক্যারি প্যাকার বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারদেরকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে খেলানোর জন্যে একত্রিত করেন।[১] কিন্তু দর্শক উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। তাই প্যাকার সুপারটেস্টের আয়োজন করেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যেকার খেলায় মাত্র দুই হাজার দর্শক দেখতে এসেছিলেন। নভেম্বর, ১৯৭৭ সালে মেলবোর্নের ওয়াভার্লি পার্কের অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল খেলার স্টেডিয়ামে এ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর এক বছর পর সিডনী ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত উভয় দলের মধ্যেকার দিবা-রাত্রির একদিনের ক্রিকেট খেলায় ৪৪,৩৭৭ জন দর্শক এসেছিলেন।

বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের প্রতিপক্ষ ছিল বিশাল ও ব্যাপক। এর খেলাগুলো টেস্ট ক্রিকেট এবং প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের কোনটিই ছিল না। ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড এবং ক্যারি প্যাকারের মধ্যে চুক্তি হয়, যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট পর্যায়টির সমাপ্তি ঘটে।[১] কিন্তু ফ্লাডলাইটের কৃত্রিম আলোর গুরুত্ব এবং বিপণনের উপযোগিতা রয়ে যায়। নভেম্বর, ১৯৭৯ সালে প্রথম ফ্লাডলাইটের আলোর সাহায্যে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে টেস্ট খেলুড়ে অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মাধ্যমে ক্রিকেট ইতিহাসের স্বর্ণালী অধ্যায় সূচীত হয়।[২]

বিশ্বায়ণ সম্পাদনা

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে প্রবেশের পর খুব দ্রুত দিবারাত্রির ক্রিকেট হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইংল্যান্ডে তখনো রাতের ক্রিকেটের বিরুদ্ধাচরণ অব্যাহত ছিল। প্যাকারের বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের প্রভাবমুক্ত রাখতে এবং প্রতিকূল আবহাওয়াও এর জন্যে দায়ী ছিল; যা প্রয়োগ করতে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

দিন/রাত টেস্টের তালিকা সম্পাদনা

পুরুষ সম্পাদনা

ক্রমিক তারিখ স্বাগতিক দল অতিথি দল মাঠ শুরুর সময় (স্থানীয়) ফলাফল
১৭ নভেম্বর - ১ ডিসেম্বর, ২০১৫   অস্ট্রেলিয়া   নিউজিল্যান্ড অ্যাডিলেড ওভাল, অ্যাডিলেড ১৪:০০   অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে বিজয়ী
১৩-১৭ অক্টোবর, ২০১৬   পাকিস্তান   ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, দুবাই ১৫:৩০   পাকিস্তান ৫৬ রানে বিজয়ী
২৪-২৮ নভেম্বর, ২০১৬   অস্ট্রেলিয়া   দক্ষিণ আফ্রিকা অ্যাডিলেড ওভাল, অ্যাডিলেড ১৪:০০   অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে বিজয়ী
১৫-১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬   অস্ট্রেলিয়া   পাকিস্তান গাব্বা, ব্রিসবেন ১৩:৩০   অস্ট্রেলিয়া ৩৯ রানে বিজয়ী
১৭-২১ আগস্ট, ২০১৭   ইংল্যান্ড   ওয়েস্ট ইন্ডিজ এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, বার্মিংহাম ১৪:০০[ট ১]   ইংল্যান্ড ইনিংস ও ২০৯ রানে বিজয়ী
৬-১০ অক্টোবর, ২০১৭   পাকিস্তান   শ্রীলঙ্কা দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, দুবাই ১৪:০০   শ্রীলঙ্কা ৬৮ রানে বিজয়ী
২-৬ ডিসেম্বর, ২০১৭   অস্ট্রেলিয়া   ইংল্যান্ড অ্যাডিলেড ওভাল, অ্যাডিলেড ১৪:০০[ট ১]   অস্ট্রেলিয়া ১২০ রানে বিজয়ী
২৬-২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭   দক্ষিণ আফ্রিকা   জিম্বাবুয়ে সেন্ট জর্জেস পার্ক, গকেবেরহা ১৩:৩০   দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ও ১২০ রানে বিজয়ী
২২-২৬ মার্চ, ২০১৮   নিউজিল্যান্ড   ইংল্যান্ড ইডেন পার্ক, অকল্যান্ড ১৪:০০[ট ১]   নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ৪৯ রানে বিজয়ী
১০ ২৩-২৭ জুন, ২০১৮   ওয়েস্ট ইন্ডিজ   শ্রীলঙ্কা কেনসিংটন ওভাল, ব্রিজটাউন ১৫:০০[ট ১]   শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেটে বিজয়ী
১১ ২৪-২৮ জানুয়ারি, ২০১৯   অস্ট্রেলিয়া   শ্রীলঙ্কা দ্য গাব্বা, ব্রিসবেন ১৩:০০   অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ৪০ রানে বিজয়ী
১২ ২২–২৬ নভেম্বর ২০১৯   ভারত   বাংলাদেশ ইডেন গার্ডেন্স, কলকাতা ১৩:০০   ভারত ইনিংস ও ৪৬ রানে বিজয়ী
১৩ ২৯ নভেম্বর - ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯   অস্ট্রেলিয়া   পাকিস্তান অ্যাডিলেড ওভাল, অ্যাডিলেড ১৪:০০   অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ৪৮ রানে বিজয়ী
১৪ ১২-১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯   অস্ট্রেলিয়া   নিউজিল্যান্ড পার্থ স্টেডিয়াম, পার্থ ১৩:০০   অস্ট্রেলিয়া ২৯৬ রানে বিজয়ী

মহিলা সম্পাদনা

ক্রমিক তারিখ স্বাগতিক দল অতিথি দল মাঠ শুরুর সময় (স্থানীয়) ফলাফল
৯-১২ নভেম্বর, ২০১৭   অস্ট্রেলিয়া   ইংল্যান্ড নর্থ সিডনি ওভাল, সিডনি ১৪:৩০ খেলা ড্র

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. an earlier start time was used when the previous day's cricket was disrupted by rain.

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Williamson, Martin। "World Series Cricket"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০২-২০ 
  2. "1st Match: Australia v West Indies at Sydney, Nov 27, 1979". ESPNcricinfo. Retrieved 2011-02-20.