তারাপীঠ
তারাপীঠ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাট শহরের কাছে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র মন্দির নগরী। এই শহর তান্ত্রিক দেবী তারার মন্দির ও মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। হিন্দুদের বিশ্বাসে, এই মন্দির ও শ্মশান একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। এই স্থানটির নামও এখানকার ঐতিহ্যবাহী তারা আরাধনার সঙ্গে যুক্ত।[২][৩][৪][৫]
তারাপীঠ তারাপীঠ | |
---|---|
মন্দির নগরী | |
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°০৭′ উত্তর ৮৭°৪৮′ পূর্ব / ২৪.১১° উত্তর ৮৭.৮০° পূর্ব | |
Country | ভারত |
State | পশ্চিমবঙ্গ |
District | বীরভূম |
মন্দির নির্মাণ | ১৫ এপ্রিল, ১৮১৮ (মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায় নির্মিত) |
প্রতিষ্ঠাতা | রাজা রামজীবন চৌধুরী রামচন্দ্র চৌধুরী মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায় |
সরকার | |
• শাসক | তারাপীঠ মন্দির কমিটি[১] |
• সভাপতি | তারাময় মুখোপাধ্যায় |
• প্রবীণ সেবাইত | প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায় |
Languages | |
• Official | বাংলা |
সময় অঞ্চল | IST (ইউটিসি+05:30) |
Nearest city | রামপুরহাট |
ওয়েবসাইট | www |
তারাপীঠ এখানকার "পাগলা সন্ন্যাসী" বামাক্ষ্যাপার জন্যও প্রসিদ্ধ। বামাক্ষেপা এই মন্দিরে পূজা করতেন এবং মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রে কৈলাসপতি বাবা নামে এক তান্ত্রিকের কাছে তন্ত্রসাধনা করতেন। বামাক্ষ্যাপা তারা দেবীর পূজাতেই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মন্দিরের অদূরেই আটলা গ্রামে তাঁঁর আশ্রম অবস্থিত।[৬]
ভূগোল
সম্পাদনাতারাপীঠ বীরভূম জেলার তারাপীঠ থানার অধীনস্থ সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি ছোটো গ্রাম (২৪°০৭′ উত্তর ৮৭°৪৮′ পূর্ব / ২৪.১১° উত্তর ৮৭.৮০° পূর্ব)। এটি দ্বারকা নদীর তীরে অবস্থিত।[৭] প্লাবন সমভূমির সবুজ ধানক্ষেতের মধ্যে এই তীর্থস্থান অবস্থিত। কিছুকাল আগেও বাংলার সাধারণ মাটির বাড়ি আর মেছোপুকুরে ভরা গ্রামের থেকে তারাপীঠের খুব একটা পার্থক্য ছিল না।[৮] বর্তমানে অবশ্য তীর্থমাহাত্ম্যের কারণে প্রচুর জনসমাগম হওয়ায় গ্রামটি ছোটোখাটো শহরের আকার নিয়েছে। জেলার রামপুরহাট মহকুমার সদর রামপুরহাট শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে তারাপীঠ অবস্থিত। রামপুরহাট ও চাকপাড়ার 'তারাপীঠ রোড' রেল স্টেশনদুটি তারাপীঠের নিকটতম রেল স্টেশন।[২]
কিংবদন্তি ও গুরুত্ব
সম্পাদনাতারাপীঠ মন্দিরের উৎস ও তীর্থমাহাত্ম্য সম্পর্কে একাধিক কিংবদন্তি লোকমুখে প্রচারিত হয়ে থাকে। এগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কিংবদন্তি হল "শক্তিপীঠ" ধারণাটির সঙ্গে যুক্ত পৌরাণিক কাহিনিটি। শিবের স্ত্রী সতী তার পিতা দক্ষের "শিবহীন" যজ্ঞ সম্পাদনার ঘটনায় অপমানিত বোধ করে। স্বামীনিন্দা সহ্য করতে না পেরে তিনি যজ্ঞস্থলেই আত্মাহুতি দেন। এই ঘটনায় শিব ক্রুদ্ধ হয়ে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয়নৃত্য শুরু করেন। তখন বিষ্ণু শিবের ক্রোধ শান্ত করতে সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহ খণ্ডবিখণ্ড করে দেন। সতীর দেহ একান্নটি খণ্ডে ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর নানা স্থানে পতিত হয়। এইসকল স্থান "শক্তিপীঠ" নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গেও এই রকম একাধিক শক্তিপীঠ অবস্থিত। এগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পীঠ হল কালীঘাট ও তারাপীঠ।[৩][৪] সতীর তৃতীয় নয়ন বা নয়নতারা তারাপুর বা তারাপীঠ গ্রামে পড়ে এবং প্রস্তরীভূত হয়ে যায়।[৯] ঋষি বশিষ্ঠ প্রথম এই রূপটি দেখতে পান এবং সতীকে তারা রূপে পূজা করেন। অপর একটি কিংবদন্তি অনুসারে: সমুদ্র মন্থনের সময় উত্থিত হলাহল বিষ পান করার পর বিষের জ্বালায় শিবের কণ্ঠ জ্বলতে শুরু করে। এই সময় তারাদেবী শিবকে আপন স্তন্য পান করিয়ে তার জ্বালা নিবারণ করেন। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, বশিষ্ঠ তারাপীঠ নামে প্রসিদ্ধ এই তীর্থে দেবী সতীর পূজা শুরু করেন।[২][১০] পীঠস্থানগুলির মধ্যে তারাপীঠ একটি "সিদ্ধপীঠ", অর্থাৎ এখানে সাধনা করলে সাধক জ্ঞান, আনন্দ ও সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতা প্রাপ্ত হন।[১১]
লোকমুখে প্রচারিত অপর একটি কিংবদন্তি অনুসারে, বশিষ্ঠ এখানে তারাদেবীর তপস্যা করেছিলেন। কিন্তু তিনি অসফল হন। তখন তিনি তিব্বতে গিয়ে বিষ্ণুর অবতার বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বুদ্ধ তাকে বামমার্গে মদ্যমাংসাদি পঞ্চমকার সহ তারাদেবীর পূজা করতে বলেন। এই সময় বুদ্ধ ধ্যানযোগে জানতে পারেন মন্দিরে তারামূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজার করার আদর্শ স্থান হল তারাপীঠ। বুদ্ধের উপদেশক্রমে বশিষ্ঠ তারাপীঠে এসে ৩ লক্ষ বার তারা মন্ত্র জপ করেন। তারাদেবী প্রীত হয়ে বশিষ্ঠের সম্মুখে উপস্থিত হন। বশিষ্ঠ দেবীকে অনুরোধ করেন বুদ্ধ যে শিশু শিবকে স্তন্যপানরতা তারাদেবীকে ধ্যানে দেখেছিলেন, দেবী যেন সেই রূপেই তাকে দর্শন দেন। দেবী সেই রূপেই বশিষ্ঠকে দর্শন দেন এবং এই রূপটি প্রস্তরীভূত হয়। সেই থেকে তারাপীঠ মন্দিরে শিশু শিবকে স্তন্যপানরতা মূর্তিতে দেবী তারা পূজিত হয়ে আসছেন।[১০][১২]
শাক্তধর্মের তারাপীঠ ও বৈষ্ণবধর্মের নবদ্বীপ বাঙালি হিন্দুদের নিকট সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ রূপে পরিগণিত হয়।[১১]
কিংবদন্তির পেছনে ঐতিহাসিকতা
সম্পাদনারামায়ণে উল্লিখিত বশিষ্ঠ এবং গৌতম বুদ্ধের সাক্ষাৎকারের ঐতিহাসিকতার চেয়ে কল্পনাই বেশি মাত্রায় স্থান পেয়েছে। তবে সপ্তম শতাব্দীতে গৌড়ের শাসক শশাঙ্কের বিরুদ্ধে হর্ষবর্ধন ও কামরূপরাজ ভাস্করবর্মণ সামরিক অভিযানের সময়ে তিব্বত সম্রাট স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো অসম, নেপাল ও বিহারের কিছু অংশ পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করে নেন। এরফলে তন্ত্রমন্ত্রে পরিপূর্ণ তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে গৌড় বাংলার সাংস্কৃতিক সংঘাত ঘটে ও বাংলায় তান্ত্রিক আচার অনুষ্ঠান বৃদ্ধি পায়।[১৩]:১৭৬,১৭৭ এই সময় রসায়ানাচার্য নাগার্জুন তিব্বত থেকে বৌদ্ধ দেবী তারার সাধনপদ্ধতি ভারতে নিয়ে আসেন বলে মনে করা হয়। বিনয় ঘোষের মতে পালযুগে বৌদ্ধধর্মের বিকাশের সাথে বাংলায় বৌদ্ধ দেবী তারার সাধনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীকালে হিন্দু ধর্মের উত্থানে বৌদ্ধদেবী হিন্দুদেবীতে পরিণত হন[১৪] এবং রসায়ানাচার্য নাগার্জুন লোককথায় বশিষ্ঠ মুণিতে পরিণত হন।[১৫]
তারাপীঠ মন্দির
সম্পাদনাউত্তরমুখী আটচালা মন্দিরটি লাল ইটে নির্মিত। এর ভিতরের দেওয়াল বেশ মোটা। উপরিভাগে শিখর পর্যন্ত একাধিক ধনুকাকৃতি খিলান উঠেছে। চারচালার ওপরে চার কোণে চারটি ছোট ছোট চূড়া অবস্থিত। মন্দিরের চূড়ায় একটি তামার পত্তাকাসহ ত্রিশীল তিনটি পদ্ম ভেদ করে উঠেছে। মন্দিরের প্রবেশপথের মধ্য খিলানেরদুর্গার প্রতিকৃতি রয়েছে। উত্তরদিকে বামপাশের খিলানের ওপর কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঘটনা, ভীষ্মের শরশয্যা, অশ্বত্থমা হত প্রভৃতি মহাভারতের কাহিনী উৎকীর্ণ রয়েছে। মন্দিরের উত্তর ভিতের পূর্বদিকে সীতাহরণ, অকালবোধন, রাম ও রাবণের যুদ্ধের দৃশ্য এবং পশ্চিমদিকে কৃষ্ণলীলার চিত্র খোদিত।[১৩]:১২৮,১২৯ ১২ ফুট X ৬ ফুট মাপের মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবীমূর্তি সংস্থাপিত।
শিশু শিবকে স্তন্যপানরতা তারার মূল প্রস্তরমূর্তিটি একটি তিন ফুট উঁচু ধাতব মূর্তির মধ্যে রাখা থাকে। দর্শনার্থীরা সাধারণত ধাতব মূর্তিটিই দর্শন করে থাকেন। এই মূর্তিটি তারা দেবীর ভীষণা চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালাধারিণী এবং লোলজিহ্বা মূর্তি। এলোকেশী দেবীর মস্তকে রৌপ্যমুকুট থাকে। বহির্মূর্তিটি সাধারণট শাড়ি-জড়ানো অবস্থায় গাঁদা ফুলের মালায় ঢাকা অবস্থায় থাকে। মূর্তির মাথার উপরে থাকে একটি রূপোর ছাতা। মূর্তিটির কপালে সিঁদুর লেপা থাকে। পুরোহিতেরা সেই সিঁদুরের টিকা পরিয়ে দেন দর্শনার্থীদের। প্রতিকৃতি বিগ্রহের নিচে গোল্কার বেদীতে দুটি রূপোর পাদপদ্ম থাকে। ভক্তরা নারকেল, কলা বা রেশমি শাড়ি দিয়ে দেবীর পূজা দেন।[১৬][১৭] তারাদেবীর মূল মূর্তিটিকে "তারার কোমল রূপের একটি নাটকীয় হিন্দু প্রতিমা" বলে অভিহিত করা হয়েছে।[১০]
চন্দ্রচূড় মন্দির
সম্পাদনাতারাপীঠে মহাদেব চন্দ্রচূড় হিসেবে পূজিত হন। এই মন্দির নির্মাণ করেন জয়দত্ত বণিক নামক ত্রয়োদশ শতাব্দীর এক বণিক পরিবারের সন্তান। মন্দিরটি মাঝারি আকারের গম্বুজাকৃতি ও তারা মন্দিরের পূর্বদিকে অবস্থিত। গর্ভগৃহে মাঝারি আকার ও উচ্চতার কালোপাথরের বিগ্রহ অবস্থিত। মন্দির চত্বর থেকে প্রায় তিন ফুট ওপরে পশ্চিমমুখী মন্দিরটি অবস্থিত।
পূজাপদ্ধতি
সম্পাদনাতারাপীঠ মন্দিরটি গ্রাম বাংলার যে কোনো মধ্যম আকারের মন্দিরেরই অনুরূপ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এত বৃহৎ একটি তীর্থক্ষেত্রে হিসেবে এই মন্দিরের বিকাশের কারণ হল "মন্দির-সংক্রান্ত কিংবদন্তি, পশুবলি সহ এই মন্দিরের পূজাপদ্ধতি, এখানে গেয় ভক্তিগীতিসমূহ, স্থানীয় জলাশয়গুলির অতিলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে লোকবিশ্বাস, এবং শ্মশানক্ষেত্রের অধিবাসী ও সেখানকার সাধনপদ্ধতি।"[১৮] ভক্তেরা মন্দিরে প্রবেশের পূর্বে মন্দির-সংলগ্ন জীবিতকুন্ড নামক পবিত্র জলাশয়ে স্নান করেন। তারপর মন্দিরে প্রবেশ করে পূজা দেন। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই জলাশয়ের জলে আরোগ্যক্ষমতা বিদ্যমান।[১৯][১৯] মন্দিরে রোজই পশুবলি হয়ে থাকে। ভক্তেরা এই মন্দিরে ছাগ বলি দিয়ে থাকেন। বলির পূর্বে ছাগটিকে পবিত্র জলাশয়ে স্নান করানো হয়। বলিদাতা নিজেও স্নান করে পবিত্র হন। ছাগটিকে হাঁড়িকাঠে খড়্গের এক কোপে বলি দেওয়া হয়। বলির পর ছাগটির রক্ত সংগ্রহ করে দেবীকে নিবেদন করা হয়। ভক্তেরা এই রক্তের তিলকও কপালে আঁকেন।[১৭] প্রতি বছর আশ্বিন মাসের কোজাগরি শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে মন্দির থেকে শিলামূর্তি এনে পশ্চিমমুখো করে বিরাম মঞ্চে রাখা হয় এবং সেইদিন প্রকাশ্যে তারামূর্তিকে স্নান করানো হয়ে থাকে।[১৩]:১২৭
শ্মশানঘাট
সম্পাদনাশহরের এক কোণে নদীর ধারে ঘন অরণ্য বেষ্টিত তারাপীঠ শ্মশানটি অবস্থিত। শ্মশানটি লোকালয় থেকে দূরে। তারাপীঠের শ্মশানটি শক্তিপীঠের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, তারা দেবীকে শ্মশানের অন্ধকারে বলিপ্রদত্ত ছাগের রক্ত পান করতে দেখা যায়।[২০]
তন্ত্রসাধকরা বিশ্বাস করেন নরকঙ্কাল ও শ্মশানক্ষেত্র তারা দেবীর বিশেষ প্রিয়। দেবীর যে সকল চিত্র আঁকা হয়ে থাকে, তাতে তাকে শ্মশানক্ষেত্রনিবাসিনী রূপেই দেখানো হয়। এই কারণে তন্ত্রসাধকেরা শ্মশানক্ষেত্রকেই তাদের সাধনস্থল হিসেবে বেছে নেন। অনেক সাধুই পাকাপাকিভাবে এখানে বাস করেন।[২১][২২] শ্মশানে অনেক জটাধারী ভষ্মমাখা সাধু দেখা যায়। তারা বটবৃক্ষের তলায় নিজেদের কুটির সৃজন করে বাস করেন। এই সব কুটিরের মাটির দেওয়ালে তারা সিঁদুরমাখানো নরকপাল গ্রথিত করে রাখেন। কুটিরের দেওয়ালে শোভা পায় গাঁদার মালায় শোভিত হিন্দু দেবী ও তারাপীঠের সন্তদের ছবি। কুটিরের প্রবেশ পথের কাছে অনেক সময়েই মাল্যভূষিত ত্রিশূল ও নরকপাল রেখে দেওয়া হয়। তন্ত্রসাধনায় মানুষ ছাড়াও সাপ, বেজি,শিয়াল , হনুমান ও চন্ডালের করোটি প্রয়োজন হয়। এগুলির পাশপাশি সাপের খোলসও কুটিরে রাখা থাকে। ভাল নরকপাল পূজা ও মদ্যপানের জন্য ব্যবহৃত হয়। কুমারী মেয়ে ও আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিদের মাথার খুলির অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করা হয়।[২২]
বামাক্ষ্যাপা
সম্পাদনাতারাপীঠের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ সাধক হলেন বামাক্ষ্যাপা (১৮৪৩-১৯১১)। মন্দিরের নিকটেই তার আশ্রম ছিল।[২১] বামাক্ষ্যাপা ছিলেন তারাদেবীর একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি মন্দিরে পূজা করতেন এবং শ্মশানে সাধনা করতেন। তিনি তারাপীঠ নিকটবর্তী মল্লরাজাদের মন্দিরময় গ্রাম মালুটি (অধুনা ঝাড়খণ্ড) তে সাধনা করেন।[২১] তিনি ছিলেন উনিশ শতকের অপর প্রসিদ্ধ কালীভক্ত রামকৃষ্ণ পরমহংসের সমসাময়িক। অল্প বয়সেই তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং কৈলাসপতি বাবার সান্নিধ্যে তন্ত্রসাধনা শুরু করেন। পরে তিনি সমগ্র তারাপীঠের প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। ভক্তেরা তার কাছে আশীর্বাদ বা আরোগ্য প্রার্থনা করতে আসত। কেউ কেউ আবার শুধুই তাকে দর্শন করতে আসত। তিনি মন্দিরের নিয়ম মানতেন না। একবার নৈবেদ্য নিবেদনের পূর্বে খেয়ে ফেলে তিনি পুরোহিতদের রোষ দৃষ্টিতে পড়েছিলেন। শোনা যায়, এরপর তারাদেবী নাটোরের মহারানিকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে দেবীর পুত্র বামাক্ষ্যাপাকে প্রথমে ভোজন করাতে আদেশ দেন। এরপর থেকে মন্দিরে দেবীকে নৈবেদ্য নিবেদনের পূর্বে বামাক্ষ্যাপাকে ভোজন করানো হত এবং কেউ তাকে বাধা দিতেন না।[৬] কথিত আছে, তারাদেবী শ্মশানক্ষেত্রে ভীষণা বেশে বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন দিয়ে তাকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন।[২১]
ট্রেন সম্বন্ধীয় তথ্য
সম্পাদনাতারাপীঠ রোড স্টেশন এখানের নিকটবর্তী স্টেশন। শিয়ালদহথেকে নিয়মিত 'মা তারা এক্সপ্রেস চলে তারাপীঠ - রামপুরহাট পর্যন্ত। এছাড়াও আরও অনেক ট্রেন হয়েছে সেগুলো তো আপনারা আসতে পারেন। যেমন শিয়ালদা স্টেশন থেকে ছাড়ে ট্রেন যেমন গদ্দা মেমু স্পেশাল , উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা, পদাতিক ইত্যাদি।
এছাড়াও হাওড়া স্টেশন থেকে ছাড়া ট্রেন গুলির নাম:- কামালপুর কবিগুরু এক্সপ্রেস , হাওড়া জয়নগর এক্সপ্রেস, মালদা টাউন ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, সরাইঘাট এক্সপ্রেস, ময়ূরাক্ষী এক্সপ্রেস, গয়া এক্সপ্রেস ইত্যাদি ।
এছাড়াও কলকাতা থেকে রয়েছে তেভাগা , ও যোগ বাণী এক্সপ্রেস
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ "পয়লা বৈশাখ তারাপীঠে দু'বার ভোগ নিবেদন"। ২৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ ক খ গ "Tarapith"। Birbhum District: Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-২৪।
- ↑ ক খ "Bakreshwar, Tarapith"। National Informatics Centre: Government of India। ২০১০-০২-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-২৪।
- ↑ ক খ "Personalised Puja at the Holy Tarapith Temple"। Kalighat.net। ২০১০-০৫-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-২৬।
- ↑ Kinsley p. 61
- ↑ ক খ Harding, Elizabeth U. (১৯৯৮)। Kali: the black goddess of Dakshineswar। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 275–279। আইএসবিএন 8120814509। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-২৬।
- ↑ "Yahoo maps location of Tarapith"। Yahoo maps। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৭।
- ↑ Dalrymple, pp. 210-211
- ↑ Kinsley p. 109
- ↑ ক খ গ Kinsely, p. 106
- ↑ ক খ Bowen, Paul, সম্পাদক (১৯৯৮)। Themes and issues in Hinduism। World Religions: Themes and issues। Continuum International Publishing Group। পৃষ্ঠা 237, 239।
- ↑ Kinsley pp. 97-8
- ↑ ক খ গ তিন তীর্থে, শিবশঙ্কর ভারতী, সাহিত্যম্, ১৮বি, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট, কলকাতা-৭৩, প্রথম প্রকাশ- ১৮ই জানুয়ারী, ২০০১
- ↑ Binoytosh Bhattacharya, The Indian Buddhist Iconography, Ch.6, pp. 76-78
- ↑ পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, বিনয় মজুমদার
- ↑ Dalrymple, p. 211
- ↑ ক খ Kinsely, p. 110
- ↑ Kinsely, p. 108
- ↑ ক খ Kinsely, p. 109
- ↑ Dalrymple, p. 205
- ↑ ক খ গ ঘ Kinsely, p. 111
- ↑ ক খ Dalrymple, p. 206
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Dalrymple, William (২০০৯)। Nine Lives। The Lady Twilight। Bloomsbury Publishing Plc। পৃষ্ঠা 203–233। আইএসবিএন 1408801531। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-১৯।
- Kinsley, David R. (১৯৯৭)। Tantric visions of the divine feminine: the ten mahāvidyās। University of California Press। আইএসবিএন 978-0520204997।