তাজিকিস্তানের রন্ধনশৈলী

তাজিকিস্তানের রান্না ঐতিহ্য

তাজিক রন্ধনশৈলী মূলত তাজিকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী খাবার ও খাবারের রন্ধন প্রণালীকে বোঝায়। একইসাথে তাজিকিস্তানের জনগণের খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্য রন্ধন, ও পরিবেশনের সংস্কৃতিও রন্ধনশৈলীর অন্তর্ভুক্ত। তাজিকিস্তানের রন্ধনশৈলীর সাথে রুশ, আফগান, ইরানি ও উজবেক রন্ধনশৈলীর মিল পাওয়া যায়। প্লোভ (পোলাও) (তাজিক: палав, উজবেক: palov), ওশ (তাজিক: ош) নামেও পরিচিত, তাজিকদের ভোজোৎসবের মূল ও জাতীয় খাবার হিসেবে গণ্য, এছাড়াও কুরুটোব তাজিকদের দৈনন্দিন খাবারের মধ্যে অন্যতম। সবুজ চা তাজিকিস্তানের জাতীয় পানীয়। তাজিকরা তাদের প্রায় সকল ভারী খাবার নানরুটি দিয়ে সহযোগে খেয়ে অভ্যস্ত। এছাড়াও বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার ও গ্রীষ্মকালীন ফল ঐতিহ্যগত রন্ধনশৈলীতে বিশেষ গুরুত্ব পায়।

তাজিকিস্তানের ভোজোৎসবে বিভিন্ন খাবার, বড় থালায় প্লোভ পরিবেশিত।

সাধারণ খাবার ও ভোজসম্পাদনা

 
কুরুটোব আহারঃ ঐতিহ্যগতভাবে একহাতে আহার করা হয়।

সাধারণত প্লোভ নামে পরিচিত পালাভ অথবা ওশ, মূলত পোলাও জাতীয় খাবার তাজিকদের যেকোন ভোজোৎসবের মূল খাবার। এটি পোলাওয়ের চালের সাথে টুকরো করা হলুদ শালগম অথবা গাজর এবং মাংস; উদ্ভিজ্জ তৈল অথবা খাসির চর্বিতে, কাজান নামক কড়াই আকৃতির হাঁড়িতে খোলা আকাশের নীচে আগুনে সেদ্ধ করা হয়। এই মেন্যুর জন্য মাংস সাধারণত চারকোনা করে কাটা হয়, গাজরে লম্বা ফালি করা হয়। গাজর ও তেলের কারণে চালের রঙ হলুদ বর্ণ হয়। এই খাবারটি সাধারণত একটি বড় থালায় পরিবেশন করা হয়। একসঙ্গে অনেকে বসে হাত ব্যবহার করে এই খাবার আহার করার তাজিকদের ঐতিহ্য।এটি তাজিকদের জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচিত।[১]

কুরুটোব (তাজিক: қурутоб) তাজিকদের আরেকটি সাধারণ খাবার,যেটি প্লোভের মতই এক থালা হতে সবাই ভাগাভাগি করে নিজ হাতে আহার করে। তাজিক শব্দ কুরুট (তাজিক: қурут) যার অর্থ নোনতা পনিরের শুকনো গোলা, এবং ওব (তাজিক: об) যার অর্থ পানিতে দ্রবীভূত শব্দ দুইটির সন্ধি হতে এই খাবারের নাম এসেছে। এই পানিতে মিশানো নোনতা পনিরের গোলা ফাতির(তাজিক: фатир) বা ফাতির রাভঘানি(তাজিক: фатир равғанӣ) নামক একধরনের মাখন অথবা চর্বি দিয়ে বানানো ফাঁপা চ্যাপ্টা রুটির চিকন ফালির উপর ঢেলে দেয়া হয়, সাথে হলদে রঙ না আসা পর্যন্ত তেলে ভাজা পেয়াজ ও সেদ্ধ শবজি উপরে দিয়ে পরিবেশন করা হয়, এই খাবারের সাথে কোন মাংস থাকেনা।[১]

 
বিক্রয়ের জন্য পরিবেশিত ঐতিহ্যবাহী নান।

নান রুটি (তাজিক: нон) তাজিকদের সকল খাবারের প্রধান অনুষঙ্গ। তাজিকিস্তানে প্রায় সকল খাবারই সবসময় তাদের ঐতিহ্যবাহী নান রুটি (মধ্য এশিয়ায় প্রচলিত চ্যাপ্টা রুটি) সহযোগে পরিবেশন ও খাওয়া হয়। তাজিকদের পাত্রে খাবার থাকলেও নান রুটি শেষ হয়ে গেলে, তাজিকরা বলবে তার খাবার শেষ। মাটিতে পরে যাওয়া নান রুটি সাধারণত ভিক্ষুক ও পাখিদের খাওয়ার জন্য উপরে উঠিয়ে রাখা হয়। তাজিক কিংবদন্তি অনুসারে নান রুটি উল্টে রাখা দূর্ভাগ্য নিয়ে আসে। এছাড়াও নান রুটির উপর অন্য কোন খাবার বা বস্তু রাখাকে দূর্ভাগ্যের কারণ মনে করা হয়; যতক্ষণ না অন্য একটি নান এনে সেই নানের উপর রাখা হয়।[১]

তাজিকিস্তানের নিয়মিত ও ঐতিহ্যবাহী স্যুপ সাধারণত শুধু মাংসসবজি দিয়ে প্রস্তুতকৃত, যেমন শুরবোপিটি, এছাড়া লাঘমনউঘরো নামের নুডলসের সাথে মাংসের স্যুপও জনপ্রিয়। এছাড়াও মান্টি (সেদ্ধ মাংসের মম), তুশবেরা (রাশিয়ান মম), সামবুসা (মিস্টি কুমড়া ও অথবা মাংসের সাথে ঠাসা পেয়াজের ত্রিকোনাকৃতির পেস্ট্রি, তন্দু রুটির উনুনে প্রস্তুতকৃত) ও পিরোজকিঈস্টের খামিতে মাংসের কিমা ভরে বেশি করে ভাজা পিঠা বেলইয়াশ (বহুবচনেঃ বেলইয়াশি, তাজিক: беляши), তাজিকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে নাস্তা অথবা ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে খাওয়া হয়।

সোভিয়েত রাশিয়ার রন্ধনপ্রণালী ও খাবার, তাজিক রন্ধনশৈলী দ্বারা প্রভাবিত ছিল।[২]

দুগ্ধজাত খাবারসম্পাদনা

দুগ্ধজাত খাবারগুলি সাধারণত তাজিক খাবারে ক্ষুধাবর্ধক হিসাবে পরিবেশন করা হয়। এগুলির মাঝে চ্যাপ্টারুটি টুকরো দিয়ে টুকরো টুকরো করে চাকা (প্রস্তুতকৃত টক দই), ঘন দই এবং কায়মাক (উচ্চ চর্বিযুক্ত মালাই) অন্তর্ভুক্ত। কুরূট বল নাস্তা বা ঠাণ্ডা পানীয়র সাথে পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও কেফির নামের একটি পানীয় দই, তাজিকদের ঐতিহ্যগত পানীয় না হলেও প্রায়শই সকালের নাস্তার সাথে পান করে থাকে।[১]

গ্রীষ্মকালীন খাবারসম্পাদনা

গ্রীষ্মে তাজিকিস্তানে প্রচুর ফল উৎপাদন হয়। সোভিয়েত রাশিয়া জুড়ে তাজিকিস্তানের আঙ্গুরতরমুজ বিখ্যাত ছিল। গ্রীষ্মের সময় তাজিকিস্তানের বাজারগুলিতে বেদানা, খুবানি, প্লাম, পিচ, আপেল, নাশপাতি, ডুমুর ও পার্সিমনের ফলন হয়। গ্রীষ্মে ফলের আবাদ বেশি থাকায় তাজিকদের খাদ্যভ্যাসে ফলের আধিক্য থাকে।[১]

পানীয়সম্পাদনা

তাজিকিস্তানের সকল খাবারের সাথে চা থাকে, যেকোন খাবার আহারের মাঝে এবং অতিথি ও দর্শনার্থীদের আতিথিয়তা প্রদান ও আপ্যায়নের জন্য প্রায়শই চা পান করতে দেয়া হয়। চা সাধারণত ঢাকনা সহ চীনা পাত্রে গরম পরিবেশন করা হয়, সাথে হাতল ছাড়া পেয়ালায় চিনি দেয়া হয়। পানীয় হিসেবে চায়ের বৈশ্বিক জনপ্রিয়তার পশ্চিমা কফি হাউজের ন্যায় তাজিকিস্তানে অনেক 'চয়খনা' বা চাঘর গড়ে উঠেছে, এই চাঘর গুলি তাজিকিস্তানের সাধারণ মিলিত হওয়ার জায়গা।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Cuisine of Tajikistan"tajikistan.orexca.com 
  2. Long, Katherine। "Everyone Loves Lenin"Roads & Kingdoms 

সূত্রসম্পাদনা

  • (রুশ ভাষায়) Tajik Cooking, ইরফন পাবলিকেশন হাউজ, দুশানবে, ১৯৯১
  • (রুশ ভাষায়) ভাহব খোজিয়েভ, Traditional and Modern Tajik Cooking, ইরফন পাবলিকেশন হাউজ, দুশানবে, ১৯৯০