কান্তনগর মন্দির

বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মন্দির

কান্তজিউ মন্দির বা কান্তজী মন্দির বা কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত যা লৌকিক রাধা-কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বাংলায় প্রচলিত। ধারণা করা হয়, মহারাজা সুমিত হর কান্ত এখানেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।[১] ২০১৭ সালের কলকাতা বইমেলায় এই মন্দিরের আদলে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন করা হয়।[২] ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে এই মন্দির ধ্বংস হওয়ার আগে রাবণেষু, জন হেনরি এর ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে তোলা ছবিতে মন্দিরের নয়টি রত্ন বর্তমান।

কান্তনগর মন্দির
2.কান্তনগর মন্দির.jpg
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
ঈশ্বরকৃষ্ণ
অবস্থান
অবস্থানদিনাজপুর, বাংলাদেশ
কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
কান্তনগর মন্দির
বাংলাদেশে অবস্থান
স্থানাঙ্ক২৫°৪৭′২৬″ উত্তর ৮৮°৪০′০০″ পূর্ব / ২৫.৭৯০৫৬° উত্তর ৮৮.৬৬৬৬৭° পূর্ব / 25.79056; 88.66667
স্থাপত্য
ধরননবরত্ন বাংলার মন্দির স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীরাজা প্রাণনাথ রায় ও তার দত্তকপুত্র রাজা রামনাথ রায়
সম্পূর্ণ হয়১৭৫২ খ্রিস্টাব্দ

অবস্থানসম্পাদনা

দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরবর্তী গ্রাম কান্তনগরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির

ইতিহাসসম্পাদনা

 
কান্তনগর মন্দির, দিনাজপুর, বাংলাদেশ, ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ছবিতে নয়টি রত্নের সাতটি দৃশ্যমান রয়েছে,একটি ভূমিকম্পে বিখ্যাত এই নবরত্ন মন্দিরের রত্নসমূহ বিলীন হয়ে যায়

মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিলো ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করলেও মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি।

হামলাসম্পাদনা

২০১৫ সালের ৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে ৩০০ বছর ধরে চলা রাসমেলায় মন্দির প্রাঙ্গণে যাত্রা চলাকালীন সময় তিনটি ককটেল বোমা ছোড়া হয়। [৩]এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। তিনজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। আহতদের মধ্যে ছয়জনকে দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার পূর্বে মন্দিরের পুরোহিতকে কোন ধর্মীয় সমাবেশ না করার জন্য হুমকি দেয়া হয়।[৪] আমেরিকার প্রথম হিন্দু কংগ্রেস সদস্য তুলসী গ্যাবার্ড এই ঘটনার নিন্দা করেন। তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত‌ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটকে মন্দিরে গিয়ে মন্দিরের অবস্থা দেখতে অনুরোধ করেন।[৫]এই হামলার সাথে জড়িত দুই জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মত মানুষদের কঠিন শাস্তি চায় আন্তর্জাতিক হিন্দু কমিশন।

দিনাজপুরে এই হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে এলাকার লোকেরা। এই মানববন্ধন সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে।[৬] ঢাকায় বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদআন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ এই হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।[৭]

স্থাপত্যসম্পাদনা

 
উপর থেকে

মন্দিরের বাইরের দেয়াল জুড়ে পোড়ামাটির ফলকে লেখা রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫,০০০-এর মতো টেরাকোটা টালি রয়েছে।[৮] উপরের দিকে তিন ধাপে উঠে গেছে মন্দিরটি। মন্দিরের চারদিকের সবগুলো খিলান দিয়েই ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও, পাথরের ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সব প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে, স্তম্ভ দুটো খুবই সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অলংকরণযুক্ত। মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় ২১টি এবং দ্বিতীয় তলায় ২৭টি দরজা-খিলান রয়েছে, তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র ৩টি করে।

কলকাতা বইমেলায় প্যাভিলিয়নসম্পাদনা

২০১৭ সালের কলকাতা বইমেলায় বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হিসাবে বাংলাদেশ সরকার তাদের প্যাভিলিয়নটি কান্তজিউ মন্দিরের আদলে গড়েন।[২]

চিত্রসম্ভারসম্পাদনা

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. রায়, প্রণব (২৭ জানুয়ারী ১৯৯৯)। বাংলার মন্দির। তমলুক: পুর্বাদ্রী প্রকাশক। পৃষ্ঠা ৪১। 
  2. "Bangladesh book fair in Kolkata" 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "রাসমেলায় বোমা হামলা, রক্তাক্ত ৬"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  4. DelhiDecember 5, India Today Web Desk New; December 11, 2015UPDATED:; Ist, 2015 10:20। "10 injured in bomb attack on Hindu religious gathering in Bangladesh"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  5. vina (২০১৬-০১-১০)। "Tulsi Gabbard Responds to ISKCON Bangladesh Attack"VINA - Vaishnava Internet News Agency (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  6. "কান্তজীউ'র মন্দিরে বোমা হামলার প্রতিবাদের দিনাজপুরে মানববন্ধন"প্রিয়.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৭-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  7. "ইসকনের মন্দিরে আক্রমণের ঘটনায় আরেকজন আটক"BBC News বাংলা। ২০১৫-১২-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  8. মামুন আব্দুল্লাহ (মে ৩০, ২০০৩)। "তিন তরুনের কান্তজী উদ্ধার"। দৈনিক প্রথম আলো (মুদ্রণ)। ঢাকা। পৃষ্ঠা ২৫। 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা