এম হারুন-উর-রশীদ
এম হারুন-উর-রশীদ (জন্ম: ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১][২]
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-উর-রশীদ | |
---|---|
জন্ম | ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
প্রতিষ্ঠান | ডেসটিনি গ্রুপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান |
দাম্পত্য সঙ্গী | লায়লা নাজনীন |
সন্তান | মেয়ে ও এক ছেলে |
পিতা-মাতা | মাহামুদুল হক জরিনা বেগম |
সম্মাননা | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাএম হারুন-উর-রশীদ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের কাটিরহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাহামুদুল হক এবং মায়ের নাম জরিনা বেগম। তার স্ত্রীর নাম লায়লা নাজনীন। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।[৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনাএম হারুন-উর-রশীদ কাকুলস্থ পাকিস্থান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলের বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেন। এতে তার ভূমিকা ছিল অনন্য।[৩]
২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। ১৬ জুন ২০০২ জেনারেল হাসান মশহুদ তার স্থলাভিষিক্ত হন । অবসর গ্রহণের পর হারুন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।[৩]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনাপ্রাথমিক ভাবে প্রতিরোধযুদ্ধের পর মে মাসের মাঝামাঝি আখাউড়া-মুকুন্দপুর রেলপথে হারুন-অর-রশিদ কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রসদবাহী ট্রেনে অ্যাম্বুশ করেন। আগে খবর পেয়ে রেলপথের এক স্থানে বিস্ফোরক স্থাপন করে সহযোদ্ধাদের নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। ট্রেনটি আসামাত্র সুইচ টিপে বিস্ফোরণ ঘটান। এতে রেলবগি ও রেলপথের একাংশের ব্যাপক ক্ষতি এবং কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এম হারুন-অর-রশিদ পরবর্তী সময়ে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন। তার যুদ্ধ এলাকা ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা ও আখাউড়ার একাংশ। এ এলাকায় অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২০ নভেম্বর কসবার চন্দ্রপুরের যুদ্ধে তিনি তার দল নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার উত্তরে কালাছড়া চা-বাগান এলাকায় ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঘাঁটি। ৩ আগস্ট রাতে মুক্তিবাহিনীর দুটি দল এখানে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে সার্বিক নেতৃত্ব দেন এম হারুন-অর-রশিদ। পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল কালাছড়া চা-বাগানে অবস্থান করছে এমন খবর পেয়ে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য লোক নিয়োগ করেন তিনি। তাদের আক্রমণের জন্য নিয়মমাফিক এক ব্যাটালিয়ন শক্তি প্রয়োজন ছিল কিন্তু সে অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা দল ছিলো না। কিন্তু এম হারুন-অর-রশিদ সাহস করে প্রস্তুতি নেন। এ সময়ে তার অধীনে দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একটি কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় শহীদ হাবিলদার হালিমকে অন্যটির দায়িত্ব তিনি নিজেই নেন। তবে দুই কোম্পানির সার্বিক নেতৃত্বই তার হাতে ছিল। একদিন রাতে তারা দুটি দলে ভাগ হয়ে পাকিস্তানি অবস্থানে আঘাত হানেন। তবে হাবিলদার হালিম এ যুদ্ধে শহীদ হয়ে যাওয়ায় সে দলটি আর সামনে অগ্রসর হতে পারেননি। পরে এম হারুন-অর-রশিদ তার কোম্পানি নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ করেন। তার দলের আক্রমণে পাকিস্তানি অনেক সেনা হতাহত হয়। কিছু পাকিস্তানি সেনা বাংকারে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা বাংকারে গ্রেনেড চার্জ করে তাদের হত্যা করেন। পরবর্তীতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের পর্যুদস্ত করে স্থানটি দখল করেন মুক্তিযোদ্ধারা। কালাছড়া থেকে একটি এলএমজিসহ প্রায় ১০০ অস্ত্র এবং ২৭ জন পাকিস্তানি সেনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের দুজন শহীদ ও সাতজন আহত হন। এর পর থেকে কালাছড়া সব সময় মুক্ত ছিল।[৩][৪][৫]
এম হারুন-উর-রশীদ ২০০৬ সালে বিতর্কিত ডেসটিনি গ্রুপে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন। ডেসটিনির বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডেসটিনির বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। "স্বাস্থ্য" এবং "সামাজিক অবস্থা" বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছিল।[৬]
কোম্পানির অনিয়মের রিপোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থাগুলিকে কোম্পানির তদন্ত শুরু করে।[৭] দুদকের তদন্তে ডেসটিনি গ্রুপের ৩৭টি কোম্পানির নামে কয়েকটি ব্যাংকে ৭২২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে ডেসটিনি গ্রুপ ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫১.১৩ বিলিয়ন বাংলাদেশী টাকা (২০০৬ সালের হিসাবে $৭৪৮ মিলিয়ন) পাচার করেছে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। ২০১৪ সালের মে মাসে, দুদক কোম্পানির ৫১ জন নির্বাহীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের করে। দুদক কোম্পানির ৬.৩১ বিলিয়ন টাকা (২০১৬ সালের হিসাবে $৮০.৪এম) মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে।[৮]
প্রায় ২ বছর তদন্ত ও ৮ বছর ধরে মামলা চলার পর ১২ই মে ২০২২ তারিখে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের রায়ে অন্যান্য অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজার পাশাপাশি ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদকে চার বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়। রায় ঘোষণা শেষে তাঁকে অন্যান্যদের সাথে কারাগারে নেয়া হয়। তবে তিনি উচ্চ আদালতে এর আপিল করবেন বলে জানা যায়।[৯]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৯-১২-২০১২"। ২০১৭-০৬-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ ক খ গ ঘ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ মেসবাহ কামাল, জান্নাত-এ-ফেরদৌসী। ১৯৭১ তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না। বাংলাদেশ: আগামী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৭৬। আইএসবিএন 9789840426973।
- ↑ স্মরণীয় স্মারক গাঁথা, তারিখঃ ২৪-১২-২০১২।
- ↑ Correspondent, Staff; বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। "Destiny Group President Harun-Ar-Rashid's bail in two money laundering cases upheld"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৮।
- ↑ "Business News Today: Read Latest Business news, India Business News Live, Share Market & Economy News"। The Economic Times (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৮।
- ↑ Correspondent, Staff; বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। "ACC presses charges against Destiny chief, MD"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৮।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "রফিকুলের ১২, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের ৪ বছর কারাদণ্ড"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
সামরিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান |
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান ২৪ ডিসেম্বর ২০০০ – ১৫ জুন ২০০২ |
উত্তরসূরী হাসান মশহুদ চৌধুরী |