হারুনুর রশীদ (বীর প্রতীক)

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের 'বীর প্রতীক' খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা

হারুনুর রশীদ (১৯৪৮ - ২৭ নভেম্বর ১৯৭১) হলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অসীম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

হারুনুর রশীদ
জন্ম১৯৪৮
রাঙ্গিয়ারপোতা, চুয়াডাঙ্গা, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানঃ বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৭ নভেম্বর ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব
পেশাব্যাবসায়ী
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
দাম্পত্য সঙ্গীছুরাতন নেছা (স্ত্রী)

জন্ম ও পরিবার সম্পাদনা

হারুনুর রশীদ পৈতৃক বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে। তার পিতার নাম আহমেদ আলী মন্ডল এবং মায়ের নাম বিরাজ খাতুন। তার স্ত্রীর নাম ছুরাতন নেছা।[২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

হারুনুর রশীদ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে যুদ্ধে যান এবং এসময় তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি তার পিতার ব্যবসায় সহযোগীতা করতেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

হারুনুর রশীদ ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেলে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের চুয়াডাঙ্গা সাব-সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। তার নেতৃত্বে বা পরিচালনায় অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে যদুপুর ক্যাম্প আক্রমণ অন্যতম। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের ভেতরে প্রাথমিক অবস্থান থেকে হারুনুর রশীদ নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা রওনা হয়েছিলেন বিভিন্ন লক্ষ্যস্থলে। হারুনুর রশীদ তার সহযোগীদের নিয়ে যদুপুর পাকিস্তান সেনাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। ২৭ নভেম্বর (শনিবার) তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে আক্রমণ করার পরিকল্পনা অনুযায়ী যদুপুর এর পাকিস্তানি ঘাঁটিকে ঘেরাও করেন। যদিও হারুনুর রশীদ ও তার সহযোদ্ধারা সংখ্যায় ছিলেন নগন্য। হারুনুর রশীদ তার সহযোদ্ধাদের আগে থেকেই সংকেতের অপেক্ষা না করে গুলি শুরু করতে নির্দেশ করেছিলেন। হঠাৎ গোলাগুলির প্রতিরোধে পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকেও পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। ফলে হারুনুর রশীদ ও তার সঙ্গে থাকা সহযোদ্ধারা ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে যান। তাদের মাথার ওপর দিয়ে ছুটে যায় অসংখ্য গুলি। সবকিছুই পরিকল্পনা অনুযায়ী হলেও হঠাৎ হানাদারের একটা বুলেট আঘাত হানে হারুনুর রশীদ এর বুকে। ঐ দিনে হারুনুর রশীদ এর গোলার বারুদে ৪ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। অনেক কষ্টে হারুনুর রশীদের সহযোদ্ধারা ক্যাম্পের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। ঐ দিনে হারুনুর রশীদ শহীদ হন।

হারুনুর রশীদ এর একজন সহযোদ্ধা জালাল উদ্দীন হারুনুর রশীদের লাশের দাফন সম্পন্ন করেন। এখন সেখানে একটা কবরস্থান করা হয়েছে। হারুনুর রশীদের কবর সংরক্ষণের জন্য এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। [৩][৪]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৭৩ সালে সরকার তাকে বীর প্রতীক সম্মাননা প্রদান করেন।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৪-১১-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. "বীর প্রতীকের কবর আগাছায় ঢাকা, হয়নি স্মৃতিফলক"Jagonews24। ২১ জানুয়ারি ২০১৭। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 
  5. স্মরণীয় স্মারক গাঁথা, তারিখঃ ২৪-১২-২০১২।

পাদটীকা সম্পাদনা

  • এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।

বহি:সংযোগ সম্পাদনা