আবদুল বাসিত আবদুস সামাদ
এই নিবন্ধটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। |
আবদুল বাসিত মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ, যিনি ক্বারী আব্দুল বাসেত নামে পরিচিত (১৯২৭ - ৩০ নভেম্বর ১৯৮৮) (আরবি; عبد الباسط عبد الصمد),তিনি ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত মিশরীয় ক্বারী।তাঁকে পবিত্র কুরআনের অন্যতম সেরা ক্বারী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি তার অসাধারণ কুরআন তেলাওয়াতের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিকে তিনটি বিশ্ব কিরা'আত প্রতিযোগিতা জিতেছিলেন। আবদুস-সামাদ ছিলেন প্রথম হাফেজ, যিনি তার কুরআন পাঠ্যক্রমের বাণিজ্যিক রেকর্ডিং করেন, এবং তিনি ছিলেন মিশরের ক্বারী পরিষদের প্রথম সভাপতি।
আবদুল বাসিত মুহাম্মাদ আবদুস সামাদ | |
---|---|
জন্ম | ১৯২৭ |
মৃত্যু | ৩০ নভেম্বর ১৯৮৮ | (বয়স ৬০–৬১)
জাতীয়তা | মিশরীয় |
পেশা | ক্বারী, ইমাম, শায়খ |
পরিচিতির কারণ | তার অসাধারণ কুরআন পড়ার জন্য |
উচ্চতা | ৫ ফু ১০ ইঞ্চি (১৭৮ সেমি) - ৫ ফু ১১ ইঞ্চি (১৮০ সেমি) |
উপাধি | সোনালী কণ্ঠস্বর |
সন্তান |
|
জীবনের প্রথমার্ধ
সম্পাদনাশেখ আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ ১৯২৭ সালে কেনা গভর্নরেট (মিশর) এর আল-মারাজেহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি কুরআন মুখস্থ ও তিলাওয়াতের প্রতি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তার দাদা শেখ আব্দুল সামাদ কুরআন মুখস্থ করার জন্য সুপরিচিত এবং কুরআন তেলাওয়াতের নিয়ম (আল-তাজবিদ এবং আল-আহকাম) অনুসারে মুখস্থ করার দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন। তার পিতা মুহাম্মদ আব্দুল সামাদও কুরআনের অন্যতম তিলাওয়াতকারী ছিলেন এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন।
শেখ আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ এর দুই বড় ভাই ছিলেন মাহমুদ ও আব্দুল হামিদ আব্দুল সামাদ। উভয় ভাই মাদ্রাসায় কুরআন মুখস্থ করছিলেন। তাই তাদের ছোট ভাই আব্দুল বাসিত ছয় বছর বয়সে তাদের সাথে যোগ দেন। সেই সময় আব্দুল বাসিতের শিক্ষকরা লক্ষ্য করলেন যে তার তরুণ ছাত্র তার মুখস্থ করার ক্ষেত্রে দ্রুত এবং অত্যন্ত পর্যবেক্ষণশীল এবং সমস্ত অক্ষরের উচ্চারণ এবং আয়াতের থামা এবং শুরু করার বিষয়ের সাথে তাঁর শিক্ষককে অনুসরণ করতে আগ্রহী। এর সাথে সাথে তার শিক্ষকরা তার আবৃত্তি এবং দুর্দান্ত কণ্ঠের প্রতিভাও লক্ষ্য করেছিলেন।
শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাশেখ আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ মাত্র দশ বছর বয়সে সম্পুর্ন কোরআন মুখস্থ সম্পন্ন করেন এবং তারপর তার পিতা ও পিতামহকে অনুরোধ করেন যেন তারা তার কিরাআত (তিলাওয়াত) শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যেন সহযোগিতা করেন। তারা উভয়েই সম্মত হন এবং শেখ মুহাম্মদ সেলিমের তত্ত্বাবধানে কুরআন তেলাওয়াত (‘উলম আল-কুরআন ওয়া আল-কিরাআত) অধ্যয়নের জন্য তাকে তান্তা (নিম্ন মিশর) শহরে পাঠান। যদিও তান্তা শহরের দূরত্ব অনেক ছিল তবুও তরুণ ছাত্রটি নিশ্চিত ছিল এবং দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল কারণ এটি তার ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করবে।
সেখানে রওনা হওয়ার একদিন আগে, আবৃত্তির শিক্ষক হিসেবে সেখানে স্থায়ী হওয়ার জন্য আরমান্টের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শেখ মুহাম্মদ সেলিম আসার কথা পরিবার শুনেছিল। সেখানের লোকেরা তাকে সর্বোত্তম উপায়ে গ্রহণ ও স্বাগত জানায়, কারণ তিনি কুরআনের আলেম হিসাবে তার জ্ঞান এবং দক্ষতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। যেন ভাগ্য ঠিক সময়ে এই আলেমকে তার পরিবারে নিয়ে আসে। শহরের লোকেরা কুরআন সংরক্ষণের জন্য আসফুন আল-মাতানাহে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিল, যাতে শেখ মুহাম্মাদ সেলিম কুরআন মুখস্থ করা এবং এর তেলাওয়াত শেখাতে পারেন। আব্দুল বাসিত তার কাছে গিয়ে তার সাথে পুরো কুরআন পর্যালোচনা করলেন এবং তারপর আল-শাতিবিয়া মুখস্থ করলেন, যা সাতটি তেলাওয়াতের বিজ্ঞানের শাস্ত্রীয় পাঠ্য ছিল।
শেখ আব্দুল বাসিত যখন বারো বছর বয়সে উপনীত হন, তখন শেখ মুহাম্মদ সেলিমের সাহায্যে কেনা গভর্নরেটের (মিশর) সমস্ত শহর ও গ্রাম থেকে তেলাওয়াতের জন্য অনুরোধ আ্সতে থাকে, বিশেষ করে আসফুন আল-মাতানাহ থেকে। কারন যেহেতু সেলিমের প্রতি সকলের বিশ্বাস ছিল আর তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই আবদুল বাসিত এর বিষয়ে সুপারিশ করতেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাশেখ আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদকে যখন সাইয়িদা জয়নাবের জন্ম উদযাপনে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তখন মাত্র ২৩ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে কায়রোতে কুরআন তেলাওয়াতকারী হিসেবে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন,। উদযাপনের শেষ রাতে যখন অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান হলো, সেখানে যুগের শীর্ষ তেলাওয়াতকারীরা, যেমন শেখ আবদুল ফাত্তাহ আল-শাশায়ী, শেখ মুস্তাফা ইসমাঈল, শেখ আবদুল আজিম জাহির, শেখ আবু আল-আয়নাইন শাইশা, এবং অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই সময় তরুণ শেখ আবদুল বাসিত এই বিখ্যাত তেলাওয়াতকারীদের তেলাওয়াত শোনার, তাদের দেখার এবং তাদের সাথে বসার জন্য শ্রোতাদের মধ্যে তার জন্য একটি জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন।
মধ্যরাতের পর শেখ আব্দুল বাসিত তার এক আত্মীয়ের সাথে ছিলেন, যিনি সাইয়িদা জয়নব মসজিদের কর্মকর্তাদের চিনতেন। তিনি তাদের অনুমতি চাইলেন যাতে শেখ আবদুল বাসিতও তেলাওয়াত করতে পারেন। তিনি বলেছিলেন: "আমি আপনার কাছে উচ্চ দিকের মিশর থেকে একজন পাঠক উপস্থাপন করছি, যার কন্ঠ মিষ্টি এবং সুন্দর, এবং তিনি আপনাকে দশ মিনিটের জন্য আবৃত্তি করে শুনাবেন।" সেই মুহুর্তে, মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ ছিল এবং শ্রোতারা তাঁর আশ্চর্যজনক কণ্ঠ শুনেছিলেন যা শ্রোতাদের হৃদয়কে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যে মসজিদের সমস্ত উপস্থিতি তাঁর কণ্ঠে "আল্লাহু আকবার" ("আল্লাহ্ আকবার" বলে চিৎকার করে উঠল। (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ")। যতবারই শেখ আব্দুল বাসিত "সাদকাল্লাহুল আজিম" ("আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান সত্য বলেছেন") দিয়ে তেলাওয়াত শেষ করতে চেয়েছিলেন, শ্রোতারা জোর দিয়েছিলেন যে তিনি যেন পড়তে থাকেন এবং তিনি প্রায় দুই ঘন্টা চালিয়ে যান এবং ভোরে তিনি তার তেলাওয়াত শেষ করেন।
এই অভিজ্ঞতার পর, শেখ আবদুল বাসিত একটি কুরআন তেলাওয়াতকারী হিসাবে রেডিও স্টেশনে আবেদন করার কথা ভাবতে শুরু করেন, কিন্তু উচ্চ মিশরের সাথে তার সম্পর্ক থাকার কারণে তিনি অনেক দ্বিধায় পড়েছিলেন, তবুও, তিনি কুরআন তিলাওয়াতকারী হিসাবে পেশা বেছে নেন। শেখ আবদুল বাসিত ১৯৫১ সালে রেডিওতে কোরআন তেলাওয়াতকারী হিসেবে নিযুক্ত হন।
ভ্রমণ
সম্পাদনাআবদুল বাসিত মিশরের বাইরে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছিলেন; ১৯৬১ সালে, তিনি পাকিস্তানের লাহোরে বাদশাহী মসজিদ, সেইসাথে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে অবস্থিত সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী মাদ্রাসাতে কুরআন তেলাওয়াত করেন। ১৯৬৪ অথবা ১৯৬৫ সালে তিনি জাকার্তা পরিদর্শন করেন এবং সেই দেশের বৃহত্তম মসজিদে কুরআন পাঠ করেন।
শেখ আবদুল বাসিত আবদুল সামাদ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে:
তিনি পাকিস্তান ভ্রমণ করেন এবং বিমানবন্দরে পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতি তাকে স্বাগত জানান।
১৯৫৫ সালে, তিনি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় যান, যেখানে লোকেরা তাকে সর্বোত্তম উপায়ে গ্রহণ করেছিল। মসজিদ উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিল এবং তারা প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত মসজিদের বাইরে ছিল। মসজিদের উল্টোদিকের চত্বরটি প্রায় এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মুসল্লি দিয়ে ভরা ছিল।
তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাও ভ্রমণ করেছিলেন, এবং তার আগমনের পরে, কর্মকর্তারা তাকে তার সাক্ষাৎকার নিতে রেডিও এবং টেলিভিশন সাংবাদিকদের পাঠান।
তিনি ধনী মুসলমানদের একজনের দ্বারা আয়োজিত একটি প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য ভারতেও ভ্রমণ করেছিলেন। তার আগমনের পর শেখ আব্দুল বাসিত একটি হৃদ্যকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। উপস্থিত সকলে তার তেলাওয়াত শোনার পর তাদের জুতা খুলে মাটিতে দাঁড়াচ্ছিলেন এবং শাইখ তেলাওয়াত শেষ না করা পর্যন্ত তারা সিজদার স্থানের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে রাখছিলেন সেসময় তাদের চোখ অশ্রুতে উপচে পড়ছিল এবং এই বিনয়ী মনোভাব দেখে তার নিজের চোখ থেকেও অশ্রু ঝরছিল।
তিনি জেরুজালেমেও ভ্রমণ করেন এবং আল-আকসা মসজিদের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদ এবং দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ এবং এশিয়া, আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং লন্ডনের সবচেয়ে বিখ্যাত মসজিদে তেলাওয়াত করেছিলেন।
পুরস্কার ও সন্মাননা
সম্পাদনাশেখ আবদুল বাসিত আবদুল সামাদ সারা বিশ্বে ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি বিপুল সংখ্যক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে, সিরিয়া সরকার তাকে সম্মানিত করে এবং তাকে অর্ডার অফ মেরিটে ভূষিত করে। তিনি লেবানন থেকে অর্ডার অফ সিডার, মালয়েশিয়া থেকে গোল্ডেন মেডেল, সেনেগাল থেকে একটি মেডেল এবং মরক্কো থেকে আরেকটি মেডেল পেয়েছেন।
১৯৫৯ সালে সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি পদক লাভ করেন।
১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি পদক পান।
১৯৭৫ সালে সেনেগালের রাষ্ট্রপতির অর্ডার অফ মেরিট লাভ করেন।
১৯৮০ সালে পাকিস্তান থেকে গোল্ডেন মেডেল প্রদান করে।
১৯৮৪ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জিয়া-উল-হকের কাছ থেকে অর্ডার অব স্কলার নামে পদক পান।
মিশরীয় রেডিও পদক পান তার পঞ্চাশতম বার্ষিকীতে।
১৯৮৭ সালে প্রচারক দিবস উদযাপনের সময় মিশরের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারকের কাছ থেকে অর্ডার অফ মেরিট পাণ।
১৯৯০ সালে, তিনি লায়লাতুল আল-কদর উদযাপনে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ হোসনি মুবারকের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পরে শেষ সম্মান পেয়েছিলেন।
অসুস্থতা ও মৃত্যু
সম্পাদনাতিনি একটি অসুস্থতা জন্য মৃত্যুবরণ করেন, কোনো দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান নি। যদিও বেশিরভাগ সূত্র দাবি করেছে যে, তিনি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। অবশ্য পরে তা প্রমাণিত হয়নি। মৃত্যুর ৭ দিন আগে, আবদুস সামাদকে লন্ডনের সেরা একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার মৃত্যুর সঠিক তারিখ হলো ৩০ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে, যা নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং তিনি তাঁর তিন পুত্র (বড় থেকে ছোট ক্রম): ইয়াসির, হিশাম ও তারিক রেখে গেছেন। ইয়াসির তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে, ক্বারী হন। তাঁর জানাযায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও রাষ্ট্রদূতরা তাদের জনগণের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- ফরিদুদ্দিন, মুহাম্মদ (২০১৭)। মাশায়েখে হুফফায। বাংলাদেশ: তাহফীযুল কুরআন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ৬৪।