অ্যানিমে

জাপানি কার্টুন

অ্যানিমে বা আনিমে বা এনিমে (জাপানিঃ アニメ) হল জাপান থেকে উৎপত্তিকৃত হস্তঙ্কিতকম্পিউটার-উৎপন্ন অ্যানিমেশন। জাপান বহির্ভূত এবং বিশ্বে, অ্যানিমে বলতে জাপানি অ্যানিমেশন, এবং আরও নির্দিষ্টভাবে বললে জাপানে নির্মিত অ্যাানিমেশন পণ্যকে বোঝায়।[১] তবে জাপানে এবং জাপানি অ্যানিমেতে (একটি পরিভাষা যা আহরিত হয় ইংরেজি শব্দ অ্যাানিমেশনের সংক্ষিপ্তকরন হতে) বর্ণনা করে সমস্ত ধরনের অ্যানিমেশনকে, যার শৈলী অথবা উৎস যাই হোক না কেনো। উৎস বলতে এখানে অ্যানিমেটি কোন দেশে বা স্থানে তৈরি করা হয়েছে সেটা বোঝানো হয়েছে। জাপানি অ্যানিমেশনের অনুরূপ শৈলীতে জাপানের বাইরে তৈরিকৃত অ্যানিমেশনকে সাধারণত অ্যানিমে-প্রভাবিত-অ্যানিমেশন বলে উল্লেখ করা হয়।

উইকিপে-তান

১৯১৭ সালে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক জাপানি অ্যানিমেশনের সন্ধান মিলে। ১৯৬০’র দশকে কার্টুনিস্ট ওসামু তেযুকার কজের দ্বারা একটি চরিত্রগত অঙ্কন-শৈলীর উত্থান ঘটে, যা পরবর্তী দশকগুলোতে ছড়িয়ে পরে, যার ফলশ্রুতিতে একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ অডিয়েন্স গড়ে উঠে। অ্যানিমে টিভিতে সম্প্রচার, সরাসরি হোম-মিডিয়া, এবং আন্তর্জালের মাধ্যমে বিতরন করা হয়। বিভিন্ন ষ্টুডিওর নিজস্ব কর্ম যাকে “আসল কর্ম” বলা হয়, এসব কর্মগুলো ছাড়াও আনিমে প্রায়শই জাপানি কমিক (মাঙ্গা), লাইট নভেল (ছোট উপন্যাস), বা ভিডিও গেম থেকে আনিমেতে রূপান্তরিত করা হয়। এটি অসংখ্য বর্গে (জনরা) শ্রেণীবদ্ধ যা বিভিন্ন ছোট ও বড় দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশ্য করে তৈরী করা হয় ।

অ্যানিমে একটি বৈচিত্র্যময় মাধ্যম যার স্বতন্ত্র বা নিজস্ব নির্মাণ পদ্ধতি রয়েছে , যা বিভিন্ন প্রযুক্তির উত্থানের সাথে সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। এতে গ্রাফিক আর্ট, চরিত্রগঠন, চলচ্চিত্রগ্রহনশিল্প, এবং অন্যান্য ধরনের কল্পনামূলক ও ব্যাক্তিগতমুলক কৌশলের সমন্বয় ঘটে।[২] পশ্চিমা অ্যানিমেশনের তুলনায়, অ্যানিমে সাধারণত নড়াচড়ার উপর মনোযোগ কম দেয়, বরং বেশি মনোযোগ যায় অ্যানিমের সেটিং, “ক্যামেরা ইফেক্টের” ব্যাবহার, যেমনঃ প্যানিং, বিবর্ধনকরন, কৌণিক শট ইত্যাদির উপর। এতে বিচিত্র অঙ্কন-শৈলীর ব্যবহার করা হয়, এবং চরিত্রের আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বেশ বৈচিত্র্যময় হতে পারে, তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল বড় ও আবেগ জাগরণকারী অভিব্যক্তিপূর্ণ চোখ।[৩] অ্যানিমে শিল্পে ৪৮০ টিরও বেশির তৈরিকারক কোম্পানি নিয়ে গঠিত, এদের মধ্যে মুখ্য স্টুডিও গুলো হলো ষ্টুডিও জিবলী, সানরাইজ, বোন্স, ইউফোটেবল, মাপা, কোমিক্স ওয়েভ ফ্লিমস এবং তোয়ে অ্যানিমেশন। ১৯৮০ সাল থেকে মাধ্যমটি আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জন করতে থাকে। এই উত্থানের কারণগুলো হল বিভিন্ন ভাষায় ডাবকৃতউপাখ্যাকৃত আনিমে এবং সম্প্রচারন পরিষেবা বা স্ট্রিমিং সার্ভিসের মাধ্যমে আনিমের ক্রমবর্ধমান বিতরনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়াতে । ২০১৬ এর হিসাব অনুযায়ী, জাপানি অ্যাানিমেশন পৃথিবীর ৬০% টিভি অ্যাানিমেশনের জন্য দায়ী।[৪]

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

অ্যানিমেশনের একটি ধরন হিসাবে, অ্যানিমে অন্যান্য বিনোদন মাধ্যমের মত বিভিন্ন বর্গে বিভক্ত। কিন্তু কখনও কখনও একে ভুলবশত "বর্গ" হিসাবেই শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।[৫] যা সম্পূর্ণ ভুল। জাপানি পরিভাষায় আনিমে হল যেকোনো অ্যানিমেশন, সেটা যেকোনো ধরনের শৈলীর বা উৎসেরই হোক না কেন।[৬] উৎস বলতে এখানে অ্যানিমেটি কোন দেশে বা স্থানে তৈরি করা হয়েছে সেটা বোঝানো হয়েছে।

অ্যানিমে পরিভাষাটির ব্যুৎপত্তি বিতর্কিত। ইংরেজি শব্দ অ্যানিমেশনকে জাপানি কাতাকানায় アニメーション (আনিমেশন) এবং অ্যানিমেকে アニメ (আনিমে) যা সংক্ষিপ্তরুপ, বলে উল্লেখ করা হয়।[৭] কোনো কোনো সূত্র দাবি করে অ্যানিমে পরিভাষাটি ফরাসি dessin animé (দিসা আনিমে) যার অর্থ “কার্টুন”, আক্ষরিক অর্থ “অ্যানিমেটেড ডিসাইন”, থেকে আহরিত[৮] কিন্তু অন্যরা একে পুরাকথা বা মিথ বলে বিশ্বাস করে। তার কারণ হিসাবে ১৯৭০ এবং ১৯৮০’র দশকের শেষের দিকে ফ্রান্সে অ্যানিমের জনপ্রিয়তাকে দায়ী করা হয়।[৭]

বাংলায় অ্যানিমেকে সাধারণত বিশেষ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যেমনঃ তুমি অ্যানিমে দেখো? অথবা তোমার প্রিয় অ্যানিমের নাম কি? এছাড়া সাকে, পোকেমন সহ আরও জাপানি শব্দ কথোপকথনে ব্যবহার করা হয়। বাংলায় “অ্যানিমের” বানানের বৈচিত্র্য দেখা যায়, যেমনঃ অ্যানিমে, আনিমে, এনিমে এবং এনিম। বানানের বৈচিত্র্যের সাথে সাথে উচ্চারণেরও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। অ্যানিমে শব্দের ব্যাপক ব্যবহারের আগে, “জাপানিমেশন” পরিভাষাটি ১৯৭০ ৮০’র দশকে প্রচলিত ছিল। ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে “জাপানিমেশন” শব্দটির বিলুপ্তি ঘটতে থাকে এবং “অ্যানিমে” শব্দের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে থাকে।[৯] সাধারনভাবে, “জাপানিমেশন” শব্দটি বর্তমানে শুধু আগের আমলের কাজে ও আগের আমল নিয়ে প্রতিবেদনে ব্যবহৃত হয়, যেখানে শব্দটির দ্বারা জাপানি অ্যানিমেশনকে আলাদা এবং সনাক্ত করা হয়।[১০]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
নামাকুরা কাতানা (১৯১৭) থেকে নেওয়া একটি ফ্রেম। সিনেমার জন্য তৈরী সবচেয়ে প্রাচীনতম স্বল্পদৈর্ঘ্যের অ্যানিমে চলচ্চিত্র।

আবির্ভাবের পূর্বলক্ষণসমূহ সম্পাদনা

এমাকিমোনো এবং কাগেএ এই দুটিকে জাপানি আনিমেশনের আবির্ভাবের পূর্বলক্ষণ ধরা হয়।[১১] একাদশ(১১) শতাব্দীতে এমাকিমোনো প্রচলিত ছিল। “ভ্রমণকারী গল্পকার” যারা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে কিচ্ছা-কাহিনী বলে বেড়াতো তাঁরা এমাকিমোনোর মাধ্যমে নানান লোককথা ও রুপকথার কাহিনী লোকজনদের দেখাতো ও শুনাতো। তাঁরা কিচ্ছা বলার সাথে সাথে এমাকিমোনোর গোটানো কাগজ ডান থেকে বামে কালানুক্রমিকভাবে (ক্রনোলজিকাল অর্ডারে) খুলতে থাকতো।[১১]

“কাগেএ” এডো যুগে জনপ্রিয় ছিল যার উৎপত্তি চীনা ছায়ানাটক থেকে।[১১] এছাড়া অষ্টাদশ(১৮) শতাব্দীতে নেদারল্যান্ডের “জাদুর লন্ঠনও” জনপ্রিয় ছিল।[১১]কামিশিবাই” নামক একধরনের কাগজে অঙ্কিত ছবির সাহায্যে গল্প বলার ধাঁচ (ছবিনাটক) দ্বাদশ(১২) শতাব্দীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং ১৯৩০ সাল অব্দি পথনাট্যমঞ্চে (স্ট্রিট থিয়েটারে) জনপ্রিয় থাকে।[১১]বানরাকু” (জাপানি পুতুলনাচ) এবং “উকিও-এ” (জাপানি শিল্পকলার একটি বর্গ) এই দুটিকে বেশিরভাগ জাপানি অ্যানিমেশনের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত করা হয়।[১১] সবশেষে, মাঙ্গা নিজেই অ্যানিমের জন্য ভারি অনুপ্রেরনাদায়ক ছিল। কার্টুনিস্ট কাতযাওয়া রাকুতেন এবং ওকামোতো ইপ্পেই তাদের রেখচিত্রমালায় (কমিক স্ট্রিপ্সে) চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত কৌশল ব্যবহার করেন।[১১]

প্রবর্তক সম্পাদনা

 
মোমোতারোঃ উমি নো শিনপেই (১৯৪৫) থেকে নেওয়া একটি দৃশ্য।

জাপানে অ্যানিমেশন বিংশ(২০) শতাব্দীর গোরা থেকেই তৈরি করা শুরু হয়। তখন জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতারা ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়াতে প্রবর্তনকৃত অ্যানিমেশন কৌশলসমূহ নিয়ে পরীক্ষা করা শুরু করে।[৮] কাতসুদো সাশিন (১৯০৭), একে সবচেয়ে পুরাতন জাপানি অ্যানিমেশন বলে দাবি করা হয়,[১২] যা একজন অজানা তৈরিকারকের একটি ব্যাক্তিগত কর্ম।[১৩] ১৯১৭ সালে সর্বপ্রথম পেশাদারী (প্রফেশনাল) এবং সার্বজনীনভাবে প্রদর্শিত অ্যানিমের আগমন ঘটতে শুরু করে। অ্যানিমেটরদের মধ্যে ওতেন শিমোকাওয়া, সেইতারো কিতায়ামা, জুনইচি কোওচি (যাদের অ্যানিমের পিতা বলে বিবেচনা করা হয়) তাঁরা তখন নানান অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরি করে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরানো শুধু জুনইচি কোওচির “নামাকুরা কাতানা” কর্মটি বিদ্যমান।[১৪] ১৯২৩ সালে জাপানের কান্তো অঞ্চলে মহাভুমিকম্প যাকে “কান্তোর মহাভুমিকম্প” বলা হয়, এর কারনে শিমোকাওার গুদামঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, এরসাথে হারিয়ে যায় অনেক পুরানো পুরানো অ্যানিমেশন কর্ম ।[১৫] ১৯৩০’র মাঝামাঝিতে অ্যানিমেশন জাপানে অন্যান্য বিনোদন মাধ্যমের পাশাপাশি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। একে অনেক চরাই উৎরাই দিয়ে পাড় হতে হয়, তখন অ্যানিমেকে “ডিজনির” মত বিদেশি অ্যানিমেশন পণ্যের প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। তাসত্ত্বেও অনেক অ্যানিমেটর যেমনঃ নোবুরো ওফুজি এবং ইয়াসুজি মুরাতা সহ অনেকেই কোষ বা সেল অ্যানিমেশনের পরিবর্তে সস্তা ছেদন বা কাট আউট অ্যানিমেশন তৈরি চালিয়ে যেতে থাকে।[১৬] কেনজো মাসাওকা এবং মাতসুয়ো সেয়োর মত আরও অ্যানিমেশন নির্মাতারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থেকে উপকৃত হয়ে নির্মাণ কৌশলে দুর্দান্ত অগ্রগতি সাধন করে। সরকারের অ্যানিমেটরদেরকে চাকরি দেওয়ার পিছনে উদ্দেশ্য ছিল তাঁরা যাতে তাঁদের জন্য শিক্ষামূলক ভিডিও এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা বা প্রোপাগান্ডা তৈরি করে।[১৭] ১৯৪০’র দিকে সরকার বেশ কয়েকটি শিল্পীসংস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে “শিন নিপ্পন মাঙ্গাকা কিয়োকাই” যার অর্থ “নয়া-জাপান মাঙ্গাকা সমিতি“ গঠন করে।[১৮] প্রথম সবাক অ্যানিমেশন অর্থাৎ আওয়াজ সম্বলিত অ্যানিমেশনের নাম হল চিকারা তো ওন্না নো ইয়ো নো নাকা (১৯৩৩), মাসাওকা প্রযোজিত একটি সল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।[১৯] [২০] প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমে চলচ্চিত্র হল মোমোতারোঃ উমি নো শিনপেই (১৯৪৫) নির্মাতা সেয়ো দ্বারা প্রযোজিত এবং সাম্রাজ্যিক জাপানি নৌবাহিনীর সৌজন্যে ও অর্থায়নে নির্মিত।[২১] ১৯৫০’র দশকে টেলিভিশনের জন্য তৈরি সল্পদৈর্ঘ্যের অ্যানিমেটেড বিজ্ঞাপনের বিস্তার দেখা দেয়।[২২]

আধুনিক যুগ সম্পাদনা

 
তেযুকা নির্মিত এস্ট্রো বয় ১৯৬৩ সালের অনুষ্ঠানের শুরুর সিকোয়েন্স থেকে নেয়া একটি ফ্রেম।

১৯৬০’র দশকে মাঙ্গা শিল্পী ওসামু তেযুকা ডিজনির অ্যানিমেশন তৈরির কৌশল গ্রহন করে তার সরলীকরণ করেন অ্যানিমেশন তৈরির খরচ কমাতে এবং ফ্রেমের সংখ্যা সীমিত করতে।[২৩] মূলত তার নিয়ত ছিল সাময়িক সময়ের জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহন করা যাতে তিনি কম সময়ে এবং অনভিজ্ঞ কর্মীদের দ্বারা অ্যানিমেশন তৈরি করতে পারেন। কিন্তু তার এই সীমিত অ্যানিমেশন প্রক্রিয়ার পদক্ষেপই আগামি সময়ে এই অ্যানিমে মাধ্যমের শৈলীকে সংজ্ঞায়িত করে।[২৪] মিতসু নো হানাশি (১৯৬০) হল সর্বপ্রথম টিভিতে সম্প্রচারকৃত অ্যানিমে।[২৫] প্রথম অ্যানিমে ধারাবাহিক হল ওতোগি মাঙ্গা ক্যালেন্ডার (১৯৬১-৬৪)।[২৬] এস্ট্রো বয় বা তেতসুওয়ান আতোমু (১৯৬৩-৬৬) ছিল সেকালের প্রথম প্রভাবশালী সফল টেলিভিশন ধারাবাহিক যার পরিচালক ছিলেন তেযুকা এবং এটা একই নামের তারই মাঙ্গার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। তেযুকার “মুশি প্রোডাকশন” কোম্পানিতে কাজ করা অনেক অ্যানিমেটরাই পরবর্তীতে মুখ্য মুখ্য ষ্টুডিওগুলো প্রতিষ্ঠা করে যেমনঃ ম্যাডহাউজ, সানরাইজ, পিয়েরো ইত্যাদি।

১৯৭০’র দশকে মাঙ্গার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, যার অনেকগুলিকে পরে অ্যানিমেট করা হয়েছিল। তেযুকার কাজের দ্বারা এবং এই ক্ষেত্রের অন্যান্য প্রবর্তকদের কাজের দ্বারা যে বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং বর্গগুলি অনুপ্রাণিত হয় সেগুলো এখনও বর্তমান অ্যানিমের মৌলিক উপাদান হিসেবে বিদ্যমান। “বিশাল রোবট” নামক বর্গ যা “মেকা” হিসাবেও পরিচিত তা তেযুকার কাছে আকৃতি পেতে শুরু করে, পরে গো নাগাই ও অন্যান্যদের অধীনে “সুপার রোবটে” বিকশিত হয় এবং শেষমেশ ইয়োশিয়াকি তোমিনো এই দশকের শেষে এর বিপ্লায়ন ঘটান, তিনিই “বাস্তব রোবট” বর্গটির বিকাশসাধন করেন ।[২৭] রোবট অ্যানিমে ধারাবাহিক যেমনঃ গান্ডাম, ম্যাক্রস ১৯৮০’র দশকে তাৎক্ষনিক ক্লাসিক হয়ে উঠে এবং আগামী দশকগুলোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় বর্গগুলির মধ্যে একটি হিসেবে স্থান গড়ে নেয়।[২৮] ১৯৮০’র দশকে জাপানের বুদবুদ অর্থনীতির দরুনে উচ্চ বাজেটের ও পরীক্ষামূলক অ্যানিমে চলচ্চিত্রের জোয়ার উঠে, উদাহরণস্বরূপ, কাযে নো তানি নো নাউশিকা বা বাতাসের উপত্যকার নাউশিকা (১৯৮৪), ওরিত্সু উচুওগুনঃ ওনেয়ামিস নো সুবাসা বা রাজ-নভোবাহিনীঃ হোনেয়ামিসের ডানা (১৯৮৭), আকিরা (১৯৮৮) সহ আরও অনেক।[২৯]

শিনসেকি এভানগেরিয়ন বা নবশতাব্দির এভানগেলিয়ন বা নবশতাব্দির সুসংবাদ (১৯৯৫) একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক যার নির্মাতা গাইনেক্স ষ্টুডিও এবং পরিচালক হিদেয়াকি আন্নো আরও একটি নতুন পরীক্ষামূলক অ্যানিমে যুগের আরম্ভ ঘটায়, যেমনঃ কোকাকু কিদোউতাই বা গোস্ট ইন দ্যা শেল বা সাঁজোয়া খোলস (১৯৯৫), কাউবয় বিবপ (১৯৯৮) ইত্যাদি। ৯০’র দশকে অ্যানিমে পশ্চিমা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আরম্ভ করে। বৃহৎ আন্তর্জাতিক সাফল্যের মধ্যে রয়েছে রূপসী যোদ্ধা সেইলার মুন এবং ড্রাগন বল জি, উভয় অনুষ্ঠানকেই বিশ্বব্যাপী এক ডজনেরও বেশি ভাষায় ডাব করা হয়। ২০০৩ সালে সেন তো চিহিরো নো কামিকাকশি বা স্পিরিটেড অ্যাওয়ে বা সেন আর চিহিরোর রহস্যময় অন্তর্ধান, হায়াও মিয়াযাকি পরিচালিত একটি ষ্টুডিও জিবলীর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ৭৫তম একাডেমী পুরষ্কারে সেরা অ্যানিমেটেড পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসাবে একাডেমী পুরস্কার জয়লাভ করে। পরবর্তীতে এটি ৩১০৯ কোটি টাকারও বেশি আয় করে সর্বোচ্চ-আয়কারী অ্যানিমে চলচ্চিত্র হয় । তোমার নাম (২০১৬) পরবর্তীতে এই জায়গা দখল করে নেয়। ২০০০ সাল থেকে অনেক লাইট নভেল বা ছোট উপন্যাস এবং ভিজুয়াল নভেল বা ঐক্ষিক উপন্যাস থেকে অ্যানিমে তৈরির বর্ধিত সংখ্যা দেখা যায়, যেমনঃ হারুহি সুজুমিয়ার বিষাদ এবং ফেইট/স্টে নাইট (উভয়ই ২০০৬)। ২০২০ সালে ডিমন স্লেইয়ারঃ কিমেতসু নো ইয়াইবা ছবিঃ অসীম ট্রেন পুরো দুনিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ-আয়কারী চলচ্চিত্র হয় এবং জাপানে এটি সর্বোচ্চ-আয়কারী জাপানি চলচ্চিত্র হয়। এবং এর সাথে ১০ দিনের মধ্যে ১০০০ কোটি ইয়েন (৬৮৩+কোটি ৳ ) আয় করে এটি জাপানের দ্রুততম-আয়কারী অ্যানিমে চলচ্চিত্র হয় এবং পূর্বের সেন আর চিহিরোর রহস্যময় অন্তর্ধানের ২৫ দিনের রেকর্ডকে পরাজিত করে।[৩০]

জাপানি অ্যানিমেশনসমূহের শ্রেণিবিভাগ সম্পাদনা

[৩১] জাপানি আনিমের ধরনের মধ্যে রয়েছে-

জাপানি অ্যানিমেশন স্টুডিওসমূহের তালিকা সম্পাদনা

অ্যা সম্পাদনা

  • আনিমে ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি ইনকর্পোরেটেড (Anime International Company Inc.- 株式会社アニメ・インターナショナルカンパニ)
  • আর্মস কর্পোরেশন (Arms Corporation- 有限会社アームス)
  • আর্টল্যান্ড ইনকর্পোরেটেড (Artland, Inc.- 株式会社アートランド)
  • আসাহি প্রডাকশন (Asahi Production- 旭プロダクション)
  • আযিয়া-দো অ্যানিমেশন ওয়ার্কস (ajia-do Animation Works- 株式会社亜細亜堂)
  • অ্যাসরিড (Asread- アスリード)
  • অ্যাকটাস ইনকর্পোরেটেড (Actas Inc.- 株式会社アクタス)

সম্পাদনা

  • ইম্যাজিন (Imagin イマジン)

বিখ্যাত অ্যানিমেশনসমূহ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "What "Anime" Means"Kotaku (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৯ 
  2. Japan pop! : inside the world of Japanese popular culture। Timothy J. Craig। Armonk, N.Y.: M.E. Sharpe। ২০০০। পৃষ্ঠা ১৩৯–১৪০। আইএসবিএন 0-585-38331-6ওসিএলসি 49415106 
  3. "A Serious Look at Big Anime Eyes"Kotaku (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৯ 
  4. Napier, Susan J. (২০১৬)। Anime from akira to howl's moving castle : experiencing contemporary Japanese animation। New York: St. Martin's Press। পৃষ্ঠা ১০। আইএসবিএন 978-1-250-11772-4ওসিএলসি 965712198 
  5. Poitras, Gilles (২০০১)। Anime essentials : every thing a fan needs to know। Berkeley, Calif.: Stone Bridge Press। পৃষ্ঠা ৭। আইএসবিএন 1-880656-53-1ওসিএলসি 45633187 
  6. "Wayback Machine" (পিডিএফ)web.archive.org। Archived from the original on ২০০৭-০৮-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৯ 
  7. "Anime - Anime News Network"www.animenewsnetwork.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৯ 
  8. Schodt, Frederik L. (১৯৮৩)। Manga! Manga! : the world of Japanese comics (1st ed সংস্করণ)। Tokyo: Kodansha International। আইএসবিএন 0-87011-549-9ওসিএলসি 9194871 
  9. Patten, Fred (২০০৪)। Watching anime, reading manga : 25 years of essays and reviews। Berkeley, Calif.: Stone Bridge Press। পৃষ্ঠা ৮৫–৮৬। আইএসবিএন 1-880656-92-2ওসিএলসি 55764479 
  10. Patten, Fred (২০০৪)। Watching anime, reading manga : 25 years of essays and reviews। Berkeley, Calif.: Stone Bridge Press। পৃষ্ঠা ৬৯–৭০। আইএসবিএন 1-880656-92-2ওসিএলসি 55764479 
  11. Novielli, Maria Roberta (২০১৮)। Floating worlds: a short history of Japanese animation (English ভাষায়)। আইএসবিএন 978-1-351-33482-2ওসিএলসি 1020690005 
  12. "Wayback Machine" (পিডিএফ)web.archive.org। পৃষ্ঠা ১৪। Archived from the original on ২০২০-০৯-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২০ 
  13. "Wayback Machine" (পিডিএফ)web.archive.org। পৃষ্ঠা ১৬৯। Archived from the original on ২০২০-০৯-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২০ 
  14. "Wayback Machine" (পিডিএফ)web.archive.org। Archived from the original on ২০১৪-০৮-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২০ 
  15. Clements, Jonathan (২০০৬)। The anime encyclopedia : a guide to Japanese animation since 1917। Helen McCarthy (Rev. & expanded ed সংস্করণ)। Berkeley, Calif.: Stone Bridge Press। পৃষ্ঠা ১৭০। আইএসবিএন 1-933330-10-4ওসিএলসি 71237342 
  16. "Midnight Eye feature: Pioneers of Japanese Animation at PIFan – Part 1"www.midnighteye.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২০ 
  17. Watanabe, Yasushi (১৯৭৭)। Nihon animēshon eigashi. Yūbunsha। Yamaguchi, Katsunori। পৃষ্ঠা ২৬–৩৭। 
  18. Kinsella, Sharon (২০০০)। Adult manga : culture and power in contemporary Japanese society। Honolulu। পৃষ্ঠা ২২। আইএসবিএন 0-8248-2317-6ওসিএলসি 42603226 
  19. Anime : a guide to Japanese animation, 1958-1988। Claude J. Pelletier, Andrea Baricordi, Massimiliano De Giovanni, Andrea Pietroni, Barbara Rossi, Sabrina Tunesi, Adeline D'Opera, Protoculture। Montréal। ২০০০। পৃষ্ঠা ১২। আইএসবিএন 2-9805759-0-9ওসিএলসি 45487015 
  20. Japan : an illustrated encyclopedia। Kōdansha, 講談社. (1st ed সংস্করণ)। Tokyo: Kodansha। ১৯৯৩। আইএসবিএন 4-06-931098-3ওসিএলসি 27812414 
  21. Official booklet (২০০৯)। The Roots of Japanese Anime (DVD)। Zakka Films। 
  22. Animation and advertising। Malcolm Cook, Kirsten Moana Thompson। Cham: Palgrave Macmillan। ২০২০। পৃষ্ঠা ২১৩। আইএসবিএন 978-3-030-27939-4ওসিএলসি 1134076470 
  23. Brenner, Robin E. (২০০৭)। Understanding manga and anime। Westport, Conn.: Libraries Unlimited। পৃষ্ঠা ৬। আইএসবিএন 978-0-313-09448-4ওসিএলসি 230776264 
  24. "The History of Anime and Manga"novaonline.nvcc.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২০ 
  25. Patten, Fred (২০০৪)। Watching anime, reading manga : 25 years of essays and reviews। Berkeley, Calif.: Stone Bridge Press। পৃষ্ঠা ২৭১। আইএসবিএন 1-880656-92-2ওসিএলসি 55764479 
  26. Patten, Fred (২০০৪)। Watching anime, reading manga : 25 years of essays and reviews। Berkeley, Calif.: Stone Bridge Press। পৃষ্ঠা ২১৯। আইএসবিএন 1-880656-92-2ওসিএলসি 55764479 
  27. Patten, Fred (২০০৪)। Watching anime, reading manga : 25 years of essays and reviews। Berkeley, Calif.: Stone Bridge Press। পৃষ্ঠা ২৬৪। আইএসবিএন 1-880656-92-2ওসিএলসি 55764479 
  28. Patten, Fred (২০০৪)। Watching anime, reading manga : 25 years of essays and reviews। Berkeley, Calif.: Stone Bridge Press। পৃষ্ঠা ৩০৬–৩০৭। আইএসবিএন 1-880656-92-2ওসিএলসি 55764479 
  29. Le Blanc, Michelle (২০১৪)। Akira। Colin Odell। Houndmills, Basingstoke, Hampshire। পৃষ্ঠা ৫৬। আইএসবিএন 978-1-84457-810-8ওসিএলসি 969383339 
  30. "How a demon-slaying film is drawing Japan back to the cinemas - BBC News"web.archive.org। ২০২০-১১-০৩। Archived from the original on ২০২০-১১-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২০ 
  31. https://myanimelist.net/info.php?go=genre

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা