বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
বিজ্ঞান কল্পকাহিনী, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বা কল্পবিজ্ঞান আধুনিক কল্পসাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা বা শ্রেণী, যাতে ভবিষ্যৎ বৈজ্ঞানিক বা প্রযুক্তিগত আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং মানব সভ্যতাকে কেন্দ্র করে পটভূমি রচনা করা হয়। মানব সভ্যতা মধ্যযুগে থেকে আধুনিক যুগে প্রবেশের সময় যে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সৃষ্টি হয় তার অনিবার্য ফসল ছিল বিজ্ঞান কল্পকাহিনী। ইংরেজিতে একে “সাইন্স ফিকশন” বলা হয়। বাংলা ভাষায় প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখা শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। বাংলা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী সাহিত্যের অগ্রদূত বলা যায় জগদানন্দ রায়কে; তিনি শুক্র ভ্রমণ নামক একটি জনপ্রিয় বই লিখেছিলেন। অন্যান্য লেখকদের মধ্যে লীলা মজুমদার, ক্ষিতীন্দ্রনারায়ন ভট্টাচার্য, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিত রায়, অদ্রীশ বর্ধন, সিদ্ধার্থ ঘোষ-এর নাম প্রাসঙ্গিক। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুও একটি কল্পবিজ্ঞান গল্প লিখেছেন পলাতক তুফান নামে।
সংজ্ঞাসম্পাদনা
ইতিহাসসম্পাদনা
ধারণাসমূহসম্পাদনা
বহির্জাগতিক প্রাণসম্পাদনা
এই বিশাল মহাবিশ্বে কি শুধু মাত্র পৃথিবীতেই প্রাণ আছে? এই প্রশ্নটি তাড়া করে বেড়াচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের । তাদের ধারনার সেই ভিন্ন গ্রহের প্রাণীদের নাম দেয় এলিয়েন ।
মানুষ আবিষ্কারপ্রেমী, সাথে কল্পনাপ্রেমীও। কারণ আবিষ্কারের তাড়না জন্মায় কল্পনা থেকে । আর এইভাবেই আবিষ্কার হয়েছে নানা অজানা ।
বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তাসম্পাদনা
জৈব প্রযুক্তিসম্পাদনা
অতি দ্রতগতিসম্পন্ন নভোযানসম্পাদনা
সম্ভাবনার দ্বার প্রান্তে অতি দ্রুতগতিশীল নভোযান: বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সমীকরণ E=MC² হচ্ছে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক জার্মানির আলবার্ট আইনস্টাইনের ‘থিওরি অব স্পেশাল রিলেটিভিটি’ বা বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের চূড়ান্ত ফল- যাতে নিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে যে, আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ (এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার) মাইলের উর্ধ্বে কখনও হতে পারে না। সমীকরণ E=MC² সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় অতি দ্রুতগতিসম্পন্ন মহাকাশ যানের সম্ভাব্যতার ক্ষেত্রে অনেকটা প্রতিবন্ধক স্বরূপ হওয়ায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র সার্ণ (CERN) কর্তৃক ২০১১ সালে জেনেভার সার্ন ল্যাবরেটরি থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা ইটালির রোমের কাছে মাটির নীচের গ্রান সাসো ল্যাবরেটরিতে নিউট্রিনো পাঠিয়ে দেখতে পায় যে, আলোর চেয়ে অন্ততঃ ৬০ ন্যানো সেকেন্ড বেশি দ্রুতগতিতে রোম ল্যাবরেটরিতে নিউট্রিনো পৌঁছে গেছে। এই অবিস্মরণীয় আবিস্কারের ঘোষণায় সায়েন্স ফিকশনপ্রিয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় এ ভেবে যে, প্রত্যাশিত অতি দ্রুতগতিসম্পন্ন স্বাপ্নিক মহাকাশ যান এবার বাস্তবতায় রূপ নেবে; যেমন আদিকালে পাখির ন্যায় আকাশে উড়ার মানব দিব্যিস্বপ্ন একসময় রাইটভ্রাতৃদ্বয়ের মাধ্যমে বিমান প্রযুক্তি আবিস্কারের মাধ্যমে সম্ভবপর হয়েছিল।
নিউট্রিনো আবিস্কারে বৈজ্ঞানিক প্রতিক্রিয়া:
অধ্যাপক জেনি থোমাস: অ্যামেরিকার ‘ফার্মিল্যাব' ও জাপানের ‘টিটুকে' নামের দুটি গবেষণা কেন্দ্রও সার্ণের মত নিউট্রিনো বিষয় নিয়ে কাজ করছে ৷ ফার্মিল্যাবের এক বিজ্ঞানী অধ্যাপক জেনি থোমাস বলছেন সার্নের বিজ্ঞানীদের তথ্য যদি আসলেই সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে পদার্থবিজ্ঞানে তার প্রভাব হবে অনেক বড় ৷
স্টিফেন হকিং: সার্ণ কর্তৃক আলোর চাইতে অধিক দ্রুত গতিশীল নিউট্রিনো আবিস্কারের খবর শুনে বৃটিশ পদার্থবিদ, জগত কাঁপানো বিগ ব্যাং তত্ত্বের স্থপতি স্টিফেন হকিং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, সার্নের গবেষণার ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি ৷
মার্টিন রিস: ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী কসমোলজিস্ট ও অ্যাস্ট্রোফিজিসিষ্ট মার্টিন রিস বলেছেন, অতি আশ্চর্যের কোনো দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সেরকমই কোনো প্রমাণ ৷ সার্নের বিজ্ঞানীরা যেটা বলছেন সেটা সেরকমই একটা অতি আশ্চর্যের।
উল্লেখ্য, আলবার্ট আইনস্টাইনের ‘থিওরি অব স্পেশাল রিলেটিভিটি’ বা বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব E=MC²: আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ (এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার) মাইলের প্রতিষ্ঠিত যে বিধিবদ্ধতা তা সার্ণ কর্তৃক অন্তত: ৬০ ন্যানো সেকেন্ড বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন নিউট্রিনো আবিস্কারের ফলে সায়েন্স ফিকশনিস্টদের মনে সময় পরিভ্রমণের (Time Travel) যে আশার আলো জেগেছিল পরবর্তি গবেষণায় ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণিত হওয়ায় তা নিরাশায় পরিণত হয়।
সময় পরিভ্রমণ (Time Travel)
মানুষ স্বভাবজাত সময় পরিভ্রমণকারী (টাইম ট্রাভেলার):
মানুষ অনেকটা উড়ন্ত স্বভাবের। আবহমানকাল থেকে মানুষ পাখির উড়ন্ত অবস্থা দেখে দেখে তার উড়ার সাধ যেদিন থেকে ভাবান্তরে জেগেছিল ঠিক সেদিন থেকেই কার্যত: আকাশ প্রযুক্তির (বিমান-রকেট-ওয়ার্মহোল-র্যাপ ড্রাইভ) সূচনা ঘটায়। ইতোমধ্যেই মানুষ বিমান-রকেট প্রযুক্তি যথেষ্ট আয়ত্ব করেছে; ওয়ার্মহোল-র্যাপ ড্রাইভ হয়তো সময়ের ব্যাপার।
বিমান প্রযুক্তিঃ বিমান একপ্রকার যন্ত্র যা বায়ুর উপর ভর করে উড়তে সক্ষম হয়। এটি এয়ারফুয়েলের স্থির উত্তোলন বা গতিশীল উত্তোলন অথবা কিছু ক্ষেত্রে জেট ইঞ্জিনের নিম্নমুখী ধাক্কা দ্বারা অভিকর্ষের বিপরীতে ক্রিয়া করে।
বিমানের গতি-প্রকৃতিঃ
·সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন উড্ডয়নের রেকর্ড ধারণকারী বিমান- নাসার এক্স-৪৩এ পেগাসাস, যা স্ক্রামজেট চালিত,শব্দোত্তর গতিসম্পন্ন, লিফটিং বডি, পরীক্ষামূলক বিমান যা ১৬ নভেম্বর, ২০০৪ তারিখে ম্যাক ৯.৬ বা ঘণ্টাপ্রতি ৭০০০ মাইল বেগ অর্জন করার মধ্য দিয়ে রেকর্ড গড়ে।
· সর্বাধিক গতিসম্পন্ন শক্তিচালিত উড়োজাহাজ উড্ডয়নের রেকর্ড- উত্তর আমেরিকান এক্স-১৫এ-২ উড়োজাহাজ ১৯৬৭ সালের ৩ অক্টোবর, ম্যাক ৬.৭২ বা ৪৫২০ মাইল প্রতিঘণ্টা বেগ তুলে এ রেকর্ড গড়ে।
o দ্রুততম স্থির পাখাবিশিষ্ট বিমান এবং গ্লাইডার- স্পেস শাটল, যা প্রায় ম্যাক ২৫ বা ঘণ্টায় ১৭০০০ মাইল বেগ তুলতে সক্ষম হয়।
o দ্রুততম সামরিক বিমান- লকহিড এসআর-৭১ ব্ল্যাকবার্ড(ম্যাক ৩.৩ বা ২২০০ মাইল প্রতিঘণ্টা)
o দ্রুততম বর্তমান সামরিক বিমান- যৌথভাবে সোভিয়েত/রাশিয়ান মিগ-২৫ যুদ্ধবিমান(ম্যাক ৩.২, ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সাপেক্ষে এবং ম্যাক ২.৮৩, স্বাভাবিক অবস্থায়) এবং রাশিয়ান মিগ-৩১ (ম্যাক ২.৮৩)
o সর্বকালের দ্রুততম বেসামরিক ও যাত্রীবাহী বিমান-টুপোলেভ টু-১৪৪ সুপারসনিক জেট বিমান।(ম্যাক ২.৩৫)
o দ্রুততম বর্তমান বেসামরিক উড়োজাহাজ- আমেরিকান সেসনা সিটেশন টেন বিমান(ম্যাক ০.৯৩৫)
o দ্রুততম বর্তমান যাত্রীবাহী বিমান- বোয়িং ৭৪৭(ম্যাক ০.৮৮৫) https://bn.wikipedia.org/wiki/বিমান
·রকেট প্রযুক্তিঃ নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র অনুসৃত রকেট (ইংরেজি: Rocket) এমন এক ধরনের মহাকাশ যান যেখানে রাসায়নিক শক্তির দহনের মাধ্যমে সৃষ্ট উৎপাদকগুলিকে প্রবল বেগে যানের নির্গমন পথে নিঃসরণের ফলে সৃষ্ট ঘাতবলের কারণে অতি দ্রুতযানে রূপ পরিগ্রহ করে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, মহাশূন্যচারী, নিয়ন্ত্রণ ও দিক নির্ধারণ ব্যবস্থা, পেলোড-১, পেলোড-২, ফার্স্ট স্টেজ, সেকেন্ড স্টেজ, বুস্টার, নজেল, প্রধান ইঞ্জিন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সাজসরন্জ্ঞাম সমৃদ্ধ রকেটযানে রক্ষিত জ্বালানী রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পেছন নিঃসরণের ফলে রকেট সামনের দিকে দ্রুত বেগে চলতে শুরু করে।
বিশ্বে অনেক ধরনের রকেট উদ্ভাবিত হয়েছে। এটি ছোট্ট বোতল আকৃতি থেকে শুরু করে বৃহৎ আকৃতির মহাকাশযানের মতো হতে পারে। তন্মধ্যে এরিয়েন ৫ হচ্ছে অন্যতম বৃহৎ আকৃতির রকেট যা দিয়ে কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ করা হয়।
জার্মান বিজ্ঞানী বার্নার ফন ব্রাউন আমেরিকার মহাকাশ প্রকল্পে (নাসা) কাজ করেন ও চাঁদে নভোচারী প্রেরণে সহায়তা করেন। https://bn.wikipedia.org/wiki/রকেট
জেট প্রযুক্তিঃসম্পাদনা
জেট বিমানে থাকে জেট ইঞ্জিন যা বাতাস ভিতরে টেনে নিয়ে তার দহন করে এবং উচ্চবেগে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে ধাক্কা অর্জন করে। অনেকক্ষেত্রে,অতিরিক্ত ধাক্কা অর্জনের জন্য টার্বোফ্যান বা টার্বোগ্যাস ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়।তাছাড়া অতিরিক্ত জ্বালানী প্রবাহের জন্য আফটারবার্নার যুদ্ধবিমানগুলোতে ব্যবহৃত হয়। জেট ইঞ্জিনের নিম্নমুখী ধাক্কা দ্বারা অভিকর্ষের বিপরীতে ক্রিয়া করে। (সূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/বিমান)
বস্তুত: জেট বিমান অত্যন্ত দ্রুত গতি সম্পন্ন বিমান যা প্রায় সুপারসোনিক কিংবা ট্রান্সোনিক গতির হয়ে থাকে। এরা এত দ্রুত গতি অর্জন করে নিউটনের ৩য় সূত্র প্রয়োগের মাধ্যমে। প্রচন্ড বলে বিমান থেকে নির্গত পদার্থের প্রতিক্রিয়া বলের কারণেই জেট বিমান গতি লাভ করে। সাধারণ যাত্রীবাহী বিমানগুলো বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তরে (বায়ুস্তরের ০ থেকে ১২/১৫ কিলোমিটার (০ থেকে ৭/৯ মাইল উচ্চে) অবস্থিত "ট্রপোস্ফিয়া" স্তর দিয়ে চলাচল করে আর যাত্রী এবং মালবাহী জেট বিমানগুলো তার উপরের স্তরে (বায়ুস্তরের ১২/১৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার (৭/৯ থেকে ৩১ মাইল উচ্চে) অবস্থিত "স্ট্যাটোস্ফিয়ার" স্তর দিয়ে চলাচল করে।
টাইম ট্রাভেল আসলে কী?
টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ। এটি আসলে সময়ের অক্ষ বরাবর ভ্রমণ। আমরা সকলেই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে অবগত,দৈর্ঘ্য,প্রস্থ এবং উচ্চতা। এই তিনটি মাত্রা বরাবর স্থান পরিবর্তন সম্ভব। তবে ন্যূনতম চতুর্মাত্রিক একটি ধারণা হচ্ছে সময়ের ধারণা। আজ পর্যন্ত এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে স্থান পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। এই সময়ের অক্ষ বরাবর স্থান পরিবর্তনকে কালমাত্রিক সরণ বলা হয়। এক সময় থেকে আরেক সময়ে পরিভ্রমণকেও আমরা সময় ভ্রমণ বলে থাকি। এটি হতে পারে অতীত ভ্রমণ, হতে পারে ভবিষ্যত ভ্রমণ। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান কিন্তু টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ নিয়ে একদমই বসে নেই।
ওয়ার্মহোলের ধারণাটি মূলত আমেরিকান গণিতবিদ এডওয়ার্ড কাসনার এর কাসনার মেট্রিক্স ব্যবহার করে আইন্সটাইনের ক্ষেত্র সমীকরণের সমাধানের মাধ্যমে এসেছিল এবং পরবর্তীতে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ পল এহরেনফেস্ট এর এহরেনফেস্ট প্যারাডক্স এর গঠনের উপর দাঁড়িয়ে আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। ব্ল্যাকহোলের মতোই আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব সমাধানের মাধ্যমেই ওয়ার্মহোলের মূলত: উৎপত্তি। (সূত্রঃওয়ার্মহোল-আন্তঃমহাজাগতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ http://openspace.org.bd/ওয়ার্মহোল-আন্তঃমহা জগত/)
প্রকৃতপক্ষে ওয়ার্ম হোল হচ্ছে একটি থিওরিটিকাল প্যাসেজ অথবা টানেল যা স্পেসটাইমে এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে যেতে একটি শর্টকাট তৈরি করে এবং যার ফলস্বরূপ ইউনিভার্সের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমনটা সময়ের সাথে কমে যায়। (সূত্রঃhttp://openspace.org.bd/ওয়ার্মহোল-আন্তঃমহা জগত/)
যোগাযোগ স্থাপক টানেল এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের একটি স্থান থেকে অন্য একটি স্থানে কম সময়ের মাঝেই ভ্রমণ (Travel) কল্পনা করা যায়। সম্ভাব্য এই ট্যানেল প্রায় কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষের পার্থক্যে থাকা মহাবিশ্বের দুটি বিন্দুকে মাত্র কয়েক মিটারের একটি টানেলের মাধ্যমে সংযুক্ত করে দিতে পারে। আলোকতত্ত্বমতে, আলো সর্বদা সরল পথে চলে। তাই ওই দুই বিন্দুর একস্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে আলোর কয়েক বিলিয়ন বছর সময় লাগলেও, প্রস্তাবিত ওয়ার্মহোল ব্যবহার করে হয়তো আমরা অতি সহজেই মাত্র কয়েক মুহূর্তেই এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে চলে যেতে পারবো। ব্যাপারটা অনেকটাই আলোর চেয়ে বেশী বেগে চলার মতো। (সূত্রঃ(সূত্রঃhttp://openspace.org.bd/ওয়ার্মহোল-আন্তঃমহা জগত/)
অস্ট্রিয়ার প্রখ্যাত গণিতবিদ কুর্ট গডেল গণিতের মাধ্যমেই দেখিয়েছেন যে আমাদের এই মহাবিশ্বে কিছু Closed Time like Curve থাকা সম্ভব যা নির্দেশ করে শর্তসাপেক্ষে সময়ভ্রমণ সম্ভব। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারেও সময় ভ্রমণ সম্ভব। আপেক্ষিকতা অনুসারে কোনো বস্তু যখন আলোর গতিতে চলবে তখন তা হয়ে যাবে ভরশূন্য। আর যদি আলোর গতিতে চলে যায় তবে সময় স্থির হবে, মানে টাইম ট্রাভেল হবে। তার মানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা অনুযায়ী তাত্ত্বিকভাবে সময় ভ্রমণ সম্ভব।
বিশাল ভরের কারণে ব্ল্যাকহোলের চারপাশের স্থান-কালের একটি অসীম বক্রতা সৃষ্টি হয়। লক্ষকোটি আলোকবর্ষ দূরবর্তী স্থান-কালগুলো বক্রতার কারণে একটি ক্ষুদ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। এখন আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কোনো বস্তুকে যদি ব্ল্যাকহোলে নিক্ষেপ করি, তাহলে এর কণিকাগুলো ওয়ার্মহোল দিয়ে নির্গত হয়ে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে লক্ষকোটি আলোকবর্ষ দূরের কোনো জগতে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে যে স্থান-কালে পৌঁছতে ওই বস্তুর কোটি কোটি বছর লাগত তাকে আমরা ওয়ার্মহোল ব্যবহারে খুব কম সময়ে এ দূরত্বটুকু অতিক্রম করিয়ে অন্য জগতে প্রবেশ করাতে পারবো।
ওয়ার্মহোল কিংবা র্যাপ ড্রাইভ প্রযুক্তি অনেকটা অংক বা গণিতের ন্যায়। কারো জন্য অতি সহজবোধ্য আবার কারো জন্য দুর্বোধ্য বটে। তাই বিষয়গুলির সহজবোধ্যতার জন্য বিজ্ঞানী কিংবা বিজ্ঞান মনস্করা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে সচেষ্ট হন। যেমন:
“উদাহরণস্বরূপ কেউ ভীষণ অসুস্থ হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাইলেন। যেতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। নচেৎ দেরি হলে স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতি ঘটতে পারে। সময় বড়জোর মাত্র ২ ঘন্টা। অনেক দূরের পথ। বিমানে করে যেতে ১৩-১৬ ঘন্টা লেগে যায়। তৈরি করতে হবে এমন একটা সুড়ঙ্গ-যার মাধ্যমে মাত্র দুই ঘন্টায় সেখানে পৌছে গেলেন। একে বলা হয় শর্টকাট রাস্তা যার বৈজ্ঞানিক নাম ওয়ার্ম হোল”। (সূত্রঃhttp://openspace.org.bd/ওয়ার্মহোল-আন্তঃমহা জগত/)
"ওয়ার্ম হোলের ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার ধারণা লাভের জন্য একটা কাগজ নিয়ে কাগজের লম্বালম্বি দুই প্রান্তে দুটো ছোট্ট বৃত্ত আঁকা যেতে পারে। এবার কাগজটা মাঝ বরাবর ভাঁজ করে বৃত্ত দুটো এক করে কাগজটা ফুটো করি। ফুটো দুটো যোগ করে একটি ছোট টানেলের মতো তৈরি করি। এটিই হচ্ছে একটি ওয়ার্ম হোল। খেয়াল করি। কাগজটা যখন সমান্তরাল ছিল তখন বৃত্ত দুটোর মধ্যে দূরত্বটা অনেক ছিল অথচ ভাঁজ করার পর দূরত্বটা অনেক কমে গেল! এটিই ওয়ার্ম হোলের মূল ধারণা" । (সূত্রঃhttp://openspace.org.bd/ওয়ার্মহোল-আন্তঃমহা জগত/)
সময় ভ্রমণঃ মানবজাতির চিরন্তন প্রত্যাশা
১৭৩৩ খ্রিষ্টাব্দে লেখা আইরিশ লেখক স্যামুয়েল ম্যাদেনের 'মেমরিজ অব টোয়েণ্টিয়েথ সেঞ্চুরি' তে সময় ভ্রমণের হাল্কা আভাস পাওয়া যায়। ফরাসী লেখক ল্যুই সেবাস্তিয়ান মারসিয়ারের L'An 2440, rêve s'il en fut jamais উপন্যাসে আমরা পাই প্যারিসের এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির সময় ভ্রমণের বৃত্তান্ত। ১৭৭০ সালে লেখা এই উপন্যাসটি তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে রচিত মার্কিন লেখক ওয়াশিংটন আরভিংয়ের ' রিপ ভান উইঙ্কল ' ছোটগল্পটিও সময় ভ্রমণের একটি সুন্দর কাল্পনিক আখ্যান। রুশ সাহিত্যিক আলেকজান্ডার ফরমিচ ভেল্টম্যান ১৮৩৬ এ রচনা করেন 'প্রেদকি কালিমেরোসাঃ আলেকজান্ডার ফিলিপোভিচ ম্যাকেডনস্কি '। গল্পে গল্পকথক পক্ষীরাজের ঘোড়ায় প্রাচীন গ্রীস ভ্রমণ এবং সম্রাট আলেকজান্ডারের সঙ্গে সমুদ্রযাত্রার অনুষঙ্গে রুশ সাহিত্যে সম্ভবত সর্বপ্রথম সময় ভ্রমণের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন। ১৮৬১ সালে লেখা ফরাসী উদ্ভিদবিদ এবং ভূতত্ত্ববিদ পিয়ের বইটার্ডের 'প্যারিস অ্যাভোঁ লেসোম্ব' রচনাটিতে কাহিনীর মূল চরিত্রের প্রাগৈতিহাসিক প্যারিস নগর ভ্রমণের এক সুন্দর বর্ণনা ফুটে উঠেছে। এ ছাড়াও চার্লস ডিকেন্সের 'আ ক্রিসমাস ক্যারল','নিউ মান্থলি ম্যাগাজিন' এ প্রকাশিত স্বনামধন্য মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড হেলের 'হ্যান্ডস অফ' এবং আরও অসংখ্য গল্প উপন্যাসে আমরা সময় ভ্রমণের উল্লেখ পাই। (সূত্র: https://bn.wikipedia.org/wikiসময়_ভ্রমণ)
টাইম ট্রাভেলে মহাকাশ বিজয়ে মানুষের সাধ-সাধ্যের ইতিকথা
মহাকাশ কত বড়? এর উত্তর হয়তো এই পৃথিবীতে কখনও পাওয়া যাবে না। তবে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এতটুকু বলেই ক্ষ্যান্ত হন যে, জানা মহাকাশের চেয়ে অজানা মহাকাশ অ-নে-ক, অ-নে-ক বড়। কত বড়? তা অনুভব-উপলদ্ধি করতে হলে নিম্নোক্ত কিছু পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করা যেতে পারেঃ যেমন, গড় দূরত্বে ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরবর্তী সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে যদি ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড সময় নেয় তাহলে সূর্যের পরের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টুরাইতে যেতে ৪ দশমিক ৩৭ আলোক বর্ষ, আমাদের অদূরবর্তী নিজস্ব ছায়াপথ বা (মিল্কিওয়ে) এর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে বেড়াতে পাড়ি দিতে ১০ লাখ আলোক বর্ষ। আর গোটা মহাবিশ্ব যার আনুমানিক পরিধি কল্পনা করা হয়েছে কমপক্ষে যে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন আলোক বর্ষ তার মাইলেজ কিংবা কিলোমিটার বা কত?-এই অচিন্তনীয় দূরত্ব বৈজ্ঞানিক কল্পলোকে মুহুর্তের মধ্যে পাড়ি দিয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে কত দ্রুতগতি সম্পন্ন নভোতরী বা নভোভেলার প্রয়োজন তা সহজেই অনুমেয়। এ কারণে সায়েন্স ফিকশনিস্টরা কোন ভেলা বা তরীতে নয় শর্টকাট বিকল্প পথে মহাবিশ্ব মুহর্তের মধ্যে পাড়ি দিয়ে মুহুর্তের মধ্যে ফিরতে চান। শর্টকাট এই বিকল্প পথের নামকরণও করা হয়েছে “ওয়ার্ম হোল” নামে। প্রস্তাবিত ওয়ার্ম হোল-কে দুই প্রান্ত বিশিষ্ট এক প্রকার সুড়ঙ্গ (টানেল) যা মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের অকল্পনীয় দূরত্বের মধ্যে যোগসূত্রক হিসেবে কাজ করবে।
ওয়ার্মহোলের ধারণাটা এসেছিল কার্যতঃ ত্রিমাত্রিক স্থান কীভাবে সময়ের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে চতুর্মাত্রিক স্থান-কাল তৈরি করে তার ব্যাখ্যা সমম্বলিত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বিখ্যাত ক্ষেত্র সমীকরণের বিশেষ একটি গাণিতিক সমাধান থেকে। [সূত্র: i.বিজ্ঞানচিন্তা, মে-২০১৯, বর্ষ: ৩, সংখ্যা-৮, পৃষ্ঠা: ৬৮ ii) www.bigganchinta.com] ওয়ার্ম হোল-কে আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজও বলা হয়। বস্ত্তঃ মহাবিশ্বে যাতে আইনস্টনীয় আলোর গতির (১,৮৬,০০০ মাইল) চাইতে বেশি দ্রুতগতিতে মহাবিশ্বের মহা দূরত্ব সহজে অতিক্রম করা যায় তাত্ত্বিকভাবে ওয়ার্ম হোল দিয়ে তা-ই নির্দেশ করা হয়েছে।
আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ
কৃষ্ণ গহ্বরের আয়ুস্কাল শেষ হওয়ার পূর্বাবস্থায় মহাকর্ষের প্রভাবে চুপসে গিয়ে অতি শক্তিশালী মহাকর্ষীয় বলের সৃষ্টি করে। তাতে কৃষ্ণ গহ্বরের আগের নক্ষত্রের পদার্থগুলো চুপসে গিয়ে অসীম ঘনত্বের একটি সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দুর সৃষ্টি করে যার বহিঃপ্রান্তকে বলা হয় ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনাদিগন্ত। পরম বিন্দু থেকে বহুদূরে দুইটি কৃষ্ণ গহ্বর তাদের ঘটনাদিগন্তের কাছে যুক্ত হয় অর্থাৎ এই অন্চলের চারপাশের বক্র ও মসৃণ স্থান-কাল থেকে সৃষ্টি হয় এক প্রকার সেতুবন্ধ বা যোগসূত্র যাকে বলা হয় “আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ” বা সেতু (সূত্র: প্রাগুক্ত পৃষ্ঠা: ৬৮)। বলা যায় এখান থেকেই ওয়ার্ম হোল ধারণার বুৎপত্তি।
ঘটনা দিগন্ত অন্চলের এই “আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ” ব্যবহার করেই অসীম বিশ্বের অসীম দূরত্ব পাড়ি দেয়ার আশা-প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন সায়েন্স ফিকশনিস্টরা। এই ওয়ার্ম হোলের মাধ্যমে যেমন এক কৃষ্ণ গহ্বর থেকে আরেক কৃষ্ণ গহ্বরে অনেকটা ট্যানেল আকারে গমণাগমনে সন্দেহ নেই পরম স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবে বৈকি। এটি হচ্ছে সায়েন্স ফিকশনিস্টদের জন্য সুসংবাদ, অন্ততঃ নিউট্রিনো আলোর গতির উর্ধ্বে উঠার তত্ত্ব বানচাল হয়ে যাওয়ার পর যে হতাশা দেখে দিয়েছিল তাতে ওয়ার্ম হোল একপ্রকার আশার আলো দেখাচ্ছে তাতে কম কী?
সায়েন্স ফিকশনিস্টদের জন্য কতিপয় সুসংবাদ:
তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল সম্ভব। বিবিসি, লন্ডন সূত্রে প্রকাশ, University of Connecticut-এর পদার্থবিদ্যার প্রফেসর রন ম্যালেট একটি ডিভাইস বানিয়েছেন যার আদলে ভবিষ্যতে টাইম মেশিন বানানো যাবে।
“বিজ্ঞানীদের ধারণা, একটি ওয়ার্মহোলের ভেতরের পথ যদি চারপাশের স্থানের চেয়ে সংক্ষিপ্ত হয়, তাহলে একে স্থান-কালের মধ্যে একটি শর্টকাট পথ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব”(সূত্র: বিজ্ঞানচিন্তা, মে-২০১৯, বর্ষ: ৩, সংখ্যা-৮, পৃষ্ঠা: ৬৮)।
ফিকশনিস্টদের আশার আলো দেখাচ্ছেন ২০১৭ সালে নোবেল বিজয়ী ক্যালটেকের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ কিপ থার্ন। ( প্রাগক্ত পৃঃ৬৮)। তাত্ত্বিকভাবে থার্নের ‘এক্সোটিক ম্যাটার’ বিস্ফোরণে প্রতিটি কৃষ্ণ গহ্বরের জ্যামিতি পাল্টে দিয়ে আইনস্টাইন-রোজেন সেতুর প্রান্তগুলো ঘটনাদিগন্তের বাইরে নিয়ে আসে। আর তাতে সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে এক প্রান্ত থেকে আলোর চেয়ে বেশি দ্রুত আরেক প্রান্তে পৌঁছা সম্ভবপর হতে পারে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড্যানিয়েল জাফারিস এবং অ্যারন ওয়াল সম্প্রতি নতুন ধরনের ওয়ার্মহোলের সম্ভাবনার সুসংবাদ দিয়েছেন। খ্যাতনামা ‘ইপিআর প্যারাডক্স’ (আইনস্টাইন-রোজেন-পোলানস্কি প্যারাডক্স) নিয়ে গবেষণাকালীন সময়ে এই সম্ভাবনার কথা জানতে পারেন। এ ধরনের ওয়ার্ম হলের প্রান্তগুলো প্রাকৃতিকভাবেই পরস্পর সংযুক্ত থাকার সম্ভব্যতার কথা জানিয়ে গবেষকরা বলেন, এর জন্য নেগেটিভ বা ঋণাত্মক শক্তিসম্পন্ন এক্সোটিক ম্যাটারের প্রয়োজন নেই। ‘ইপিআর প্যারাডক্স’ তত্ত্ব অনুসারে দুটি কণার মধ্যে ‘কোয়ান্টাম অ্যান্টেঙ্গলমেন্ট’ বা ‘কোয়ান্টাম বিভাজন’ নামে বিশেষ ধরনের ধর্ম থাকে। এই বিশেষ ধর্মানুযায়ী, মাইক্রো স্কেলের ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে মহাবিশ্বের দূরপ্রান্তে থেকেও পরস্পরের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন সম্ভবপর হবে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, অতি উন্নত কোন সভ্যতা হয়তো কোয়ান্টাম কণাকে এমনতর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে এবং তা দিয়ে তাদের পক্ষে একটা ওয়ার্মহোল তৈরি করা সম্ভবপর হবে। এমন ধারণা সায়েন্স ফিকশনিস্টদের জন্য সুসংবাদ বটে।
আশার আলো টাইম ট্রাভেলের বিকল্প নভোতরী ‘র্যাপ ড্রাইভ’-এ:
বিগত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই বিজ্ঞান কল্প কাহিনী জুড়ে রয়েছে র্যাপ ড্রাইভের বর্ণনা। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো মেক্সিকান পদার্থবিজ্ঞানী মিগুয়েল আলকুবিরি বিশেষ ধরনের র্যাপ ড্রাইভের প্রস্তাব দেন। মিগুয়েলের মতে, সাধারণ আপেক্ষিকতায় স্থানের যে নমনীয়তা রয়েছে, সে স্থানটির মধ্যে একটি তরঙ্গমালা সৃষ্টি সম্ভব। এই তরঙ্গ বা ঢেউয়ের মধ্যেই চলমান কোনো নভোযানের পেছনের স্থান প্রসারিত করে সামনের স্থান সংকুচিত করে মহাকাশের অসীম দূরত্ব ঘুচিয়ে দেবে। এখানে নভোযানটি বুদবুদের ভেতর তরঙ্গের ঠিক মধ্যখানে স্বাভাবিক সমতল স্থানে থাকতে পারবে। তরঙ্গটি নিজেই আলোর চেয়ে বেশি বেগে মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কার্যকরভাবে তরাঙ্গায়িত হতে থাকবে।
বিগত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই বিজ্ঞান কল্প কাহিনী জুড়ে রয়েছে র্যাপ ড্রাইভের বর্ণনা। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো মেক্সিকান পদার্থবিজ্ঞানী মিগুয়েল আলকুবিরি বিশেষ ধরনের র্যাপ ড্রাইভের প্রস্তাব দেন। মিগুয়েলের মতে, সাধারণ আপেক্ষিকতায় স্থানের যে নমনীয়তা রয়েছে, সে স্থানটির মধ্যে একটি তরঙ্গমালা সৃষ্টি সম্ভব। এই তরঙ্গ বা ঢেউয়ের মধ্যেই চলমান কোনো নভোযানের পেছনের স্থান প্রসারিত করে সামনের স্থান সংকুচিত করে মহাকাশের অসীম দূরত্ব ঘুচিয়ে দেবে। এখানে নভোযানটি বুদবুদের ভেতর তরঙ্গের ঠিক মধ্যখানে স্বাভাবিক সমতল স্থানে থাকতে পারবে। তরঙ্গটি নিজেই আলোর চেয়ে বেশি বেগে মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কার্যকরভাবে তরাঙ্গায়িত হতে থাকবে।
“ওয়ার্মহোলের মতো একটি কার্যকর র্যাপ ড্রাইভ বানানোর ক্ষেত্রেও আমাদের বিপুল প্রযুক্তিগত চ্যালেন্জ্ঞ রয়েছে। এখানেও তরঙ্গের কাঠামো সৃষ্টির জন্য এক্সোটিক ম্যাটার প্রয়োজন। কিন্ত্ত কীভাবে করা সম্ভব, সেটি চিন্তা করতে গিয়ে পদার্থবিদেরা যেসব পদ্ধতির কথা বলেন, তা হয়তো অতি উন্নত কোন সভ্যতার পক্ষেই অর্জন করা সম্ভব। কারণ, এ ধরনের কোনো তরঙ্গ কাঠামো তৈরির জন্য বৃহস্পতির মতো দানবীয় কোনো গ্রহের সমান শক্তির দরকার।”(বিজ্ঞানচিন্তা, মে, ২০১৯, বর্ষ:৩, সংখ্যা:৮, পৃঃ ৭০)।
এ তথ্য সায়েন্স ফিকশনিস্টদের জন্য স্বাভাবিকভাবে হতাশা বয়ে আনতে পারে। তাই আশার বাণী নিয়ে এগিয়ে এলেন ২০১১ সালে নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের অ্যাডভান্সড প্রোপালশন ফিজিকস ল্যাবরেটরির ইন্জ্ঞিনিয়ার হ্যারল্ড জি. সোনি হোয়াইট। সোনি বিকল্প প্রযুক্তির র্যাপ ড্রাইভের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবিত র্যাপ ড্রাইভে প্রয়োজন হবে না সমতল স্থানসম্পন্ন বুদবুদের (বাবল)। এটি শক্তি সাশ্রয়ীও। মাত্র কয়েক কিলোগ্রাম ভরশক্তিই যথেষ্ট যদিও বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তি এ পরিমাণও বিরাট-বিশাল ব্যাপার! যাহোক, এ পরিমাণ ভরশক্তিতে টেকসই এবং বিশাল তরঙ্গমালা তৈরি করা সম্ভব হবে যা দিয়ে মস্তবড় একটা স্পেসশিপ অনায়াসে চালিয়ে নেয়া যেতে পারে। সুখের বিষয়, নাসার প্রকৌশলী সোনি হোয়াইটের প্রস্তাবিত র্যাপ ড্রাইভ নাসার গবেষণাগারে তাত্ত্বিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে যে যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে তার নাম র্যাপ ফিল্ড ইন্টারফেরোমিটার। তাত্ত্বিকভাবে যন্ত্রটি সম্ভাব্য র্যাপ সৃষ্টিকারী কোনো যন্ত্রের মাধ্যমে সৃষ্ট স্থানের জ্যামিতিতে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরের পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারবে। (প্রাগুক্ত পৃষ্ঠা ৭০)
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকু প্রস্তাবিত র্যাপ ড্রাইভের মত প্রযুক্তি অর্জনের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, টাইপ থ্রির মতো উন্নত কোনো এলিয়েন সভ্যতা হয়তো এরই মধ্যে আলোর গতির সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। তবে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তা অর্জন করতে আমাদের মতো কোনো সভ্যতার আরও একহাজার বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় লেগে যেতে পারে। তাই আপাতত এক হাজার বছর অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমাদের মতো স্বল্প আয়ুস্কাল মরণশীলদের হাজার বছর অনেক বেশি বটে। তাই হয়তো ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অপেক্ষমান আগামীদিনের বিকল্প প্রযুক্তি !
টাইম মেশিন:ওয়ার্মহোল-র্যাপ ড্রাইভের বিকল্প পন্থা-১
বিভিন্ন সময়ে বহু বিজ্ঞানী (লিজুং ওয়াং, গুন্টার নিমস, অ্যালফন্স স্তালহফেন) দাবী করে আসছেন যে, তাঁরা আলোর চেয়ে বেশি গতিবেগে সংকেত প্রেরণের মাধ্যমে টাইম ট্রাভেলের ধারণাটি বাস্তবায়ন করেছেন, যদিও বাস্তবসম্মতভাবে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল এখনো সব বিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
টাইম ট্রাভেল শুধু তাত্ত্বিকভাবেই সম্ভব,বাস্তবিক অর্থে আলোর গতিতে না পৌঁছাতে পারলে সম্ভব না। সেক্ষেত্রে এমন একটি টাইম মেশিন নির্মাণ করা প্রয়োজন-যেখানে আলোর গতির কাছাকাছি গতি অর্জন করা সম্ভব।
ফ্রাঙ্ক টিপলার তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করেন যে, নিজের অক্ষের চারদিকে দ্রুত ঘূর্ণায়মান এক অসীম দৈর্ঘ্যের চোঙ আসলে একটি টাইম মেশিন। তাহলে অবশ্যই এর দ্বারা সময় ভ্রমণ সম্ভব। টিপলার অনুমান করেছিলেন যে,যথেষ্ট বেগে ঘূর্ণায়মান সসীম দৈর্ঘ্যের চোঙের সাহায্যেও সময় ভ্রমণের ধারণাটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
আকাশ সিঁড়ি:সময় পরিভ্রমণের বিকল্প পন্থা-২-
“সেদিন সম্ভবত খুব বেশি দূরে নয় যেদিন লিফটে চড়ে মানুষ মহাশুন্য পরিভ্রমণ করবে। তবে তাকে লিফট না বলে আকাশে ওঠার সিঁড়ি বলাই বোধ হয় সবচেয়ে উত্তম হবে”। (সূত্র: ১) মি’রাজ বিস্ময়কর: আল কোরআনে ও বিজ্ঞানে: কৃষিবিদ মোহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, মাসিক মদীনা, পৃষ্ঠা: ৩৫, বর্ষ: ৩৮, সংখ্যা: ৮, শাবান ১৪২৩, নভেম্বর ২০০২।
”বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিস্ময়কর সাফল্যের এই যুগে মানুষ যখন ক্রমশ সকল অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছে তখন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (নাসা) এ সুসংবাদ দিয়েছে বিশ্ববাসীকে জানাচ্ছে যে, মহাকাশ পরিভ্রমণের লিফট তৈরি হচ্ছে। এটি তৈরি করবে ‘ওটিস এভিলেটর’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এ কাজে তাদের সময় লাগতে পারে বছর দশেকের মত। নাসার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই লিফটগুলো হবে মূলত রকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ এবং এদের গতিবেগ রকেটের মতোই। তবে এতে লোকজন আরোহন করার পর বোতাম টিপলেই এর যাত্রা শুরু হবে এবং দেখা যাবে চোখের পলকে এটি মহাশুন্যের নির্ধারিত স্টেশনে এসে পৌঁছেছে”। (১) প্রাগুক্ত: পৃষ্ঠা ৩৫ (২) বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তির আলোকে পবিত্র ইসরা এবং মিরাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামঃ পরিপ্রেক্ষিত নিউট্রিনো আবিস্কার: মাসিক নেদায়ে ইসলাম, পৃষ্ঠা: ১১, বর্ষ: ৭৬, সংখ্যা: ১০, এপ্রিল ২০১৭। Website: furfura.com
নিরাপদ-নির্বিঘ্ন মহাকাশ পরিভ্রমণে কতিপয় সীমাবদ্ধতা:
মহাকাশীয় পরিবেশ ভূ-প্রাকৃতিক এবং বায়ুমণ্ডলীয় আবহাওয়ার ধারণা থেকে ভিন্ন। প্রাকৃতিক প্লাজমা, চৌম্বক ক্ষেত্র, বিকিরণ এবং মহাকাশীয় বস্তুসমূহ নিয়েই গঠিত হয় মহাকাশীয় পরিবেশ। মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির ভাষ্যমতে:
"মহাকাশীয় পরিবেশ, পৃথিবী এবং আমাদের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থায় প্রভাববিস্তারকারী মহাকাশীয় পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে।পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র, সূর্যের আচরণ এবং সৌরজগতে পৃথিবীর অবস্থানই আমাদের মহাকাশীয় পরিবেশের উৎস।"(তথ্য সূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/মহাকাশ_যাত্রা)
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে ভ্যান অ্যালেন বেষ্টনীর বিকিরণ, সৌর বিকিরণ, ক্ষুদ্র গ্রহাণুকণার অস্তিত্ব এবং মহাজাগতিক বিকিরণ জনিত সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া, পৃথিবী প্রদক্ষিণরত মহাকাশযানের অভ্যন্তরে ক্ষীণমহাকর্ষীয় পরিবেশ তৈরি হয়, যেখানে ওজনহীনতা অনুভব করা যায়। ক্ষীণমহাকর্ষীয় পরিবেশে স্বল্পকালীন অবস্থান করলে মহাকাশ অভিযোজন উপসর্গ দেখা দিতে পারে; এ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান একাধিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে হাড়ক্ষয়, পেশী এবং সংবহনতন্ত্রের দূর্বলতা ইত্যাদি। তাছাড়া, স্বাস্থ্যের ওপর মহাজাগতিক বিকিরণের প্রভাবে ক্যান্সারের সম্ভাবনাও বিদ্যমান থাকে।
(তথ্য সূত্রঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/মহাকাশ_যাত্রা)
এমতাবস্থায় নাসা কর্তৃক উৎক্ষেপিত যাত্রীবাহী মহাকাশযানে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার জন্য ইসিএলএসএস নামক প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। । এ লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বাতাস, পানি এবং খাদ্যের ব্যবস্থা, এবং যাত্রীদের স্বাভাবিক শারীরিক তাপমাত্রা ও চাপ বজায় রাখা এবং শারীরিক বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা রয়েছে।
মহাজাগতিক পরিভ্রমণ প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি কম নয়। ১৯৮৬ সালের ২৮ জানুয়ারি তারিখে ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপনের ৭৩ সেকেন্ড পর মহাকাশযান চ্যালেঞ্জার বায়ুমণ্ডলে বিস্ফোরিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এতে মহাকাশযানে অবস্থানকারী সাতজন যাত্রীই নিহত হন। এ দুর্ঘটনার কারণ ছিল চ্যালেঞ্জারের ডানপাশের রকেট বুস্টারের একটি সংযোগস্থলের দুর্বলতা।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৩০ জুন সোভিয়েত রাশিয়ার নভোচারীরা চন্দ্র বিজয়ের উদ্দেশ্যে তাদের মহাকাশযান উৎক্ষেপন করেছিল। কিন্ত্ত ৩ রাশিয়ান নভোচারী পৃথিবীতে ফিরে আসেন মৃত অবস্থায়। গত বিংশ শতাব্দীতে মহাকাশ উড্ডয়নকালীন, প্রশিক্ষণকালীন অন্ততঃ ৩০ জন মহাকাশচারী/নভোচারীর মৃত্যু ঘটে।
২০০৪ সালে নেদারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মহাকাশ নিরাপত্তা উন্নতি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য মহাকাশ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিসমূহের নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রসার ঘটানো। (তথ্য সূত্রঃ (i) https://bn.wikipedia.org/wiki/মহাকাশ_যাত্রা)
(ii) https://americabangla.com/science-and-technology/আজ_অব্দি_কতজন_নভোচারী)
ঘুমানোর সমস্যা:
বাসা বাড়ির মতো আরামদায়ক কোনো বিছানার ব্যবস্থা থাকে না মহাশুন্যে নভোচারীদের, তাদের দেহকে তারা স্পেস ক্রাফটের একটি সাইডে নিজেদের বেঁধে নেন, যাতে করে তারা এদিক ওদিক ভেসে না বেড়ান| এমনকি তারা নিজেদের দুই হাত বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারেন না| তাদের দুই হাত তাদের সামনে সোজা হয়ে ভাসতে থাকে| ঘুমন্ত নভোযাত্রীদের ভেন্টিলেশনের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হয়, না হলে তো তারা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
খাওয়া-দাওয়া:
যখন একজন নভোচারী নভোযানে উঠেন তখন তার পছন্দনীয় সকল খাবার-দাবার খাওয়ার শখ পৃথিবীতে রেখে যেতে হয় কয়েক মাসের জন্য। খেতে হয় ইউএস, জাপান, রাশিয়াতে প্রস্তুতকরা প্যাকেটজাত ডিহাইড্রেটেড খাবার| বাসনপত্র অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, এমনকি ছুরি বা কাটাচামচের খোঁচায় যন্ত্রাংশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এগুলো পৃথিবীতেই রেখে যেতে হয়।
বিষন্নতার কবলে মহাকাশচারী:
সময় পরিভ্রমণের অন্যতম উদ্দেশ্য, পৃথিবীর যাবতীয় বিষন্নতা ঝেড়ে ফেলার জন্য । কিন্তু নভোচারীরা মহাকাশে গিয়ে বরং সংগতকারণে ভূগেন সেই বিষন্নতায়।
পৃথিবীর কক্ষপথে ভ্রমণ অত্যন্ত একটি রোমাঞ্চকর ব্যাপার, কিন্তু এটা অনেক সময় মানসিক একটি শ্রমে পরিণত হতে পারে এবং নভোচারীদের মনকে অবসাদে আচ্ছন্য করে দিতে পারে| অনেক নভোচারী এটা স্বীকার করছেন যে, দীর্ঘ সময় কাল ধরে মহাকাশ যান চালনা এবং যে সকল অভিযান চলে মহাকাশে সেই অভিযানগুলোতে মনের মধ্যে একটা ভয় ও সংশয় কাজ করে কারণ মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ হয় সেসব অভিযানে| আর এর থেকে তারা একাকিত্ব, বিষন্নতা ও মানসিক চাপে থাকেন।
প্রয়োজন: নিরাপদ-নির্বিঘ্ন সময় পরিভ্রমণের উপায়-অবলম্বন প্রযুক্তির উদ্ভাবন:
কল্পনাও হতে হবে আকাশ কুসুমের উর্ধ্বে বাস্তবতার নিরীখে। তাহলেই হয়তো কল্পনা বাস্তবতায় রূপ লাভ করতে পারে সহজেই। পাখির মত আকাশে উড়ার কল্পনাটি বাস্তবতার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় তা বিমান প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত সময়ে বাস্তব রূপ লাভ করে অতি সহজেই। কিন্ত্ত অকল্পনীয় বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে মহাবিশ্বের এ ফোঁড় দিয়ে অপর ফোঁড়ে পৌঁছা, আবার নিরাপদে ফিরে আসার কল্পনা বাস্তবতা থেকে অ-নে-ক অ-নে-ক দূরে বৈকি। স্পেনের Autonomous University of Barcelona এর রিসার্চাররা সত্যিই যদি ওয়ার্মহোল কিংবা র্যাপ ড্রাইভ অথবা ‘ওটিস এভিলেটর’ প্রতিষ্ঠান আকাশ সিঁড়ি বানিয়ে ফেলল। তাতেই কি সময় পরিভ্রমণ আমাদের পক্ষে সম্ভবপর হবে? প্রথমতঃ দরকার ভ্রমণের জন্য আর্থিক সামর্থ্য, প্রয়োজনীয় মহাকাশীয় রসদ সংগ্রহ, জরুরী প্রশিক্ষণ। সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর স্বাস্থ্যোপযোগিতা। কারণ, মহাকাশে মানব জীবন ধারণের জন্য মোটেও উপযোগী পরিবেশ-প্রতিবেশ নেই।
উল্লেখ্য, আমরা যদি আলোর গতি (প্রতি সেকেন্ডে ৩,০০,০০০ কি.মি. বা ১,৮৬,০০০ মাইল) অর্জন করি তাহলে মহাকাশের গভীর থেকে গভীর অভ্যন্তরে পৌঁছতে নিম্নরূপ বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে:
(ক) পৃথিবী থেকে অন্তত ৪০ ট্রিলিয়ন কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত সূর্যের নিকটবর্তি প্রক্সিমা সেন্টেরাই এর উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করলে ১ (এক) বছরে আমাদের পাড়ি দিতে হবে ৯.৪৬ ট্রিলিয়ন কি.মি. পথ এবং সেখানে পৌছাতে আমাদের মোট পাড়ি দিতে সময় লাগতে পারে ৪ দশমিক ৩৭ আলোক বর্ষ, (খ) আমাদের অদূরবর্তী নিজস্ব ছায়াপথ বা (মিল্কিওয়ে) এর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে বেড়াতে পাড়ি দিতে সময় লাগতে পারে ১০ লাখ আলোক বর্ষ (গ) আর গোটা মহাবিশ্ব পরিভ্রমণে লাগতে পারে কমপক্ষে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন আলোক বর্ষ। (সূত্র: বিজ্ঞানচিন্তা, মে-২০১৯, বর্ষ: ৩, সংখ্যা-৮)।
এটা চিরন্তন সত্য যে, মানুষ মরণশীল (Man is Mortal) প্রাণী। সুতরাং, আলোর চাইতে অধিক গতিসম্পন্ন প্রযুক্তি ব্যতিত মহাকাশে সময় পরিভ্রমণ আকাশ কুসুম কল্পনাই বটে। তাই আমাদের সামনে এ ব্যাপারে দুটি করণীয় রয়েছে ১) অপেক্ষমান হওয়া নচেৎ ২) বিকল্প পথ-পন্থার উদ্ভাবন। অপেক্ষমান হতে হলে কত কাল? এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের ভাষ্য কমপক্ষে ১ (এক) হাজার বছর। তাও আবার সুনিশ্চিত নয়। অর্থাৎ এটাও নিশ্চিত নয় যে, বেশিদিন অপেক্ষমান থাকার পর এ ধরণের প্রযুক্তি আদৌ অর্জিত হবে কি-না। তবে, আশা করা হচ্ছে যে, হয়তো বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে যদিও সময় ভ্রমণ এক দীর্ঘমেয়াদী, অনিশ্চিত ব্যাপার কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এমন এক উন্নত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উদ্ভব ঘটতে পারে যা অকল্পনাতীত বিষয়গুলো বাস্তবরূপ লাভ করতে পারে। তা অতি সহজ-সরল যা হয়তো আমাদের জন্য বর্তমানে কল্পনাতীত বিষয়। বিজ্ঞানীরা বর্তমান প্রচলিত বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে আরো উৎকর্ষতা অর্জন করে নতুন ধাঁচের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রবর্তনের চিন্তা-ভাবনা বিগত বিংশ শতাব্দীতে শুরু করেছিলেন এবং ভবিষ্যত নতুন এই বিজ্ঞানের নামকরণও করেছিলেন ফ্রন্টিয়ার সায়েন্স (Frontier Science) নামে।
আশা করা যায়, প্রস্তাবিত ফ্রন্টিয়ার সায়েন্সের মাধ্যমে Transcendental Principle অর্থাৎ অলৌকিক বা মানুষের জ্ঞানে কুলায় না-এমন বিষয়ের বৈজ্ঞানিক রহস্যের কুল কিনারা পাওয়া যেতে পারে যাতে বিশ্বময় সময়ে সময়ে সংঘটিত অনেক ঘটনা-দূর্ঘটনাকে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, অতিপ্রাকৃতিক, ভূতুড়ে কান্ড, অবলীলাক্রমে, দৈবক্রমে, ভাগ্যক্রমে কিংবা টেলিপ্যাথি প্রভৃতি চিরাচরিত ভাষা-পরিভাষায় এড়িয়ে যাওয়ার যে প্রবণতা আবহমানকাল ধরে চলে আসছিল তা থেকে সত্যানুসন্ধানী বিজ্ঞানীরা নিস্কৃতি পেতে পারে। তাছাড়া, সত্যকে জানার আগ্রহ হতে যে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা শুরু সম্ভবত সে সত্যে প্রস্তাবিত ফ্রন্টিয়ার সায়েন্সের মাধ্যমে পৌঁছানো হয়তো সম্ভবপর হতে পারে অর্থাৎ প্রস্তাবিত সায়েন্সে হয়তো সম্ভব হতে পারে ওয়ার্মহোল, র্যাপ ড্রাইভ, আকাশ সিঁড়ি, টাইম মেশিন ইত্যাদি নির্মাণ এবং সম্ভবপর হতে পারে বহুল প্রত্যাশিত বিশাল মহাকাশে অতি দ্রুতগতিতে অবাধ, নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় সময় পরিভ্রমণ।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |