বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্য
বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্য (কন্নড়: ವೆಂಕಟರಮಣ ಸುಬ್ರಮಣ್ಯ; জন্ম: ১৬ জুলাই, ১৯৩৬) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
;ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্য | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ব্যাঙ্গালোর, কর্ণাটক, ব্রিটিশ ভারত | ১৬ জুলাই ১৯৩৬|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | কাঞ্জু মণি, সুব্বু | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | ভি রামদাস (ভ্রাতা), ভি কৃষ্ণপ্রসাদ (ভ্রাতা) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১১১) | ১৯ মার্চ ১৯৬৫ বনাম নিউজিল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ৭ মার্চ ১৯৬৮ বনাম নিউজিল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২০ জুন ২০২০ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মহীশূর দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম ফাস্ট বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন ‘কাঞ্জু মণি’ ডাকনামে পরিচিতি বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্য।
শৈশবকাল
সম্পাদনামালেশ্বরমের একান্নবর্তী পরিবারে বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্যের জন্ম। তার পিতা পুরঃপ্রকৌশলী ছিলেন। বিশাল জায়গা বাড়ীর সামনে রেখে তার পরিবার থাকতো। সকল কাকাতো ভাইয়েরা একত্রে ক্রিকেট খেলতেন। তার অপর দুই ভ্রাতা - ভি. রামদাস ও ভি. কৃষ্ণপ্রসাদ মহীশূরের পক্ষে খেলেছেন।[১]
মালেশ্বরম হাই স্কুলে অধ্যয়ন শেষে বাসাপ্পা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভর্তি হন। তারপর সেন্ট্রাল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর, মালেশ্বরম জিমখানায় যুক্ত হন। ঐ সময়ে বোম্বে, মাদ্রাজ, ব্যাঙ্গালোর শহরের ন্যায় এখানেও বড় ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো না। তরুণদের কাছে বেতারই একমাত্র সম্বল ছিল। ক্রিকেট ধারাভাষ্য শ্রবণ করে কিছু জ্ঞান আহরণ করতেন।[১]
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
সম্পাদনা১৯৫৯-৬০ মৌসুম থেকে ১৯৬৯-৭০ মৌসুম পর্যন্ত বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্যের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। লম্বাটে, পাতলা গড়নের আগ্রাসী মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পাশাপাশি কার্যকরী লেগ স্পিন বোলিং করতেন। ক্রিজের কাছাকাছি এলাকায় বিশ্বস্ত ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্য। ‘সুব্বু’ এক দশকেরও অধিক সময় মহীশূর দলের শক্তিমত্তায় উঁচু সারিতে অবস্থান করেছেন।
পরিচ্ছন্ন ব্যাটসম্যান হওয়া সত্ত্বেও বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্যকে হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় দশ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে,
"এ. এস. কৃষ্ণস্বামী অধিনায়ক ছিলেন। সবেমাত্র মহীশূর শহর থেকে প্রত্যাবর্তন করেন ও ব্যাঙ্গালোরীয়দের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। আমি অভিষেকে বিমর্ষ ছিলাম। তিনি খেলোয়াড়দের সম্পর্কে জানতেন না। অভিষেক খেলায় আমাকে ১০ নম্বরে নামানো হয়। তিনি আমার সম্পর্কে অবগত ছিলেন না ও জানতে চেষ্টা করেননি।"[১][২]
ঐ বছর মহীশূর চূড়ান্ত খেলায় অবতীর্ণ হয়। কেনিম্বেলি বাসুদেবমূর্তীকে দলের অধিনায়ক করা হয়। সুব্রাহ্মণ্যকে ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তিত করে সামনের দিকে নিয়ে আসা হয়। ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে বোম্বের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় তিনি চমৎকার শতরানের ইনিংস খেলেন। তাসত্ত্বেও মহীশূর ইনিংস ও ২২ রানে পরাজিত হয়।[৩]
অধিনায়কত্ব লাভ
সম্পাদনাপ্রথম মৌসুমে সফলতা লাভের পর পরবর্তী মৌসুমগুলোয়ও উত্তরোত্তর সফলতার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন। কয়েক বছর দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৬৩ সালে মহীশূরের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম মৌসুমেই দলকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যান। ব্যাঙ্গালোরের সেন্ট্রাল কলেজ গ্রাউন্ডে বোম্বের বিপক্ষে নিচেরসারির ব্যাটসম্যানদের অসহযোগিতায় ৯৯ রানে সুভাষ গুপ্তে’র বলে আউট হন।[৪]
রঞ্জী ট্রফিতে ৪১.২০ গড়ে ২২৫১ রান তুলেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে চিপকে মাদ্রাজের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৩ রান তুলেছিলেন। এ ইনিংসে ২৫টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। বিএস চন্দ্রশেখরের সাথে শেষ উইকেট জুটিতে ১১৭ রান তুলেন। এতে তার অংশগ্রহণ ছিল ১০৫ রান। এছাড়াও, দক্ষিণ অঞ্চলের পক্ষে দিলীপ ট্রফিতে বেশ ভালোমানের রান তুলেছেন। দীর্ঘ এক দশকব্যাপী খেলোয়াড়ী জীবনে আট সেঞ্চুরি সহযোগে ৩১.৭২ গড়ে ৪২১৯ রান তুলেন।
দিলীপ ট্রফিতে উত্তর অঞ্চল ও পশ্চিম অঞ্চলের বিপক্ষে শতরানের ইনিংস খেলেন।[৫] ফলশ্রুতিতে, ভারত দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সম্পাদনাসমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে নয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্য। ৭ মার্চ, ১৯৬৫ তারিখে দিল্লিতে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ৭ মার্চ, ১৯৬৮ তারিখে অকল্যান্ডে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
১৯৫৫ থেকে ১৯৬৮ সালের মধ্যে অংশগ্রহণকৃত অল্প কয়েকটি টেস্টে অংশ নিয়ে সাধারণমানের খেলা উপহার দেন। তন্মধ্যে, ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে মাদ্রাজে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে ওয়েস হল ও চার্লি গ্রিফিথের ন্যায় বোলারদের বল মোকাবেলা করে ৬১ রানের বীরোচিত ইনিংস উল্লেখযোগ্য ছিল।[৬]
১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডে দলের সদস্যরূপে গমন করেন। তবে, তেমন উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা পালন করতে পারেননি। তবে, সফরের শেষদিকে নিজেকে কিছুটা মেলে ধরেন। তিন টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের দুইটিতে অংশ নেন। নতুন বল নিয়ে নিয়মিত বোলারদের আঘাতপ্রাপ্তির ফলে তিনি বোলিং আক্রমণের সূচনা করেন। এজবাস্টনে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে জিওফ বয়কটকে বোল্ড করেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমন করেন। এবারও তিনি তেমন সফলতা পাননি। তবে, অ্যাডিলেডে সিরিজের প্রথম টেস্টে তার দল পরাজিত হলেও ৭৫ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেছিলেন।[৭]
অবসর
সম্পাদনাআন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রত্যাখ্যাত হবার পর মহীশূর দলের পক্ষে খেলতে থাকেন। কর্ণাটক দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বি. এস. চন্দ্রশেখর, গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, ইএএস প্রসন্ন, সৈয়দ কিরমানী’র ন্যায় প্রতিভাধর ক্রিকেটার তার ছত্রচ্ছায়ায় খেলেন। দলকে উজ্জ্বীবিত করে তুলেন ও খেলোয়াড়দেরকে উৎসাহিত করেন।[১]
বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্য সময়ের চেয়ে এগিয়েছিলেন। ঐ সময়ে ফিল্ডিংয়ের গুরুত্বতা না থাকলেও তিনি শারীরিক প্রশিক্ষণের উপর জোর দেন। ব্যাঙ্গালোরভিত্তিক আরএসআই গ্রাউন্ডে প্রশিক্ষণ সুবিধা লাভের জন্যে প্রশাসকদের মুখোমুখি হতে হয়। এছাড়াও, ক্রিকেটারদের উপযুক্ত খাদ্য প্রদানের ব্যবস্থা করেন।[১]
খেলা থেকে চলে আসার পর কর্ণাটক ক্রিকেটে তার গুরুত্বতা উপলব্ধি করা যায়। ব্রিজেশ প্যাটেলের অভিমত, যদি সুব্রাহ্মণ্য দলকে পরিচালনা করতেন তাহলে অনেক আগেই মহীশূর দল রঞ্জী ট্রফির শিরোপা জয় করতে পারতো। গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ বলেন, "১৯৭৪ সালের রঞ্জী ট্রফির শিরোপা বিজয়ী দলটি মূলতঃ মণি’র (সুব্রাহ্মণ্য) দল। তিনি দলকে প্রস্তুত করেন ও চ্যাম্পিয়নশীপের বিজয়ী দলের ভিত্তি এনে দেন।"[১]
খেলা থেকে উপযুক্ত আর্থিক নিরাপত্তা না পাওয়ায় ষাটোর্ধ্ব বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে তিনি সিডনিতে বসবাস করছেন। সেখানে নিউ সাউথ ওয়েলসভিত্তিক ল সোসাইটিতে কাজ করছেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Vedam Jaishankar, Casting a Spell, The story of Karnataka Cricket, UBS Publishers, 2005
- ↑ Scorecard of Hyderabad vs Karnataka
- ↑ Scorecard of the 1959/60 Ranji Trophy Final
- ↑ Scorecard of Bombay vs Karnataka
- ↑ Scorecard of North Zone vs South Zone
- ↑ Scorecard of India vs West Indies
- ↑ Scorecard of India vs Australia
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্য (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে বেঙ্কটরমন সুব্রাহ্মণ্য (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)