অশ্বিনী
ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে ২৮ নক্ষত্রের প্রথমটি যুগ্নতারা , যাদেরকে সৈন্ধান্তিকরা শুধু অশ্বিদ্বয় বা অশ্বিনী নামে চিহ্নিত করলেও , প্রাচীন ঋগ্বেদের ঋষিগণ যাদেরকে 'নাসত্য' ও 'দস্র' এবং 'অশ্বিদ্বয়' বা 'অশ্বিন' উভয় নামেই ডাকতেন । আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে এই নক্ষত্রের যোগতারা শরাতন (বীটা অ্যারিয়েটিস) এবং অন্য তারা মেসার্থিম (গামা অ্যারিয়েটিস)।
ঋগ্বেদীয় ঋষিদের অশ্বিনী-চিন্তা
সম্পাদনাবিশ্বামিত্রপুত্র মধুচ্ছন্দা অশ্বিদ্বয়ের পরিচিতি দিয়েছেন এভাবে : ' হে অশ্বিদ্বয় ! তোমরা সর্বরোগহর , যা সত্য নয় এমন ভাষণরহিত তাই নাসত্য , দর্শনীয় স্রকতুল্য তাই দস্র । তোমরা রুদ্রবর্তনী (অর্থাৎ পরস্পরকে রুদ্রবেগে আবর্তনকারী '। [১] । কণ্বপুত্র মেধ্যাতিথির অশ্বিনী-আবাহন : ' অন্ধকারকে উদ্ভাসিত ক'রে যে দেবদ্বয়ের দিব্যলোকস্পর্শী রথ সুন্দরভাবে চলেছে সে অশ্বিনদের আমরা আবাহন করছি ' । [২] । অঙ্গিরাপুত্র হিরণ্যস্তুপএর ভাবনা : ' আকাশ জুড়ে এ তেত্রিশ দেবতার সাথে নাসত্যদ্বয় আসে , মধুপায়ী (এ) অশ্বিনদের সহাবস্হানে আয়ুর অস্ত পর্যন্ত নিরপরাধ ক্ষতমুক্ত প্রতিষেধকশক্তিযুক্ত দ্বেষহীন হবো ' । [৩]
বাঙলা বর্ষপঞ্জিকায়
সম্পাদনাঅশ্বিনী নক্ষত্রের নামানুসারে বাংলা ১২ মাসের ৬ষ্ঠ মাস আশ্বিন নাম হয়েছে।
ভারতীয় কল্পকথায়
সম্পাদনাঘোটকীরূপ ধারিণী সূর্যের পত্নী। এর আরেক নাম সংজ্ঞা। সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে নিজের শরীর থেকে নিজরূপ ‘ছায়া’ নাম্নী এক নারীকে বের করে তাকে প্রতিনিধিরূপে রেখে সংজ্ঞা পিত্রালয়ে পলায়ন করেন। তার পিতা বিশ্বকর্মা মেয়ের এহেন আচরণে অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হন। পতিসেবা ত্যাগ করে অতি অন্যায় করেছে, সেজন্যে তার মুখ দেখবেন না বলে হুমকি দেন। সংজ্ঞা অভিমান করেন। পিতার বসতবাটি ত্যাগ করে উত্তর কুরুবর্ষে যান ও ঘোটকীর রূপ ধারণ করে ভ্রমণ করতে থাকেন। এদিকে সূর্য যোগবলে সকল কথা জানতে পারেন। তখন তিনিও অশ্বের রূপ ধারণ করে ঐ স্থানে আসেন। সেখানে কিছুদিন অশ্বিনীর সাথে থাকায় তার গর্ভে সূর্যের ঔরসে অশ্বরূপী যমজ দুই পুত্রসন্তান জন্মে। এই দুই পুত্র অশ্বিনীকুমার নামে পরিচিত হন। তারা চিকিৎসাবিদ্যায় সুপণ্ডিত হয়ে স্বর্গে চিকিৎসা করায় “স্বর্গবৈদ্য” উপাধি পান। তারা মাদ্রীসুত নকুল ও সহদেবের জনক।