হাবীবুর রহমান (চাঁদপুরের রাজনীতিবিদ)

বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক ও প্রকাশক। তিনি বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশের খস

হাবীবুর রহমান (১৯১৫—২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫) বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক ও প্রকাশক। তিনি বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন।[১][২][৩]

হাফেজ
হাবীবুর রহমান
বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৭১ – ১৯৭৩
পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
১২ মার্চ ১৯৫৪ – ৩০ মে ১৯৫৪
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ – ১৯৭১
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯১৫
বোরোচর গ্রাম, এখলাছপুর ইউনিয়ন, মতলব উপজেলা, চাঁদপুর
মৃত্যু২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫
ঢাকা
সমাধিস্থলবনানী কবরস্থান
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গীজোহুরা খাতুন
সন্তানদুই ছেলে ও দুই মেয়ে
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ,
মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, কলকাতা

তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমএলএ) নির্বাচিত হন।

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কুমিল্লা-১২ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের (এমএনএ) সদস্য নির্বাচিত হন।

প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

হাবীবুর রহমান ১৯১৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের চাঁদপুরের মতলবের এখলাছপুর ইউনিয়নের বোরোচর গ্রামের সরদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল হামিদ ও মা আনজুমান নেছা। পিতামহের নাম মেঙ্গুলিয়া সরদার। তার পিতা ও পিতামহ ব্রিটিশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের ভূস্বামী ছিলেন।

নিজ গ্রামের স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পরে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে কোরানে হাফেজ হন এবং ফাজিল (স্নাতক) পাশ করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তৎকালীন বেকারে হোস্টেলে থাকতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি এমএ পাস করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

হাবীবুর রহমান কর্মজীবনের শুরুতে চাঁদপুর কলেজে ১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জগন্নাথ কলেজে। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

পাবলিক সার্ভিসের ১ম কমিশনের সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

হাবীবুর রহমান ১৯৫০ সালে আওয়ামী লীগে সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমএলএ) নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন এবং বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালীন অল্প কিছুদিন দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

ছয় দফা ও নির্বাচন সম্পাদনা

ছয় দফা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা প্রণয়নেও তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান১১ দফা আন্দোলনেও তার ভূমিকা ছিল। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কুমিল্লা-১২ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের (এমএনএ) সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন।

১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হওয়ার পরেই তিনি স্বাস্থ্যগত ও পারিবারিক কারণে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করে এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে যখন প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন।

সাংবাদিকতা সম্পাদনা

হাবীবুর রহমান ছয় দফা আন্দোলন প্রচারের জন্য ‘সোনার বাংলা’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খান পত্রিকাটি বাজেয়াপ্ত করেন।

তিনি ও শেখ ফজলুল হক মনিসাপ্তাহিক বাংলার বাণী’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি ছিলেন এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তার সম্পাদনায় ‘বাংলার বাণী’ সাপ্তাহিক আকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ১১ জানুয়ারি ১৯৭০ সালে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক ঢাকাস্থ বাংলার বাণীর দপ্তর উৎখাতের পর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর পত্রিকাটি মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটি এ সময় ১১৭/এ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা থেকে সম্পাদক কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত। শহীদ সংখ্যার পৃষ্ঠা ৩৬ এবং দাম ছিল ৬০ পয়সা।[৪][৫]

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণি পত্রিকাটিকে দৈনিকে রূপান্তরিত করতে চাইলে হাফেজ হাবীবুর রহমান তাকে পত্রিকাটি বুঝিয়ে দেন।[৪]

লেখক ও প্রকাশক সম্পাদনা

১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়, এ সময় গোপনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সাথে সাথে বই লেখার কাজে হাত দেন হাফেজ হাবীবুর রহমান। তিনি লিখতেন ‘এইচ রহমান’ নামে। পূর্ব পাকিস্তানের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু পাঠ্যবই রচনা করেন তিনি। পঞ্চাশের দশকের দিকে পুরানো ঢাকার বাংলাবাজারে ‘আইডিয়াল পাবলিকেশন্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। স্বাধীনতার কয়েক বছর পরে তিনি তার এক নিকটাত্মীয়র কাছে প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তর করেন। পরে তারা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘আইডিয়াল লাইব্রেরি’।

উল্লেখযোগ্য বই: সম্পাদনা

  • Political science and government', (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সরকার)
  • `Beginners Economics', (নতুনদের জন্যে অর্থনীতি)
  • `Pakistan Economics', (পাকিস্তানের অর্থনীতি)
  • `Beginners Civics', (নতুনদের জন্যে পৌরনীতি)
  • `Introduction to Pakistan Constitution', (পাকিস্তান সংবিধানের ভূমিকা)
  • `Foreign Constitution, (বিদেশি সংবিধান)
  • History of Indo-Pakistan', (ইন্দো-পাকিস্তানের ইতিহাস)
  • `Elements of Sociology', (সমাজবিজ্ঞানের উপাদান)
  • `রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি',
  • `উচ্চতর অর্থনীতি',
  • `উচ্চতর পৌরনীতি',
  • `পাক ভারতের ইতিহাস',
  • `পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক বিবর্তন'

পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জোহুরা খাতুন। এই দম্পতীর ৪ সন্তান। দুই ছেলে মশিউর রহমান ও মইনুর রহমান। দুই মেয়ে রাশিদা আক্তার ও রুখসানা আক্তার।

মৃত্যু সম্পাদনা

হাবীবুর রহমান ২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫ ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দূরবীণে দূরদর্শী, আগামী প্রকাশনী, ২০২০, পৃষ্ঠা ১১
  2. Omar, Imtiaz (১৯৯৬-০৪-২৪)। Rights, Emergencies, and Judicial Review (ইংরেজি ভাষায়)। Martinus Nijhoff Publishers। আইএসবিএন 978-90-411-0229-4 
  3. "WE, THE PEOPLE"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-১২-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৪ 
  4. দূরবীণে দূরদর্শী, আগামী প্রকাশনী/২০২০, পৃষ্ঠা ১১
  5. শামসুল হক, বাংলা সাময়িকপত্র প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৩