হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী
হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন, রাজশাহী বিভাগ তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৭৪ সালে প্রখ্যাত দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মুহসীন ফান্ড এর অর্থায়নে বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়টি ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হয় এবং সর্বশেষ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করা হয়।[২]
হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় | |
---|---|
![]() | |
অবস্থান | |
![]() | |
ফায়ার সার্ভিস মোড়, রাজশাহী রাজশাহী | |
তথ্য | |
প্রাক্তন নাম |
|
ধরন | সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৭৪ |
বিদ্যালয় জেলা | রাজশাহী |
ইআইআইএন | ১২৭০২৩ |
প্রধান শিক্ষক | মোহাম্মদ মোস্তাক হাবিব |
শ্রেণী | ১ম - ১০ম |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | আনু. ৭৫০ |
শিক্ষায়তন | ২২ একর |
ক্যাম্পাসের ধরন | স্থায়ী |
রং | সাদা এবং খাকি |
ডাকনাম | হাজী মুহসীন স্কুল |
অন্তর্ভুক্তি | ![]() |
ওয়েবসাইট | rajmohsin |
ইতিহাস ও পটভূমিসম্পাদনা
প্রাথমিক পর্যায়সম্পাদনা
হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মুহসীন ফান্ডের অর্থায়নে নবাব বাহাদুর আব্দুল লতিফ এর পৃষ্ঠপোষকতায় তৎকালীন বাংলা সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুহম্মদ মুহসীন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত মানবহিতৈষী ব্যক্তি। মুহম্মদ মুহসীন ১৮০৬ সালের ২০ এপ্রিল হুগলীতে মুসলিম শিক্ষা ও সমাজসেবার কথা উল্লেখ করে এক অছিয়তনামা রেজিস্ট্রি করেন। এই অছিয়তনামা অনুসারে দ্য মহসিন এনডাউমেন্ট নামক ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ নভেম্বর হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মৃত্যু হয়।
১৮১০ সালে দ্য বোর্ড অব রেভিনিউ ট্রাস্টের একজন সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ দান করে। পরে ১৮১৭ সালে তৎকালীন বাংলা সরকার মুহসীন ফান্ড এর দায়িত্বভার গ্রহণ করে।
নবাব বাহাদুর আব্দুল লতিফ সুপারিশে জর্জ ক্যাম্পবেল সরকার ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিদ্ধান্ত নেয় যে, ট্রাস্টের আয়ের অর্থের একটি অংশ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনায় ব্যয় করা হবে।
১৮৭৪-১৯৩০সম্পাদনা
১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে দারসে্ নিজামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা নামে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর জন্ম হয় এবং তা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ করে। সূচনালগ্নে এটি রাজশাহী কলেজ অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি ভবনের কয়েকটি কক্ষ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তার যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রথম সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আবদুল কাদির।
শিক্ষার্থী স্বল্পতার কারণে ১৮৮৩ সালে পূর্ববাংলার অন্যান্য মাদ্রাসার মতো এটি জুনিয়র মাদ্রাসায় পরিণত হয়। এজন্য বাংলা সরকার মাদ্রাসার কারিকুলাম পরিবর্তন করে ১৯১৪ সালে প্রণীত রিফর্ম মাদ্রাসা স্কিম এর আওতায় মাদ্রাসাগুলোকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমপর্যায়ভুক্ত করে হাই মাদ্রাসা ও জুনিয়র মাদ্রাসা নামে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করে। এই মাদ্রাসাটি নিউ স্কিম মাদ্রাসার অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় রাজশাহী মাদ্রাসা।
১৯২৮ সালে বঙ্গীয় আইনসভার সহ-সভাপতি খানবাহাদুর ইমাদউদ্দীনের প্রচেষ্টায় এখানে সপ্তম শ্রেণি খোলা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি সিনিয়র মাদ্রাসায় রূপান্তরিত হয়। সেইসাথে প্রতিষ্ঠানটিকে বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়।
১৮৮৪ সালে রাজশাহী কলেজের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠানটির অর্থে হাজী মুহম্মদ মুহসীন ভবন এবং ১৯০৯ সালে ফুলার ছাত্রাবাস নির্মিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি যখন বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয় তখন ভবন দুইটি রাজশাহী কলেজকে হস্তান্তর করা হয়।
১৯৩০-১৯৬১সম্পাদনা
১৯৩০ সালে গভর্নমেন্ট অব বেঙ্গল ইংরেজি মাধ্যমে আরবি শিক্ষার স্বীকৃতি দিলে রাজশাহী মাদ্রাসার নতুন নামকরণ হয় রাজশাহী হাই মাদ্রাসা। ঐ বছর ১৮ মার্চ থেকে বেঙ্গল এডুকেশন সার্ভিস অফিসার এর অধীনে একটি সরকারি কমিটি দ্বারা এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতে থাকে।
১৯৩১ সালে আরবি বিষয়ে লেকচারার পদ সৃষ্টি হয় এবং ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের প্রথম স্থায়ী স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৩৭ সালে সুপারিনটেনডেন্ট পদটি প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ-সহকারি অধ্যাপক সমমান) পদে উন্নীত হয়।
১৯৫৯ সালে পাকিস্তান সরকার মাদ্রাসাটিকে সরকারীকরণ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিণত করে, তখন প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম হয় রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত অধিকাংশ আন্দোলনে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। ১৯৫২ সালে সর্বপ্রথম যে শহিদ মিনার রাজশাহী কলেজে তৈরি করা হয় তাতে এই প্রতিষ্ঠানের অনেক কৃতী শিক্ষার্থীর অবদান ছিল।
১৯৬১ সালে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড স্থাপিত হলে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা শিক্ষাবোর্ড হতে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের অধীনে চলে আসে।
১৯৬১-বর্তমানসম্পাদনা
নাম পরিবর্তনসম্পাদনা
বিদ্যালয়টির মাদ্রাসা নামের কারণে কারিকুলাম নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা ক্রিয়াশীল ছিল। রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত নম্বরপত্র ও সনদে বিদ্যালয়ের নাম মাদ্রাসা থাকাতে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বিব্রত হতে হতো, এমনকি তাদের অবমূল্যায়িত হওয়াও বাদ যেত না। এসব কারণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনের দাবি জানায়।[৩] ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, রাজশাহী নাম পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী ০৭ অক্টোবর ২০১২ খ্রিস্টাব্দে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর অডিটোরিয়ামে রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন বিষয়ক সুধিসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ। উক্ত মতবিনিময় সভায় রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা এর পরিবর্তিত নাম হাজী মুহম্মদ মুহসীন গভঃ স্কুল এন্ড কলেজ করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।[৪] ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ০২ সেপ্টেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করে।[৫]
অবকাঠামোসম্পাদনা
প্রায় ১৫০ বছরের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ২২ একর জমির উপর অবস্থিত। বিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবন সহ একাডেমিক ভবনের সংখ্যা ৩ টি। এছাড়াও বিদ্যালয়টির অভ্যন্তরে রয়েছে মসজিদ, শহিদ মিনার, লাইব্রেরি ভবন, বিজ্ঞান ভবন, ব্যায়ামাগার, অধ্যক্ষের বাসভবন, ছাত্র হোস্টেল (বর্তমানে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত), হোস্টেল সুপারের বাসভবন ইত্যাদি। রাজশাহীর প্রাচীন স্থাপত্যের মধ্যে বিদ্যালয়টির নবাব আব্দুল লতিফ প্রশাসনিক ভবন অন্যতম। উত্তরবঙ্গের অন্যতম ঐতিহ্যের মধ্যে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান উল্লেখযোগ্য।
সহশিক্ষা কার্যক্রমসম্পাদনা
শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিশেষ করে ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি গৌরব অর্জন করেছে। অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রয়েছে নিজস্ব কিছু শিক্ষা সহায়ক সুবিধাদি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার, ডিবেট ক্লাব, কুইজ ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, চারুকলা-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যাবলী, মুহসীন ফান্ড বৃত্তি, ড. সুলতান আহমদ বৃত্তি, ইসমাইল হোসেন বৃত্তি, বিএনসিসি, স্কাউটস, রেডক্রিসেন্ট ইত্যাদি এর সুবিধা রয়েছে।
প্রাক্তন ছাত্রসম্পাদনা
চিত্রমালাসম্পাদনা
আরো দেখুনসম্পাদনা
- রাজশাহী কলেজ
- রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল
- রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
- সিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- রাজশাহী মাদ্রাসা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "'রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা"। webrajshahi.com। ৩১ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০২২।
- ↑ "রাজশাহী সরকারি মাদরাসা এখন 'হাজী মুহম্মদ মহসীন স্কুল'"। দৈনিক শিক্ষা।
- ↑ ব্যুরো, রাজশাহী। "রাজশাহী সরকারি মাদরাসার নাম পরিবর্তন"। দৈনিক ইনকিলাব।
- ↑ "About our School"। rajmohsin.edu.bd।
- ↑ "'রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা'র নাম পরিবর্তন"। banglanews24.com।