হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা[ক] (জন্ম: সম্ভবত ১৯৬১-১৯৬৯ এর মধ্যে)[৮][৯] হলেন একজন ইসলাম বিশেষজ্ঞ, ধর্মগুরু ও আইনজীবী এবং অফগানিস্তান ইসলামী আমিরাতের (তালেবান) বর্তমান এবং তৃতীয়তম প্রধান আমীর, তিনি ২০১৬ সাল থেকে এ দায়িত্বে আছেন। ২০২১ সালের কাবুলের পতনের পর থেকে তিনি আফগানিস্তানের বর্তমান দে ফাক্তো নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান। তালেবান সদস্যরা তাকে আমিরুল মুমিনিন (অনুবাদ: বিশ্বাসীদের নেতা) বলে সংবোধন করে। সে তার মৌলভি এবং মোল্লা এ দুটি পদবীর জন্যও পরিচিত।
হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা | |
---|---|
هبت الله اخندزاده | |
আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাতের তৃতীয়তম প্রধান নেতা | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৫ আগস্ট, ২০২১ | |
প্রধানমন্ত্রী | হাসান আখুন্দ (বর্তমান) |
পূর্বসূরী | আশরাফ গনি (আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে) |
অধিকৃত কার্যালয় ২৫ মে, ২০১৬ | |
ডেপুটি |
|
পূর্বসূরী | আখতার মনসুর |
আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাতের ১ম ডেপুটি নেতা[১] | |
কাজের মেয়াদ ২৯ জুলাই ২০১৫ – ২১ মে ২০১৬ | |
নেতা | আখতার মনসুর |
পূর্বসূরী | আখতার মনসুর |
উত্তরসূরী | সিরাজউদ্দীন হাক্কানি[২] |
আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাতের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বিতীয় প্রধান বিচারক | |
কাজের মেয়াদ আনু. ২০০১ – ২১ মে, ২০১৬ | |
নেতা | মুহাম্মদ ওমর আখতার মনসুর |
পূর্বসূরী | নুর মোহাম্মদ সাকিব |
উত্তরসূরী | আব্দুল হাকিম ইসাকাই |
আফগানিস্তান সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক | |
কাজের মেয়াদ আনু. ১৯৯৬ – আনু. ২০০১ | |
প্রধানমন্ত্রী | মুহাম্মদ রাব্বানী আব্দুল কবির |
নেতা | মোল্লা ওমর |
কান্দাহার আপীল আদালতের প্রধান প্রধান বিচারপতি | |
কাজের মেয়াদ আনু. ১৯৯৫ – আনু. ২০০১ | |
প্রধানমন্ত্রী | মুহাম্মদ রাব্বানী আব্দুল কবির |
নেতা | মোল্লা ওমর |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আনু. ১৯৬১ – আনু. ১৯৬৯ (বয়স ৫৪–৬৩) পাঞ্জাবী প্রদেশ, আফগানিস্তান |
জাতীয়তা | আফগান |
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
রাজনৈতিক সংযুক্তি | তালেবান |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাত |
শাখা | আফগান মুজাহিদীন (১৯৯২ সালের পূর্বে) আফগানিস্তান ইসলামিক সেনাবাহিনী (১৯৯৬-২০০১) |
পদ | বিচার বিভাগের কর্মকর্তা |
কমান্ড |
|
যুদ্ধ | সোভিয়েত–আফগান যুদ্ধ আফগান গৃহযুদ্ধ (১৯৯৬-২০০১) আফগানিস্তান যুদ্ধ (২০০১–২০২১) |
তালেবানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ফতোয়া প্রদানের জন্যও আখুন্দজাদা সুপরিচিত। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাতের (তালেবান) শরিয়া বিচারসভায় ইসলামিক বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যান্য তালেবান নেতাদের মতো তিনি সামরিক পটভূমি থেকে আসেননি। ২০১৬ সালের মে মাসে, সাবেক নেতা, আখতার মনসুর যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা মারা গেলে তিনি তালেবান নেতা হিসেবে নিযুক্ত হন।
জীবনের প্রথমার্ধ
সম্পাদনাআখুন্দজাদা আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের পাঞ্জাবি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[১০] তিনি একজন পাসতুন এবং নুজরাই গোষ্ঠির সদস্য।[১১][১০] তার নামের প্রথম অংশ, হিবাতুল্লাহ এর আরবি অর্থ “প্রভুর দেওয়া উপহার”।[১১][১০] তার পিতা মুহাম্মদ আখুন্দ ছিলেন একজন ইসলাম বিশেষজ্ঞ এবং সাহিদ রাওয়ান গ্রামের মালুক মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন।[১২] নিজেদের কোনো জমি বা বাগান না থাকায়, তার পরিবার তার পিতা ধর্মসভা থেকে যে অর্থ বা ফসলের অংশ পেত তার উপর নির্ভরশীল ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুপ্রবেশের পর পরিবারটি কোয়েটা থেকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান অঞ্চলে চলে যায় এবং আখুন্দজাদা সেখানে একটি মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করেন। ১৯৮০ এর দশকে, তিনি আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনা অভিযানের বিরুদ্ধে “ইসলামপন্থীদের প্রতিরোধে” জড়িত ছিলেন।[৩]
তালেবানে ভূমিকা
সম্পাদনাকর্মজীবনের প্রথমার্ধ
সম্পাদনাতিনি ১৯৯৬ সালে তালেবানে প্রথম দিকের সদস্যদের মধ্যে একজন হিসেবে যোগদান করেন।[১৩] ১৯৯৫ সালে, তালেবান ফারাহ প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিলে, তিনি পাপ ও পুণ্য পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১৪] পরবর্তীতে, তিনি নানগারহর প্রদেশের তালেবান সামরিক আদালতের প্রধান এবং সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান ছিলেন।[৩] পরে তিনি কান্দাহারে চলে যান, যেখানে তিনি একটি জিহাদী মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা ছিল তালেবান প্রতিষ্ঠাকারী নেতা, মোল্লা মুহাম্মাদ ওমর এর পরিচালিত একটি সেমিনারী।[১৪]
২০০১ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত আক্রমণে তালেবানের পতনের পর, তিনি তালেবানের ধর্ম বিশেষজ্ঞ পরিষদের নেতা হিসেবে নিযুক্ত হন।[৩] পরবর্তীতে, তিনি আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাতের প্রধান এবং মোল্লা মুহাম্মদ ওমর এর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন।[১৫] সামরিক নেতার চেয়ে তিনি একজন ধার্মিক নেতা হিসেবে এবং তালেবানের সদস্যদের মধ্যে ধর্ম সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান ও তালেবানের অধিকাংশ ফতোয়া প্রদানের জন্য বেশি পরিচিত।[১৬] উভয় মুহাম্মদ ওমর এবং তার পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা, আখতার মনসুর তার সাথে ফতোয়া সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতেন।[১৭] আখুন্দজাদা তালেবানের কুয়েতা শুরার একজন ঊর্ধ্বতন সদস্য ছিলেন।[১৬][১৮]
২০১৫ সালে, তিনি মনসুর অধীনস্থ তালেবানের ২ জন ডেপুটি নেতার একজন হিসেবে নিযুক্ত হন। তালেবানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে দৃশ্যমান ছিলেন। মনসুর নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে জনগণের সামনে আসা থেকে বিরত থাকতেন ও প্রকাশ্যে কোনো সমাবেশে উপস্থিত হতেন না এবং আরেক ডেপুটি নেতা, সিরাজউদ্দীন হাক্কানি বেশি সামরিক বিষয়গুলোতেই জড়িত থাকতেন।[১৭] হেলমান্দ প্রদেশের একজন সামরিক নেতা, আব্দুল বারি এর মতে, আখুন্দজাদা একটি নিয়ম তৈরি করেন, যা অনুযায়ী একটি গোপন শাসন বিভাগের অধীনে একটি পরিষদ গঠন করা হয়, যা অত্যাচারী সামরিক নেতা ও যোদ্ধাদের উপর তদন্ত করার ক্ষমতার অধিকারী ছিল।[১৪]
২০১৬ সালে, আখুন্দজাদা কুয়েতার ঘোউস আবাদ অঞ্চলে বসবাস করত এবং সর্বোচ্চ ১০টি মাদ্রাসার নেতৃত্ব দিত বলে মতবাদ আছে।[১৯][১২]
সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে
সম্পাদনাআখুন্দজাদা ২০১৬ সালের মে মাসের ২৫ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় মারা যাওয়া মনসুর এর পরিবর্তে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে নিযুক্ত হন।[৩] তার প্রতিযোগী হিসেবে ছিলেন মনসুর এর আরেক ডেপুটি, সিরাজউদ্দীন হাক্কানি এবং মোল্লা মুহাম্মদ ওমর এর পুত্র, মুহাম্মদ ইয়াকুব। আখুন্দজাদা এর তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে নিযুক্ত হওয়া কিছু সদস্যের কাছে বিস্ময়কর ছিল, যারা তাকে যোগ্যতার ভিত্তিতে তৃতীয় স্থানীয় বলে মনে করত। কিন্তু অন্য দুই জনের একজন নিযুক্ত হলে যে দলের মধ্যে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতো তা উপেক্ষা করতে আখুন্দজাদাকে নিযুক্ত করা হয়।[১৯] তালেবান উৎস অনুযায়ী, মনসুর আখুন্দজাদাকে তার পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে মনোনীত করেন, তবে এ দাবিটি তাকে নিযুক্ত করার সুবিধার্থে বানানো হতে পারে।[৩] ইয়াকুব এবং হাক্কানি আখুন্দজাদার ডেপুটি হিসেবে নিযুক্ত হয়।[২০] ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে, আব্দুল রাজ্জাক আখুন্দ এবং সাতা আখুন্দ আখুন্দজাদাকে সমর্থন করার অঙ্গীকার প্রদান করেন।[২১]
দক্ষিণ আফগানিস্তানে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র, ইউসূফ আহমাদি বলেন যে, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে গ্রিশকে আফগানিস্তান বাহিনীর একটি সামরিক ঘাটিতে আত্মঘাতি হামলা চালিয়ে আখুন্দজাদা এর সর্বকনিষ্ঠ্য পুত্র, আব্দুর রহমান খালিদ মারা যায়।[২২][২৩] তালেবান সদস্যদের মতে, আখুন্দজাদা তার পুত্রের ইচ্ছা সম্পর্কে জানতেন এবং সম্মত ছিলেন।[২২] আখুন্দজাদা এর নেতৃত্বে তালেবান ইরাক এবং লেভান্ট খোরাসান শাখার ইসলামিক স্টেট পরাজিত করে দারজাব এর যুদ্ধে জয়ী হয়।[২৪]
২০২১ সালের মে মাসে, আখুন্দজাদা আফগানিস্তানের জনগণকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রত্যাহারের পর একটি ইসলামিক রাষ্ট্র তৈরির জন্য একত্রিত হতে বলেন।[২৫] ২০২১ সালের আগস্ট মাসে, তার অধীনে থাকা বাহিনীগুলো যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য আক্রমণ শুরু করে। আখুন্দজাদা নেতৃত্বে থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে এবং তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়।[১৫] আগস্ট মাসের ১৮ তারিখে, “আখুন্দজাদার জারি করা সাধারণ ক্ষমা অনুযায়ী আফগানিস্তানের সকল কারাগার থেকে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।” -এ ঘোষনা দেওয়া হয়।[২৬] সেই সময়ের মধ্যে তালেবান ইতোমধ্যে দেশের প্রধান কারাগারগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং হাজার হাজার বন্দিদের মুক্তি দেয়, যার মধ্যে অনেক আইএসআইএল যোদ্ধা, আল-কায়েদা সদস্য এবং উদ্ধতন তালেবান সদস্য ছিল।[২৬][২৭]
কাবুল এর পতনের পর আখুন্দজাদার বিষয়ে তেমন তথ্য না পাওয়া যাওয়ায় এবং তার কোনো ছবি না থাকায় তিনি জীবিত আছেন বা তালেবানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কিনা এ বিষয়ে কারো মধ্যে সন্দেহ দেখা যায়।[২৮] ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, আখুন্দজাদা পাকিস্তানে একটি বিস্ফোরণে মারা গেছে এমন জনশ্রুতি শোনা যায়, যা তালেবান প্রত্যাখ্যান করেছে।[২৯] কাবুলের পতনের পরে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের মতে, আখুন্দজাদা পাকিস্তান সেনা বাহিনীর কাছে বন্দি আছেন। আগস্ট মাসের ২১ তারিখে, তালেবান জানায় যে, আখুন্দজাদা জীবিত আছেন এবং কান্দাহারে বাসবাস করছেন।[৩০] সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখে, আখুন্দজাদা অন্তর্বর্তী শাসন বিভাগের প্রতি একটি বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি আফগানিস্তানে শরিয়া বজায় রাখতে বলেন।[৩১]
হত্যার চেষ্টা
সম্পাদনাআখুন্দজাদাকে হত্যার জন্য ২ বার চেষ্টা করা হয়।[৩২] ২০১২ সালে, কুয়েতায় তার একটি ভাষণে তার ছাত্রদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক ব্যক্তি দাড়িয়ে কাছাকাছি দূরত্ব থেকে তার দিকে পিস্তল তাক করে, কিন্তু পিস্তলটি জ্যাম হয়ে যায়। আখুন্দজাদার এক শিক্ষার্থী, মোল্লা ইব্রাহিম এর মতে, “তালেবান সদস্যরা তার বন্দুকের জ্যাম ঠিক করার পূর্বেই তাকে আটকাতে এবং বন্দি করতে ছুটে আসে”। আখুন্দজাদা এ সময়ে বা এর পরবর্তী সময়ে স্থানটি থেকে সরে যাননি বলে শোনা যায়।[১৪] জাতীয় সুরক্ষা অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে এই হত্যার চেষ্টার অভিযোগ দেয় তালেবান।[১৪]
২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ১৬ তারিখে, জুম্মার নামাযের সময়ে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে একটি বিস্ফোরণে একটি বড় মসজিদ ধ্বংস হয়ে যায়, যাতে আখুনজাদার পিতা এবং ভাই মারা যায়।[৩৩] বিস্ফোরণটিতে তার আরো আত্মীয় মারা যায় বলে পরবর্তীতে নিশ্চিত করা যায়।[৩৪] তালেবান থেকে বের হয়ে আসা তালেবানের একটি সাবেক শাখা, আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাতের উচ্চ পরিষদ আক্রমণটির দায় স্বীকার করে এবং আখুন্দজাদা তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বলে দাবি করে।[৩৫] খাইর উর মাদ্রাইস মসজিদের নেতা হিসেবে আখুনজাদার পরিবর্তে আহমাদুল্লাহ নিযুক্ত হন। এ মসজিদটি আখুনজাদা এর তালেবান নেতা হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর কুয়েতা সুরায় তালেবানের প্রধান সাক্ষাতের স্থান ছিল।[৩৩]
পুনঃস্থাপিত তালেবানে ভূমিকা
সম্পাদনা২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ তারিখে, তালেবানের কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর তাকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি বলে প্রকাশ করা হয়, যা থেকে তিনি জীবিত আছেন কিনা এ প্রশ্ন উঠে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ে তার বিবৃতি ও ভাষণ দ্বারা তার জীবিত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় ৷ উল্লেখ্য যে, তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা নেতা, মোল্লা মুহাম্মদ ওমর এর মৃত্যুর সংবাদ সম্ভবত ২ বছর গোপন করে রাখা হয়েছিল।[৩৬]
২০২১ সালের অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখে আখুন্দজাদা দালুম উলুম হাকিমাহ মাদ্রাসায় জনসম্মুখে আসেন বলে তালেবান দাবি করে। এর কোনো চিত্র বা ভিডিও প্রকাশ করা হয়নি, তবে তালেবানের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ১০ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ডিং প্রকাশিত হয়, যা তার মৃত্যুর গুজব সত্যি নয় বলে প্রমাণ করে।[৩৭][৩৮]
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। |
আখুন্দজাদাকে তালেবান এর আদর্শে প্রচন্ড অনুপ্রাণিত এবং অতি রক্ষণশীল ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হয়।[৩৯][৪০] তিনি নারী শিক্ষা বিরোধী হিসেবে পরিচিত। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নারীরা পুনরায় মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে এরকম পরিকল্পনা থাকলেও আখুন্দজাদা এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। তিনি মে মাসের ৭ তারিখ একটি ফরমান জারী করেন, যেখানে বলা হয় নারীকে লোকসম্মুখে চুল এবং চোখ থেকে নিচে সমস্ত শরীর আবৃত করে রাখতে হবে এবং প্রয়োজন না হলে তারা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। তিনি গণমাধ্যমের উপর বহাল থাকা নিষেধাজ্ঞাগুলোর ব্যাপ্তি আরো বাড়িয়ে দেন, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সময় মোবাইল ফোন এবং ভীনদেশী ভাষায় সংবাদ সম্প্রচার নিষিদ্ধ করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান যে আঙ্গিকে দেশ পরিচালনা করেছিল, বলা হয় সেই আদলে আখুন্দজাদা বর্তমানে দেশ পরিচালনা করার প্রয়াস করছেন। তিনি এক্ষেত্রে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা উমরের কৌশলকেই অনুসরণ করছেন।[৪১]
আখুন্দজাদার নিজেকে আড়াল করে রাখা, স্বৈরতান্ত্রিক ধারায় নের্তৃত্ব প্রদান এবং অতিরক্ষণশীল নীতিমালার কারণে তার, কান্দাহারে অবস্থিত তার ধর্মীয় উপদেষ্টা ও কাবুলে যারা দেশ পরিচালনা করছে তাদের মধ্যে আন্ত কোন্দল, মতানৈক্য, ক্ষমতা ও বিভেদের সংঘাত প্রকট হয়েছে। যদিও তালেবান নিজেদের একতাবদ্ধ একটি দল হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় কিন্তু তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা যে বাড়ছে তা সময়ের সাথে সাথে প্রকাশ্যমান হয়ে উঠছে। ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারীতে আফগানিস্তানের ক্ষমতাশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি তালেবানের এই কঠোর নীতির সমালোচনা করে প্রকাশ্যে বলেছেন, তালিবানের অভ্যন্তরে ক্ষমতা একচেটিয়া হয়ে পড়েছে এবং এ পরিস্থিতি আর সহ্য করা যাবে না। জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং চিন্তাকে প্রাধান্য ও সম্মান দিয়ে তালেবান সরকারের কর্মপন্থা ঠিক করা উচিত।[৪২][৪৩][৪৪]
রচনা
সম্পাদনা- মুজাহিদীন তা দে আমির আল-মুমিনিন (২০১৭), নামের বাংলা অর্থ (সম্ভবত): বিশ্বাসীদের নেতা কর্তৃক মুজাহিদীনরনের প্রতি নির্দেশ[৪৫]
টীকা
সম্পাদনা- ↑ পশতু: هبت الله اخندزاده[৭] আধ্বব: [hɪbatʊˈlɑ ɑxundzɑˈda]
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Burnett, M. Troy (২০২০)। Nationalism Today: Extreme Political Movements Around the World [2 Volumes]। ABC-CLIO। আইএসবিএন 978-1440850004।
- Kuehn, Felix; van Linschoten, Alex Strick (২০১৮)। The Taliban Reader: War, Islam and Politics in their Own Words। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0190935054।
- Provost, René (২০২১)। Rebel Courts: The Administration of Justice by Armed Insurgents। Oxford University Press। আইএসবিএন 0190912227।
আরো পড়ুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Sofuoglu, Murat (২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "How the Taliban governs itself"। TRT World। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ Jones, Seth G. (ডিসেম্বর ২০২০)। "Afghanistan's Future Emirate? The Taliban and the Struggle for Afghanistan"। CTC Sentinel। Combating Terrorism Center। 13 (11)। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "Profile: New Taliban chief Mawlawi Hibatullah Akhundzada"। BBC News। ২৬ মে ২০১৬। ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ Sieff, Kevin (১৫ আগস্ট ২০২১)। "The Taliban has retaken control of Afghanistan. Here's what that looked like last time."। The Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ Mellen, Ruby (৩ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "The Taliban has decided on its government. Here's who could lead the organization."। The Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ Faulkner, Charlie (৩ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "Spiritual leader is Afghanistan's head of state — with bomb suspect set to be PM"। The Times। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ Rahimi, Giti (৩১ অক্টোবর ২০২১)। "Islamic Emirate's Leader Appears in Kandahar: Officials"। TOLOnews (পাশতু ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২২।
- ↑ Bulos, Habih (১৯ আগস্ট ২০২১)। "The Taliban is back in power. These are the leaders"। Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০২১।
- ↑ Ramachandran, Sudha (১০ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "What Role Will the Taliban's 'Supreme Leader' Play in the New Government?"। The Diplomat। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০২১।
- ↑ ক খ গ "Afghan Taliban announce successor to Mullah Mansour"। BBC News। ২৫ মে ২০১৬। ১৮ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৬।
- ↑ ক খ Burnett 2020, পৃ. 57।
- ↑ ক খ "Hibatullah's Roots were Non-Political and Reclusive"। TOLOnews। ২৯ মে ২০১৬। ১২ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০২১।
- ↑ "The Taliban is back. Who are the leaders of the group?"। TRT World (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Mashal, Mujib; Shah, Taimoor (জুলাই ১১, ২০১৬)। "Taliban's New Leader, More Scholar Than Fighter, Is Slow to Impose Himself"। The New York Times। আইএসএসএন 0362-4331। ২৩ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৬।
- ↑ ক খ Findlay, Stephanie (১৬ আগস্ট ২০২১)। "Who are the Taliban 2.0"। Financial Times। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৭।
- ↑ ক খ "Afghan Taliban says Haibatullah Akhunzada is new leader"। Aljazeera। ২৫ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৬।
- ↑ ক খ Azami, Dawood (২৬ মে ২০১৬)। "Mawlawi Hibatullah: Taliban's new leader signals continuity"। BBC News। ২৮ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১৬।
- ↑ Provost 2021, পৃ. 123।
- ↑ ক খ O'Donnell, Lynne; Khan, Mirwais। "Afghan Taliban Appoint New Leader After Mansour's Death"। ABC News। ২৫ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৬।
- ↑ "Afghan Taliban appoint Mullah Haibatullah Akhundzada as new leader"। The Guardian। ২৫ মে ২০১৬। ২৬ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৬।
- ↑ "Taliban chief reinforces position with backing of two key members". Daily Times. Lahore. 11 December 2016. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে. Retrieved 2016-12-22
- ↑ ক খ Mashal, Mujib; Shah, Taimoor (২০১৭-০৭-২২)। "Taliban Say Top Leader's Son Carried Out a Suicide Attack"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৭।
- ↑ Ahmad, Jibran (২২ জুলাই ২০১৭)। "Son of Afghan Taliban leader dies carrying out suicide attack"। Reuters। ২২ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০১৭।
- ↑ Weiss, Caleb (৪ আগস্ট ২০১৮)। "Foreign Islamic State fighters captured by Taliban in Jawzjan"। Long War Journal। ৪ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১৮।
- ↑ "Taliban leader urges unity for the redevelopment of Afghanistan"। The Express Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৫-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬।
- ↑ ক খ "The latest on Afghanistan as Taliban take charge. Taliban leader calls for all remaining "political detainees" to be released"। cnn.com। ১৮ আগস্ট ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২১।
- ↑ Ankal, Sophia (১৫ আগস্ট ২০২১)। "Video shows thousands of prisoners, reportedly including Islamic State and al Qaeda fighters, freed from Kabul jail by the Taliban"। Business Insider। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২১।
- ↑ "Who is Haibatullah Akhundzada, the shadowy head of the Taliban?"। The Times of India। ১৭ আগস্ট ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০২১।
- ↑ Roche, Darragh (২০২১-০৮-১৮)। "The mystery of absent Taliban leader Haibatullah Akhundzada"। Newsweek (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪।
- ↑ "Sources in Taliban say their chief Akhundzada is in Kandahar"। The Sunday Guardian Live (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৮-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪।
- ↑ "Hardliners get key posts in new Taliban government"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৯-০৭। ২৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯।
- ↑ "Taliban in Afghanistan: who is in charge?"। thenationalnews.com। The National। ১৮ আগস্ট ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০২১।
- ↑ ক খ "Brother of Afghan Taliban leader killed in Pakistan mosque blast"। aljazeera.com। ১৯ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ Farmer, Ben; Mehsud, Saleem (১৬ আগস্ট ২০১৯)। "Family of Taliban leader killed in 'assassination attempt' on eve of historic US peace deal"। The Telegraph। ১৭ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "Taliban in troubled waters as splinter groups target leaders in Quetta"। CNBC TV। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ Graham-Harrison, Emma (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "Questions in Kabul as two top Taliban leaders 'missing from public view'"। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ "Taliban supreme leader makes first public appearance"। channelnewsasia.com (ইংরেজি ভাষায়)। CNA। ৩১ অক্টোবর ২০২১। ১ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২১।
- ↑ "Taliban's reclusive supreme leader appears, belying rumours of his death"। reuters.com (ইংরেজি ভাষায়)। Reuters। ৩১ অক্টোবর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২১।
- ↑ "Database"। www.afghan-bios.info। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০২২।
- ↑ Nossiter, Adam; Gall, Carlotta; Barnes, Julian E. (১৮ আগস্ট ২০২১)। "The Taliban's Leaders: Worldly and 'Inclusive' or Ruthless Ideologues?"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০২২।
- ↑ "Taliban hard-liners turning back the clock in Afghanistan"। AP NEWS (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০২২।
- ↑ Faiez, Rahim (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। "Ruling Taliban display rare division in public over bans"। Associated Press। Islamabad, Pakistan। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ Benard, Cheryl (২ জানুয়ারি ২০২৩)। "The Taliban must purge itself"। UnHerd। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;VoA March 2023
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Kuehn ও van Linschoten 2018, পৃ. 525।