স্ট্যান ওয়ার্থিংটন

ইংরেজ ক্রিকেটার

টমাস স্ট্যানলি স্ট্যান ওয়ার্থিংটন (ইংরেজি: Stan Worthington; জন্ম: ২১ আগস্ট, ১৯০৫ - মৃত্যু: ৩১ আগস্ট, ১৯৭৩) ডার্বিশায়ারের বলসোভার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন।[] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৭ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। উনিশ হাজারের অধিক রান সংগ্রহের পাশাপাশি ছয় শতাধিক প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পেয়েছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। হাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি হাতে বোলিং করতেন ‘স্ট্যান’ ডাকনামে পরিচিত স্ট্যান ওয়ার্থিংটন

স্ট্যান ওয়ার্থিংটন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
টমাস স্ট্যানলি ওয়ার্থিংটন
জন্ম(১৯০৫-০৮-২১)২১ আগস্ট ১৯০৫
বলসোভার, ডার্বিশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৩১ আগস্ট ১৯৭৩(1973-08-31) (বয়স ৬৮)
কিংস লিন, নরফোক, ইংল্যান্ড
ডাকনামস্ট্যান
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক১০ জানুয়ারি ১৯৩০ বনাম নিউজিল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২৪১৯৪৭ডার্বিশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪৫৩
রানের সংখ্যা ৩২১ ১৯২২১
ব্যাটিং গড় ২৯.১৮ ২৯.০৭
১০০/৫০ ১/১ ৩১/৯৪
সর্বোচ্চ রান ১২৮ ২৩৮*
বল করেছে ৬৩৩ ৪৯০২০
উইকেট ৬৮২
বোলিং গড় ৩৯.৫০ ২৯.২২
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৬
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ২/১৯ ৮/২৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৮/- ৩৩৯/-

শৈশবকাল

সম্পাদনা

ডার্বিশায়ারের বলসোভার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী স্ট্যান ওয়ার্থিংটন স্ট্যাভলির নেদারথর্প গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ঐ সময়ে ডার্বিশায়ারের অধিকাংশ খেলোয়াড় খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও তিনি ব্যতিক্রম ছিলেন। ১৭ বছর বয়সে বলসোভার কোলিয়েরি কোম্পানিতে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। কোলিয়েরি ক্লাবের সদস্যরূপে বাসেটল লীগে খেলেছেন। ডার্বিশায়ারের খেলোয়াড় সন্ধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফ্রেড টেট তাকে পর্যবেক্ষণ করে ১৯২৩ সালে ক্লাবে অন্তর্ভুক্ত করান।[]

কাউন্টি ক্রিকেট

সম্পাদনা

১৯২৪ থেকে ১৯৪৭ সময়কালে ডার্বিশায়ারের পক্ষে সদর্পে কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন স্ট্যান ওয়ার্থিংটন। এ সময়ে ডার্বিশায়ারের সেরা অল-রাউন্ডারের মর্যাদা পেয়েছিলেন তিনি। আগস্ট, ১৯২৪ সালে ডার্বিশায়ারের সদস্যরূপে নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এটিই ঐ বছরে তার একমাত্র খেলায় অংশগ্রহণ ছিল। প্রথম ইনিংসে শূন্য রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১২ রান তুলেন। তবে খেলায় তিনি চার উইকেট আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯২৫ সালে তিনটি খেলায় অংশ নেয়ার পর ১৯২৬ সাল থেকে বাদ-বাকী বছরগুলোয় পুরো মৌসুম জুড়ে খেলেছিলেন স্ট্যান ওয়ার্থিংটন।

১৯২৬ সালের পূর্ব-পর্যন্ত কাউন্টি দলের পক্ষে নিয়মিত খেলোয়াড়ের মর্যাদা পাননি। এর পরপরই ১৯২৮ সালে চেস্টারফিল্ডে এসেক্সের বিপক্ষে দূর্দান্ত ১৩৩ রানের ইনিংস খেলে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। এ সেঞ্চুরি করতে তিনি ১০০ মিনিট ব্যয় করেছিলেন। ঐ মৌসুমেই সহস্র রানের মাইলফলক প্রথমবারের মতো স্পর্শ করেন। মাঝারিসারিতে ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলায় অংশ নিতেন। তবে কোন বিভাগেই তেমন শিরোনামে আসতে পারেননি। কিন্তু, খেলায় তার ধারাবাহিতা ও কর্তব্যপরায়ণতা ১৯৩০-এর দশকে ডার্বিশায়ারের সফলতম সময়ে বিরাটভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল।

সচরাচর, কাউন্টি দলটি অন্যতম দূর্বলমানের ছিল। ১৯৩৬ সালে কাউন্টির চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করে। এটিই অদ্যাবধি ডার্বিশায়ারের ইতিহাসের একমাত্র শিরোপা জয় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ প্রত্যেক খেলোয়াড়েকে নাম, তারিখ ও চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা খোদাই করে স্বর্ণের ঘড়ি উপহার দেয়া হয়েছিল।

২৯.০৭ গড়ে ১৯,২২১ রান তুলেছেন। তন্মধ্যে ৩১টি সেঞ্চুরির দুইটি ১৯৩৮ সালে ইল্কস্টোনে নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে একই খেলায় করেন। মিডিয়াম পেসের কিছুটা নিচুস্তরের বোলিংয়ে ২৯.২২ গড়ে ৬৮২ উইকেট লাভের পাশাপাশি ৩২৬ ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে নয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন স্ট্যান ওয়ার্থিংটন। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১০ জানুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। অংশগ্রহণকৃত নয়টি টেস্টের মধ্যে ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে জি. ও. অ্যালেনের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন পাঁচটিতে।

১৯৩৬ সালে টেস্টে সেরা সফলতা পান। ওল্ডট্রাফোর্ডে ৮৭ রান তুলার পর ওভালে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে ১২৮ রান তুলে এ পর্যায়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ডব্লিউ. আর. হ্যামন্ডের (২১৭) সাথে ২৬৬ রানের জুটি গড়েন। অদ্যাবধি এ সংগ্রহটি রেকর্ডরূপে চিহ্নিত হয়ে আছে। পরবর্তীতে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামলেও তেমন সফলতা পাননি। এরপর আর তাকে টেস্টে খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়নি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরও কয়েক বছর ডার্বিশায়ারে অবস্থান করেন। এরপর তিনি মাইনর কাউন্টিজ ক্রিকেটে নর্দাম্বারল্যান্ডসহ[] ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে খেলেন। দশ বছর ওল্ড ট্রাফোর্ডে ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের প্রধান কোচের দায়িত্বে থাকেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটে অনন্য ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৩৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।

১৯৭৩ সালে কিংস লিন এলাকার হাসপাতালে স্ট্যান ওয়ার্থিংটনের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. [১] ESPNcricinfo, ESPN, সংগ্রহের তারিখ: ২১ নভেম্বর, ২০১৮
  2. Wisden Almanack – Cricketer of the Year
  3. Stan Worthington at Cricket Archive

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা