সূরা নিসা

কুরআন শরীফের ৪র্থ সূরা

সূরা আন নিসা (আরবি ভাষায়: سورة النساء, Sūratu an-Nisā, অর্থ "মহিলা") মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের চতুর্থ সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ১৭৬টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ২৪টি। আন নিসা সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরাতে মুসলিমদের জীবন পরিচালনা ও কীভাবে একতাবদ্ধ থাকতে হবে সে সম্পর্কে বলা আছে।

আন নিসা
النسآء
শ্রেণীমাদানী
নামের অর্থনারী
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম
আয়াতের সংখ্যা১৭৬
পারার ক্রম৪ পারা (১-২৩ আয়াত)
৫ পারা (২৪-১৪৭ আয়াত)
৬ পারা (১৪৮-১৭৬ আয়াত)
রুকুর সংখ্যা২৪
সিজদাহ্‌র সংখ্যানেই
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা আল-ইমরান
পরবর্তী সূরা →সূরা মায়িদাহ
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

নামকরণ

সম্পাদনা

কুরআনুল কারীমের সূরাসমূহের নামকরণের একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। এটা এখনকার প্রবন্ধ-নিবন্ধের শিরোনামের মত নয়। সাধারণত প্রবন্ধে-নিবন্ধে আলোচ্য বিষয়কে শিরোনাম করা হয়। কুরআন মাজীদে তা করা হয়নি। গবেষকদের মতে, কুরআন মাজীদের সূরা নামকরণ হয়েছে তৎকালীন আরবীয় রীতি অনুসারে। ঐ সময় আরবে কাব্য ও কাসীদার ব্যাপক চর্চা ছিল, তো কাসীদার নামকরণ হত কাসীদার বিশেষ কোনো শব্দ-শব্দবন্ধ দ্বারা, যে শব্দটি শোনামাত্র গোটা কাসীদা মনে পড়ে যায়। সারকথা কুরআন মাজীদের সূরার নামকরণ হয়েছে ঐ সূরার বিশেষ কোনো অংশ দ্বারা, যে অংশটি উচ্চারণ করামাত্র সূরাটি স্মৃতিতে উপস্থিত হয়ে যায়। যেমন ধরুন, ‘সূরাতুল মায়িদাহ’। এই নামকরণের অর্থ এই নয় যে, গোটা সূরায় মায়িদাহ বা দস্তরখান সম্পর্কে আলোচনা হবে; বরং অর্থ হচ্ছে, এটি ঐ সূরা, যাতে মায়িদাহ সংক্রান্ত বিখ্যাত ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। হতে পারে সেটি সূরার ক্ষুদ্র একটি অংশ, কিন্তু এর দ্বারা সূরাটিকে চিনে নেওয়া যায়। তেমনি, সূরা আলে ইমরান। এই নামকরণের অর্থ এই নয় যে, গোটা সূরায় ইমরান পরিবার সম্পর্কে আলোচনা হবে; বরং অর্থ হচ্ছে, এই সূরায় ইমরান-পরিবারের ঘটনা আছে। তেমনি সূরাতুল বাকারাহ নামে নামকরণের অর্থ এই নয় যে, গোটা সূরায় বাকারাহ সংক্রান্ত বিধি-বিধান বর্ণিত হবে; বরং অর্থ হচ্ছে, এটি ঐ সূরা, যাতে বাকারাহ সংক্রান্ত ঘটনাটি আছে। ঠিক তেমনি সূরায়ে লুকমান অর্থ, এটি সেই সূরা, যাতে লুকমান হাকীমের কিছু উপদেশ বর্ণিত হয়েছে।

কুরআন মাজীদের ১১৪টি সূরার মধ্যে প্রত্যেকটির জন্য একটি নাম নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই নামকরণের ব্যাপারে কয়েকটি বিশেষ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে:  কিছু নাম আছে কুরআন ও হাদিস ভিত্তিক।  কিছু নাম রয়েছে আলেমদের ইজতিহাদ প্রসূত।  কোনো কোনো সূরার নাম রাখা হয়েছে এর প্রথম শব্দ দ্বারা।  কোনো সূরায় আলোচিত বিশেষ কোনো কথা কিংবা তাতে উল্লেখিত বিশেষ কোনো শব্দ নিয়ে তা-ই নাম হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।  কোনো কোনো সূরার নামকরণ করা হয়েছে তার আভ্যন্তরীণ ভাবধারা ও বিষয়বস্তুকে সম্মুখে রেখে।  কয়েকটি সূরার নাম রাখা হয়েছে কোনো একটি বিশেষ ঘটনার প্রতি খেয়াল রেখে। (বুখারি : আধুনিক-৪৬২২, ৪৬২৩, ৪৬২৬; ইফা-৪৬২৭, ৪৬২৮, ৪৬৩১)

  • সূরা আন নিসার নামকরন:

এ সূরার প্রথম আয়াতে বর্ণিত

এর মধ্যকার النِّسَاءٌ শব্দ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে।

অথবা এই সূরার মধ্যে আল্লাহ তাআলা সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্কের সীমা, নারীদের উত্তরাধিকার (মিরাস) বণ্টনের নিয়ম-কানুনসহ নারীসমাজের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় বর্ণনা করেছেন যার কারণে এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে ‘সূরা

নাযিল হওয়ার সময়-কাল ও বিষয়বস্তু

সম্পাদনা

এ সূরাটি কয়েকটি ভাষণের সমষ্টি । সম্ভবত তৃতীয় হিজরীর শেষের দিক থেকে নিয়ে চতুর্থ হিজরীর শেষের দিকে অথবা পঞ্চম হিজরীর প্রথম দিকের সময়-কালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে এর বিভিন্ন অংশ নাযিল হয়। যদিও নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না, কোন আয়াত থেকে কোন আয়াত পর্যন্ত একটি ভাষণের অন্তরভুক্ত হয়ে নাযিল হয়েছিল এবং তার নাযিলের সময়টা কি ছিল, তবুও কোন কোন বিধান ও ঘটনার দিকে কোথাও কোথাও এমন সব ইঙ্গিত করা হয়েছে যার সহায়তায় রেওয়ায়াত থেকে আমরা তাদের নাযিলের তারিখ জানতে পারি। তাই এগুলোর সাহায্যে আমরা এসব বিধান ও ইঙ্গিত সংবলিত এ ভাষণগুলোর মোটামুটি একটা সীমা নির্দেশ করতে পারি।

যেমন আমরা জানি উত্তরাধিকার বণ্টন ও এতিমদের অধিকার সংবলিত বিধানসমূহ ওহোদ যুদ্ধের পর নাযিল হয়। তখন সত্তর জন মুসলমান শহীদ হয়েছিলেন। এ ঘটনাটির ফলে মদীনার ছোট জনবসতির বিভিন্ন গৃহে শহীদদের মীরাস কীভাবে বণ্টন করা হবে এবং তারা যেসব এতিম ছেলেমেয়ে রেখে গেছেন তাদের স্বার্থ কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে, এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। এরি ভিত্তিতে আমরা অনুমান করতে পারি, প্রথম চারটি রুকু, ও পঞ্চম রুকূর প্রথম তিনটি আয়াত এ সময় নাযিল হয়ে থাকবে।

যাতুর রিকা’র যুদ্ধে ভয়ের নামায (যুদ্ধ চলা অবস্থায় নামায পড়া) পড়ার রেওয়ায়াত আমরা হাদীসে পাই। এ যুদ্ধটি চতুর্থ হিজরীতে সংঘটিত হয়। তাই এখানে অনুমান করা যেতে পারে, যে ভাষণে (১৫ রুকূ) এ নামাযের নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে সেটি এরি কাছাকাছি সময়ে নাযিল হয়ে থাকবে।

চতুর্থ হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে মদীনা থেকে বনী নযীরকে বহিষ্কার করা হয়। তাই যে ভাষণটিতে ইহুদীদেরকে এ মর্মে সর্বশেষ সর্তকবাণী শুনিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, আমি তোমাদের চেহারা বিকৃত করে পেছন দিকে ফিরিয়ে দেবার আগে ঈমান আনো, সেটি এর পূর্বে কোন নিকটতম সময়ে নাযিল হয়েছিল বলে জোর অনুমান করা যেতে পারে।

বনীল মুসতালিকের যুদ্ধের সময় পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুমের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। আর এ যুদ্ধটি পঞ্চম হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল। তাই যে ভাষণটিতে (৭ম রুকূ) তায়াম্মুমের কথা উল্লেখিত হয়েছিল সেটি এ সময়ই নাযিল হয়েছিল মনে করতে হবে।

নাযিলের উপলক্ষ

সম্পাদনা

আলোচ্য বিষয়সমূহ

সম্পাদনা

এই সূরাটির আলোচ্য বিষয়ে হলো দুইটি ১/নারী, এতিম, উত্তরাধিকার, বিবাহ ও পারিবারিক অধিকার সংক্রান্ত সাধারণ আলোচনা ২/বৃহৎ পরিবার,মদিনার বিভিন্ন সম্প্রদায়।যেমন মুনাফিক এবং তাদের সঙ্গীদের বিভিন্ন আলোচনা।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা